Headlines
Loading...
তান্ত্রিক উপায়ে চোখের  চিকিৎসা

তান্ত্রিক উপায়ে চোখের চিকিৎসা

এই প্রতিবেদনে বন থেকে ঔষধি গ্রহনের পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য হিন্দু শাস্ত্র ও ইতিহাস গুলোকে তথ্য আকারে সকলের সামনে উপস্থাপন করা। কারণ কোনো কিছুকে সম্পূর্ণ ভাবে জানার মাধ্যমেই প্রকৃত জ্ঞান অর্জন সম্ভব। অর্ধেক জ্ঞান অজ্ঞানের থেকেও বিপদজনক। 

কিছু কিছু হিন্দু ধার্মিক ব্যক্তি আছে যারা নিজের জ্ঞান গরিমা দেখানোর জন্য তন্ত্রের অপমান করে থাকেন।তারা বলে থাকেন, "এই তন্ত্র মন্ত্র অন্ধ বিশ্বাসের কথা। অথচ, সে নিজেই ওই তন্ত্রের দ্বারাই দীক্ষা গ্রহণ থেকে শুরু করে, জাগ যজ্ঞ, বিবাহ করে। এ সবই তন্ত্রের অন্তর্গত। কারণ বেদের মন্ত্র প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রেই তান্ত্রিক পদ্ধতিতেই করা হয়। 

অবিশ্বাসীদেরও এই একই বক্তব্য যে "তন্ত্র মন্ত্র যন্ত্র অন্ধবিশ্বাস। তাদের কোনো দোষ দেওয়া যাবে না। কারণ তাদের স্ট্যান্ড তাদের যুক্তিতে সঠিক। তাঁরা ঈশ্বরেই বিশ্বাস করে না, তাই তন্ত্র মন্ত্র যন্ত্র বিশ্বাসের প্রশ্নই আসে না। ধার্মিক ব্যক্তিদের দ্বিচারিতা নিয়েই আমার কষ্ট।      অর্ধেক জ্ঞান অজ্ঞানের থেকেও বিপদজনক। 

তন্ত্র শাস্ত্র যদি তন্ত্র মন্ত্র জাদু টনা টোটকা অন্ধ বিশ্বাসের কথাই হতো তবে এই প্রতিবেদনটি অবশ্যই পড়ুন। বুদ্ধিমান ব্যক্তি নিজেই অনুমান করতে পারবেন তন্ত্র আদৌ কি অন্ধবিশ্বাসের প্রায়োগ না নৈতিক কর্তব্য।

ঔষধি বৃক্ষ গ্রহনের বিধি

তন্ত্রশাস্ত্র বলেছে —বিধি অনুযায়ী সঠিক মন্ত্র দিয়ে আনা ওষুধ সফল, আর পদ্ধতি ও মন্ত্র ছাড়া আনা ওষুধ কাঠের মতো নিষ্ফল। এর পেছনে কি যুক্তি আছে?

তন্ত্র বলছে— যে ওষুধ বনের নির্জন স্থানে ভালো পরিবেশে থাকে তা সফল হয়। কারণ তার মধ্যে ক্ষমতা থাকে। যা জল দ্বারা পচে গেছে, আগুনে পুড়ে গেছে, অকালে জন্মেছে, বা পোকা মাকড়ের দ্বারা ভক্ষিত হয়েছে সেই ঔষধি, অতি বা অল্প থাকলেও না থাকার সমান। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে শিবের পূজা করা উচিত এবং পবিত্রতাপূর্ণ সমস্ত ঔষধি দ্রব্য গ্রহণ করা উচিত।  

বিজ্ঞান বলছে বৃক্ষ তথা উদ্ভিদের আমাদের মতই চেতনা আছে। তারাও উত্তেজনায় সারা দেয়। যদি ওই  তাদের যথেচ্ছ ভাবে হনন করা হয়। তবে ইহাকে হিংসা বলে গণ্য করা হয়। তাই, অহিংস অবলম্বন করে কিভাবে ঔষধি চয়ন কর্তব্য। সেটা আলোচনা নিচে করা হলো।

প্রথমে শাস্ত্র নির্দিষ্ট তিথিতে নিম্নোক্ত মন্ত্র পাঠ করে বৃক্ষ মূলে ভূত অপসারণ মন্ত্র পাঠ করা উচিত।

ॐ বেতালশ্চ পিশাচশ্চ রাক্ষসশ্চ সরীসৃপাঃ। 
অপসপন্তু তে সর্বে বৃক্ষাদস্মাচ্ছিবাজ্ঞয়া ॥ 

মন্ত্রে বলা হয়েছে যে — সকল ভূত, পিশাচ, সরীসৃপ এই বৃক্ষে আছে, তাঁদের সবাইকে অপসারণ করতে আজ্ঞা হয়। এরপর প্রণাম করে তারপর এই মন্ত্র বলতে হবে।

ॐ  নমস্তে অমৃত সম্ভূতে বলবীর্য্যবিবর্দ্ধিনি। 
বলয় আয়ুশ্চ মে দেহি পাপান্মেত্রাহি দূরতঃ॥

মন্ত্রের অর্থ হলো: অমৃত থেকে উৎপন্ন (হে বৃক্ষ বা উদ্ভিদ), বল বীর্য বর্ধনকারী আমাকে বল এবং আয়ু দিন। আমার পাপ নাশ করে পাপ থেকে দূর রাখুন। এরপর, বৃক্ষর কাছে হাত জোড় করে ওই বৃক্ষের উদ্দেশ্যে বলতে হবে,  “যে কারণে ব্রহ্মা ও ভৃগজী তোমাকে খনন করেছে, যে কারণে ইন্দ্র ও বরুণ তোমাকে খনন করেছে, সেই কারণেই মন্ত্র দ্বার আমি তোমাকে পবিত্র হাতে খুঁড়েছি। খনন এবং উপড়ে ফেলার মধ্যে তোমার মহিমা যেন অন্যথায় না হয়।  হে কল্যাণী! এখানে থেকে, আপনি আমাদের কাজ এবং আমার কাজ সিদ্ধি লাভের পর আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্বর্গে যাবেন।”

এরপর, যে দিন রবিবারে পুষ্যা নক্ষত্র থাকবে সেই দিন "ॐ ह्रीं चण्डे हूं फट्‌ स्वाहा" এই মন্ত্র দ্বারা মূল উৎপাটন করতে হবে। ॐ हीं क्षौ फट्‌ स्वाहा এই মন্ত্র দ্বারা মুল ছেদন (কাটতে) হবে। পুরাণ অনুসারে পুষ্যা নক্ষত্র চন্দ্রের স্ত্রী, যার প্রভাবে ঔষধীর গুণ বর্ধন হয় বলে মনে করা হয়। তিনি পৃথিবীতে ঔষধী গাছের দেবী।

বিঃদ্রঃ  এই সকল মন্ত্র গুরুর কাছ থেকেই গ্রহণ করা উচিত। তবেই মন্ত্রের শক্তি কাজে দেবে। এই ব্লগ থেকে পড়ে বা বই পড়ে ব্যবহার করবেন না। 

অনেকেই যুক্তি দিতে পারেন, "গাছ কি আমাদের কথা বুঝতে পারে?" হ্যাঁ, গাছ হয়তো আমাদের কথা সরাসরি বুঝতে পারে না। কিন্তু তারা আমাদের কথা না বুঝলেও, আমরা তাদের প্রতি হিংস্রতা বা পীড়াদানের দায় থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারি।

যে ঔষধী গাছটি কোনো নির্দিষ্ট স্থানে জন্মেছে, সেই স্থানীয় মাটির রস, পুষ্টি ও পরিবেশের প্রভাবেই তার ঔষধি গুণাবলি তৈরি হয়। কিন্তু যদি সেই গাছটি নোংরা পানি, বিষাক্ত পোকামাকড় বা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন তার ঔষধি গুণ নষ্ট হবে না—এটা নিশ্চয়তার সঙ্গে কে বলতে পারে? তাই, আমরা যদি উদ্ভিদের প্রতি যত্নশীল হই, তার সঠিক বৃদ্ধি ও গুণাবলি নিশ্চিত করতে পারি।

দেখুন, হিন্দু ধর্মে উদ্ভিদের শরীর থেকে ফল, ফুল, পাতা গ্রহণ করার সময় যে অহিংসার দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শিত হয়, তা অন্য কোনো সভ্যতায় খুব কমই দেখা যায়। কারণ, অন্যান্য অনেক সংস্কৃতি বা ধর্মে এ ধরনের বিশ্বাস ও প্রথা নেই। এখানে শুধু ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটানোই নয়, সেই সঙ্গে উদ্ভিদ তথা স্থাবর জীবের তাঁর এই জীব বন্ধন থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনাও করা হচ্ছে। এই পদ্ধতি কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং প্রকৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধার প্রতিফলন।

নীচে কিছু ভোজ চিকিৎসার উদাহরণ উল্লেখ করা হলো, যা বর্তমান সময়ে বৈজ্ঞানিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও নিরাপদ:

কাকমাচি উদ্ভিদ এবং চোখের  চিকিৎসা:

কামকলা তন্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে —

वर्षाकाले काकमाची समूला तैलपाचिता । खादेत्समासतश्चक्षुर्गंधदृष्टि समं भवेत्  ॥

অর্থাৎ — বর্ষাকালে কাকমাচি উদ্ভিদ (Black Nightshade) সমূলে তেলে ভেজে একমাস খেলে গিধ বা চিলের মতো চোখের জ্যোতি হয়। এটি একটি প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার অংশ, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গ্রামীণ অঞ্চলে "অভিজ্ঞ লোক" ব্যবহার করে থাকেন।

কাকমাচি (Black Nightshade) একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Solanum nigrum। এটি সোলানেসি (Solanaceae) পরিবারভুক্ত একটি উদ্ভিদ এবং বিভিন্ন জায়গায় আগাছা হিসেবে জন্মায়। গ্রাম্য এলাকায় একে শাক হিসেবে খায়।

উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য:

1. পাতা: ডিম্বাকৃতির বা লম্বাটে এবং রং সাধারণত সবুজ।

2. ফুল: ছোট এবং সাদা রঙের, মাঝখানে হলুদ রঙের।

3. ফল: ছোট, গোলাকার এবং কালো বা বেগুনি রঙের হয় (পরিপক্ব অবস্থায়)।

বাংলাদেশ, ভারত, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন উষ্ণ অঞ্চলে এটি পাওয়া যায়।

ঔষধি গুণাগুণ:

1. অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি: প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

2. যকৃতের সুরক্ষা: যকৃতের বিভিন্ন সমস্যায় ব্যবহৃত হয়।

3. ত্বকের রোগ: চর্মরোগ এবং ক্ষত নিরাময়ে কার্যকরী।

4. জ্বর কমাতে: প্রাচীন আয়ুর্বেদে এটি জ্বর নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।

5. অ্যান্টি-টক্সিন: বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সহায়ক।

পুষ্টিগুণ: কাকমাচি ভিটামিন এ, সি এবং বিভিন্ন অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

6. রক্ত পরিষ্কারক: এটি রক্তকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, যা চোখের সমস্যাগুলোর জন্য পরোক্ষভাবে উপকারী হতে পারে।

7. ফ্ল্যাভোনয়েড: এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড চোখের কোষের পুনর্গঠনে সাহায্য করতে পারে।

সতর্কতা:

গ্লুকোমা রোগের ঔষধ হিসেবে এই উদ্ভিদ ব্যবহার করা হয়। তবে নিজে নিজের জন্য ব্যবহারের পূর্বে বৈদ্যর পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

কাকমাচির অপরিপক্ব ফল বিষাক্ত হতে পারে। সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়া উচিত। এই গাছের ভেষজ গুণ সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন এমন কারও পরামর্শ নিয়ে খাওয়াই নিরাপদ।

চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাকমাচি সহ প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর ভূমিকা রয়েছে। চোখের সমস্যার জন্য বৈদ্য বা অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। একথা বলছি কারণ, যে কোনো রোগের চিকিৎসার জন্য আগে রোগ নিদান করা হয়। তারপর, ওই রোগের বিধি বা বিধান দেওয়া হয়। 

H. R. Sarkar is a dedicated blogger and entrepreneur with expertise in creating digital products and Blogger templates. Managing websites like TechaDigi.com and Hinduhum.net, they bring creativity and technical proficiency to their projects. Through their YouTube channel, Lost Eternal Science, H. R. Sarkar explores the fusion of Hindu spirituality and science, offering unique insights to their audience. With a passion for innovation, they strive to inspire and educate through their work.

0 Comments: