Headlines
Loading...
ধর্ম রেফারেন্স: হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ কি ইসলামের আল্লাহ ও কোরআনের কথা বলে?

ধর্ম রেফারেন্স: হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ কি ইসলামের আল্লাহ ও কোরআনের কথা বলে?


কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা রেফারেন্স ছাড়া কথা বোঝে না। ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশের কিছু মুসলিম ভাই ও বোনেরা হিন্দু ধর্মকে উপর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও সমালোচনা করে।

তাদের মতে, শুধু তাদের ইসলাম একমাত্র অবিকৃত ও সত্য ধর্ম। বাকি সকল ধর্মে বিকৃতি আছে। সেই কারণে মূর্তি পূজা, বিভিন্ন দেব দেবীর উপাসনা, নবীকে ঈশ্বরের সঙ্গে বা পুত্র হিসেবে তুলনা করার প্রচলন হয়েছে। ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্ম মনগড়া অথবা শয়তানের প্ররোচনায় বিপথগামী।

ইসলামের পূর্ব অনুসারীরা আরবের মক্কা মদীনায় বাস করতো। সেখান থেকে বেরিয়ে ইসলাম ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানে প্রচার হয়েছে।তাই ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মুসলিমদের যখন হিন্দুদের রীতিনীতি নিয়ে কথা বলে, তারা তাদের পূর্বপুরুষদেরকেই অপমান করে। 

এরা মনে করেন যেহেতু আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা, সেহেতু কোরআনই আদি পুস্তক। খ্রিষ্টান ইহুদীদের বাইবেল, তওরাত বা তানখ ইত্যাদি ধর্ম পুস্তক গুলোর আগেই ইসলাম ছিলো। ইসলাম সর্বকালী ধর্ম। সেই ভ্রান্তি আজ আমরা ভাঙবো। যখনই তারা হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করবে। আপনি এই তাদের শেয়ার করবেন। আসুন আলোচনায় ফেরা যাক।

🔴হিন্দু ধর্মে সূষ্টিকর্তা(স্রষ্টা) কে?

ছান্দগ্য উপনিষদের অধ্যায় ৬, খন্ড ২,মন্ত্র ১ এ সৃষ্টি কর্তাকে এক এবং অদ্বিতীয় বলা হয়েছে। মুসলিম পন্ডিতরা এই বিষয়টি কুরআনের এক ঈশ্বর আল্লার সঙ্গে মিলিয়ে প্রচার করার চেষ্টা করেন। তারা বলেন, “স্রষ্টা একজন-ই তার কোন দাবিদার বা শরীক নেই।”  

যখন বলা হচ্ছে 'স্রষ্টা একজন' তখন স্রষ্টার ওপর একটি ব্যক্তিসত্তা আরোপ করা হচ্ছে।  যেমন একজন নাস্তিক বলে আমার কোনো স্রষ্টা নেই। সেভাবেই একেশ্বর ঈশ্বর নিজের স্রষ্টাকে অস্বীকার করে। সেই মুসলিম ভাইকে প্রশ্ন করবেন, "স্রষ্টা একজন-ই তার কোন দাবিদার বা শরীক নেই, তাহলে তিনি কেন বার বার অন্য ঈশ্বরের উপাসনা করতে বাঁধা দিচ্ছেন? সর্বশক্তিমান, আল্লাহ কেন কম্পিটিশন করছেন?

আরোপ মীমাংসা:

উপনিষদের অধ্যায় ৬, খন্ড ২, পড়লে আপনি প্রসঙ্গ জানতে পারবেন। উক্ত শ্লোকটি উদ্ধৃতিটি একটি সম্পূর্ণ মন্ত্রের একটি শব্দ মাত্র সম্পূর্ন মন্ত্রটি নিচে উদ্ধৃত করলাম: 

সদৈব সোম্যেদমগ্র আসীদেকমেবাদ্বিতীয়ম্। তদ্ধৈক আহুরসদৈবেদমগ্র আসীদেকমেবাদ্বিতীয়ম্। তস্মাদসतः সজ্জায়ত॥

Translation in Bengali

প্রিয়(অরুণী), এই বিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে কেবলমাত্র "সৎ" (অস্তিত্ব) ছিল, এক ও অদ্বিতীয়। কিন্তু কেউ কেউ বলেন যে, এই বিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে "অসৎ" (নাস্তি) ছিল, এক ও অদ্বিতীয়। সেই অসৎ থেকে "সৎ" (অস্তিত্ব) উদ্ভূত হয়েছিল।

এখানে গুর শিষ্য কথোপোথন করছেন। যেখানে গুরু বলছেন, "কেউ বলে আদিতে কেবল এক এবং অদ্বিতীয় রূপে ‘সৎ’ কেউ বলে ‘অসৎ’ ছিলো।

এর পরের মন্ত্রে গুরু বলছেন

কুতস্তু খলু সোম্যৈংশ্যাদিতি হোভাচ কথমসতঃ সজ্জায়েতে। সত্ত্বৈব সোম্যেদমগ্র আসীদেকমেবাদ্বিতীয়ম্॥

Translation in Bengali:

হে সৌম, "কিন্তু কীভাবে 'অসৎ' থেকে 'সৎ' উদ্ভূত হতে পারে?"। (যদি অসত বা অনস্তিত্ব থেকেও থাকে তবে সেটাকে অসৎ কিভাবে বলবে?) আসলে, এই সৃষ্টির পূর্বে "সৎ" এবং "অসৎ" এক ও অদ্বিতীয় (ভেদ শূন্য) ছিল। "আসীদ একমেবাদ্বিতীয়ম্"

অদ্বিতীয় অর্থাৎ "সজাতীয়, বিজাতীয় এবং সগত ভেদ শূন্য"। অথচ আল্লাহ বলছেন "দেই আল্লাহ এক উপাস্য, তিনি ছাড়া অন্য কেউ নেই।" যদি অন্য সৃষ্টিকর্তা নাই থেকে থাকে। অন্য কোনো সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করা যাবে না এই কথা আসে কিভাবে? 

➡ শ্বেতাস্বর উপনিষদ অধ্যায় ৬ অনুচ্ছেদ ৯

সেখানে নাকি বল হয়েছে। সূষ্টিকর্তার কোন পিতা মাতা নেই। তার কোন প্রভু নেই। যার অর্থ হল তিনি স্বয়ং সম্পূর্ণ, তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। এই দলিলের আরোপ আদৌ সত্য নয়। 

সূষ্টিকর্তার কোন পিতা মাতা নেই এটা সত্য তার কোন প্রভু নেই এটাও সত্য। কিন্তু হিন্দুরা সেই 'স্বয়ং সম্পূর্ণ' ঈশ্বরের উপাসনা করেন জিনি সৃষ্টি সৃজন করে সৃষ্টিতে প্রবেশ করেন। সৃষ্টিতে প্রবিষ্ট হয়ে তিনি নিজেকে বিভিন্ন দেব ও দেবীর স্বরূপে প্রকট করেছেন।

বুদ্ধিমান, মুসলিম ভাই প্রশ্ন করতে পারেন। একজন ঈশ্বরের পক্ষে কি এই বিশাল জগত পরিচালনা করা সম্ভব নয়? উত্তরে আমি বলবো, অবশ্যই সম্ভব। তাহলে তো আল্লাহর মানুষ সৃষ্টির প্রয়োজন ছিল না। শুধু শুধু বেহেশত, দোজখ বানিয়ে কেন তিনি তাতে ফরিশতা, জ্বীন, হুর, পরী, ইত্যাদি বানিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করছেন।

 সমুদ্রের মতো বিশাল জলাধারকে যেমন গন্ডুসে ধারণ করার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নেই, এক জন্মে ঈশ্বরের অস্তিত্ব জানা বোঝার ক্ষমতাও মানুষের নেই। আবার সমুদ্রের সেই জলকে গন্ডুসে ধারণ করে যেমন সমুদ্রের জলের স্বাদ সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব। দেবতাদের দিব্যতা ও আরাধনায় পরমেশ্বরের সাযুজ্য লাভ সম্ভব। 

এক হাড়ি বিরিয়ানি খাওয়া সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু ওই বিরিয়ানির হাড়ি থেকে এক মুঠি ভাত তুলে সমগ্র হাড়ির বিরিয়ানির স্বাদ পাওয়া যায় কি না? সেভাবেই সেই এক এবং অদ্বিতীয় ঈশ্বর আমাদের মধ্যে আত্মা রূপে আছেন। আত্মার কবে জন্ম বা মৃত্যু হয়েছে?  আত্মার পিতা মাতাকে কবে দেখা গেছে? মুসলিম ভাই দয়া করে এর জবাব দিতে পারলে ভালো হয়। আল্লাহ সম্পর্কে পরে জানবো। আল্লাহ আত্মা কিভাবে সৃষ্টি করলো যদি কেউ বলতে পারে।

➡ ঋগবেদ ৮/১/১

বলা হয়ে থাকে, উক্ত বেদমন্ত্রে বলা হয়েছে— "সূষ্টিকর্তার সাথে এক করে কারও উপাসনা করো না। শুধুমাত্র একজন ইশ্বরের উপাসনা কর, যিনি সুমহান ও সত্যিকারের ইশ্বর।" 

আমি বেদের ওই মন্ত্র খুঁজে দেখলাম এই হলো সেই মন্ত্র। 

मा चिदन्यद्वि शंसत सखायो मा रिषण्यत । इन्द्रमित्स्तोता वृषणं सचा सुते मुहुरुक्था च शंसत॥१॥

অনুবাদ: — হে মিত্র! ইন্দ্র দেবকে ছেড়ে দিতে অন্য কোনো দেবের স্তূতি উপাদেয় নয়। তাহাতে শক্তি নষ্ট করবেন না । সোম অনুসন্ধান করে, একত্রিত হও, যৌথরূপে বলশালী ইন্দ্রদেব কি বার-বার প্রার্থনা করুন৷

তবে কি ইসলামের আল্লাহ আমাদের ইন্দ্র দেব জিনি ভগবান ব্রহ্মা বিষ্ণু ও শিবের উপাসনা করেন ? তাহলে মুসলিম ভাইদের আমি স্বাগত জানিয়ে হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করছি। আসুন নিজের ঈশ্বরের ঈশ্বরকে পূজা করুন। 

এর পরের দলিল 

🔴হিন্দু ধর্মে মূর্তি পূজা নিষেধ 

➡যর্জুরবেদ  অধ্যায় ৪০ মন্ত্র ৯

যারা অবিদ্যা কাম্য কর্মের বীজ স্বরুপ প্রকূতির উপাসনা করে থাকে তারা অন্ধকার সংসারে প্রবেশ করে থাকে। 

আর যারা কার্য ব্রক্ষে আসক্ত হয়, তারা তা থেকে আরও অধিক অন্ধকারে প্রবেশ করে থাকে। অর্থাৎ যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে আল্লাহর সূষ্টি বস্তুর (প্রাকূতিক বস্তুর) উপাসনা করে তারা অন্ধকারে বা নরকে প্রবেশ করে। প্রাকূতিক বস্তু হল, মানুষ, চন্দ্র, সূর্য, আগুন, পানি, সাপ, হনুমান ইত্যাদি।

চালাকি করতেও বুদ্ধির দরকার হয়। আর বুদ্ধির জন্য দরকার মুক্ত চিন্তার। বেদে বলা হয়েছে যারা অবিদ্যা কাম্য কর্মের বীজ স্বরুপ প্রকূতির উপাসনা করে থাকে তারা অন্ধকার সংসারে প্রবেশ করে থাকে। তাহলে আমাদের মুসলিম ভাইরা বিদ্যার উপাসনা করে কি? আল্লাহ যদি বিদ্যা হয়, তাহলে সেই বিদ্যার নমুনা হিসেবে ওসামা বিন লাদেনকে মনে করবো জিনি আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংশ করেছেন। নাকি এ. পি. জে. আব্দুল কালাম? যিনি গীতা থেকে অনুপ্রেরণা নিতেন। মহাভারত থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ভারতের সামরিক বাহিনীর জন্য  ব্যালেস্তিক মিসাইল তৈরী করেছে।

দুঃখের বিষয় হল ইসলামের ধর্ম গ্রন্থের মোড়ক লাগিয়ে হিন্দু ধর্মের কথাগুলো আমাদের মুসলিম ভাই ও বোনেরা, এই মিথ্যাচার কে অব্যাহত রাখবে। প্রমাণ দেওয়ার পরেও তারা অন্ধ ভক্তের পরিচয় দেবে।  নিজেদের ভুল স্বীকার করে সঠিকটা জানার চেষ্টা করবে না।  


Himadri Roy Sarkar always had a passion for writing. When he was younger, he would often write stories and share them with his friends. He loved the way that writing could bring people together and share ideas. In 2022, he founded The Hindu Network,The site quickly became popular, and Himadri was able to share his writing with people all over the world. The Hindu Network is now one of the most popular websites in the world, and Himadri is a well-known author and speaker. blogger external-link facebook instagram

0 Comments: