Headlines
Loading...
Riddles of Hinduism: বেদের উৎপত্তি

Riddles of Hinduism: বেদের উৎপত্তি

ড. বি. আর. আম্বেদকরের "Riddles in Hinduism" এর প্রথম ধাঁধার উত্তর আগের এক প্রতিবেদনে আলোচনা করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনটি দ্বিতীয় ধাঁধার উত্তর। এর বিষয় বস্তু হলো বেদের উৎপত্তি নিয়ে। লেখক এখানে যুক্তি তর্ক ও বিতর্কের মাধ্যমে জানতে চেয়েছেন "ডিম আগে না মুরগি আগে"। হ্যা, ঠিকই শুনছেন।

হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ বেদকে চিরন্তন বলে দাবি করা হলেও এটি কিভাবে সম্ভব, সেটাই ওই পুস্তকের লেখক জানতে চেয়েছেন। 

বেদের উৎপত্তির রহস্য

হিন্দু বেদকে তার ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ ও পবিত্র গ্রন্থ বলে মনে করেন। কিন্তু যদি কোনো হিন্দুকে প্রশ্ন করা হয়—বেদের উৎস কী?—তবে খুব কম হিন্দুকেই পাওয়া যাবে, যারা এই সহজ প্রশ্নের পরিষ্কার ও নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারবেন।

অবশ্য, যদি এই প্রশ্নটি কোনো বৈদিক জ্ঞান অর্জিত ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞেস করা হয়, তবে তিনি বলবেন বেদ হল "সনাতন"। কিন্তু এই উত্তর  লেখকের কাছে যথেষ্ট বলে মনেহয়নি। তিনি "সনাতন" শব্দের অর্থ শাস্ত্রের উল্লেখ করে ব্যাখ্যা করেছেন।

"সনাতন" শব্দের প্রকৃত অর্থ

এই শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় মনুস্মৃতির প্রথম অধ্যায়ের ২২-২৩ শ্লোকের উপর কল্লূক ভট্টের ভাষ্যে। কল্লূক ভট্ট "সনাতন" শব্দের ব্যাখ্যা দিয়েছেন এইভাবে

শ্লোক ২২:

आपौरुषेया वेदाश्च सर्वलौकिकपूर्वकाः ।
सर्वधर्ममयाः शाश्वताः सर्वभूतहिते रताः ॥२२॥

সনাতন অর্থ  শাশ্বত বা যাহা চিরকাল পূর্ব-বিদ্যমান"। বেদের অপৌরুষেয় উৎপত্তির ধারণা মনু দ্বারা সমর্থিত। মনু বলেছেন, পূর্ববর্তী মহাযুগ বা কল্পে যে বেদ ছিল, তা সর্বজ্ঞ ব্রহ্মার স্মৃতিতে সংরক্ষিত ছিল। সেই ব্রহ্মা স্বয়ং পরমাত্মার সঙ্গে অভিন্ন ছিলেন। 

শ্লোক ২৩:

अग्नेः ऋग्वेदो वायोः यजुः सूर्याच्च सामसंहिताः ।
शिक्षायाः चोपनिषदो ब्रह्मणश्चैव शक्तितः ॥२३॥"

বর্তমান কল্পের সূচনাতে ব্রহ্মা সেই একই বেদকে আগুন (অগ্নি), বায়ু (বায়ু) ও সূর্যের (সূর্য) থেকে আহরণ করেন। এই মতবাদ, যা বেদ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, তা প্রশ্নাতীত। কারণ বেদই বলে—"ঋগ্বেদ অগ্নি থেকে এসেছে, যজুর্বেদ বায়ু থেকে, এবং সামবেদ সূর্য থেকে"।

"কল্প" কী এবং তার গুরুত্ব কি? 

কল্লূক ভট্টের ব্যাখ্যা বুঝতে হলে "কল্প" শব্দটির অর্থ জানা জরুরি। বৈদিক ব্রাহ্মণরা সময়কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছেন—
  1. বর্ষ (Varsha)
  2. যুগ (Yuga)
  3. মহাযুগ (Maha Yuga)
  4. মন্বন্তর (Manvantara)
  5. কল্প (Kalpa)

  • বর্ষ হল সাধারণ এক বছর।
  • যুগ বলতে কী বোঝানো হয়, সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।
  • একটি মহাযুগ চারটি যুগ নিয়ে গঠিত—
    • কৃতযুগ
    • ত্রেতাযুগ
    • দ্বাপরযুগ
    • কলিযুগ
  • ৭১টি মহাযুগ মিলে হয় এক কল্প

কল্পের ধারণাটি বিশ্বের সৃষ্টি (সৃষ্টি) ও বিনাশ (প্রলয়) এর সঙ্গে সম্পর্কিত। সৃষ্টি থেকে বিনাশ পর্যন্ত যে সময়কাল, সেটিকেই কল্প বলা হয়। বেদের উৎপত্তির ধারণাও কল্পের ধারণার সঙ্গে জড়িত।

কল্প ও বেদের উৎপত্তি

বৈদিক বিশ্বাস অনুযায়ী, নতুন কল্প শুরু হলে, নতুন করে সৃষ্টি হয় এবং তখনই  ব্রহ্মা সেই একই বেদকে আগুন (অগ্নি), বায়ু (বায়ু) ও সূর্যের (সূর্য) থেকে আহরণ করেন। 

কল্লূক ভট্ট বোঝাতে চেয়েছেন যে, যদিও প্রত্যেক নতুন কল্পে নতুন বেদ আসে, তবে সেই বেদ আসলে আগের কল্পের একই বেদ যা ব্রহ্মার স্মৃতি থেকে পুনরায় আহরিত হয়। এই জন্যই বলা হয়— "বেদ সনাতন", অর্থাৎ চিরকাল পূর্ব-বিদ্যমান

প্রকৃত প্রশ্ন: বেদ কে সৃষ্টি করল?

কল্লূক ভট্ট যা বলেছেন, তা বেদের পুনরুজ্জীবন বা স্মৃতী নিয়ে। কিন্তু লেখকের প্রশ্ন হলো—

  • বেদ কে তৈরি করল?
  • প্রথম কল্পের শুরুতে কে বেদ রচনা করেছিল?

আম্বেদকর বলছেন যদি বেদ সত্যিই "সনাতন" বা চিরন্তন হয়, তবে তার কোনও আদি সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবতা হল, কিছু না থাকলে কিছু সৃষ্টি হতে পারে না। তাই বেদেরও একটি সৃষ্টির সূচনা থাকতে হবে

ড: আম্বেদকরের আরো আক্ষেপ এই প্রশ্নের জবাবে ব্রাহ্মণরা কেন সরাসরি জবাব দেন না? তারা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে ব্যাখ্যা দেন।


ড. আম্বেদকরের যুক্তির সারমর্ম:

  1. বেদকে চিরন্তন বলে দাবি করা হলেও, এটি যৌক্তিকভাবে অসম্ভব।
  2. নতুন কল্পের শুরুতে বেদ কেবল পুনরায় স্মরণ করা হয় বলে দাবি করা হয়, কিন্তু প্রথম কল্পে কে বেদ সৃষ্টি করেছিল, সে প্রশ্নের উত্তর নেই।
  3. বেদ যদি ঈশ্বর-প্রদত্তও হয়, তবে তার উৎস সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকা দরকার।
  4. বৈদিক ব্রাহ্মণরা এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে ঘুরিয়ে ব্যাখ্যা দেন, যা মূল প্রশ্নের সমাধান দেয় না।

আমি আগেও বলেছি, এবারও বলছি।

এই পুস্তকটি সত্যিই আম্বেদকর লিখেছেন কি না তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কারণ এর প্রতিটি যুক্তিই হাস্যকর। আম্বেদকর মতো বিদ্যানের পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়। 

With the beginning of the creation there comes into being a new series of Vedas. What Kulluka Bhatt wants to convey is that, though in a sense every new Kalpa has a new series of Vedas the same old Vedas are reproduced by Brahma from his memory. That is why he says the Vedas are Sanatan i.e., eternally pre-existing. What Kalluka Bhatt says is that the Vedas are reproduced from memory. The real question is who made them and not who reproduced them. Even if one accepts the theory of reproduction at the beginning of each Kalpa the question still remains who made the Vedas when the First Kalpa began. The Vedas could not have come into being ex-nihilo. They must have a beginning though they may have no end. Why don't the Brahmins say openly? Why this circumlocution?

তাদের অবশ্যই একটি শুরু আছে যদিও তাদের কোন শেষ নেই। বেদ কখনোই শূন্য থেকে উৎপত্তি লাভ করতে পারে না।  ড. বি. আর. আম্বেদকর এখানে দেখিয়েছেন যে, বেদের উৎপত্তি সম্পর্কে বৈদিক ব্রাহ্মণদের ব্যাখ্যা যুক্তিহীন ও অস্পষ্ট। তারা বেদকে সনাতন বলে দাবি করলেও, তার প্রকৃত উৎস সম্পর্কে কিছুই স্পষ্ট করে বলেন না।

তিনি যুক্তি দেন যে—
  • কোনো কিছু "চিরন্তন" হতে পারে না যদি তার কোনো সূচনা না থাকে।
  • "বেদ পূর্ববর্তী কল্প থেকে এসেছে"—এই ব্যাখ্যা আসলে যুক্তির পরিপন্থী, কারণ এটি আসল প্রশ্নকে এড়িয়ে যায়।
  • যদি বেদ সত্যিই পূর্ব-বিদ্যমান হয়, তবে প্রথমবার এটি কোথা থেকে এলো?

লেখকের এখানে ভুল একটাই যে প্রথমত, তিনি  মনুস্মৃতির নিরিখে বেদের শাশ্বত সত্বাকে বিচার করেছেন। যেখানে মনুস্মৃতিতে মনু সৃষ্টির আরম্ভ শুরু করেছেন মহা প্রলয়ের পর থেকে। দ্বিতীয়ত বেদকে তিনি কেবলই কিছু পুস্তক ভেবে বসে আছেন।

"বেদ ঈশ্বরের সৃষ্টি নয়, বরং ঈশ্বরের আত্মপ্রকাশ।"   উপনিষদে বলা হয়েছে "सर्वज्ञः सर्वविदस्य ज्ञानमयं तपः।तस्मादेतद्ब्रह्म नामरूपमन्नं च जातम्॥" (Shvetashvatara Upanishad 6.18) অর্থাৎ— "তিনি সর্বজ্ঞ এবং সর্ববিদ, এবং তাঁর জ্ঞানই তপস্যার মতো। সেই থেকেই ব্রহ্ম এই নাম-রূপময় বিশ্ব এবং সমস্ত অন্ন (খাদ্য বা উপাদান) জন্ম নিয়েছে।" যেহেতু বেদ সেই জ্ঞান। সেই জ্ঞানের ভিত্তিতে বেদ স্বয়ং সেই ঈশ্বর থেকে পৃথক নয়।

আরো সহজ কথায়, বীজের অঙ্কুরোদগম না হওয়া পর্যন্ত বীজকে উদ্ভিদ বলা যায় না। সেভাবেই কালের আরম্ভ থেকেই সৃষ্টি আরম্ভ বলা হয়। বেদ বা জ্ঞান সেই কালের দ্বারা সীমিত নয়। কল্পের আদি থেকে বেদ আছে।

বৃহদারণ্যক উপনিষদ (২.৪.১০) বলছে:

"ब्रह्मविद् वेदं ब्रह्म इति जानाति।"(ব্রহ্মবিদ বেদম ব্রহ্ম ইতি জনাতি.)" অর্থাৎ — যারা ব্রহ্মকে জানে, তারা জানেন যে বেদই ব্রহ্ম।" ঠিক যেমন বীজ ও উদ্ভিদের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে, তেমনি বেদ ও ব্রহ্মের মধ্যে সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।


আপনি যদি আরও বিস্তারিত জানতে চান বা এই প্রসঙ্গে বিশেষ কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চান, তাহলে নিচে কমেন্ট করে বলুন!

H. R. Sarkar is a dedicated blogger and entrepreneur with expertise in creating digital products and Blogger templates. Managing websites like TechaDigi.com and Hinduhum.net, they bring creativity and technical proficiency to their projects. Through their YouTube channel, Lost Eternal Science, H. R. Sarkar explores the fusion of Hindu spirituality and science, offering unique insights to their audience. With a passion for innovation, they strive to inspire and educate through their work.

0 Comments: