Headlines
Loading...
অদ্বৈত বেদান্ত: মায়া, ব্রহ্ম এবং আধ্যাত্মিক মুক্তির পথ

অদ্বৈত বেদান্ত: মায়া, ব্রহ্ম এবং আধ্যাত্মিক মুক্তির পথ

"অদ্বৈত বেদান্ত" মতে জগৎ মায়া বা বিভ্রম। এর অর্থ হলো কেবল ব্রহ্মই এই জগতময় স্থির ও শাস্বত। এই পরিদৃশ্যমান জগত পরিবর্তনশীল। সুখ-দুঃখ, দরিদ্রতা, নাম সুনাম, বল, বুদ্ধি, কোন কিছুই স্থায়ী নয়। সময়ের সাথে সাথে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই ইহাকে মিথ্যা বা মায়া বলা হয়েছে।

ব্রহ্মকে কিভাবে জানা যায়?

আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, “যদি এই জগৎ মায়া বা বিভ্রম হয় এবং মানুষ ব্রহ্মকে জানার জন্যই সৃষ্টি হয়, তাহলে মায়ার মধ্যে বাস করে ব্রহ্মকে জানার প্রাথমিক পথ কীভাবে শুরু করা যায়?”

এর উত্তর হলো ভক্তি ও জ্ঞান দ্বারা। আধ্যাত্মিকতা মানবজীবনের গভীরতম অনুসন্ধানের এক অঙ্গ। ঈশ্বর, ব্রহ্মাণ্ড, এবং জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা এক মহাযাত্রা। হিন্দু দর্শনের মুল ভিত্তি "অদ্বৈত বেদান্ত" এবং এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, জগৎ মায়া বা বিভ্রম এবং ব্রহ্মই একমাত্র চিরন্তন সত্য। এই জগতের সবকিছু পরিবর্তনশীল, তাই এটিকে মিথ্যা বা মায়া বলা হয়। সুখ-দুঃখ, সাফল্য-ব্যর্থতা, সম্পদ, ক্ষমতা—এগুলো সবই ক্ষণস্থায়ী। মানুষ মায়ার প্রতি আকৃষ্ট হয় কারণ এটি তাদের জীবনের সত্য উদ্দেশ্য থেকে বিভ্রান্ত করে। কিন্তু এই মায়া অতিক্রম করেই ব্রহ্মকে জানাই মানুষের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

ভক্তির পাঁচটি প্রকার:

হিন্দু ধর্মে ভক্তি এবং জ্ঞান উভয়ই আধ্যাত্মিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। ভক্তি পাঁচ প্রকারের—সন্ত, বাৎসল্য, সখ্য, দাস্য এবং কান্তা। এই পাঁচ রূপের মাধ্যমে ভক্ত ঈশ্বরের সন্নিকটে পৌঁছানোর সুযোগ পান।

ভক্তি ও জ্ঞানের সামঞ্জস্য প্রয়জন 

 তবে, ভক্তির সঙ্গে জ্ঞান থাকা একান্ত প্রয়োজন, কারণ জ্ঞান ছাড়া ভক্তি কখনো কখনো ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অজ্ঞানতার কারণে অনেকেই ভক্তি ভুলভাবে ব্যবহার করে হিংসা বা অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়। ইসলামিক চেতনার কিছু ভ্রান্ত ব্যাখ্যা তুলে ধরে আমরা এই বিষয়টি বুঝেছি যে, শুধুমাত্র ভক্তি যথেষ্ট নয়; জ্ঞান ছাড়া তা সম্পূর্ণ হয় না। একইভাবে, জ্ঞান থাকলেও যদি অহংকার বৃদ্ধি পায়, তবে তা ঈশ্বর প্রাপ্তির পথে অন্তরায় হতে পারে। তাই ভক্তি ও জ্ঞানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মুক্তির পথে গুরুর গুরুত্ব 

এই পথে গুরুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। গুরু হলেন সেই আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক, যিনি ভক্তকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন।  প্রকৃত সৎগুরু নির্বিকল্প সমাধি থেকে ফিরে আসেন এবং তার দীক্ষায় মানুষ আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে অগ্রসর হয়। এমনকি সরাসরি সান্নিধ্য বা দীক্ষার সুযোগ না পেলেও গুরু সবার প্রতি দৃষ্টি রাখেন। ভক্তের একমাত্র কাজ হলো গুরুর আদেশ পালন করা। এই আদেশ পালন করেই ভক্ত গুরুর কৃপা অনুভব করতে পারে এবং আধ্যাত্মিক অগ্রগতি অর্জন করতে পারে।

ভক্তি ও জ্ঞানের প্রাসঙ্গিকতা

আলোচনার একপর্যায়ে আমরা জানতে পারি, হিন্দু ধর্মে ভক্তি এবং জ্ঞান কেবল তাত্ত্বিক নয়, বরং তা জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। ভক্তি এবং জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ নিজের আত্মাকে উন্নত করতে পারে এবং মোক্ষ লাভ করতে পারে। মোক্ষ হলো সেই অবস্থা যেখানে মানুষ মায়া অতিক্রম করে ব্রহ্মের সঙ্গে একাত্ম হয়। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, যা একাধিক জন্ম ধরে চলতে পারে অথবা ঈশ্বরের কৃপায় এক জন্মেই সম্ভব।

আধুনিক যুগে গুরু সন্ধান কি করে সম্ভব?

আধুনিক যুগে একজন মানুষ কীভাবে প্রকৃত সৎ গুরুর সন্ধান করতে পারে, তা নিয়েও আমর বক্তব্য হলো। গুরুর অনুপস্থিতিতে আধ্যাত্মিক অগ্রগতি করা যায় কিনা—এই প্রশ্নের উত্তরে জানা যায়, সৎ গুরু সরাসরি দীক্ষা দেন না হলেও, তার কৃপা এবং নির্দেশনার মাধ্যমে একজন ভক্ত সঠিক পথে চলতে পারে। ভক্তের মধ্যে যদি গভীর বিশ্বাস এবং আত্মনিবেদন থাকে, তবে গুরুর সান্নিধ্য না পেলেও সে তার মুক্তির পথ খুঁজে পাবে।

পরিসমাপ্তি

এই আলোচনা হিন্দু ধর্মের দর্শন, ভক্তি ও জ্ঞানের সমন্বয় এবং গুরুর ভূমিকার মতো বিষয়গুলো গভীরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটি, আধ্যাত্মিক পথ কেবল তত্ত্ব বা জ্ঞানের ব্যাপার নয়। এটি একটি অভ্যাস এবং জীবনধারা, যা ভক্তি, জ্ঞান এবং গুরুর দীক্ষার মাধ্যমে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়। এভাবে আধ্যাত্মিকতার পথ অনুসরণ করেই একজন ব্যক্তি তার জীবনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে।




Himadri Roy Sarkar always had a passion for writing. When he was younger, he would often write stories and share them with his friends. He loved the way that writing could bring people together and share ideas. In 2022, he founded The Hindu Network,The site quickly became popular, and Himadri was able to share his writing with people all over the world. The Hindu Network is now one of the most popular websites in the world, and Himadri is a well-known author and speaker. blogger external-link facebook instagram

0 Comments: