ধর্মকে বুঝতে হলে আমাদের সেই ধর্মের গভীর এবং মূল ধারণাকে ভালো মতন জানতে হবে। কোন কথা কেন বলা হয়েছে, তার পেছনে কি উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে। সেটা না জেনে, কারো ধর্মকে অপমান করার কোন অধিকার নেই।
খ্রিস্টান সমাজে বসবাস করে এবং তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেল পড়ে আমি জানতে পেরেছি, বাইবেলের জেনেসিসের অনেক গুলো যৌক্তিক ত্রুটি আছে। যার ফলে অনেক মানুষ খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিক হয়ে যাচ্ছে। বা নামমাত্র খ্রিস্টান ধর্ম ধারণ করে নাস্তিকের জীবন যাপন করছে।
আধুনিক জ্ঞান ও শিক্ষা সম্পন্ন ব্যক্তি সেই সব যৌক্তিক ত্রুটি গুলো সহজেই দেখতে, বুঝতে এবং সমালোচনা করতে পারবেন। সেই ত্রুটি গুলো এতোটাই সাধারণ যে একে বোঝার জন্য খুব উন্নত মস্তিষ্ক বা উন্নত বৈজ্ঞানিক কৌশলেরও দরকার হয় না। সাধারণ থেকেও সাধারণ জ্ঞান দিয়েই আপনি সেগুলো বিচার করতে পারবেন।
সব ধর্মই কিছু কিছু আজগুবি এবং অবাস্তব কথায় ভরা। এ কথা আমি স্বীকার করছি। একজন হিন্দু লেখক হিসেবে আমি স্বীকার করছি, অবশ্যই হিন্দু পুরাণ গল্প গুলোতেও আজগুবি এবং অবাস্তব গল্প কথা আছে। আজগুবি মনে হলেও তাদের একটা philosophical Base বা দার্শনিক ভিত্তি আছে। গল্পের ছলে হিন্দু পুরাণ কাহিনী গুলো আসলে নৈতিক, সামাজিক এবং আধ্যাত্বিক শিক্ষা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু আব্রাহামের ধর্মের কোনো দার্শনিক ভিত্তি তারা প্রকাশ করতে পারে না। তারা বাইবেলকে ঈশ্বরের বাণী বলেই মনে করে। তাই নাস্তিক ও কমিউনিস্টদের কাছে— "ধর্ম হলো আফিমের নেশা"। এই বক্তব্যটি, সত্যি তাদের জন্যই উপযুক্ত বলে মনে হয়।
বাইবেলের পরিচয়
বাইবেল শুধু একটি বই নয়, বরং এটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লেখক দ্বারা লিখিত অনেকগুলো বইয়ের সংকলন, যা দীর্ঘ সময় ধরে ইহুদী ও খ্রিস্টান সমাজের ধর্মীয়, নৈতিক এবং সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করেছে। খ্রিস্ট ধর্মের ইতিহাস, বাইবেল পড়লেই জানা যায়। বাইবেলে আমরা দেখতে পাই, খ্রিস্ট ধর্ম যীশু খ্রীষ্টের জন্মের আগে ছিলই না। তিনি নিজের মুখে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচার করেননি। বরং তিনি বলেছেন। আমি মসির নিয়মের কোন কিছুই পরিবর্তন করব না।
"ভেবো না যে, আমি নিয়ম বা নবীদের কথা লোপ করিতে এসেছি; আমি লোপ করিতে আসি নাই, কিন্তু পূর্ণ করিতে এসেছি।"—(মথি ৫:১৭)
কারণ যীশু খ্রীষ্ট নিজেই একজন ইহুদি ছিলেন। যিশুর মৃত্যুর পর, তার শিষ্যরা তার পুনরুত্থানের বার্তা প্রচার শুরু করেন। বিশেষত পাউল (Paul) ছিলেন একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব, যিনি যিশুর শিক্ষা এবং মৃত্যু-পুনরুত্থানকে কেন্দ্র করে নতুন এক বিশ্বাস ব্যবস্থা তৈরি করেন। এটি ধীরে ধীরে ইহুদি ঐতিহ্য থেকে আলাদা হয়ে খ্রিস্টধর্ম হিসেবে বিকশিত হয়।
খ্রিস্টপূর্বত্তর ধর্ম
ইহুদীদের একটি ধর্ম গ্রন্থ ছিল যার নাম ছিল তা-না-খ। তানাখকে খ্রিস্টান কর্তৃক পুরাতন নিয়ম বলা হয়। এটিই তাঁরা নিজেদের পবিত্র গ্রন্থ হিসেবে মনে করেন। এর মধ্যে কিছু বাছা বাছা কিছু বইকে তারা নিজেদের পুরাতন নিয়ম হিসেবে গ্রহণ করেছেন। যা যীশুর জন্ম, জীবন এবং ক্রসবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ কে ন্যায্যতা প্রদান করে। তাই, খ্রিস্টানরা নতুন নিয়ম সহ পুরাতন নিয়মকেও তাঁদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
ইহুদী বাইবেলকে রেফারেন্স হিসেবে নতুন বাইবেলে যীশু খ্রীষ্টই সেই ঈশ্বরের বলির মেষ যার রক্তে ইহুদীদের উদ্ধার হবে বলে দাবি করা হয়।
পুরাতন বাইবেলের প্রথম পুস্তক, জেনেসিসের সৃষ্টির বর্ণনায় কিভাবে জগত সৃজন করেছেন, আসুন আমরা জেনে নেই—
বাইবেলে সৃষ্টির ক্রম
শুরুতেই আমার দেখি, ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। বাইবেল মতে প্রথমে পৃথিবী সম্পূর্ণ শূন্য এবং আকৃতিহীন ছিল; পৃথিবীতে কিছুই ছিল না। অন্ধকারে আবৃত ছিল জলরাশি, আর ঈশ্বরের আত্মা সেই জলরাশির উপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছিল।
সেই জল কোথা থেকে এলো? এই জল কি? এসব কিছুই পরিষ্কার করে বলা হয় নাই। ঈশ্বরের আত্মা কি, এর বিষয়ে খ্রিস্টান বাইবেল কিছু বলেনা।
তানাখ এবং পুরাতন নিয়মের বইয়ের তুলনা
বিভাগ | তানাখে অন্তর্ভুক্ত বই | প্রোটেস্ট্যান্ট পুরাতন নিয়ম | ক্যাথলিক পুরাতন নিয়ম |
---|---|---|---|
তোরা (Torah) | উত্পত্তি, নির্গমন, লেবীয়পুস্তক, গণনা, বিবরণ | একই | একই |
নবীয়ম (Nevi'im) | যিহোশূয়, বিচারক, শমূয়েলের ১ ও ২, রাজাদের ১ ও ২, যিশাইয়া, যিরেমিয়া, যিহিজকিয়েল, হোসেয়া, আমোস, মীকাহ, যোহেল, ওবদিয়া, যোনাহ, নাহূম, হাবাক্কূক, সপনিয়, হাগ্গয়, জখরিয়া, মালাখি | একই | একই |
কেতুবীম (Ketuvim) | গীতসংহিতা, নীতিবচন, আয়ুব, গীতশ্রেষ্ঠ, রূথ, বিলাপগীতি, উপদেশক, দানিয়েল, এজরা-নহেমিয়া, ইতিহাসের ১ ও ২ | একই | একই |
অপক্রিফা (Apocrypha) | তানাখে নেই | প্রোটেস্ট্যান্টে বাদ পড়েছে | তবিত, যিহিত, প্রজ্ঞাপুস্তক, সিরাক, বারূখ, ১ ও ২ মাক্কাবী |
প্রথম দিন
তারপর ঈশ্বর বললেন, “আলো ফুটুক!” তখনই আলো ফুটতে শুরু করল। আলো দেখে ঈশ্বর বুঝলেন, আলো ভাল। তখন ঈশ্বর অন্ধকার থেকে আলোকে পৃথক করলেন। ঈশ্বর আলোর নাম দিলেন, “দিন” এবং অন্ধকারের নাম দিলেন “রাত্রি”। সন্ধ্যা হল এবং সেখানে সকাল হল। এই হল প্রথম দিন।
হ্যা, ঠিক আছে। ঈশ্বরের নির্দেশে আলো সৃষ্টি হোলো যা দিন নামে পরিচিতি হলো। কিন্তু সেই আলোর উৎস কি? বা সেই আলোই বা কি? এটা বলা নেই। যদি আমরা হিন্দু ধর্মের দিকে তাকাই এবং বিচার করি, তবে এই আলোকে জ্ঞান এবং অন্ধকারকে অজ্ঞান বলা হয়েছে। অজ্ঞান বা তামসের ওপর জ্ঞানের আলো বিজয় করেছে। এরপর দ্বিতীয় দিনে ঈশ্বর কি করলো আসুন বিচার করি।
দ্বিতীয় দিন
তারপর ঈশ্বর বললেন, “জলকে দুভাগ করবার জন্য আকাশমণ্ডলের ব্যবস্থা হোক।” তাই ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের সৃষ্টি করে জলকে পৃথক করলেন। এক ভাগ জল আকাশমণ্ডলের উপরে (মেঘ) আর অন্য ভাগ জল আকাশমণ্ডলের নীচে (সমুদ্র , নদী, কূপের জল রূপে) থাকল। এভাবেই ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের সৃষ্টি করে জলকে পৃথক করলেন। এক ভাগ জল আকাশমণ্ডলের উপরে আর অন্য ভাগ জল আকাশমণ্ডলের নীচে থাকল। ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের নাম দিলেন “আকাশ” সন্ধ্যা হল আর তারপর সকাল হল। এটা হল দ্বিতীয় দিন।
“আকাশমণ্ডলের নাম দিলেন —আকাশ”। এখানে, একটি বিস্তৃতি বা অবকাশ বা Space অর্থে আরেকটি গগন বা Sky অর্থে আকাশ শব্দটি দুইবার ব্যবহার করা হয়েছে।
তৃতীয় দিন
তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশের নীচের জল এক জায়গায় জমা হোক যাতে শুকনো ডাঙা দেখা যায়।” এবং তা-ই হল। ঈশ্বর শুকনো জমির নাম দিলেন, “পৃথিবী” এবং এক জায়গায় জমা জলের নাম দিলেন, “মহাসাগর।” ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে। তখন ঈশ্বর বললেন, “পৃথিবীতে ঘাস হোক, শস্যদায়ী গাছ ও ফলের গাছপালা হোক। ফলের গাছগুলিতে ফল আর ফলের ভেতরে বীজ হোক। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করুক। এইসব গাছপালা পৃথিবীতে বেড়ে উঠুক।” আর তাই-ই হল। পৃথিবীতে ঘাস আর শস্যদায়ী উদ্ভিদ উত্পন্ন হল। আবার ফলদাযী গাছপালাও হল, ফলের ভেতরে বীজ হল। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে। সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল এভাবে হল তৃতীয় দিন।
এতোদূর ঠিকই ছিলো। একটু কাব্য বা বিবেক দিয়ে বিচার করলেও আপাতত ঐশ্বরিক ক্ষমতার ওপর কোনো প্রশ্ন নেই। চতুর্থ দিনের পর থেকেই ঘটলো ত্রুটি।
চতুর্থ দিন
তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশে আলো ফুটুক। এই আলো দিন থেকে রাত্রিকে পৃথক করবে। এই আলোগুলি বিশেষ সভাশুরু করার বিশেষ বিশেষ সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর দিন ও বছর বোঝাবার জন্য এই আলোগুলি ব্যবহৃত হবে পৃথিবীতে আলো দেওয়ার জন্য এই আলোগুলি আকাশে থাকবে।” এবং তা-ই হল। তখন ঈশ্বর দুটি মহাজ্যোতি বানালেন। ঈশ্বর বড়টি বানালেন দিনের বেলা রাজত্ব করার জন্য আর ছোটটি বানালেন রাত্রিবেলা রাজত্ব করার জন্য। ঈশ্বর তারকারাজিও সৃষ্টি করলেন। পৃথিবীকে আলো দেওয়ার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে স্থাপন করলেন। দিন ও রাত্রিকে কর্তৃত্ত্ব দেবার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে সাজালেন। এই আলোগুলি আলো আর অন্ধকারকে পৃথক করে দিল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে। সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে চতুর্থ দিন হল।
বিশ্লেষণ :
লক্ষ্য করুন, ঈশ্বরের আত্মা সেই জলরাশির উপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছিলেন। একই বর্ণনা পুরাণে বর্ণিত হয়েছে ভগবান বিষ্ণুও নার নামক সমুদ্রের উপর ভেসে বেড়ায়। তাই তার নাম নারায়ণ। সেই নারায়নের নাভি থেকে সৃজনকর্তা ব্রহ্মা প্রকট হয়েছিলেন। যিনি জগৎ সৃষ্টি করেছিলেন। কিভাবে? তার আগে জেনে নেই বাইবেল কি বলছে।
বাইবেল বলছে, দ্বিতীয় দিনে সেই জলকে তিনি দুই ভাগে বিভক্ত করে আকাশের জল আর সমূদ্রের জল সৃষ্টি করেছিলেন। অর্থ্যাৎ পৃথিবীতে জল আগে থেকেই ঈশ্বরের সঙ্গে ছিল। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, ব্রহ্মা নারায়ণের নাভি কমল থেকে উৎপন্ন হয়ে আজকের ডিম্বকের আকৃতি ধারণ করলেন। সেই ডিম্বকের দুটি বিভাগ হল। উপরের অংশ আকাশ, নিচের অংশ ভূমি এবং মধ্যের অংশ দশদিক বিস্তার করলো। কিছুটা একই ফ্রেমে তৈরী গল্প।
প্রথম দিন ঈশ্বর বলেছিলেন, “আলো ফুটুক!” তখনই আলো ফুটতে শুরু করল। তারপর সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে প্রথম দিন শেষ হলো। এরপর চতুর্থ দিনে গিয়ে ঈশ্বর বললেন আকাশে আলো ফুটুক। এই আলো কি প্রথম দিনের আলো থেকে ভিন্ন কোনো আলো?
দিন থেকে রাত্রিকে পৃথক করবে বলে তিনি আকাশে সূর্য ও চাঁদকে বানালেন। তাহলে প্রথম দিন, দ্বিতীয় দিন কিভাবে গণনা করা হলো?
বাইবেলের ঈশ্বর দুইবার আলো ফুটুক বলছেন। সূর্য সৃষ্টি হওয়ার আগে কোন আলো সৃষ্টি হয়েছিল? আগের আলো পরের আলো কি আলাদা? সেটি একটি বড় প্রশ্ন। হতে পারে এর কোনো যুক্তি সংগত জবাব থাকবে।
হিন্দু ধর্ম গ্রন্থে কি আজগুবী গল্প নেই?
হ্যা আছে, হিন্দু ধর্মেও অনেক আজগুবি গল্প আছে। সেই গল্পগুলোর পেছনে, একটি মনঃবৈজ্ঞানিক কৌশল আছে। তাহা ছাড়া হিন্দু ধর্ম কোনো একটি ধর্ম গ্রন্থের ওপর নির্ভর করে না। যেমন বট বৃক্ষের বিভিন্ন শাখা আছে। প্রত্যেকটি শাখাই বৃক্ষ কে পুষ্প করে। হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন উপাখ্যান সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায়কে পুষ্টি প্রদান করে। একটি সত্যের বিভিন্ন বর্ণনা হতে পারে। অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টি কোণের ভিত্তিতে হিন্দু ধর্মের শাস্ত্র ঈশ্বর সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ননা করেছে।
হিন্দু ধর্মের বহু শাখা ও মত মতান্তর আছে। তবে এই ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও সকলেই এক সত্যের সঙ্গে জড়িত। সেই সম্প্রদায়গুলো পরস্পরের মধ্যে কোন ভেদ-বিবাদ নেই। সব আস্তিক মত মতান্তর গুলোর সত্যতা বেদক্ত সিদ্ধান্ত দ্বারা বিচার করা হয়। আর যে সকল নাস্তিক মত মতান্তর আছে। সেগুলো, ন্যায়শাস্ত্র দ্বারা সমাধন করা যায়। হিন্দু ধর্মের সত্যতা বেদ দিয়েই বিচার করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হতে পারে:
বেদের সত্যতা কিভাবে যাচাই করা হয়?
একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝুন। যেমন ধরুন, যদি আপনাকে কয়েকটি বিন্দু দিয়ে একটি সরল রেখা অঙ্কন করতে বলা হয়। আপনি যে কোনো একটি বিন্দু থেকে অন্যান্য বিন্দুর স্থানাংক যুক্ত করবেন। যদি সেই বিন্দু গুলো সরল রেখায় আসে। তবে সেই বিন্দু গুলোই হবে ওই সরল রেখার বিন্দু। আর যদি বাইরে দিয়ে যায়, তবে আমরা বলবো ওই বিন্দুটি সরলরেখার অংশ নয়।
এভাবেই উপনিষদ, স্মৃতি, পুরাণ শাস্ত্র গুলো হলো সেই বিন্দু। এদের মধ্যে যদি কোন বিরোধ থাকে। তবে সেটা বিচার করতে হলে আমরা ধাপে ধাপে এগোবো।
যেমন—
মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে, শূদ্র সব থেকে নীচু বর্ণ। স্মৃতিশাস্ত্রের এই বক্তব্যকে বিচার করার জন্য আমরা পুরান শাস্ত্রের দিকে দেখব। কুরআন শাস্ত্র খুলে আমরা জানতে পারলাম, শূদ্রের উৎপত্তি বশিষ্ঠ সন্তান সুকালীনের থেকে আমরা জানতে পারবো কি কারনে শুকালিনের বংশধররা শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হলো? বলা হয়, ব্রাহ্মণচিত কর্ম ত্যাগ করায় সুকালীন এবং তার বংশধরদের মধ্যে সৌর্য - বীর্য এবং ত্বেজের ক্ষয় হয়। সেই কারণে, শূদ্র বর্ণের উৎপত্তি হয়। এবার শূদ্র শব্দের অর্থ জানতে বেদের ব্যাকরণ সংস্কৃত বাংময় দেখতে হবে। যেখানে বলা হয়েছে, সমাজ, সংস্কৃতি, সংস্থা বা সিস্টেমকে যদি আমরা একজন বিরাট পুরুষ হিসেবে কল্পনা করি। সেই পুরুষের চরণ। অর্থাৎ, সমাজ সংস্কৃতি সংখ্যাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ভিত্তি সেটাই শূদ্র।
অর্থাৎ যখন অন্যান্য শাস্ত্রের সত্যতা যাচাই করতে বেদের দিকে তাকানো হয়। তেমনি, বেদের সত্যতা যাচাই করতে আমরা সকল মত ও মতান্তর গুলোর শাস্ত্রের সাহায্য নেই।
যেমন বিষ্ণু পুরাণ মতে ভগবান বিষ্ণুই পরম ঈশ্বর। আবার শিব পুরাণ অনুসারে সদাশিব পরম ঈশ্বর। আপনি যদি দেবী ভাগবতম এবং দেবী পুরাণ খুলে দেখেন। সেখানে শিব বিষ্ণুকে তাঁর সন্তান হিসেবে দেখানো হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো ঈশ্বর সাযুজ্য লাভ। এই সকল পুরাণ কাহিনী বলছে শিব, কালী, বিষ্ণু এরা ভিন্ন হলেও এক। কালি কৃষ্ণ শিব গনেশ একই দুধের দই, ঘী, মাখন, ছানা।
হিন্দু ধর্ম গ্রন্থেও আমরা দেখি ঈশ্বর প্রথমে "নার" নামক জলের সমুদ্রের সৃষ্টি করেছেন। সেই জলের উপর নিজের ব্রহ্মবীজ নিক্ষেপ করলেন। সেই বীজ ছিলো সোনালী এবং ডিম্ব আকৃতির। সেখান থেকে ঊর্ধ্বে আকাশ, নিম্নে ভূমি এবং দশ দিক উৎপন্ন হলো। সেই বীজের মধ্যেই এক বিরাট পুরুষের উৎপত্তি হলো এবং তাঁর নাম হলো নারায়ণ। নার নামক জলের উপর শয্যা করেছেন বলেই তিনি নারায়ণ। সেই নারায়ণ ব্রহ্মার সৃজন করলেন এবং সেই ব্রহ্মাই হলেন সৃষ্টি কর্তা। ব্রহ্মার দেহ থেকে প্রথমে মনু এবং শতরূপা এবং মনুর তপ সংকল্প দ্বারা ৯ জন ঋষি আবির্ভূত হলেন। এরা সকলেই ব্রহ্মার পুত্র নামে পরিচিত। পরবর্তীতে এদের মধ্যেই সাতজন ঋষি, সপ্তর্ষির নামে পরিচিতি পায়। দেবতা, দানব, কিট, পতঙ্গ, নাগ, স্বর্প, খেচর, জলচর এবং আমরা সেই ঋষিদের সন্তান। তাই সৃষ্টি কর্তা ব্রহ্মা আমাদের পিতামহ এবং মনু নির্মিত বিধান আমাদের ধর্ম শাস্ত্র।
0 Comments: