Headlines
Loading...
হনুমান ও বানর সেনা—কল্পনা নাকি হারিয়ে যাওয়া মানবগোষ্ঠী?

হনুমান ও বানর সেনা—কল্পনা নাকি হারিয়ে যাওয়া মানবগোষ্ঠী?

কখনো কি মনে হয়েছে, রামায়ণের হনুমান ও বানর সেনা—কবির কল্পনা নাকি হারিয়ে যাওয়া কোনো আদিম মানবগোষ্ঠী? বিবর্তনবাদ অনুসারে আমরা বানর থেকে মানুষ হয়েছি। 


অদিম যুগে হোমো ইরেক্টাস, হোমো নিয়নড্রথ্যালিন্সিস বা সেরকম কোনো বিলুপ্ত প্রজাতি ছিলো যাকে আমরা আজ আমাদের পূর্বপুরুষ ভাবছি। বিজ্ঞান বলছে ওই আদিম মানুষের অভিযোজন বা বিবর্তনের ফলে আমরা আজকের উন্নত মানুষের রূপ পেয়েছি। কিন্তু রামায়ণের গল্পে আমরা দেখতে পাই। সেই বানরের মতো দেখতে কিছু মানুষ আমাদের সাথেই বসবাস করতো।

অনেকেই বলে থাকেন, এরা আসলে মানুষই ছিলেন। তবে এদের দৈহিক বৈশিষ্ট্য মানুষের মতন ছিলো না তাই এরা বা-নর অর্থাৎ “হয়তো মানুষ” বা “মানুষের মতন”। 

আজ এই আলোচনায় আমরা রামায়ণ থেকে এমন কিছু তথ্য তুলে ধরবো যা হয়তো এর আগে কেউ তুলে ধরেনি। রামায়ণের শ্লোক উল্লেখ করে আমরা দেখবো কিভাবে বানর রাজা সুগ্রীব তাঁর বানর সেনাকে বিভিন্ন দেশ প্রদেশের ভৌগোলিক প্রতীক বা নিদর্শনের উল্লেখ করেছেন। কবি বাল্মীকির কি তাঁর কাব্যিক অলঙ্কারে সেগুলো আরো লার্জার দ্যান লাইফ হিসেবে চিত্রিত করেছে। 

কিচকিন্ধা কান্ড 

अथ राजा समृद्ध अर्थः सुग्रीवः प्लवगेश्वरः |
उवाच नरशार्दूलम् रामम् परबलार्दनम् || ४-४०-१

তখন প্লবগেশ্বর রাজা সুগ্রীব  পরাক্রমী সিংহ পুরুষ শ্রীরামকে বললেন।

आगता विनिविष्टाः च बलिनः कामरूपिणः |
वानरेन्द्रा महेन्द्र आभा ये मत् विषय वासिनः || ४-४०-२

"পরাক্রমশালী বানর প্রধানরা যারা তাদের ইচ্ছায় রূপ পরিবর্তন করতে পারেন, যারা মহেন্দ্র বর্বতের মতো উজ্জ্বল, এবং যারা আমার প্রদেশে বাস করেন, তারা সকলেই এসেছেন। এবং তারা ভালো ভাবে শিবির স্থাপন করেছেন।

त इमे बहु विक्रान्तैः बलिभिः भीम विक्रमैः |
आगता वानरा घोरा दैत्य दानव संनिभाः || ४-४०-३

তারা বীর পরাক্রমী, তথা ভয়ঙ্করভাবে লড়তে সক্ষম।  এমন শক্তিশালী সেই ভয়ঙ্কর বানর-প্রধানরা যারা দানব এবং দৈত্যের সাথে (যুদ্ধে) ভিড়ে যেতে পারেন।

ख्यात कर्म अपदानाः च बलवन्तो जित क्लमाः |
पराक्रमेषु विख्याता व्यवसायेषु च उत्तमाः || ४-४०-४
पृथिवि अंबु चरा राम नाना नग निवासिनः |
कोटि ओघाः च इमे प्राप्ता वानराः तव किंकराः || ४-४०-५

হে, রাম তারা যে কাজ হাতে নিয়েছে তা তারা সম্পন্ন করবে। তারা তাদের পরাক্রমের জন্য বিখ্যাত এবং তাদের কৌশলে পারদর্শী। এরা বিভিন্ন নগরের বাসিন্দা, তারা ভূমিতে বা জলে গমন করতে পারে। যেমন, এই বানর সকলেই আপনার সেবক হয়ে (আপনার কাজ করতে) কোটি কোটি সংখ্যায় উপস্থিত হয়েছে।

निदेश वर्तिनः सर्वे सर्वे गुरु हिते स्थिताः |
अभिप्रेतम् अनुष्ठातुम् तव शक्ष्यन्ति अरिंदम || ४-४०-६
হে, শত্রু-দমনকারী রাম, আপনার নির্দেশিত যে কোন কাজ তারা পালন করতে সক্ষম। তারা সকলেই নিজেদেরকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করবে এবং সকলেই তাদের রাজার কল্যাণে মেনে চলতে সক্ষম।

সুগ্রীব যখন এইভাবে কথা বলছিলেন, তখন দশরথ পুত্র রাম তাঁকে তাঁর দুই বাহুতে জড়িয়ে ধরে এই আলিঙ্গন করে বললেন।

হে করুণাময় সুগ্রীব, বৈদেহী (সীতা) বেঁচে আছেন কি না- তা জানা নেই। একইভাবে, শুরুতেই নির্ধারণ উচিত রাবণ যে স্থানটিতে বাস করে তা চিহ্নিত করতে হবে। হে বানরদের সেনাধ্যক্ষ আমি এই কাজে পারদর্শী নই, না আমার ভাই লক্ষণ, কিন্তু হে বানর রাজ, সীতার খোজ করতে আপনারাই এই কাজের জন্য সিদ্ধহস্ত। আপনিই এই সেনাকে প্রচলনা করুন।

শ্রী রামের কথায় বলবান সুগ্রীব তাঁর এক সেনা প্রধান বিনতাকে আজ্ঞা করলেন।

शैलाभम् मेघ निर्घोषम् ऊर्जितम् प्लवगेश्वरम् |
सोम सूर्य निभैः सार्धम् वानरैः वानरोत्तम || ४-४०-१७
देश काल नयैः युक्तः विज्ञः कार्य विनिश्चये |
वृतः शत सहस्रेण वानराणाम् तरस्विनाम् || ४-४०-१८
अधिगच्छ दिशम् पूर्वाम् स शैल वन काननाम् |

ওহে, পর্বতের মতো আপনার শরীর, মেঘের গর্জনের মতো গুরু গম্ভীর আপনার কন্ঠস্বর যুক্ত বনরশ্রেষ্ঠ বিনতা। আপনি স্থান, কাল ও পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কাজ নির্ধারণে বিশেষজ্ঞ। অতঃপর, আপনার কান্তি চন্দ্র ও সূর্যের মতো।  নকি শত সহস্র বানর, নিয়ে পৃথিবীর পূর্ব দিকে পাহাড়, বনভূমি এবং কাননে যাত্রা করুন। 

এই বনরশ্রেষ্ঠ বিনতার বর্ণনা আমাদের Bigfoot-এর অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়। অনেক লোক দাবি করে যে তারা এই প্রাণী দেখেছে বা এর পায়ের ছাপ খুঁজে পেয়েছে। কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন যে এটি গিগ্যান্টোপিথেকাস (Gigantopithecus) নামে বিলুপ্তপ্রায় এক বিশাল বানর প্রজাতির বংশধর হতে পারে। যার উচ্চতা ৯ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত হতো। চীন, ভারত ও অভিয়েতনামে এই প্রাইমেটের আবাস ছিলো।

अधिगच्छ दिशम् पूर्वाम् स शैल वन काननाम् |
 तत्र सीताम् च वैदेहीम् निलयम् रावणस्य च || 
मार्गध्वम् गिरि दुर्गेषु वनेषु च नदीषु च | 
नदीम् भागीरथीम् रम्याम् सरयूम् कौशिकीम् तथा ||
 कालिंदीम् यमुनाम् रम्याम् यामुनम् च महागिरिम् | 
सरस्वतीम् च सिंधुम् च शोणम् मणि निभ उदकम् || 
महीम् कालमहीम् चैव शैल कानन शोभिताम् |
 ब्रह्ममालान् विदेहान् च मालवान् काशि कोसलान् ||
 मागधाम् च महाग्रामान् पुण्ड्रान् अंगाम् तथैव च | 
भूमिम् च कोशकाराणाम् भूमिम् च रजत आकराम् ||

"তোমরা পূর্বদিকে যাও, যেখানে পর্বত, বন ও সুন্দর উপবন রয়েছে। সেখানে জনকনন্দিনী বৈদেহী দেবী সীতাকে এবং রাক্ষসরাজ রাবণের বাসস্থান অনুসন্ধান করো। রাস্তা, ঘাট, গিরি, দূর্গ, বন নদী পর্বত, দুর্গম অঞ্চল, অরণ্যতেও সীতার সন্ধান করো। সেই পথে গঙ্গা (ভাগীরথী), মনোরম সরযূ ও কৌশিকী (কোশি) নদীর তীরে দেখো। কালিন্দী (যমুনা), সুন্দর যমুনা এবং যমুনা নদীর পাশে বিশাল পর্বত পরিদর্শন করো। সরস্বতী, সিন্ধু ও রক্তমণির ন্যায় জলযুক্ত শোণ নদীতেও অনুসন্ধান করো। তোমরা কালমহী নামে বিখ্যাত ভূমি ও বন-পাহাড়ে শোভিত অঞ্চলেও অনুসন্ধান করবে। ব্রহ্মমালা, বিদেহ, মালব, কাশী ও কোশল রাজ্যের মধ্যেও সীতার সন্ধান করবে। জনপদ মগধ, বৃহৎ, পুণ্ড্রদেশ (বর্তমান বঙ্গ অঞ্চল) ও অঙ্গদেশেও (অর্থাৎ অজকের বিহার ও বাংলার কিছু অংশ) অনুসন্ধান করো। এছাড়া রেশম উৎপাদনকারী অঞ্চল এবং রূপার খনি বিশিষ্ট ভূমিতেও সীতা দেবীর সন্ধান করবে।"

समुद्रम् अवगाढान् च पर्वतान् पत्तनानि च |
मंदरस्य च ये कोटिम् संश्रिताः केचित् आलयाः || ४-४०-२५

সমুদ্রের গভীরে, পর্বতমালা ও নগরসমূহ অনুসন্ধান করো, যারা মন্দার পর্বতের চূড়ায় বা তার আশেপাশে বাস করে, তাদের আবাসও দেখো। 

कर्ण प्रावरणाः चैव तथा च अपि ओष्ठ कर्णकाः |
घोर लोह मुखाः चैव जवनाः च एक पादकाः || ४-४०-२६

কর্ণপ্রবর অর্থাৎ যাদের কর্ণ আচ্ছাদিত এবং ওষ্ঠকর্ণ (অর্থাৎ যাদের ঠোঁট কান পর্যন্ত বিস্তৃত), ভয়ঙ্কর লোহিত মুখ বিশিষ্ট জাতি এবং একপায়ে দ্রুতগামী।"

अक्षया बलवंतः च तथैव पुरुष आदकाः |
किराताः तीक्ष्ण चूडाः च हेमाभाः प्रिय दर्शनाः || ४-४०-२७

অক্ষয় ও প্রভূত শক্তিশালী এবং মানুষেরা, যারা মাংসভোজী, তীক্ষ্ণ , স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল এবং আকর্ষণীয় দর্শন কিরাত জাতির সন্ধান করো, 

आम मीन अशनाः च अपि किराता द्वीप वासिनः |
अंतर् जलचरा घोरा नरव्याघ्रा इति स्मृताः || ४-४०-२८

কাঁচা মাছ ভক্ষণকারী এবং দ্বীপবাসী কিরাতগণ, জলের মধ্যে বিচরণকারী ভয়ংকর, "ব্যাঘ্র পুরুষ" নামে পরিচিত। — সেখানেও খুঁজে দেখো।

एतेषाम् आश्रयाः सर्वे विचेयाः कानन ओकसः |
गिरिभिर् ये च गम्यन्ते प्लवनेन प्लवेन च || ४-४०-२९

এই সমস্ত জাতির বাসস্থান ও বনাঞ্চল  নিরীক্ষণ করো, যেসব স্থানে পাহাড় ডিঙ্গিয়ে বা নৌকাযোগে যাত্রা করা সম্ভব।

এটি বর্ণনায়  প্রাগ ঐতিহাসিক প্রাণী ও তাদের বৈশিষ্ট্য আমরা লক্ষ্য করছি। যেমন, "একপাদক জলচর",  "ঘোর লোহমুখ" (ভয়ঙ্কর রক্তবর্ণ মুখযুক্ত), ওষ্ঠকর্ণ এবং কর্ণপ্রবর — এসব সম্ভবত ডাইনোসর বা সেই রকম কোনো  প্রাণীর বর্ণনা হতে পারে। এছাড়াও "সমুদ্রচারী", "জলচর", "কাঁচা মাছ খাওয়া কিরাট জাতির উল্লেখ আছে যারা দ্বীপ ও উপকূল অঞ্চলে বসবাসকারী। এগুলো সবই প্রাগ ঐতিহাসিক প্রাণীর মতন।

यत्नवन्तो यव द्वीपम् सप्त राज्य उपशोभितम् |
सुवर्ण रूप्यकम् द्वीपम् सुवर्ण आकर मण्डितम् || ४-४०-३०
यव द्वीपम् अतिक्रम्य शिशिरो नाम पर्वतः |
दिवम् स्पृशति शृन्गेण देव दानव सेवितः || ४-४०-३१
एतेषाम् गिरि दुर्गेषु प्रपातेषु वनेषु च |
मार्गध्वम् सहिताः सर्वे राम पत्नीम् यशस्विनीम् || ४-४०-३२

এখানে আমরা ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের নাম পাচ্ছি যা  ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে আছে।  

ततो रक्त जलम् प्राप्य शोण आख्यम् शीघ्र वाहिनीम् |
गत्वा पारम् समुद्रस्य सिद्ध चारण सेवितम् || ४-४०-३३
तस्य तीर्थेषु रम्येषु विचित्रेषु वनेषु च |
रावणः सह वैदेह्या मार्गितव्यः ततः ततः || ४-४०-३४

তারপর রক্তের মতো জল পাবে যা অক্ষয় ও দ্রুতগামী। সেই লাল সাগর পেরিয়ে সিদ্ধ ও চারণগণ বাস করেন। সেখানে,  তীর্থস্থান মনোরম ও বিচিত্র বনাঞ্চলে রাক্ষসরাজ রাবণ ও জনককন্যা বৈদেহী দেবী সীতাকে সন্ধান করবে।

H. R. Sarkar is a dedicated blogger and entrepreneur with expertise in creating digital products and Blogger templates. Managing websites like TechaDigi.com and Hinduhum.net, they bring creativity and technical proficiency to their projects. Through their YouTube channel, Lost Eternal Science, H. R. Sarkar explores the fusion of Hindu spirituality and science, offering unique insights to their audience. With a passion for innovation, they strive to inspire and educate through their work.

0 Comments:

Smart Ads for Smart Businesses Ads by TDads