Headlines
Loading...
মহাশিবরাত্রি ব্রত পালনের বিধি-বিধান, মাহাত্ম্য, ফল ও সাবধানতা

মহাশিবরাত্রি ব্রত পালনের বিধি-বিধান, মাহাত্ম্য, ফল ও সাবধানতা

আগামীকাল মহাশিবরাত্রি ব্রত। তাই সকল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আমার প্রণাম ও শুভেচ্ছা। সনাতনীদের মধ্যে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্রত, যা বিশ্বব্যাপী ভক্তরা নিষ্ঠাভরে পালন করেন। শাস্ত্রে উল্লিখিত নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ব্রত পালনের মাধ্যমে এই ব্রতের পূর্ণ ফল লাভ করা যায়। যারা কর্মব্যস্ততার কারণে সমস্ত নিয়ম মানতে পারেন না, তাদের জন্য শুধুমাত্র উপবাস করাটাই যথেষ্ট। কারণ মহাদেব হলেন "আশুতোষ"—তিনি সহজেই সন্তুষ্ট হন।

মহাশিবরাত্রি ব্রত পালনের বিধি-বিধান


১. ব্রত গ্রহণের পূর্ব প্রস্তুতি

  • যাঁরা প্রত্যেক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিবরাত্রির উপবাস করতে চান, তাঁরা এক বছর ধরে প্রতিমাসে এই ব্রত পালন করবেন এবং পরের বছর মহাশিবরাত্রি বিশেষভাবে উদযাপন করবেন।
  • শুধুমাত্র মহাশিবরাত্রি ব্রত পালন করতে চাইলে, ব্রতের আগের দিন সংযম পালন করতে হবে। মৈথুন ও তামসিক আহার পরিহার করা বিধেয়।

২. ব্রত গ্রহণ ও সংকল্প

  • ব্রতের দিন প্রভাতে উঠে পার্বতীসহ মহাদেবকে স্মরণ করে সংকল্প করা উচিত:

    "হে দেবেশ্বর! উঠুন! আমার হৃদয়ে শায়িত দেবতা! উঠুন! উমাকান্ত! উঠুন এবং ব্রহ্মাণ্ডের সকলের মঙ্গল করুন। আমি ধর্ম জানি, কিন্তু তাতে আমার প্রবৃত্তি নেই। আমি অধর্ম জানি, কিন্তু আমি তার থেকে দূরে থাকতে পারি না। মহাদেব! আপনি আমার হৃদয়ে অবস্থান করে আমাকে যেমন প্রেরণা দেন, আমি তেমনই করি।"

  • প্রাতঃকালে স্নান, তর্পণ সম্পন্ন করে ত্রিপুন্ড তিলক ধারণ করবেন। ভষ্ম থাকলে তা দ্বারা, না থাকলে জল দ্বারা তিলক করা যাবে।
  • শিবলিঙ্গের সামনে বসে সংকল্প পাঠ করতে হবে:

    "অদ্য ব্রতং ময়া দেব কর্ত্তব্যঞ্চ তবাজ্ঞয়া ॥ ১০
    নিরাহারতয়া দেব নির্জলং বিধিবং প্রভো।
    কর্তুমিচ্ছা ভবেদদ্য ব্যৈং রক্ষ মম প্রভো।"

৩. ব্রত পালনের নিয়মাবলী

  • ব্রতের সময় কাম, ক্রোধ, হিংসা, মিথ্যা কথা বলা ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
  • সারাদিন নির্জলা বা ফলাহার উপবাস পালন করা বিধেয়।
  • রাত্রি জাগরণ মহাশিবরাত্রি ব্রতের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ঘুম না করে শিব নাম জপ, ধ্যান, শিব মহিমা পাঠ, রুদ্রাষ্টাধ্যায়ী পাঠ, শিব কীর্তন ও নৃত্য করা উচিত।
  • চার প্রহরে শিবলিঙ্গ স্নান ও পূজা করা বিধেয়।

৪. পরদিন ব্রত সমাপন ও ব্রাহ্মণ ভোজন

  • পরদিন প্রাতঃকালে স্নান করে পুনরায় শিবের পূজা করতে হবে।

  • ব্রত সম্পন্ন করার পর ব্রাহ্মণ ভোজন করানো বিধেয়।

    "বিধায় ব্রহ্মভোজ্যঞ্চ ভোজয়েন্ন্যাসিনং তদা ॥ ১৪
    অশক্ত্যৈকং তদা ভোজ্যৎ স্বয়ংভোজ্যৎ ততঃপরম্।"

  • ব্রাহ্মণ ভোজনের পর নিজে পারণ বা ভোজন করবেন।


বিভিন্ন দ্রব্য দ্বারা শিব পূজার ফল

শিবোপাসনার দুটি পথ রয়েছে:

  1. প্রবৃত্তি মার্গী (সকাম পূজা) - যাঁরা বিভিন্ন কামনা পূরণের জন্য পূজা করেন।
  2. নিবৃত্তি মার্গী (নিষ্কাম পূজা) - যাঁরা ফলের আকাঙ্ক্ষা ছাড়াই শিবের আরাধনা করেন।

প্রবৃত্তি মার্গীদের জন্য শিব পূজার ফল

  • ধন-সম্পত্তির জন্য: পদ্মফুল, বিল্বপত্র, শতপত্র, শঙ্খপুষ্প নিবেদন করুন।
  • সমস্ত পাপ মোচনের জন্য: এক লক্ষ শঙ্খপুষ্প দ্বারা পূজা করুন।
  • শিবের দর্শন লাভের জন্য: মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের পাঁচ লক্ষ জপ করুন।
  • দীর্ঘায়ুর জন্য: এক লক্ষ দূর্বা ঘাস নিবেদন করুন।
  • সন্তান লাভের জন্য: এক লক্ষ ধুতরা ফুল নিবেদন করুন।
  • ভোগ ও মোক্ষ লাভের জন্য: পর্যাপ্ত তুলসীদলে পূজা করুন।
  • সুন্দর পত্নী লাভের জন্য: বেলফুল নিবেদন করুন।
  • অন্নাভাব দূর করার জন্য: জুঁই ফুল নিবেদন করুন।
  • কাম্য বস্তু লাভের জন্য: এক লক্ষ বেলপাতা নিবেদন করুন।

মহাশিবরাত্রির মাহাত্ম্য

শিব পুরাণে রুরুদ্রুহ নামক এক ব্যাধের কাহিনী বর্ণিত আছে, যে উপবাস ও শিব আরাধনার ফলে মোক্ষ লাভ করেছিল। সে জানত না যে, এক বেলগাছে বসে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বেলপাতা ছিঁড়ে ফেলা ও জল ঢালার মাধ্যমে সে অজান্তেই শিবলিঙ্গে অর্পণ করছিল। মহাদেব তার দয়া ও ত্যাগে তুষ্ট হয়ে মোক্ষ দান করেন। তিনি শিব পুরাণে শাস্ত্রকার বলেছেন:—

"হে ভক্ত! তোমার সম্পূর্ণ ভক্তি ও ভাব দ্বারা এই রাত্রিতে মহাদেবের আরাধনা করলে মহাদেব তোমাকে মোক্ষ প্রদান করবেন।"


শিব ধ্যান মন্ত্র

"ওঁ শান্তং পদ্মাসনম্বং শশধর মুকুটং পঞ্চবক্তং ত্রিনেত্রং
শূলং বজ্রফ খড়াং পরশুমপিবরং দক্ষিণাঙ্গে বহস্তম্।
নাগং পাশঞ্চ ঘণ্টাং ডমককসহিতঞ্চাহুশং বামভাগে
নানালঙ্কারদীপ্তং স্ফটিকমণি-নিভং পার্ব্বতীশং ভজামি।"


সাবধানতা ও নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ

  • ব্রত রেখে রাগ, হিংসা, কটুবাক্য পরিহার করুন।
  • সুস্থ ও সামর্থ্যবান ব্যক্তির রাত্রি জাগরণ করা অবশ্য কর্তব্য।
  • শিব নৈবেদ্য গ্রহণ করবেন, তবে শিবলিঙ্গে অর্পিত দ্রব্য যেন গ্রহন না করা হয়। কেবল শিবমন্ত্রে দীক্ষিত ব্রাহ্মণই গ্রহণ করতে পারেন।

উপসংহার

মহাশিবরাত্রি ব্রত সঠিকভাবে পালন করলে মহাদেব অত্যন্ত প্রসন্ন হন। তাই শাস্ত্রবিধি অনুসারে ব্রত পালন করলে ভক্ত তার কাম্য বস্তু লাভ করেন ও শেষ পর্যন্ত মোক্ষ লাভ করেন।


তথ্যসূত্র

  1. শিব মহাপুরাণ – বিদ্যেশ্বর সংহিতা (নবভারত পাবলিশার্স)
  2. শিব মহাপুরাণ – রুদ্রসংহিতা – সৃষ্টিখণ্ড (গীতাপ্রেস, গোরক্ষপুর)
  3. লেখক: প্রকৌশলী শ্রী মিঠুন আচার্য্য সৌমেন।

F. A. Q.

 শিবরাত্রি কি শিব পার্বতীর বিবাহের দিন?

না। শিবরাত্রি হলো ভগবান শিবের আত্মপ্রকাশ দিন। এই দিন থেকে মরতে তার পুজো প্রচলন হয়। রুরুদ্রুহ নামক এক ব্যাধের কাছে তিনি আত্মপ্রকাশ করে।

 শিবলিঙ্গ কি ভগবান শিবের মূত্রাঙ্গ?

শিবলিঙ্গ হল, শিবের প্রতিকৃতি বা ভৌত রূপ। ইহা  জগতের । যৌনাঙ্গ বা মূত্রাঙ্গকে শিশ্ন বলা হয়। লিঙ্গ শব্দটি সংস্কৃত ভাষায় লীন+গম্ = লিঙ্গম্ বলা হয়েছে।


লিঙ্গ পূজা কেন করা হয় ?

 যেহেতু জগতের রূপ আছে। রূপ বা চিহ্ন ছাড়া আমাদের কাছে কোনো উপায় নেই। তাই লিঙ্গ পূজা হয়। অলিঙ্গ বা নিরাকার পূজার বা আরাধনার বিষয় নয়। কারণ, তাতে মন স্থির থাকে না।

H. R. Sarkar is a dedicated blogger and entrepreneur with expertise in creating digital products and Blogger templates. Managing websites like TechaDigi.com and Hinduhum.net, they bring creativity and technical proficiency to their projects. Through their YouTube channel, Lost Eternal Science, H. R. Sarkar explores the fusion of Hindu spirituality and science, offering unique insights to their audience. With a passion for innovation, they strive to inspire and educate through their work.

1 টি মন্তব্য

Smart Ads for Smart Businesses Ads by TDads