Headlines
Loading...
ধর্মগ্রন্থে যা আছে তা কি আমাদের চোখ বন্ধ করে মেনে যেতে হবে? Should we blindly accept what is in the scriptures? 

ধর্মগ্রন্থে যা আছে তা কি আমাদের চোখ বন্ধ করে মেনে যেতে হবে? Should we blindly accept what is in the scriptures? 

"ধর্মগ্রন্থে যা আছে তা আমাদের চোখ বন্ধ করে মেনে যেতে হবে।" —না এমনটা মোটেও নয়। আমাদের হিন্দু ধর্মগ্রন্থ চোখ বন্ধ করে মেনে নিতে বলছে না। বরং যাচাই করেই চলতে বলছে।

অভিভ্যক্তে অর্থে জ্ঞান হেতু জিজ্ঞাসিতব্য।"
(কঠ উপনিষদ ১.২৯)

অর্থ: সত্যের এবং জীবনের উদ্দেশ্যের সন্ধানে প্রশ্ন করো।

কারণ, পাত্রতা (যোগ্যতা) ভেদে ধর্মের ভিন্নতা আছে। ধর্মের ভিন্নতা থাকায় কর্মের ভিন্নতা আছে। তাই জানতে হবে— এই ধর্ম কি? এবং কিভাবে আমাদের ধর্মের সঙ্গে পাশ্চাত্য সভ্যতায় যাহাকে Religion বলে, এর কি পার্থক্য আছে। এই নিয়ে আমরা আগেও আলোচনা করেছি। 


আজ আমাদের আলোচনার বিষয় হলো হিন্দু ধর্মের ধর্মান্ধতা বা মৌলবাদী তকমা থেকে পাশ্চাত্য প্ররোচনা থেকে আলাদা করে দেখা।

ধর্মের সংকীর্ণতা ও স্বচ্ছতা:

আমাদের দেশে ধর্মের যে ইতিহাস আছে। যদি পর্যালোচনা করা যায় তবে আমরা দেখবো যে বিশ্বের সমগ্র ধর্মের যোগসূত্র আমাদের সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে জুড়ে আছে। তন্ত্র, যোগ, জ্ঞান ও ভক্তি এই চারটি সাধনায় সিদ্ধ হয়ে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের প্রসার হয়েছে। তাই, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের প্রণেতা, প্রতিষ্ঠাতা, প্রধান দেবতা থাকলেও সনাতন ধর্মের কোন প্রণেতা প্রতিষ্ঠাতা বা দেবতা নেই।

সনাতন ধর্মের বিভিন্ন মতপথ সম্প্রদায় নিজ নিজ পথে নিজ নিজ সাধন পদ্ধতি অবলম্বন করে। সেই এক ও পরম সত্যের সন্ধান পান।

তাই সনাতন ধর্ম কোনো কোম্পানি বা দলে যোগদানের নীতি নয়। এখানে ধর্ম গ্রহণ করতে গেলে আপনাকে কোনো শর্ত বা অঙ্গীকার বদ্ধ হতে হবে, বা অঙ্গীকার খন্ডন করলে মৃত্যু দন্ড দেওয়া হবে না।

যদি কোন ব্যক্তি সত্য জানতে ইচ্ছা করে। সত্যের সন্ধান করেছে সত্য লাভ করবে। সনাতন ধর্মে কোন কিছুই লুকিয়ে নেই। সবকিছুই সামনে রেখে দেওয়া আছে।  শুধু সঠিক সময়ে, সঠিক স্থানে, যোগ্য ব্যক্তি সেগুলো বুঝতে পারে। 

একজন ব্যক্তির যে গুণ, সেই গুণ বা রুচি অনুসরণ করে, সেই অনুসারে তাঁকে ওই ধর্মের পথ নির্বাচনের শিক্ষা দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, যারা নিরাকার ব্রহ্মের সাধনা করে। তাকে জোর করে মূর্তি পূজা করা হবে না। অথবা যিনি মূর্তি পূজা মাধ্যমে ঈশ্বর সেবা করতে চান। তাকে কেউ পাপকর্ম বলে মূর্তির খণ্ডন করবে না। আবার, জিনি কৃষ্ণ উপাসক, তাকে দিয়ে জোর করে কালী পূজা করানো হবে না।

এই কারণে, সনাতন আগে যা ছিলো, তাইই আছে, এবং যুগ যুগন্তর ধরে সেটাই থাকবে। তবে হ্যা, ভুল ত্রুটি বা অজ্ঞানতাবশত শাস্ত্রের ভূল ইন্টারপ্রিটেশন মানুষ করতেই পারে। নিজের স্বার্থের উদ্যেশে অর্থ বিকৃত করলেও শাস্ত্রার্থ দ্বারা, যুক্তি ও তর্ক দ্বারা সেই বিকৃতি বা ত্রুটি সংশোধন করতে পারবে। মনুস্মৃতি ধর্মের উৎপত্তি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছে—

কর্মনাঞ্চা বিবেকার্থাং ধর্মাধর্মৌ ব্যাবেচয়ত্ ।
দ্বন্দ্বৌরয়োজয়চ্চৌমঃ সুখদুঃখাদিভিঃ প্রজাঃ॥ ২৬॥
কর্ম ও অকর্মের পার্থক্য জন্য, তিনি (ঈশ্বর) ধর্ম ও অধর্মের পার্থক্য করেছিলেন; এবং তিনি এই গুলোকে প্রাণীদের আনন্দ-বেদনা এবং এর মতো বিপরীত যুগ্মের সাথে সংযুক্ত করেছিলেন।

তাই, কর্ম করার আগে তার বিবেক দিয়ে ধর্ম ও অধর্মের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করা উচিত। বিবেক ছাড়া আচরিত উত্তম কর্মও পাপ বলে বিবেচিত। মানুষের উচিত সুখ ও দুঃখ, ভালো এবং খারাপ ইত্যাদি দ্বন্দ্বকে জয় করে নিজের কর্মের মাধ্যমে জীবনের সঠিক পথ অনুসরণ করা।

আমাদের ধর্মগ্রন্থ কখনোই বলে না চোখ বন্ধ করে সব মেনে যেতে হবে। তাই, ভগবানকে, ধর্ম শাস্ত্রকে, নিজের গুরু, মহাপুরুষদের প্রশ্ন করার অধিকার আমাদের ধর্ম আমাদের দেয়। প্রতিটি শাস্ত্র প্রশ্নোত্তর ও দার্শনিক ব্যাখ্যা। ওই শাস্ত্রের ওপর পন্ডিতরা টিকা টিপ্পনী করে গেছেন। সেই টিকার ওপর অন্য পন্ডিতের মন্ডন এবং খন্ডন আছে।

অর্থাৎ,  হিন্দু ধর্মের সংকীর্ণতা ও বিবর্তন সম্ভব। যেটি অন্যান্য ধর্মে নেই। 

ঈশ্বর কি জগত সৃষ্টি করেছেন?

যদি বলা হয় "জগত সৃষ্টি হয়েছে"। তাহলে প্রশ্ন সৃষ্টিকর্তা কোনো কোন উপকরণ দিয়ে জগত সৃষ্টি করেছেন? কারণ, উপকরণ ছাড়া এই সৃষ্টি সম্ভব নয়। হিন্দু ধর্মের শাস্ত্রে বলা হয়েছে, ঈশ্বর নিজেই জগত হয়েছেন। "তৎ ত্বং আসি" —তুমিই সে। এই জগত আমাদের মস্তিষ্কের প্রতিফলন। ইন্দ্রীয় গুলো অন্তঃকরনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে আমরা বাইরের জগতকে অনুভব করি। এই জগত সত্য নয়। আমাদের কাছে এই জগত ততক্ষনই সত্য, যতক্ষণ মৃত্যুর সঙ্গে সাক্ষাৎ না হয়।

এই একই কথা কোয়ান্টাম বিজ্ঞানীরা বলছেন। পরমাণু বা অন্তঃপরমাণবিক প্রক্রিয়ায় জগত আসলে একই ইলিউশন।

তৎ ত্বম অসি —তুমিই সে

কোয়ান্টাম বিজ্ঞান এবং হিন্দু দর্শনের মিল:

কোয়ান্টাম বিজ্ঞান এবং অন্তঃপরমাণবিক গবেষণায়ও অনুরূপ কথা বলা হয়েছে।

১. ইলিউশন অব ম্যাটার (Matter is Illusion):

কোয়ান্টাম ফিজিক্স বলছে, বস্তুত, পরমাণুর ৯৯.৯৯৯৯৯৯৯৯% ফাঁকা স্থান।

> "Matter does not exist in solid form; it is an energy field or wave function."

এটি হিন্দু দর্শনের মায়াবাদ তত্ত্বের সঙ্গে মিলে যায়।

২. Quantum Superposition and Observer Effect:

কোয়ান্টাম তত্ত্ব বলছে, কোনো কণা (particle) একাধিক স্থানে থাকতে পারে, যতক্ষণ না তা পর্যবেক্ষণ করা হয়।

> "Reality depends on the observer."

এই ধারণা বেদান্তে বলা চেতনাবাদের সঙ্গে মিলে যায়, যেখানে বলা হয়েছে:

"জগত চেতনার বাইরে অস্তিত্বহীন।"

৩. Unity in Diversity:

কোয়ান্টাম ফিজিক্স বলছে যে, সবকিছুই একক শক্তির রূপ। হিন্দু দর্শনে বলা হয়েছে:

> "ব্রহ্ম সত্যং, জগত মিথ্যা।"

অর্থাৎ, জগত মিথ্যা (মায়া), কিন্তু এর মূল শক্তি বা চেতনা (ব্রহ্ম) সত্য।

Himadri Roy Sarkar always had a passion for writing. When he was younger, he would often write stories and share them with his friends. He loved the way that writing could bring people together and share ideas. In 2022, he founded The Hindu Network,The site quickly became popular, and Himadri was able to share his writing with people all over the world. The Hindu Network is now one of the most popular websites in the world, and Himadri is a well-known author and speaker. blogger external-link facebook instagram

0 Comments: