ধর্মকে বুঝতে হলে আমাদের সেই ধর্মের গভীর দর্শন এবং মূল ধারণাকে ভালো মতন জানতে হবে। কোনো কথা কেন বলা হয়েছে, তার মর্মার্থ না জেনে, কারো ধর্মকে নিয়ে আলোচনা করলে তার ধর্মের অপমান করা হয়। কারো ধর্মকে অপমান করার কোন অধিকার আমাদের নেই। তাই, জ্ঞানীরা সমালোচনা এড়িয়ে চলেন। কারো আরাধ্যে দেবতার অপমানকে বলা হয় নামাপরাধ। যার ফল নরক। কিন্তু কেউ যদি আমার ধর্মের, আমার দেবতার অপমাণ করে আমার চুপ করে থাকাটাও একই অপরাধ। সেই কারণে আমি এই প্রতিবেদন লিখছি। যাতে করে, কেউ আর হিন্দুধর্মকে শয়তানের প্ররোচনা বলতে না পারে।
🖐🏼🙂 এই প্রতিবেদন পাঠ করে আপনার মনে ধারণা হতে পারে আমি আমি যীশু খ্রীষ্টের অপমান করছি, কিন্তু না। আমি যীশু খ্রীষ্টকে সম্মান করি তাঁর জীবন ও বলিদানের জন্য। তিনি আমার কাছে গুরুবৎ পূজনীয়। একদা আমি তাঁর বিদেহী ছিলাম। তখন আমার ধর্ম জ্ঞান এতটা পুষ্ট ছিলো না, আজ যতটা সম্ভব হয়েছে।
আমি খ্রিস্টান সমাজে বসবাস করে, তাঁদের ধর্মের আদর্শ জেনে এবং তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেল পড়ে জানতে পেরেছি:— তাদের ধর্মের সঙ্গে আমাদের হিন্দু ধর্মের নীতির কোনো সম্পর্ক নেই। তবে সব মানব ধর্মেই প্রেম, পবিত্রতা ও আত্ম ত্যাগের কথা বলা হয়। সব ধর্মেরই কিছু কিছু মানুষ থাকে যারা ধর্মের নামে অধর্ম করে।
বলে রাখি, আমার আত্মীয়দের এক অংশ ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের। তাঁদের পরিবারে আবার দুই একজন প্রটেস্টেন খ্রীষ্টান। ক্যাথলিকরা মাতা ম্যারিকে সম্মান করলেও, প্রটেস্টেন দৃষ্টিতে ম্যারির কোনো গুরুত্ব নেই। সেই প্রটেস্টেন খ্রীষ্টান ব্যক্তি আমার হিন্দু ধর্ম নিয়ে কিছু মারাত্নক কথা বলেছিল। এই পোস্ট তারই প্রতিফলন।
🚫এই প্রতিবেদন একটি চ্যালেঞ্জ! সেই সমস্ত খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষদের যারা হিন্দু ধর্মের প্রতি অসহনশীল। তাই প্রতিটি লাইন খুব ভালো করে পড়বেন।
ঈশ্বরের ঈর্ষা
খ্রিষ্টান ধর্মের সঙ্গে আমাদের হিন্দু ধর্মের একটি বড়ো পার্থক্য হলো, তাঁদের ঈর্ষা পরায়ন ও দয়া দানে সংকীর্ণ মনা। আমি একথা বলছি না। খ্রিষ্টান ধর্মের ঈশ্বরের নিজেকেই ঈর্ষাপরায়ণ বলে উল্লেখ করেছেন— Exodus 20:4-5 (NIV) "You shall not make for yourself an image in the form of anything in heaven above or on the earth beneath or in the waters below. You shall not bow down to them or worship them; for I, the Lord your God, am a jealous God..."
ঈশ্বরের এই "ঈর্ষা" অবশ্য তাঁর নিজের অনুসারীদের ভালোবাসার প্রতিফলন। তিনি চান তাঁর অনুসারী ভক্তরা শুধু তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকুক, কারণ অন্য কিছু পূজা করলে তাদের আত্মিক ক্ষতি এবং ঈশ্বরের থেকে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। এটি একটি রক্ষাকারী এবং ন্যায়পরায়ণ ঈর্ষা।
এখন প্রশ্ন হলো, উৎপাদকের তো ঈর্ষা হওয়ার কথা নয়! মনে করুন, আমি একটি দোকান চালাই। আমি কোম্পানি থেকে পণ্য ক্রয় করে যে পণ্য বিক্রয় করি আমার পাশের দোকানদারও একই পণ্য বিক্রি করে। আমার দোকানে গ্রাহক যদি পাশের দোকানে যেতে শুরু করে বা আমার ইনকাম তার জন্য কমতে শুরু করে, তাহলে আমার ওই দোকানের প্রতি ঈর্ষা হবে। কিন্তু, সেই পণ্য বিক্রি নিয়ে উৎপাদনকারী কোম্পানির মালিকের ঈর্ষা হবে না। কারণ আমার ও আমার প্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বারা তারই পণ্য সবাই পাচ্ছে।
এই তুলনা যদি আমরা হিন্দু ধর্মের সঙ্গে করি। আমাদের ঈশ্বর ঈর্ষা করেন না। তিনি উদার ও উদাসীন। ঈশ্বরের উদারতা বলতে, আমাদের ঈশ্বর তাঁর ভক্তদের উপাসনা গ্রহণ করেন তাদের নিজস্ব বিশ্বাস এবং প্রথা অনুযায়ী। উদাসীন বলতে বোঝানো হয়েছে যে, ঈশ্বর সকলের প্রতি সমানভাবে অনুগ্রহশীল; তিনি কারও পক্ষপাতিত্ব করেন না। এই ভাবনা হিন্দু ধর্মকে একটি উদার ও বহুমাত্রিক বিশ্বাস পদ্ধতিতে রূপান্তরিত করেছে।
গীতায় ভগবান বলছেন:
যে যথা মাম প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্।মম বর্ত্মানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ।।—ভগবদ্গীতা ৪:১১বাংলা অনুবাদ:
"যে যেমনভাবে আমার শরণাপন্ন হয়, আমি তেমনভাবেই তার প্রতি আচরণ করি। হে পার্থ (অর্জুন), সর্বত্র মানুষ আমার পথই অনুসরণ করে।"
হিন্দু ধর্মে দেবতা, অসুর ও মানব সকলেই যে পরমেশ্বরের উপাসনা করেন, তিনিই দেবতা, অসুর ও মানবের অন্তরে ব্যাপ্ত আছেন। নিজ নিজ এলাকায় নিজের স্বাদ ও সাধ্য মতো পরস্পরের সেবায় ঈশ্বরের সেবা হয়।
অতএব, হিন্দু ধর্মের ঐশ্বরিক ক্ষমতার যোগ্যতা আপনি নিজেই অনুমান করতে পারবেন।
ঈশ্বরের অক্ষমতা এবং মূর্তি পূজা
খ্রীষ্ট ধর্মের দেবতা (ইয়াহবা) ও অসুর (শয়তান) পরস্পর বিরোধী। তাই, দেবতা, ঈশ্বর, ভগবান, পরমেশ্বরের ইত্যাদি শব্দ নিয়ে খ্রীষ্টানদের মাঝে হিন্দু ধর্মের প্রতি অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে। তাঁরা আমাদের দেবতাদের শয়তান (ফলেন এঞ্জেল) মনে করেন।
উদাহরণ স্বরুপ, বাইবেলের পুরাতন নিয়মে উল্লেখিত হয়েছে মূর্তি পূজার বিরোধী কথা। যেখানে তাদের ঈশ্বর মানুষের তৈরি মূর্তিগুলোর অক্ষমতা এবং নিরর্থকতার কথা বলেছেন —
যিশাইয় ৪৬:৭ "তারা মূর্তিটিকে কাঁধে তুলে নিয়ে যায়, এবং তাকে তার স্থানে স্থাপন করে; সে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। সেখান থেকে তা নড়তে পারে না। কেউ যদি তাকে ডাকেও, তবে সে উত্তর দিতে পারে না বা তার দুঃখ মোচন করতে পারে না।"
এখানে বোঝানো হয়েছে যে মূর্তিগুলো জড় পদার্থ এবং তাদের নিজের বা অন্যের কোনো কাজে আসার ক্ষমতা নেই। কিন্তু যে ঈশ্বর মূর্তি পুজকদের এই কথা গুলো বলছেন। সেই দেবতা কি রোজ সকলে বা স্মরণ করা মাত্র সামনে এসে ভক্তের সঙ্গে কথা বলেন? মূর্তি যে কেবলই ঈশ্বরের নৈকট্য লাভের উপকরণ সেটা এদের কে বোঝাবে? রোজ রবিবার প্রতিটি চার্চে যীশুর প্রার্থনা ও যীশুর অন্তিম দিনের সেক্রামেন্ট (হলি কমনীয়ন) দেওয়া হয়। সেই "হলি কমনীয়ন" কি সত্যিই যীশুর দেহ বা রক্তে পরিণত হয়? সেটি গ্রহণ করে ভক্তের মধ্যে বিশ্বাস দৃঢ় হয়। মূর্তির পূজা ওই একই কাজ করে।
শ্রীলঙ্কায় ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল, ইস্টার সানডের দিন, সন্ত্রাসী হামলার একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এই হামলাগুলি ছিল সমন্বিত আত্মঘাতী বোমা হামলা। সেদিন সেই ঈশ্বরের কি ভূমিকা ছিলো? ধারণা করা হয়, হামলাটি ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার (যেখানে মুসলিমদের উপর আক্রমণ চালানো হয়েছিল) প্রতিশোধ।
আসলে যে দেবতা বা ঈশ্বরের মূর্তি নিয়ে বাইবেল বলছে। সেই দেবতারা ছিলো মিশর তথা রোমের রাজা ও রাজ বংশ। সেই রাজারা নিজেদের ঈশ্বরের সন্তান বলে পরিচয় দিতো। তাদের পূর্বপুরুষের মূর্তিকে প্রজারা পূজা করতো। বাইবেল সেই সকল মানুষের মূর্তিকে সমালোচনা করেছে। যেমন, রোমুলাস এবং রেমোসের পিতা ছিলেন ছিলেন মার্স। এই মার্স রোমের যুদ্ধের দেবতা ছিলো। সেরকম সিজার বলতেন তিনি আইনসের বংশধর।
যীশুর মৃত্যুর পর রোম শাসকের পৃষ্ট পোষকতায় এই খ্রিষ্টান ধর্মের রীতি নীতি গুলো বলবৎ বাস্তবায়ন করা হয়। রোমান রাজার গ্যাগারিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী খ্রিস্ট ধর্মের বিভিন্ন উৎসবগুলো পালিত হয়। যীশু খ্রীষ্ট নিজে একজন ইহুদি ছিলেন।
বাইবেলে যীশু খ্রীষ্ট নিজেকে ঈশ্বরের সন্তান বলেছে, এমনকি যীশু খ্রীষ্ট নিজেও একজন রাজ বংশের সন্তান ছিলেন। যীশুর বংশলতিকা দুইটি জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে: মথি ১:১-১৭ এবং লূক ৩:২৩-৩৮।
উভয় ক্ষেত্রেই দেখানো হয়েছে যে যীশু দায়ূদ (কিং ডেভিড) রাজবংশের উত্তরাধিকারী। কিন্তু বর্তমান খ্রিস্টানরা প্রচার করেন যে "প্রভুযীশু কোনো রাজার ঘরে জন্ম নেননি। তিনি ছুতোর ঘরের ছেলে।"
এই বাইবেল মূর্তি পূজার বিরোধী কথা বলতে গিয়ে বলছে:
"তাদের মূর্তিগুলো রৌপ্য ও স্বর্ণের, মানুষের হাতের তৈরি। তাদের মুখ আছে, কিন্তু তারা কথা বলে না; চোখ আছে, কিন্তু দেখে না; কান আছে, কিন্তু শোনে না; নাক আছে, কিন্তু গন্ধ নেয় না; তাদের হাত আছে, কিন্তু স্পর্শ করে না; পা আছে, কিন্তু হাঁটে না; তাদের গলায় কোনো শব্দ নেই।"—(গীতসংহিতা ১১৫:৪-৭)
আরো বলা হয়েছে,
"তারা খেজুরগাছের মতো, যার কোনো প্রাণ নেই; তাদের নিয়ে যেতে হয়, কারণ তারা হাঁটতে পারে না। তাদের ভয় করো না; তারা কোনো ক্ষতি করতে পারে না, আবার কোনো ভালোও করতে পারে না।"—(যিরমিয় ১০:৫)
এর থেকে বাইবেলের ঈশ্বরের এই সংসারের প্রতি তার একটি বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে ওঠে। তিনি যে সৃষ্টির রচনা করেছেন, তিনি সেই সৃষ্টিতে মানুষকে নিজের মতো বানিয়েছেন। তারপর শয়তান কিভাবে ওই মানুষকে ঠকিয়ে দিলো? তিনি মানব সৃষ্টির আদি কালেই ওই শয়তানকে প্রতিহত করতে পারেননি। তিনি নিজের সৃষ্টিকে পরিচালনা করতে পারছেন না। বলেই মানুষকে ওই শয়তানের প্ররোচনার শিকার হতে হচ্ছে।
এখানে অনেকগুলো প্রশ্ন আসে,
- যদি ঈশ্বর সর্বজ্ঞ হয়, তবে তিনি কেন শয়তানকে প্রতিহত করলেন না।
- তিনি যদি জেনে শুনেই শয়তানকে প্রতিহত করেননি, তবে মানুষকে নরকে পাঠানোর পেছনে তাঁর কি যুক্তি আছে?
হিন্দু ধর্মের আমরা দেখি, এই জগতের সবই ঈশ্বরের মায়া। মায়া শব্দের অর্থ হলো যা নেই, তবু সত্য বলে মনে হয়। তাহলে কি আছে? উত্তর হলো শুধু তিনিই আছেন জিনি এই জগতের তথা এই মায়ার পতি। যা নেই, তার স্বামী কিভাবে হবে? অদ্বৈত বেদান্ত বলছে:
"ব্রহ্ম সত্যম্ জগন্মিথ্যা, জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ।"(শংকরাচার্যের ভাষ্যে)অর্থ:
ব্রহ্মই একমাত্র সত্য, এই জগত মিথ্যা (মায়ার সৃষ্টি)। জীব বা আত্মা আর ব্রহ্ম আলাদা নয়, তারা একই।
অর্থাৎ তিনিই জগত হয়েছেন। ব্রহ্মই মায়া হয়েছেন। ব্রহ্মময়ী। এই মায়াকে বলা হয় প্রকৃতি। তাহলে প্রশ্ন, ঈশ্বর কি পুরুষ? না, ঈশ্বর নিরলিঙ্গ। ঈশ্বরের কোনো নারী বা পুরুষ লিঙ্গ ভেদ নেই।
তবে জ্ঞানীদের মতে তিনি নিরাকার-নির্গুণ ব্রহ্ম জিনি জগতের বিস্তার করে সাকার-সগুণ ব্রহ্ম রূপে এই জগতে প্রবেশ করেছেন। তিনিই ত্রি-দেব এবং তৎ শক্তি রূপে আছেন। এদের উর্ধ্বে কিছুই নেই, এনারা কেউ ওই নিরাকার-নির্গুণ ব্রহ্ম থেকে ভিন্ন নন। তাই দেবতাদের মধ্যে উচু নীচু পদ নেই।
তাহলে এই পশু, পাখি বা মানুষ কে? এর উত্তর হলো, "সর্বং খালিদং ব্রহ্ম।" —সমস্ত জগত সেই ব্রহ্ম। তাহলে, আমাদের শত্রু বা বন্ধু কে? উত্তর হলো আমাদের মন।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (৬.৬):
"বন্ধুরাত্মা আত্মনস্তস্য, যেনাত্মৈব আত্মনা জিতঃ।অনাত্মনস্তু শত্রুত্বে, বর্তেত আত্মৈব শত্রুবৎ।"অর্থ:
যার মন সংযত, তার মনই তার পরম বন্ধু, কিন্তু যার মন অসংযত, তার মনই তার শত্রুর মতো আচরণ করে।
অতএব, সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ সব কিছুই তাঁর। রাক্ষস হোক বা দেবতা উভয়কেই তিনি শক্তি দেন। আবার উভুকেই তিনি এই নাট্য মঞ্চে শাস্তি দেন। এই জগতটাই তাঁর কাছে নাটকের মঞ্চ। তিনিই নাটকের অভিনেতা এবং তিনিই দর্শক।
গীতা ৭.৬:
"এতদ্যোনিনী ভূতানি সর্বাণীত্যুপধারয়।"
(এই সমগ্র সৃষ্টিই আমার থেকে উৎসারিত। আমি এর সৃষ্টি এবং এর বিনাশ।)
গীতা ৯.২৯:
"সমোহং সর্বভূতেষু ন মে দ্বেষ্যোস্তি ন প্রিয়ঃ।"
(আমি সমস্ত জীবের প্রতি সমান। আমার কারো প্রতি বিরাগ বা আসক্তি নেই।)
এই উপলব্ধি আমাদের শেখায় যে আমরা সবাই এই মহাজাগতিক নাটকের অংশ, এবং আমাদের মূল লক্ষ্য হলো তাঁকে চিনতে এবং তাঁর সঙ্গে একীভূত হয়ে ব্রহ্মত্ব লাভ করা। স্বর্গের সুখ ভোগ বা জান্নাতের সুন্দরীকে ভোগ করাই আমাদের উদ্দেশ্য নয়। স্বর্গীয় সুখের উর্ধ্বে পরম করুণাময় পরমেশ্বরের সাযুজ্য লাভ করাই আমাদের উদ্দেশ্য।
বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি:
বাইবেল বারবার জোর দেয় যে ঈশ্বরই একমাত্র সর্বশক্তিমান এবং জীবিত সত্তা। মানুষের তৈরি মূর্তিগুলো কেবল জড় পদার্থ, এবং তারা নিজেকে বা অন্য কাউকে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে না। এই শিক্ষাগুলো মূর্তিপূজার বিরোধিতা করে এবং ঈশ্বরের প্রতি একনিষ্ঠ ভক্তি প্রদর্শনের আহ্বান জানায়। সঙ্গে হিন্দু দেবী দেবতার বিশ্বাসের গোড়ায় কঠোর আঘাত করে। কেন?
আসলে বাইবেল ও কোরআনের ধর্ম গুলোতে ঈশ্বর থাকলেও অধ্যাত্ম নেই। অর্থ অধ্যাত্ম শব্দটি সমাস করলে হয় "অধি + আত্ম = অধ্যাত্ম"। এই সমাসটি তৎপুরুষ সমাস যেখানে "অধি" শব্দটির অর্থ "উপর", "উর্ধ্বে", "অধিকারে", বা "সংক্রান্ত"। যা "আত্মা" বা চেতনার ওপর দৃষ্টিপাত বোঝায়।
অর্থ: "আত্মার উপর গভীর জ্ঞান", বা "নিজ চেতনার সাথে সম্পর্কিত বিষয়।"
আসলে বাইবেল ও কোরআনের ধর্ম গুলোতে ঈশ্বর থাকলেও অধ্যাত্ম নেই।
আব্রাহামিক ধর্মে Religion শব্দটি, ঐশ্বরিক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা বা ঐশ্বরিক বিধানের ওপর নির্ভর করে। যীশু খ্রীষ্ট যে কথা গুলো বলছেন, সেগুলোকে চার্চ ও মিশনারিরা অন্যায় ভাবে ব্যবহার করেছে। যেমন আমাদের ধর্মেও জাতিবাদ নিয়ে ব্রাহ্মণ এবং রাজারা করেছে।
ধর্মের নামে রাজনীতি
হিন্দু ধর্মে ধর্ম শব্দটি ব্যক্তি বিশেষে নিজ নিজ নিজ কর্ম ও কর্ম বন্ধনের সঙ্গে জড়িত। মানুষের র্কতব্য কর্মই তাঁর ধর্ম।
"শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাত্।স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্মো ভয়াবহঃ।"—ভগবদ্গীতা ৩:৩৫
অর্থাৎ — "নিজের ধর্ম (কর্তব্য) পালন করতে গিয়ে মৃত্যু হলেও, শ্রেয়। অন্যের ধর্ম (কর্তব্য) উত্তম ভাবে পালন করলেও, তার ফল ভয়ঙ্কর। "
এখানে প্রসঙ্গ অনুসারে শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনকে নিজের ক্ষত্রিয় ধর্মের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই কথা বলছেন। আজকে দিনে, সেই ক্ষত্রিয় ধর্ম হলো পুলিশ বা সৈনিক।
পুলিশ বা সৈনিক যখন বন্ধুক বা আগ্নেয়াস্ত্র ধারণ করে নিজের Duty করে সে তাঁর স্বধর্ম পালন করে। সাধারণ মানুষ যদি বন্ধুক বা আগ্নেয়াস্ত্র ধারণ করে পুলিশ বা সৈনিকের ধর্ম পালন করতে যায় তবে তাকে আতংবাদি বা দুষ্কৃতকারী বলা হবে।
ব্যবসা বাণিজ্য করতে গেলে যে দক্ষতা দরকার, সেই দক্ষতা একজন অর্থনীতিবিদ বা সেই বিষয়ে অভিজ্ঞ অধ্যাপকের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। অর্থনীতিবিদ এবং অধ্যাপক এর কাজ হল শিক্ষাদান করা। কর্মক্ষেত্রে সেই জ্ঞান সহায়ক হতে পারে, কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা একজন ব্যবসায়ীর থাকে। সেই অর্থনীতিবিদ বা অধ্যাপকের জ্ঞান থাকলেও field work অভিজ্ঞতা নেই।
আবার যারা চাকরি করেন, তারা ব্যবসায় নামতে পারবে ন। তাদের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দিলে, তারা যুদ্ধ করতে পারবে না। সেই জন্য নিজের ধর্ম (কর্তব্য) পালন করা,, শ্রেয়। কিন্তু অন্যের ধর্ম (কর্তব্য) সুন্দরভাবে পালন করলেও, তা ভয়ঙ্কর।
আমাদের দূর্বলতা কোথায়?
আমাদের (হিন্দুদের) অসচেতনতা ও সামাজিক দুরত্ব আমাদের দূর্বলতা। আমাদের মঠ মন্দির গুলোতে কেবল সাদু সন্ন্যাসীরা থাকে। তারা আমাদের লৌকিক সমাজ থেকে দূরে থাকায় হিন্দু ধর্মের জ্ঞান সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছাতে পারেনা।
এর ফলে, আমাদের ঈশ্বর উদার হলেও আমরা সংকীর্ণ এবং ঈর্ষা পরায়ন। আমাদের না আছে ধর্মজ্ঞান, আর না আছে নিরহংকার জীবন। ঘন্টা বাজিয়ে, উৎসব করেই আমরা হিন্দু।
ফলে আমরা নিজেদের সংকীর্ণতা দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের দেশের বৈষ্ণব সম্প্রদায় শিবকে পরম বৈষ্ণব বলেন, ভাগবত পুরাণ (৪.২৪.২৮)-এ শিবকে "পরম বৈষ্ণব" বলা হয়েছে। "বৈষ্ণবানাং যথা শম্ভুঃ" অথচ এরা শিবের প্রসাদ খেতে চায় না। কেন? খেলে কি বিষ্ণু রাগ করবে? এদিকে যে পরম বৈষ্ণবের অপমান হচ্ছে, সেটা কি বিষ্ণুর অপমান নয়? বিষ্ণু পুরাণ বলছে আমি ও শিব এক।
"শিবো হরির হরিশ্চ শিবঃ" (শিব হরিরই রূপ, এবং হরি শিবেরই রূপ।)
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ১০ম অধ্যায়ের ২৩তম শ্লোকটি আমাদের বলছে:
"রুদ্রাণাং শঙ্করশ্চাস্মি, বিত্তেশো যক্ষরক্ষসাম্।বসুনাং পাবকশ্চাস্মি, মেরুঃ শিখরিণামহম্।"
রুদ্রদের মধ্যে আমিই শ্রেষ্ঠ শঙ্কর, যক্ষ ও রাক্ষসদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কুবের আমি, বসুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অগ্নি আমি, পর্বতগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ মেরু পর্বত আমি।
এসবের কারণ আমাদের গুরু পরম্পরা থেকে সামাজিক দুরত্ব।
বিদেশী শক্তি আমাদের উদারতা ও সরলতাকে আমাদের দূর্বলতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। আমাদের সরল সনাতনী হিন্দু মানুষদের তারা কিভাবে তারা শিক্ষা দেয়, দেখুন:
- হিন্দুদের দেবী দেবতার হাতে অস্ত্র থাকে। যীশু খ্রীষ্ট অস্ত্র ছাড়াই নিজের রক্ত দ্বারা আমাদের পাপ ও ক্ষমা করেছে।
- 🫵 কিন্তু সেই ঈশ্বর অন্তিম বিচারের দিনে, যত যীশুর ওপর ভরসা করেনাই। তাদের নরক নামক কারখানায় টর্চার করবে ঠিকই।
- হিন্দুদের দেবী দেবতারা পশু বলীর রক্ত গ্রহণ করে। যীশু খ্রীষ্ট নিজের জীবন উৎসর্গ করে, নিজের রক্ত দিয়ে ক্ষমা করে। যীশুকে মেষ পালক বলা হয়। যুগে দয়ালু দেখানোর জন্য, মেষ শাবক কোলে তুলে রেখেছে, এমন চিত্র দেখানো হয়।
- 🫵 কিন্তু সেই দয়ালু যীশুর নামে ক্রুসেড, উইচ হান্টিং হয়েছিলো সেই কথা বলবে না। সেই ঈশ্বরই এক সময় মেষ রক্ত গ্রহণ করতো।
- হিন্দুদের মধ্যে জাতিভেদ, অধিকার ভেদ, মানুষকে সমান অধিকার দেয় না। কিন্তু খ্রীষ্ট ধর্মে কোনো জাতিভেদ নেই। সকলেই সমান।
- 🫵 এমনই যদি হয়, তবে কোনো ভক্ত বা অভক্ত ভ্যাটিকানের পোপ ফ্রান্সিস বা রানী ডায়ানাকে স্পর্শ করে দেখাক। কোনো ইহুদীর সঙ্গে দুইটি ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে দেখাক। দেখবে সমগ্র খ্রিষ্টান ঐক্য টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।
জেনেসিসের যৌক্তিক ত্রুটি
বাইবেলের জেনেসিসের অনেক গুলো যৌক্তিক ত্রুটি আছে। যার ফলে অনেক মানুষ খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিক হয়ে যাচ্ছে বা নামমাত্র খ্রিস্টান ধর্ম ধারণ করে কেবল "হলি কমনীয়ন" গ্রহণ করেও নাস্তিকের জীবন যাপন করছে।
আধুনিক জ্ঞান ও শিক্ষা সম্পন্ন ব্যক্তি সেই সব যৌক্তিক ত্রুটি গুলো সহজেই দেখতে, বুঝতে এবং সমালোচনা করতে পারবেন। সেই ত্রুটি গুলো এতোটাই সাধারণ যে একে বোঝার জন্য খুব উন্নত মস্তিষ্ক বা উন্নত বৈজ্ঞানিক কৌশলেরও দরকার হয় না। সাধারণ থেকেও সাধারণ জ্ঞান দিয়েই আপনি সেগুলো বিচার করতে পারবেন। তবে...যদি আপনি মুক্ত মনে বিচার করতে চান।
নিজের দায়িত্বে পড়ুন🫵
সব ধর্মই কিছু কিছু আজগুবি এবং অবাস্তব কথায় ভরা। এ কথা আমি স্বীকার করছি। একজন হিন্দু লেখক হিসেবে আমি স্বীকার করছি, অবশ্যই হিন্দু পুরাণ গল্প গুলোতেও আজগুবি এবং অবাস্তব গল্প কথা আছে। তবে, আজগুবি মনে হলেও তাদের একটা philosophical Base বা দার্শনিক ভিত্তি আছে। গল্পের ছলে হিন্দু পুরাণ কাহিনী গুলো আসলে নৈতিক, সামাজিক এবং আধ্যাত্বিক শিক্ষা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু আব্রাহামের ধর্মের কোনো দার্শনিক ভিত্তি নেই। তারা তাদের ধর্মের উক্ত আয়াতের প্রশ্নের যুক্তি বা অর্থ প্রকাশ করতে পারে না। তাদের অন্ধ বিশ্বাসই শেষ কথা। তারা বাইবেলকে ঈশ্বরের বাণী বলেই মনে করে। সেই গুলোকেই অনুসরণ করে।
তাই নাস্তিক ও কমিউনিস্টদের কাছে— "ধর্ম হলো আফিমের নেশা"। এই বক্তব্যটি, তাদের জন্যই উপযুক্ত বলে মনে হয়।
বাইবেলের পরিচয়
বাইবেল শুধু একটি বই নয়, বরং এটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লেখক দ্বারা লিখিত অনেকগুলো বইয়ের সংকলন, যা দীর্ঘ সময় ধরে ইহুদী ও খ্রিস্টান সমাজের ধর্মীয়, নৈতিক এবং সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করেছে। খ্রিস্ট ধর্মের ইতিহাস, বাইবেল পড়লেই জানা যায়। বাইবেলে আমরা দেখতে পাই, খ্রিস্ট ধর্ম যীশু খ্রীষ্টের জন্মের আগে ছিলই না। তিনি নিজের মুখে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার করেননি। বরং তিনি বলেছেন।
"ভেবো না যে, আমি নিয়ম বা নবীদের কথা লোপ করিতে এসেছি; আমি লোপ করিতে আসি নাই, কিন্তু পূর্ণ করিতে এসেছি।"—(মথি ৫:১৭)
কারণ যীশু খ্রীষ্ট নিজেই একজন ইহুদি ছিলেন। যিশুর মৃত্যুর পর, তার শিষ্যরা তার পুনরুত্থানের বার্তা প্রচার শুরু করেন। বিশেষত পাউল (Paul) ছিলেন একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব, যিনি যিশুর শিক্ষা এবং মৃত্যু-পুনরুত্থানকে কেন্দ্র করে নতুন এক বিশ্বাস ব্যবস্থা তৈরি করেন। এটি ধীরে ধীরে ইহুদি ঐতিহ্য থেকে আলাদা হয়ে খ্রিস্টধর্ম হিসেবে বিকশিত হয়।
খ্রিস্টপূর্বত্তর ধর্ম
ইহুদীদের একটি ধর্ম গ্রন্থ ছিল যার নাম ছিল তা-না-খ। তানাখকে খ্রিস্টান কর্তৃক পুরাতন নিয়ম বলা হয়। এটিই তাঁরা নিজেদের পবিত্র গ্রন্থ হিসেবে মনে করেন। এর মধ্যে কিছু বাছা বাছা কিছু বইকে তারা নিজেদের পুরাতন নিয়ম হিসেবে গ্রহণ করেছেন। যা যীশুর জন্ম, জীবন এবং ক্রসবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ কে ন্যায্যতা প্রদান করে। তাই, খ্রিস্টানরা নতুন নিয়ম সহ পুরাতন নিয়মকেও তাঁদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। সেই সময়ে রোমান, নর্ড, গ্রীক সাম্রাজ্যে প্রকৃতি নির্ভর বিভিন্ন দেবী দেবতার পূজা হতো। ইহুদীরা তাঁদের "হিদান" (Hebrew: חִדּוּן, যার অর্থ "মূর্তিপূজক" বা "অবিশ্বাসী") বা "অধর্মী" বলে উল্লেখ করত।
বাইবেল মূলত এই অধর্মীদের বিরূদ্ধে লেখা একটি বিরোধী ধর্ম গ্রন্থ যেখানে ওই হিদানদের দেবী দেবতাদের শয়তান, বা পতিত অ্যাঞ্জেল বলে উল্লেখ করেছে।
মূলত সেই ইহুদীদের বাইবেলকে রেফারেন্স হিসেবে নতুন বাইবেলে যীশু খ্রীষ্টই সেই ঈশ্বরের বলির মেষ যার রক্তে ইহুদীদের উদ্ধার হবে বলে দাবি করা হয়।
তানাখ এবং পুরাতন নিয়মের বইয়ের তুলনা
বিভাগ | তানাখে অন্তর্ভুক্ত বই | প্রোটেস্ট্যান্ট পুরাতন নিয়ম | ক্যাথলিক পুরাতন নিয়ম |
---|---|---|---|
তোরা (Torah) | উত্পত্তি, নির্গমন, লেবীয়পুস্তক, গণনা, বিবরণ | একই | একই |
নবীয়ম (Nevi'im) | যিহোশূয়, বিচারক, শমূয়েলের ১ ও ২, রাজাদের ১ ও ২, যিশাইয়া, যিরেমিয়া, যিহিজকিয়েল, হোসেয়া, আমোস, মীকাহ, যোহেল, ওবদিয়া, যোনাহ, নাহূম, হাবাক্কূক, সপনিয়, হাগ্গয়, জখরিয়া, মালাখি | একই | একই |
কেতুবীম (Ketuvim) | গীতসংহিতা, নীতিবচন, আয়ুব, গীতশ্রেষ্ঠ, রূথ, বিলাপগীতি, উপদেশক, দানিয়েল, এজরা-নহেমিয়া, ইতিহাসের ১ ও ২ | একই | একই |
অপক্রিফা (Apocrypha) | তানাখে নেই | প্রোটেস্ট্যান্টে বাদ পড়েছে | তবিত, যিহিত, প্রজ্ঞাপুস্তক, সিরাক, বারূখ, ১ ও ২ মাক্কাবী |
পুরাতন বাইবেলের প্রথম পুস্তক, জেনেসিসের সৃষ্টির বর্ণনায় কিভাবে জগত সৃজন করেছেন, আসুন আমরা জেনে নেই—
বাইবেলে সৃষ্টির ক্রম
শুরুতেই আমার দেখি, ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। বাইবেল মতে প্রথমে পৃথিবী সম্পূর্ণ শূন্য এবং আকৃতিহীন ছিল; পৃথিবীতে কিছুই ছিল না। অন্ধকারে আবৃত ছিল জলরাশি, আর ঈশ্বরের আত্মা সেই জলরাশির উপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছিল।
সেই জল কোথা থেকে এলো? এই জল কি? এসব কিছুই পরিষ্কার করে বলা হয় নাই। ঈশ্বরের আত্মা কি, এর বিষয়ে খ্রিস্টান বাইবেল কিছু বলেনা।
মনে করো না যে আমি পৃথিবীতে শান্তি পাঠাতে এসেছি:— আমি শান্তি পাঠাতে আসিনি, তলোয়ার নিয়ে এসেছি।
প্রথম দিন
তারপর ঈশ্বর বললেন, “আলো ফুটুক!” তখনই আলো ফুটতে শুরু করল। আলো দেখে ঈশ্বর বুঝলেন, আলো ভাল। তখন ঈশ্বর অন্ধকার থেকে আলোকে পৃথক করলেন। ঈশ্বর আলোর নাম দিলেন, “দিন” এবং অন্ধকারের নাম দিলেন “রাত্রি”। সন্ধ্যা হল এবং সেখানে সকাল হল। এই হল প্রথম দিন।
হ্যা, ঠিক আছে। ঈশ্বরের নির্দেশে আলো সৃষ্টি হোলো যা দিন নামে পরিচিতি হলো। কিন্তু সেই আলোর উৎস কি? বা সেই আলোই বা কি? এটা বলা নেই। যদি আমরা হিন্দু ধর্মের দিকে তাকাই এবং বিচার করি, তবে এই আলোকে জ্ঞান এবং অন্ধকারকে অজ্ঞান বলা হয়েছে। অজ্ঞান বা তামসের ওপর জ্ঞানের আলো বিজয় করেছে। এরপর দ্বিতীয় দিনে ঈশ্বর কি করলো আসুন বিচার করি।
দ্বিতীয় দিন
তারপর ঈশ্বর বললেন, “জলকে দুভাগ করবার জন্য আকাশমণ্ডলের ব্যবস্থা হোক।” তাই ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের সৃষ্টি করে জলকে পৃথক করলেন। এক ভাগ জল আকাশমণ্ডলের উপরে (মেঘ) আর অন্য ভাগ জল আকাশমণ্ডলের নীচে (সমুদ্র , নদী, কূপের জল রূপে) থাকল। এভাবেই ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের সৃষ্টি করে জলকে পৃথক করলেন। এক ভাগ জল আকাশমণ্ডলের উপরে আর অন্য ভাগ জল আকাশমণ্ডলের নীচে থাকল। ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের নাম দিলেন “আকাশ” সন্ধ্যা হল আর তারপর সকাল হল। এটা হল দ্বিতীয় দিন।
“আকাশমণ্ডলের নাম দিলেন —আকাশ”। এখানে, একটি বিস্তৃতি বা অবকাশ বা Space অর্থে আরেকটি গগন বা Sky অর্থে আকাশ শব্দটি দুইবার ব্যবহার করা হয়েছে।
তৃতীয় দিন
তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশের নীচের জল এক জায়গায় জমা হোক যাতে শুকনো ডাঙা দেখা যায়।” এবং তা-ই হল। ঈশ্বর শুকনো জমির নাম দিলেন, “পৃথিবী” এবং এক জায়গায় জমা জলের নাম দিলেন, “মহাসাগর।” ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে। তখন ঈশ্বর বললেন, “পৃথিবীতে ঘাস হোক, শস্যদায়ী গাছ ও ফলের গাছপালা হোক। ফলের গাছগুলিতে ফল আর ফলের ভেতরে বীজ হোক। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করুক। এইসব গাছপালা পৃথিবীতে বেড়ে উঠুক।” আর তাই-ই হল। পৃথিবীতে ঘাস আর শস্যদায়ী উদ্ভিদ উত্পন্ন হল। আবার ফলদাযী গাছপালাও হল, ফলের ভেতরে বীজ হল। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে। সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল এভাবে হল তৃতীয় দিন।
এতোদূর ঠিকই ছিলো। একটু কাব্য বা বিবেক দিয়ে বিচার করলেও আপাতত ঐশ্বরিক ক্ষমতার ওপর কোনো প্রশ্ন নেই। চতুর্থ দিনের পর থেকেই ঘটলো ত্রুটি।
চতুর্থ দিন
তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশে আলো ফুটুক। এই আলো দিন থেকে রাত্রিকে পৃথক করবে। এই আলোগুলি বিশেষ সভাশুরু করার বিশেষ বিশেষ সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর দিন ও বছর বোঝাবার জন্য এই আলোগুলি ব্যবহৃত হবে পৃথিবীতে আলো দেওয়ার জন্য এই আলোগুলি আকাশে থাকবে।” এবং তা-ই হল। তখন ঈশ্বর দুটি মহাজ্যোতি বানালেন। ঈশ্বর বড়টি বানালেন দিনের বেলা রাজত্ব করার জন্য আর ছোটটি বানালেন রাত্রিবেলা রাজত্ব করার জন্য। ঈশ্বর তারকারাজিও সৃষ্টি করলেন। পৃথিবীকে আলো দেওয়ার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে স্থাপন করলেন। দিন ও রাত্রিকে কর্তৃত্ত্ব দেবার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে সাজালেন। এই আলোগুলি আলো আর অন্ধকারকে পৃথক করে দিল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে। সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে চতুর্থ দিন হল।
বিশ্লেষণ :
লক্ষ্য করুন, ঈশ্বরের আত্মা সেই জলরাশির উপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছিলেন। একই বর্ণনা পুরাণে বর্ণিত হয়েছে ভগবান বিষ্ণুও নার নামক সমুদ্রের উপর ভেসে বেড়াচ্ছিল। তাই তার নাম হয়েছ নারায়ণ। সেই নারায়নের নাভি থেকে সৃজনকর্তা ব্রহ্মা প্রকট হয়েছিলেন। যিনি এই জগৎ সৃষ্টি করেছিলেন।
বাইবেল বলছে, দ্বিতীয় দিনে সেই জলকে তিনি দুই ভাগে বিভক্ত করে আকাশের জল আর সমূদ্রের জল সৃষ্টি করেছিলেন। অর্থ্যাৎ পৃথিবীতে জল আগে থেকেই ঈশ্বরের সঙ্গে ছিল। সেই জল কোথা থেকে এলো? বাইবেল কিছুই বলে না। কিন্তু উপনিষদ বলছে।
তদৈক্ষত বহু স্যাম্ প্রজায়েয়েতি। ততেজ আসৃজত। তেজসৈক্ষত বহু স্যাম্ প্রজায়েয়েতি। তত অপো'সৃজত।
অর্থ:
তৎ (ব্রহ্ম) চিন্তা করল, "আমি অনেক হবো, আমি সৃষ্টি করবো।" তারপর তা তেজ (আগুন) সৃষ্টি করল। তারপর সেই তেজ চিন্তা করল, "আমি অনেক হবো, আমি সৃষ্টি করবো।" তারপর তা জল সৃষ্টি করল।
ঈশ্বর এক থেকে বহু হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন এবং তপ করলেন। তাঁরপর "তেজসৈক্ষত বহু স্যাম্ প্রজায়েয়েতি" তেজ বহু হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন এবং ব্রহ্মের সেই তেজ থেকে তাঁর শরীর থেকে স্বেদ (বা ঘাম) উৎপন্ন হলো। সেই স্বেদ হলো আদি জল বা নার।
সেই আদি জল, যার ওপর জিনি ভাসমান তিনি নারায়ণ বলে আমরা জানি।
উপনিষদ এবার বলছে:
আপঃ সৈক্ষন্ত বহু স্যাম্ প্রজায়েয়েতি। তত্ অন্নম্ অসৃজত।
অর্থ:
জল চিন্তা করল, "আমি অনেক হবো, আমি সৃষ্টি করবো।" এবং "অন্নম্ অসৃজত" তা অন্ন (খাদ্য বা পৃথিবী) সৃষ্টি করল। এই সমস্ত কিছু সেই সত্য ও সত্ত্বের প্রকাশ। এটি আত্মা এবং "তুমি সেই সত্তা।"
তিস্রো দেৱতা অনেন জীবেনাত্মনানু প্রবিশ্য নামরূপে ব্যাকরোত।
অর্থ:
এই তিন দেবতা জীব বা আত্মার মধ্যে প্রবেশ করল এবং নাম ও রূপ (পরিচয় ও রূপ) সৃষ্টি করল।
হিন্দু পুরাণ অনুসারে, ব্রহ্মা নারায়ণের নাভি কমল থেকে উৎপন্ন হয়ে আজকের ডিম্বকের আকৃতি ধারণ করলেন। সেই ডিম্বকের দুটি বিভাগ হল। উপরের অংশ আকাশ, নিচের অংশ ভূমি এবং মধ্যের অংশ দশদিক বিস্তার করলো। বাইবেল কিছুটা এই একই ফ্রেমে তৈরী।
এখানে পূরণের কথা গুলো "গল্প হলেও সত্যি"। দেখুন ত্বেজ থেকে জল উৎপন্ন হয়েছে, এর ব্যাখ্যা করতে হলে তন্মাত্র তত্ত্ব জ্ঞান দরকার। শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ। এই তন্মাত্র গুলো আমাদের ইন্দ্রিয় দ্বরা গ্রাহ্য। মন, বুদ্ধি চিত্ত এবং অহংকার আমাদের অন্তঃকরণ ।
মন সেই নার সাগর যার মধ্যে নারায়ণ বুদ্ধি, যার নাভী থেকে ব্রহ্ম চিত্ত রূপে আমি বা অহংকার জন্ম নিচ্ছে।। সেই অহং (আমি) এবং ইদাম (এটি) পূরুষ এবং প্রকৃতির represent করছে। জগতে তাকিয়ে দেখুন, আপনার কাছে আপনার আমিত্ব ছাড়া বাকি সবকিছুই প্রকৃতি। এটাই সনাতন ধর্মের "গল্পের ছলে জ্ঞানের কথা"।
চলুন বাইবেল কি বলছে শুনি—
প্রথম দিন ঈশ্বর বলেছিলেন, “আলো ফুটুক!” তখনই আলো ফুটতে শুরু করল। তারপর সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে প্রথম দিন শেষ হলো। এরপর চতুর্থ দিনে গিয়ে ঈশ্বর বললেন আকাশে আলো ফুটুক। এই আলো কি প্রথম দিনের আলো থেকে ভিন্ন কোনো আলো?
দিন থেকে রাত্রিকে পৃথক করবে বলে তিনি আকাশে সূর্য ও চাঁদকে বানালেন। তাহলে প্রথম দিন, দ্বিতীয় দিন কিভাবে গণনা করা হলো?
বাইবেলের ঈশ্বর দুইবার আলো ফুটুক বলছেন। সূর্য সৃষ্টি হওয়ার আগে কোন আলো সৃষ্টি হয়েছিল? আগের আলো পরের আলো কি আলাদা? সেটি একটি বড় প্রশ্ন। হতে পারে এর কোনো যুক্তি সংগত জবাব থাকবে।
হিন্দু ধর্ম গ্রন্থে কি আজগুবী গল্প নেই?
হ্যা আছে, হিন্দু ধর্মেও অনেক আজগুবি গল্প আছে। সেই গল্পগুলোর পেছনে, একটি মনঃবৈজ্ঞানিক কৌশল আছে। তাহা ছাড়া হিন্দু ধর্ম কোনো একটি ধর্ম গ্রন্থের ওপর নির্ভর করে না। যেমন বট বৃক্ষের বিভিন্ন শাখা আছে। প্রত্যেকটি শাখাই বৃক্ষ কে পুষ্প করে। হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন উপাখ্যান সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায়কে পুষ্টি প্রদান করে। একটি সত্যের বিভিন্ন বর্ণনা হতে পারে। অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টি কোণের ভিত্তিতে হিন্দু ধর্মের শাস্ত্র ঈশ্বর সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ননা করেছে।
হিন্দু ধর্মের বহু শাখা ও মত মতান্তর আছে। তবে এই ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও সকলেই এক সত্যের সঙ্গে জড়িত। সেই সম্প্রদায়গুলো পরস্পরের মধ্যে কোন ভেদ-বিবাদ নেই। সব আস্তিক মত মতান্তর গুলোর সত্যতা বেদক্ত সিদ্ধান্ত দ্বারা বিচার করা হয়। আর যে সকল নাস্তিক মত মতান্তর আছে। সেগুলো, ন্যায়শাস্ত্র দ্বারা সমাধন করা যায়। হিন্দু ধর্মের সত্যতা বেদ দিয়েই বিচার করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হতে পারে:
বেদের সত্যতা কিভাবে যাচাই করা হয়?
একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝুন। যেমন ধরুন, যদি আপনাকে কয়েকটি বিন্দু দিয়ে একটি সরল রেখা অঙ্কন করতে বলা হয়। আপনি যে কোনো একটি বিন্দু থেকে অন্যান্য বিন্দুর স্থানাংক যুক্ত করবেন। যদি সেই বিন্দু গুলো সরল রেখায় আসে। তবে সেই বিন্দু গুলোই হবে ওই সরল রেখার বিন্দু। আর যদি বাইরে দিয়ে যায়, তবে আমরা বলবো ওই বিন্দুটি সরলরেখার অংশ নয়।
এভাবেই উপনিষদ, স্মৃতি, পুরাণ শাস্ত্র গুলো হলো সেই বিন্দু। এদের মধ্যে যদি কোন বিরোধ থাকে। তবে সেটা বিচার করতে হলে আমরা ধাপে ধাপে এগোবো।
যেমন— মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে, শূদ্র সব থেকে নীচু বর্ণ। স্মৃতিশাস্ত্রের এই বক্তব্যকে বিচার করার জন্য আমরা পুরান শাস্ত্রের দিকে দেখব। পুরাণ শাস্ত্র খুলে আমরা জানতে পারলাম, শূদ্রের উৎপত্তি বশিষ্ঠ সন্তান সুকালীনের থেকে আমরা জানতে পারবো কি কারনে শুকালিনের বংশধররা শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হলো? বলা হয়, ব্রাহ্মণচিত কর্ম ত্যাগ করায় সুকালীন এবং তার বংশধরদের মধ্যে সৌর্য - বীর্য এবং ত্বেজের ক্ষয় হয়। সেই কারণে, শূদ্র বর্ণের উৎপত্তি হয়। এবার শূদ্র শব্দের অর্থ জানতে বেদের ব্যাকরণ সংস্কৃত বাংময় দেখতে হবে। যেখানে বলা হয়েছে, সমাজ, সংস্কৃতি, সংস্থা বা সিস্টেমকে যদি আমরা একজন বিরাট পুরুষ হিসেবে কল্পনা করি। সেই পুরুষের চরণ। অর্থাৎ, সমাজ সংস্কৃতি সংখ্যাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ভিত্তি সেটাই শূদ্র। যে ব্যক্তি শূদ্র, সে নীচু নয়। তাঁর পদ অন্যদের থেকে নিচে। একজন ধার্মিক শূদ্র ততটা সম্মানে অধিকারী যতটা একজন ধার্মিক ব্রাহ্মণ। সেই স্মৃতি শাস্ত্রতে একজন অধার্মিক, পতিত, বা কর্ম বর্জিত ব্রাহ্মণকেই শূদ্র বলা হয়েছে।
অর্থাৎ যখন অন্যান্য শাস্ত্রের সত্যতা যাচাই করতে যেমন বেদের দিকে তাকানো হয়। তেমনি, বেদের সত্যতা যাচাই করতে আমরা শাস্ত্রের সাহায্য নেই।
পূরণের বিভ্রম
বিষ্ণু পুরাণ মতে ভগবান বিষ্ণুই পরম ঈশ্বর। আবার শিব পুরাণ অনুসারে সদাশিব পরম ঈশ্বর। আপনি যদি দেবী ভাগবতম এবং দেবী পুরাণ খুলে দেখেন। সেখানে শিব বিষ্ণুকে তাঁর সন্তান হিসেবে দেখানো হয়েছে। কেন?
বেদ এর উত্তর দিচ্ছে
ঋগ্বেদ ১.১৬৪.৪৬ "ইন্দ্র মিত্র বরুন....একং সদ্বিপ্রা বহু ধা বদন্তি"
অর্থ: ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, যম, দেবতারা ভিন্ন ভিন্ন হলেও সত্য এক, তবে জ্ঞানীরা তাকে বিভিন্ন নামে ডাকে।
এটি হিন্দু ধর্মের বহু পথ ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি উদার মনোভাবের অন্যতম ভিত্তি। এর উদ্দেশ্য হলো নিজ নিজ রুচি অনুযায়ী ঈশ্বর সাযুজ্য লাভ। হিন্দু সনাতন ধর্ম কাউকে জোর করে ঈশ্বরের দাসত্ব করতে শিক্ষা দেয় না।
ভগবদ্গীতা ৫:১৮-এ বলা হয়েছে:
বিদ্যা বিনয় সম্পন্নে ব্রাহ্মণে গবি হস্তিনি।শুনি চৈব শ্বপাকে চ পণ্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ।।
—ব্যক্তি জ্ঞানী এবং বিনয়ী, সে ব্রাহ্মণ, গরু, হাতি, কুকুর এবং শ্বপাক (শ্ব বা কুকুর পাক করেন জিনি) এদের সবার মধ্যে সমান দৃষ্টিভঙ্গি রাখে।"
অর্থাৎ, এই সকল পুরাণ কাহিনী গুলো আলাদা আলাদা মনে হলেও। শিব, কালী, বিষ্ণু এরা ভিন্ন হলেও এক এবং অদ্বিতীয়। কালি কৃষ্ণ শিব গনেশ একই দুধের দই, ঘী, মাখন, ছানা মাত্র। যার দুধ, মাখন ভালো লাগে না, সে ছানার সন্দেশ খাবে। যার ছানার সন্দেশ ভালো লাগে না সে যাই খাক না কেন, কেউ কৃপা থেকে বঞ্চিত হবে না।
হিন্দু ধর্মের সৃষ্টি তত্ত্ব:
হিন্দু ধর্ম গ্রন্থেও আমরা দেখি ঈশ্বর প্রথমে "নার" নামক জলের সমুদ্রের সৃষ্টি করেছেন। সেই জলের উপর নিজের ব্রহ্মবীজ নিক্ষেপ করলেন। সেই বীজ ছিলো সোনালী এবং ডিম্ব আকৃতির। সেখান থেকে ঊর্ধ্বে আকাশ, নিম্নে ভূমি এবং দশ দিক উৎপন্ন হলো। সেই বীজের মধ্যেই এক বিরাট পুরুষের উৎপত্তি হলো এবং তাঁর নাম হলো নারায়ণ। নার নামক জলের উপর শয্যা করেছেন বলেই তিনি নারায়ণ। সেই নারায়ণ ব্রহ্মার সৃজন করলেন এবং সেই ব্রহ্মাই হলেন সৃষ্টি কর্তা। ব্রহ্মার দেহ থেকে প্রথমে মনু এবং শতরূপা এবং মনুর তপ সংকল্প দ্বারা ৯ জন ঋষি আবির্ভূত হলেন। এরা সকলেই ব্রহ্মার পুত্র নামে পরিচিত। পরবর্তীতে এদের মধ্যেই সাতজন ঋষি, সপ্তর্ষির নামে পরিচিতি পায়। দেবতা, দানব, কিট, পতঙ্গ, নাগ, স্বর্প, খেচর, জলচর এবং আমরা সেই ঋষিদের সন্তান। তাই সৃষ্টি কর্তা ব্রহ্মা আমাদের পিতামহ এবং মনু নির্মিত বিধান আমাদের ধর্ম শাস্ত্র।
মনুর পরে যতগুলো শাস্ত্র লেখা হয়েছে, সেগুলোও আমাদের ধর্ম শাস্ত্র। গণনার জন্য গণিত ও জ্যোতিষ শাস্ত্র, পরমার্থের জন্য যোগ শাস্ত্র, রাজনীতির জন্য অর্থ শাস্ত্র, কলা সংস্কৃতির জন্য নট বা সংগীত শাস্ত্র। এরকম বহু শাস্ত্র জ্ঞানীরা রচনা করে গেছেন। আমাদের শাস্ত্রগুলো স্বর্গ থেকে আসেনি। স্বর্গের দেবতার কৃপায় আমাদের মধ্যে যে বুদ্ধি, চিন্তা, এবং অভিব্যক্তির ক্ষমতা আছে। সেই ক্ষমতা দ্বারা আমরা শাস্ত্র রচনা করেছি।
যখন আব্রাহামিক ধর্মের লোকেরা আমাদের ধর্মকে Challenge করবে। সেই ভাইকে এই প্রশ্ন গুলো জিজ্ঞেস করুন। তার কাছে কোন যুক্তি যুক্ত জবাব থাকবে না, বা কোনো খ্রিস্টান যদি এই পোস্টটি পড়ছে, সেও কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা করতে পারবে না। যেখানে যুক্তি আসবে, সেখানেই তাঁদের ধর্মের বিশ্বাস টলমল করবে। তখন তারা আমাদের পুরাণ কাহিনীকে গালগল্প বলে এড়িয়ে যাবে। আমাদেরও উচিত এড়িয়ে চলা। প্রভু যীশু ঈশ্বর নন উনি একজন গুরু। উনি নিজের জন্য যে সকল কথা বলেছেন, আমাদের শাস্ত্রে সকল কথা প্রতিটি জীবের জন্য বলেছে। একটি কীট পর্যন্ত ব্রহ্মের উচ্চতাকে ধারণ করে।
0 Comments: