
ইসলাম: অর্থ, মূল আদর্শ ও হিন্দু ধর্মের সঙ্গে তুলনা
This is introduction paragraph
ইসলাম কী?
ইসলাম একটি মাযহব, যা এক সময় নির্দিষ্ট জাতির জন্য ছিল, পরবর্তীতে এটি একটি বিশ্বজনীন ধর্মীয় ব্যবস্থায় পরিণত হয়। এটি ৭ম শতকে আরব উপদ্বীপে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ধীরে ধীরে বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ইসলামের অনুসারীরা এক আল্লাহতে বিশ্বাস করে এবং মনে করে, এটি আল্লাহর প্রেরিত চূড়ান্ত জীবনব্যবস্থা।
ইসলামের অর্থ
"ইসলাম" শব্দটি আরবি "সালাম" থেকে এসেছে, যার অর্থ "শান্তি" এবং "আত্মসমর্পণ"। অর্থাৎ, ইসলামের মূল আদর্শ হলো আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ করা এবং তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবনযাপন করা।
ইসলামের মূল আদর্শ
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ বা মূল আদর্শ রয়েছে—
১. শাহাদাহ (কালেমা) – একজন মুসলিমকে বিশ্বাস করতে হবে যে, "আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকারের উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ হলেন তাঁর রাসুল।"
২. সালাত (নামাজ) – প্রতিদিন পাঁচবার নির্দিষ্ট নিয়মে আল্লাহর উপাসনা করতে হয়।
৩. সাওম (রোজা) – রমজান মাসে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস রাখতে হয়।
৪. যাকাত – নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে, তার একটি অংশ দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করতে হয়।
৫. হজ – জীবনে অন্তত একবার সামর্থ্যবানদের জন্য মক্কায় গিয়ে হজ পালন করা ফরজ।
এছাড়া, ইসলামে ন্যায়বিচার, দানশীলতা, মানবতার কল্যাণ এবং আত্মসংযমের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের তুলনা
সৃষ্টিকর্তার ধারণা
ইসলামে একেশ্বরবাদ প্রচলিত, যেখানে এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু উপাস্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যদিকে, হিন্দু ধর্মে নিরাকার ব্রহ্মের ধারণা রয়েছে, আবার বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনাও প্রচলিত।
ধর্মগ্রন্থ
ইসলামের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হলো কুরআন, যা ইসলামের সর্বোচ্চ বিধান। হাদিস হলো নবীর কথা ও কাজের সংকলন, যা ধর্মীয় ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহৃত হয়। হিন্দু ধর্মের ধর্মগ্রন্থের মধ্যে বেদ, উপনিষদ, মহাভারত, রামায়ণ ও গীতা উল্লেখযোগ্য।
উপাসনা পদ্ধতি
ইসলামে নামাজ, দোয়া, ও জিকির প্রধান উপাসনা পদ্ধতি। হিন্দু ধর্মে পূজা, যজ্ঞ, ধ্যান, জপ ও কীর্তন প্রচলিত।
মুক্তি বা পরকাল বিশ্বাস
ইসলামে বিশ্বাস করা হয়, মানুষ মৃত্যুর পর কেয়ামতের দিনে পুনরুত্থিত হবে এবং তার কর্ম অনুযায়ী জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারিত হবে। হিন্দু ধর্মে পুনর্জন্মের ধারণা রয়েছে, যেখানে কর্মফল অনুযায়ী পরবর্তী জন্ম নির্ধারিত হয়। চূড়ান্ত মুক্তি হলো মোক্ষ, যেখানে আত্মা ব্রহ্মের সঙ্গে একীভূত হয়।
সামাজিক কাঠামো ও বিভাজন
ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম উভয় ক্ষেত্রেই সামাজিক স্তরবিন্যাস দেখা যায়, যা মূলত ধর্মের শিক্ষার পরিবর্তে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার ফল।
ইসলামে তাত্ত্বিকভাবে সব মুসলমান সমান, তবে বাস্তবে আরব মুসলিম ও ধর্মান্তরিত মুসলিমদের মধ্যে সামাজিক পার্থক্য দেখা যায়। বিশেষ করে, আরব অঞ্চলে মুসলমানদের মধ্যে বংশগত পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেখানে ধর্মান্তরিত মুসলমানদের অনেক সময় নিম্নস্থ মনে করা হয়। যদিও ইসলামের মূল শিক্ষা অনুযায়ী এই পার্থক্যের কোনো ভিত্তি নেই, সামাজিকভাবে এটি প্রচলিত রয়েছে।
হিন্দু সমাজেও জাতিভেদ ব্যবস্থা প্রচলিত, যা মূলত সামাজিক ও ঐতিহাসিক বাস্তবতার কারণে গঠিত হয়েছে। হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোর বিভিন্ন ব্যাখ্যায় জাতিভেদ নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। অনেক আধুনিক হিন্দু পণ্ডিত মনে করেন, জাতিভেদ ছিল মূলত কর্মভিত্তিক একটি ব্যবস্থা, যা পরবর্তীতে কঠোর সামাজিক বিভাজনে পরিণত হয়।
উপসংহার
ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম উভয়ই মানুষের নৈতিকতা, আত্মসংযম, এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দেয়। যদিও ইসলামে একেশ্বরবাদ ও নির্দিষ্ট উপাসনা পদ্ধতি রয়েছে, হিন্দু ধর্মে ধর্মীয় বিশ্বাস ও উপাসনার ক্ষেত্রে বহুমাত্রিকতা দেখা যায়। যা একটি মুক্ত ও উন্নত সমাজ ব্যবস্থার লক্ষন। এদের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও, মানবতার কল্যাণ এবং আত্মিক উন্নতির লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করেছে।
সামাজিক বিভাজন কোনো ধর্মের মূল শিক্ষা নয়, বরং এটি মানুষের তৈরি একটি কাঠামো, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়।
0 Comments: