প্রশ্ন বিদ্ধ যীশু। যীশু কি সত্যিই পাপের ক্ষমার জন্য জীবন দিয়েছিলেন ?
যিশু খ্রিস্ট নামটি সবার পরিচিত। যীশু খ্রীষ্টের পিতা জোসেফ এবং মাতা মেরী (বা মরিয়ম) ছিলেন পবিত্র চরিত্রের অধিকারী। বংশ পরম্পরায় তাঁরা দুজনেই ছিলেন ইহুদী। তাই জন্ম সূত্রে যিশু ছিলেন ইহুদী মায়ের সন্তান। ইহুদী পরিবারে জন্মে তিনি কিভাবে খ্রীষ্ট ধর্মের ঈশ্বর হয়ে গেলেন। আজকের আলোচনায় আমরা জানবো। আমরা এটাও জানবো তিনি কি সত্যিই খ্রীষ্ট ধর্মের স্থাপন করেছেন? কিভাবে তাঁর বলিদানের পর নতুন ধর্মের প্রতিষ্ঠা হলো।
যিশু খ্রিস্টের বংশ পরিচয়।
জেরুজালেম থেকে ১০ কিঃমিঃ দক্ষিণে ব্যাথেলহেম শহরে আজ থেকে প্রায় ২০০০ বছর আগে খ্রিস্টানদের ঈশ্বর যীশু খ্রিস্টের জন্ম হয়েছিল। যীশু খ্রীষ্টের পার্থিব পিতা জোসেফ পেশায় একজন কাঠের কর্মচারী ছিলেন। আর যীশু খ্রীষ্ট নিজেকে যে পিতার সন্তান হিসেবে পরিচয় দিতেন। আধ্যাত্মিক পিতা ছিলেন, ইহুদীদের ঈশ্বর YESHUA ইশুয়া। ইহুদী কথার অর্থই হলো ঈশ্বরের পুত্র। নির্গমন পুস্তকে ইহুদিদের ঈশ্বরের পুত্র বলা হয়েছে, আর সোলেমানকে ঈশ্বরে পুত্র বলা হতো। যাই হোক, ইহা একটি উপমা মাত্র। যেমন হিন্দুরা নিজেদের গো মাতার পুত্র বলে। অনেকটা সেরকমই উপমা অর্থে ঈশ্বরের পুত্র।
যীশু মোশির বয়স যখন ৩২ বছর ছিলো, তখন যহন নামক এক ভবিষ্যত বক্তা যীশুকে জল অভিষিক্ত করার পর। যীশু খ্রিস্টত্ব প্রাপ্ত হয়। বর্ননা অনুযায়ী, তাঁর ওপর পবিত্র আত্মার আবেশ হয়। তিনি খ্রীষ্ট নামে পরিচিত হন। খ্রীষ্ট শব্দের অর্থ হলো, নির্বাচিত the Choosen One । কিসের জন্য নির্বাচিত? বলা হয় ইসরাইলিদের উদ্ধারের জন্য।
ইসরাইলিদের ধর্ম পুস্তক তা-ন-ক (তাওরাত, নবীম ও কেতুভাম) অনুসারে একজন কুমারী মায়ের গর্ভে শিশু জন্ম নেবে। যার রক্তে ইহুদীদের উদ্ধার হবে। তিনি হবেন ইহুদিদের উদ্ধার কর্তা।
হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ শিখ বা জৈন এদের কারো উদ্ধার কর্তা তিনি নন। কারণ, এই সকল ধর্ম গোষ্ঠীর কাছে যীশু খ্রীষ্টকে উদ্ধার কর্তা হিসেবে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
সে যাই হোক, এখন আমরা বাইবেলের সম্পর্কে জানবো। বাইবেলের মার্ক, জোহন, মথি এবং লুক, তাঁদের পত্র গুলো নতুন নিয়মে সংযোজিত করা হয়েছে। এরা ছিলেন যীশুর প্রধান শিষ্য এবং প্রত্যক্ষ দর্শী। এনারা তাঁদের স্মৃতিতে খ্রীষ্টের জীবন বৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করেন।
মথি অনুসারে যীশু খ্রীষ্ট ছিলেন রাজা দায়ূদের বংশধর, দায়ূদ ছিলেন অব্রাহামের বংশধর৷ অব্রাহামের ছেলে আইজেক ৷ আইজাকের ছেলে য়াকোব৷ য়াকোববের ছেলে ইয়াহূদা। সেই ইয়াহুদার নাম থেকেই ইয়াহুদী জাতির নাম এসেছে। যিহূদার বংশধররা পরবর্তীতে ইসরায়েলের দক্ষিণের বৃহৎ গোষ্ঠীতে পরিণত হয় এবং তারা "ইহুদি" (ইংরেজিতে Jews) নামে পরিচিতি লাভ করে।
যিহূদার ছেলে পেরস। পেরসের ছেলে হিষ্রোণ৷ হিষ্রোণের ছেলে রাম৷ এই রামকে হিন্দু দেবতা রামের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না। এভাবেই ১৪ প্রজন্ম পর ইয়াকুবের নাতি বা জোসেফের পুত্র হলেন যীশু। বাইবেলের তথ্য অনুযায়ী মাতা মেরী কুমারী অবস্থায় দৈব কৃপায় গর্ভবতী হন। জোসেফ মাতা মেরীরকে বাগদানের আগেই বিবাহ করেন এবং জোসেফের পুত্র হিসেবে যীশু পরিচয় পায়।
অর্থাৎ ধর্মান্তরন করার সময় বলা হয়, যীশু খ্রীষ্ট গরীবের ঘরে জন্ম নিয়েছে। তিনি দয়াল ঠাকুর। যীশু খ্রীষ্ট সাধারণ গরীব ছুতরের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেননি। তিনি ছিলেন রাজ পরিবারের সন্তান। এখানে যীশু খ্রীষ্টের পরিবার পরিচয় জানাটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ অনেক সময় বলা হয়, হিন্দু দেবী দেবতা সব সময় রাজা বা ব্রাহ্মণ পরিবারেই জন্ম হয়।
যীশুর জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা
একটি বিশেষ দিনে যীশুর জন্ম হয়। সেই বিশেষ দিনকে আমরা বড়দিন হিসেবে জানি। একটি ঘোড়ার আস্তাবলে মাতা ম্যারির (মরিয়মের) কোল আলো করে যে পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করেন, তিনিই যীশু। সেই শিশু যখন জন্ম হয়, তখন কয়েকজন প্রাচ্য দেশ থেকে কিছু জ্যোতিষী রাজা হেরোদের কাছে যায়। এদের মার্গী বলা হতো। মার্গীদের নির্দেশে আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র দর্শন করে হেরোদের দূত আস্তাবলে উপস্থিত হয়। মার্গীদেরকে কখনও কখনও প্রাচীন জ্যোতিষী, জাদুকর বা বিজ্ঞ ব্যক্তিদের প্রতিনিধি হিসেবে ধরা হয়। তাঁরা যীশুকে আশীর্বাদ করেন এবং চলে যান। এঁদের বিষয়ে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। ফেব্রু থেকে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদিত বিভিন্ন বাইবেল গুলোতে এই মাগীদের Wise person বা বিজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মার্ক, জন, মথি, লুক, নিজেদের বর্ণনায়, যীশুর জন্ম কে আলাদা আলাদা ভাবে বলেছে।
যীশুর জন্মের আগে একজন স্বর্গদূত (বিশেষজ্ঞের মতে — জিব্রাইল) জোসেফের স্বপ্নে দেখা দিয়েছিল এবং বলেছিলো, "দায়ূদের সন্তান, মরিয়মকে তোমার স্ত্রীরূপে গ্রহণ করতে ভয় করো না, কারণ তার গর্ভে যেই সন্তান এসেছে, তা পবিত্র আত্মার শক্তিতেই হয়েছে৷ তাঁর নাম দিও 'যীশু' সে হবে পাপীদের উদ্ধার কর্তা।"
তারপর প্রাচীন জ্যোতিষী তাঁদের উপহার সামগ্রী খুলে সোনা, সুগন্ধি গুগ্গুল ও সুগন্ধি নির্যাস উপহার দিলেন৷ ইহুদীদের ঈশ্বর যোহবা মরিয়মকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে তাঁদের মিশরে পালিয়ে যেতে বললেন। তাঁরা তাইই করলো। ওদিকে যীশুর দেখা না পেয়ে রাজা হেরোদ প্রচন্ড ক্রুদ্ধ হলো এবং বেথেলহেমের সকল শিশুদের হত্যা করার আদেশ দিলো। এভাবেই যীশুর জন্মের সময় অনেক ইহুদী শিশুর মৃত্যু হলো।
এই একই গল্প, নবী মুসা (Moses) এবং হিন্দু দেবতা শ্রী কৃষ্ণের জন্ম কাহিনীর সঙ্গে মিল আছে। পার্থক্য শুধু একটাই ছিলো, শ্রী কৃষ্ণের জন্ম হওয়ার পর ওই তিথিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের হত্যার জন্য যে সৈনিক পাঠিয়ে ছিলো। তাঁদের শ্রী কৃষ্ণ রক্ষা করেছিল।
ওই ইহুদী শিশুদের মৃত্যুর দায় কার?
বলা বাহুল্য, ছোট্ট শিশু যিশুকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া। জোসেফ এবং মাতা মরিয়মের একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। যার কারনে শত শত শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। পাপীদের উদ্ধারের জন্য ক্রুশে তিনি যে, নিজের প্রাণের বলিদান দিয়েছিলেন। সেটা সেদিনই সম্পন্ন হয়ে যেতো।
যেদিন যীশুর প্রাণ বাঁচাতে জোসেফ ও মরিয়ম মিশরে পালিয়ে গিয়েছিল, সেদিন নিশ্চয়ই ওই সকল নবজাতক শিশুদের মা ও বাবারা ঈশ্বর ইয়াহবার কাছে কান্না আর হাহাকার করে তাদের শিশুদের জীবন ভিক্ষার প্রার্থনা করেছিল। (মথি 2:18)
সেই নিরীহ শিশুদের মৃত্যুর দায় কে নেবে? কারণ জন্ম থেকে সবাই পাপী হয়ে জন্মায়। পাপের ক্ষমার জন্য, যীশুর জন্ম, যিনি নিজের রক্ত দ্বারা সকলের পাপ ক্ষমা করেছেন। মুক্ত শিশুদের মৃত্যুর পাপের ক্ষমা কি করে হবে? কারণ ওরা যীশুকে জানার আগেই পৃথিবী থেকে গত হয়েছে। ঈশ্বর যেভাবে দৈব বাণী দ্বারা পলকে ভূপথে এনেছিল। সেই দিন ইহুদি ঈশ্বর হেরোদকে সেভাবেই প্রতিহত করতে পারতো। শত শত শিশুর সেই হত্যার দায় কে নেবে?
বাইবেলে ১২ বছর পর যীশু উধাও
এরপর, যিশু যখন বালক হয়ে ওঠে, তখন সে নিজের তর্ক ও জ্ঞান দ্বারা বড় বড় পন্ডিতদের চুপ করিয়ে দিতো। এভাবে তিনি বাল্যকালে সকলের নজর আকর্ষণ করেছিলেন। এরপর আমরা যীশুর জীবন থেকে অনেক গুলো বছর আমরা বাইবেলে পাই না। ১২ বছর বয়সের পর বাইবেলে যীশুর কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
এরপর আমরা দেখতে পাই ৩২ বছর বয়সের যীশুকে যখন যহন সকলকে বলছিল “আমার পরে যিনি আসবেন তিনি আমার থেকেও মহান।” বাইবেলে উল্লেখিত ঘটনা অনুযায়ী সেইদিন, যহন দ্বারা বাপ্তিস্মা দেওয়ার পর, যীশুর ওপর পবিত্র আত্মা কপতের মতো নেমে এসেছিল এবং তাঁকে সেদিন বলা হয়েছিলো ‘খ্রীষ্ট’ বা ‘The Chosen one’। সেই যিশু খ্রীষ্ট ইহুদীদের ষড়যন্ত্রে শিকার হয়ে ক্রশ বিদ্ধ হয়ে মৃত্যু বরন করেন এবং পরবর্তীতে তিনিই খ্রীষ্টানদের ঈশ্বর বলে পরিচিত হন।
উক্ত কুড়ি বছর, যীশু কোথায় ছিল কি করছিল কোন কিছুই বাইবেল স্পষ্ট ভাবে বলে না। যার জন্ম এবং বাল্য জীবনের ঘটনা গুলো, মার্ক, মথি, লুক, যহন সুন্দরভাবে আলোচনা করেছে। সেখানে হঠাৎ করে কুড়ি বছর কেন তারা আলোচনা করলো না। নাকি, বাইবেল সংস্করণের সময় সেগুলো রাখা হয়নি। কালের গর্ভে সেগুলো হারিয়ে গেছে।
যীশু খ্রীষ্ট ভারতে এসেছিল। এরকম তথ্য আমরা লক্ষ্য করতে পারি। পাশ্চাত্য খ্রিস্টান মিশনারি এই তথ্যকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেয়। তাদের মতে, যীশু খ্রীষ্ট কখনোই ভারতে আসেনি।
খ্রীষ্টান কাদের বলে?
যারা যীশু খ্রীষ্টকে নিজের উদ্ধার কর্তা মনে করেন এবং যীশুকে ঈশ্বর বলে জানেন তারা খ্রিষ্টান। এই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মূল দুটি বিভাগ আছে। একটি ক্যাথলিক এবং অন্যটি প্রটিষ্ট্যান। মার্টিন লুথার, প্রথমে একজন অর্থডক্স ক্যাথলিক পুরোহিত ছিলেন। ক্যাথলিক চার্চর্চের বিবাদ শুরু হয়। তখন তিনি একটি আলাদা সম্প্রদায় শুরু করেন, প্রটেষ্ট্যানরা ক্যাথলিক চার্চের সংশোধন করে, আলাদা হয়ে নতুন পথ অবলম্বন করেন। Protestant ছাড়াও ৪০ হাজার সম্প্রদায় আছে। ক্যাথলিক চার্চ তাদের থেকে সব থেকে আলাদা। কারণ ক্যাথলিক চার্চে স্যাক্রামেন্ট বলে একটি প্রথা আছে। যাহাকে তারা সপ্ত সংস্কার বলে থাকেন।
Baptism (শুদ্ধিকরণ): এটি একপ্রকার স্নান বিধি, যার দ্বারা ঈশ্বরের আশীর্বাদ আত্মাকে পরিষ্কার করে।
Confirmation (নিশ্চিতকরণ): এটি একটি ধর্মীয় প্রক্রিয়া, যেখানে পুরোহিত যা চোখের মাথায় হাত রেখে ক্রস অঙ্কন করে, এবং পবিত্র আত্মার দ্বারা আশীষ প্রদান করে। যার দ্বারা সাতটি উপহার ঈশ্বর ঐ ব্যক্তিকে দেয় সেগুলো হল: —প্রজ্ঞা, জ্ঞান, ঈশ্বরের ভয়, বোঝাপড়ার ক্ষমতা, দৃঢ়তা, এবং সহানুভূতি।
Eucharist (প্রসাদ গ্রহণ): যীশুর শেষ দিনের আগে, তার শিষ্যদের ডেকে একটা রুটি কে ভেঙে সেখান থেকে কিছু টুকরো দিয়ে বলেছিলেন এটি আমার মাংস, এবং দ্রাক্ষ রস দিয়ে বলেছিলেন এটি আমার রক্ত। একেই বলা হয় মহাপ্রসাদ।
Reconciliation: স্বীকারোক্তি নামে পরিচিত, এই ধর্মানুষ্ঠান ক্যাথলিকদের তাদের পাপ স্বীকার করতে এবং একজন পুরোহিত বা ধর্মযাজকের কাছ থেকে ক্ষমা পেতে দেয়।
Anointing of the Sick (অসুস্থদের অভিষেক: কেন্দ্রকে দুর্বলকে সুস্থ করা: মানুষকে অসুস্থতাকে ঈশ্বরের কাছ থেকে পরিশুদ্ধকারী ক্রুশ হিসাবে গ্রহণ করতে সাহায্য করে .
Marriage (বিবাহ): একজন বাপ্তাইজিত পুরুষ এবং একজন বাপ্তাইজিত মহিলার মধ্যে একটি ধর্মানুষ্ঠান, যা তাদের বিবাহের প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
Holy Orders (পবিত্র আদেশ): পুরোহিতদের তাদের পবিত্র দায়িত্ব পালনে সাহায্য করে। এখানে বলা হয় যে স্বামী স্ত্রী চার্চের মতো নিজেদের সম্পর্ক রাখবে। স্বামী মাথা এবং স্ত্রী তাঁর দেহ। যেভাবে চার্চ মাথা, এবং ভক্ত মন্ডলী দেহ।
এই সাতটি সংস্কার কেবলমাত্র ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আছে। বাকি সম্প্রদায় গুলো কট্টর ভাবে বাইবেলের শুধুমাত্র শাব্দিক অর্থ মেনে চলে।
খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের এই প্রধান দুই সম্প্রদায়ের পূজা পদ্ধতি আলাদা। ক্যাথলিক চার্চে মাতা ম্যারির আরাধনা করা হয়, কিন্তু প্রটেষ্ট্যানরা মাতা ম্যারিকে মানেন না। তাদের কাছে মাতা ম্যারি কোনো অস্তিত্ব নেই। ক্যাথলিক চার্চে যীশুর ক্রশবিদ্ধ মূর্তি থাকে, কিন্তু প্রটেষ্ট্যানরা মূর্তি ছাড়াই নিরাকার যীশুর উপাসনা করেন। মূলত প্রটিস্টানরা, নতুন নিয়ম গ্রহণ করে পুরাতন নিয়মের সবগুলো নিয়মই পালন করেন।
এদের সকলের কেন্দ্র হলো খ্রীষ্ট। বাইবেলের যীশু খ্রিস্টের নিজের বানী— "আমি নতুন কোনো ধর্ম স্থাপনের জন্য আসিনি। মুসা যা কিছু বলে গেছেন। আমি তাইই তোমাদের সরল করে বলতে এসেছি।"
অর্থাৎ খ্রীষ্ট ধর্মের অস্তিত্ব যীশু খ্রীষ্ট নিজেই অস্বীকার করছেন। তাহলে জানতে হবেক্যাথলিক চার্জ কিভাবে জন্মালো?
ক্যাথলিক চার্চের জন্ম:
খ্রিস্টধর্মের উত্থানের ফলে পেগান ধর্ম ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়, যা মূলত রোমান সাম্রাজ্যের শাসন, খ্রিস্টান শাসকদের নীতি, এবং সাংস্কৃতিক মিশ্রণের মাধ্যমে ঘটেছিল। রোম, গ্রীক, নর্স, ভাইকিং, কেলটিক ইত্যাদি এদেরকে পেগন বলা হয়।
খ্রিস্টান এবং ইসলাম ধর্মের প্রভাবের কারণে "পেগান" শব্দটি প্রায়ই নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হতো। এটি "বিধর্মী" বা "অশ্রদ্ধেয়" হিসেবে দেখা হতো। আধুনিক যুগে, অনেক মানুষ এই শব্দটিকে নিজেদের প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে গর্বের সঙ্গে ব্যবহার করেন, বিশেষত প্রকৃতি এবং প্রাচীন আচার-অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নতুন আধ্যাত্মিক প্রথা Neo-Paganism হয়ে উঠেছে।
যদিও পেগান ধর্ম সরাসরি নিষিদ্ধ এবং নিপীড়িত হয়েছিল, তবুও এর কিছু আচার ও প্রথা খ্রিস্টধর্মের সংস্কৃতিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এটি সাধারণত স্থানীয় জনসাধারণকে নতুন ধর্মে আকৃষ্ট করার জন্য করা হয়েছিল।
পেগান ধর্ম বিলুপ্তির কারণ
১) সম্রাট কনস্টানটাইন ৩১৩ খ্রিস্টাব্দে 'এডিক্ট অফ মিলান জারি করে খ্রিস্টধর্মকে বৈধতা দেন। থিওডোসিয়াস I ৩৮০ খ্রিস্টাব্দে 'এডিক্ট অফ থেসালোনিকা' জারি করে পেগান ধর্মচর্চা নিষিদ্ধ করেন এবং খ্রিস্টধর্মকে রোমান সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেন। ২) পেগান মন্দিরগুলো ধ্বংস করা হয় বা খ্রিস্টান গির্জায় রূপান্তরিত হয়। পেগান দেবতাদের পূজা অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ৩) পেগান ধর্মের বিভিন্ন উৎসব এবং আচার খ্রিস্টধর্মে মিশে যায়। ফলে খ্রিস্ট ধর্মকে গ্রহণ করতে পেগনদের অসুবিধা হয়নি। এটি প্রথাগত সংস্কৃতিকে খ্রিস্টধর্মের আওতায় আনতে সহায়ক হয়। ৪) পেগান ধর্ম পালনকারীদের ওপর সমাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে বঞ্চিত করা হয়। ফলে নতুন প্রজন্ম ধীরে ধীরে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে।
পেগান আচার-অনুষ্ঠানের খ্রিস্টধর্মে রূপান্তরের উদাহরণ
1. ঋতু উৎসব ও খ্রিস্টীয় উৎসব
শীতকালীন সূর্যান্ত (Winter Solstice): পেগান ধর্মে শীতকালীন সূর্যান্ত একটি বড় উৎসব ছিল, যা রোমানদের সাতুর্নালিয়া (Saturnalia) এবং নর্সদের ইউল (Yule) উৎসব হিসেবে উদযাপিত হতো।
খ্রিস্টধর্মে এটি বড়দিন (Christmas) উদযাপনের সময়ে রূপান্তরিত হয়। যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বর হিসেবে নির্ধারণ করা হয়, যা সাতুর্নালিয়ার সময়কালেই ছিল।
2. প্রাকৃতিক পূজার রূপান্তর
পেগান ধর্মে গাছ, পবিত্র বৃক্ষ, এবং প্রকৃতি পূজা করা হতো।
ক্রিসমাস ট্রি (Christmas Tree) এর ব্যবহার পেগান প্রকৃতি উপাসনার একটি সংস্করণ, যা পরবর্তীতে খ্রিস্টীয় ঐতিহ্যে স্থান পায়।
3. ইস্টার উৎসব (Easter)
ইস্টার পেগানদের ঈস্ট্রা বা ওস্টারা (Eostre/Ostara) নামে একটি বসন্ত উৎসবের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এটি উর্বরতা এবং নবজীবন উদযাপন করত।
খ্রিস্টধর্মে এটি যীশুর পুনরুত্থানের (Resurrection) উৎসব হিসেবে রূপান্তরিত হয়।
ইস্টারের ডিম এবং খরগোশ, উর্বরতার প্রতীক, পেগান ধর্ম থেকে নেওয়া হয়।
4. হ্যালোইন (Halloween)
পেগানদের সমহেইন (Samhain) উৎসব, যা ফসল কাটার মৌসুম শেষ এবং মৃতদের স্মরণে উদযাপিত হতো, খ্রিস্টধর্মে অল সেন্টস ডে (All Saints’ Day) এবং অল সোলস ডে-তে রূপান্তরিত হয়।
হ্যালোইনের কুমড়ো খোদাই এবং ভূতের গল্প বলার রীতি পেগান ঐতিহ্যের অবশিষ্টাংশ।
5. সপ্তাহের দিনগুলোর নাম
পেগান দেবতাদের নাম সপ্তাহের দিনের নামকরণে ব্যবহৃত হয়। যেমন:
Thursday (Thor's Day): নর্স দেবতা থর-এর নামে।
Friday (Frigg's Day): নর্স দেবী ফ্রিগ-এর নামে।
6. পেগান মন্দির ও স্থাপনার খ্রিস্টীয় রূপান্তর
প্রাচীন পেগান মন্দির, যেমন রোমের প্যানথিয়ন, খ্রিস্টীয় গির্জায় রূপান্তরিত হয়।
অনেক গির্জা পেগানদের পবিত্র স্থানের ওপর নির্মিত হয়, যাতে স্থানীয় লোকেরা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হয়।
এই রূপান্তর কৌশলটি প্রমাণ করে যে নতুন ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করতে স্থানীয় সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের সঙ্গে একটি সংযোগ স্থাপন করা অত্যন্ত কার্যকর ছিল।
উপসংহার
পেগান ধর্ম খ্রিস্টধর্মের দ্বারা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়নি; বরং এর অনেক আচার, উৎসব এবং প্রতীক খ্রিস্টীয় সংস্কৃতির অংশে পরিণত হয়েছে। যদিও পেগান ধর্ম এখন একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক বিষয়, এর প্রভাব আধুনিক খ্রিস্টীয় উৎসব এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে স্পষ্ট।
যীশু খ্রিস্টের মৃত্যুর পর ‘পল’ নামক এক ইহুদী পাদ্রী জেরুজালেমে আসেন। সেখানে তিনি যীশু খ্রীষ্টের জন্ম ও তাঁর আত্ম বলিদানের কথা জানতে পারেন। যা'কে ওই অঞ্চলের লোকে ঈশ্বরের পুত্র বা ইহুদীদের উদ্ধার কর্তা হিসেবে মনে করতো। ইহুদী পাদ্রী হিসেবে তাঁর কাছে এটি ছিলো ঈশ্বরের নিন্দা। প্রথম দিকে তিনি যীশুকে উদ্ধার কর্তা হিসেবে মানতে চাননি। পরবর্তীতে এক অদ্ভুত আলো তাকে অন্ধ করে দেয়, এবং পুনরায় তিনি চোখ ফিরে পান। এরপর থেকে তিনি খ্রীষ্টকে স্বীকার করেন এবং তাঁর হাত ধরেই ক্যাথলিক চার্চের গঠন হয়।
বহু আলোচনা সমালোচনা এবং কাটছাঁট করে ইহুদী বাইবেল থেকে আলাদা হয়ে খ্রীষ্ট ধর্মের নতুন নিয়ম নামক বাইবেল সংকলিত হয়। এই বাইবেলে পুরাতন নিয়মকে রেফারেন্স হিসেবে যীশু খ্রীষ্টই যে সেই উদ্ধারকর্তা। এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
মার্ক, লুক এরা পলের সময়ে জীবিত ছিলো এবং তাঁরা এক সাথেই নতুন নিয়ম লেখেন। পল তাঁর জীবনে যীশুর মতন মৃত শিশুকে মৃত্যু থেকে জীবিত করেছিল। বাইবেলের কুরান্তি এবং উদ্ঘাটন Revelation অধ্যায় গুলো লেখেন।
পলের ধর্ম জ্ঞান বনাম যীশুর বানী ও দর্শন
যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থানের পর ধর্মাত্মা পল তাঁর উদ্ঘাটন নামক পত্রে উল্লেখ করেছেন তিনি ঈশ্বরের দর্শন পেয়েছেন। তাঁর লিখিত উদ্ঘাটন বা Revelation খুবই জনপ্রিয় একটি পুস্তক যা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
“যীশু আমাদের নিয়ে এক রাজ্য গড়েছেন এবং তাঁর পিতা ঈশ্বরের সেবার জন্য আমাদের যাজক করেছেন৷ যীশুর মহিমা ও পরাক্রম যুগে যুগে স্থাযী হোক্৷ তাই হোক।" দেখ, যীশু মেঘ সহকারে আসছেন৷ আর প্রত্যেকে তাঁকে দেখতে পাবে, এমনকি যাঁরা তাঁকে বর্শা দিয়ে বিদ্ধ করেছিল, তারাও দেখতে পাবে৷ তখন পৃথিবীর সকল লোক তাঁর জন্য কান্নায় ভেঙ্গে পড়বে৷ হ্যাঁ, তাই ঘটবে! আমেন৷ প্রভু ঈশ্বর বলেন, ‘আমিই আল্ফা ও ওমিগা;আমিই সেই সর্বশক্তিমান৷ আমিই সেই জন যিনি আছেন, যিনি ছিলেন এবং যিনি আসছেন৷” ( উদ্ঘাটন 1:6-7-8)
যীশুর শিষ্য লুক লিখেছেন, “যীশু তাঁদের বললেন, ‘এই য়ে সব জিনিস তোমরা দেখছ, সময় আসবে যখন এর একটা পাথর আর একটার ওপর থাকবে না, সব ভেঙ্গে ফেলা হবে৷’ শিষ্যরা তখন যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘গুরু এসব কখন ঘটবে? আর কি চিহ্ন দেখে বোঝা যাবে এসব ঘটবার সময় এসে গেছে?’
আমাদের এই দেহ মন্দির। যে মন্দিরে ঈশ্বর বাস করেন। যাকে আমরা আত্মা বলি। "একটা পাথর আরেকটা উপর থাকবে না সব ভেঙ্গে ফেলা হবে।" এর অর্থ হতে পারে তিনি এই দেহের মৃত্যুর কথা বলছেন।
যীশু বললেন, ‘সাবধান! কেউ য়েন তোমাদের না ভুলায়, কারণ অনেকেই আমার নাম ধারণ করে আসবে আর বলবে, ‘আমিই তিনি’ আর তারা বলবে, ‘সময় ঘনিয়ে এসেছে৷’ তাদের অনুসারী হযো না!
যীশু এখানে সকলকে সম্ভবত সাবধান করে দিচ্ছেন। জেতার নাম ধারণ করে অনেকে এসে তাদের ভুল বোঝাবে। সেই জন্যই খ্রিষ্ট ধর্মের চল্লিশ হাজারটি সম্প্রদায় তৈরি হয়েছে। ৪০ হাজারের মধ্যে কোনটি সত্য? কারণ সকলেই নিজেরটা সত্য এবং অপরের মতকে মিথ্যা মনে করে। এখন যিশু খ্রীষ্ট যদি নিজেও তার ভক্তদের সামনে আসেন। তবে কেউ তাঁকে গ্রহণ করবে কেন? আসল নকল আমরা কিভাবে চিনবো? কারণ, শয়তান তো যীশুর মতোই আশ্চর্য কাজ করতে পারে যা মানুষের কাছে বোধগম্য নয়। স্বয়ং যীশু খ্রীষ্ট সামনে এসে দাঁড়ালেও মানুষ তাকে শয়তান বলে পুনরায় হত্যা করবে।
তারপর, যীশু খ্রীষ্ট বলছেন:
তোমরা যখন যুদ্ধ ও বিদ্রোহের কথা শুনতে পাবে, তাতে ভয় পেও না, কারণ প্রথমে নিশ্চয়ই এসব হবে; কিন্তু তখনও শেষ সময় আসতে বাকি!’ এরপর তিনি তাদের বললেন, ‘এক জাতি আর এক জাতির বিরুদ্ধে, এক রাজ্য আর এক রাজ্যের বিরুদ্ধে উঠবে৷ (লুক 21:6-10)
একবার বিচার করে দেখুন, এক জাতি কি আর এক জাতির বিরুদ্ধে সব সময় ছিলো না? কারণ, সব জাতিরা নিজেদের আধিপত্য অন্য জাতির ওপর বজায় রাখতে চেষ্টা করে আসছে। মুসলিমরা মনে করে, যতক্ষণ পর্যন্ত একটাও কাফের জীবিত থাকবে শেষ দিন আসবে না। তাই তারা ইহুদী, খৃষ্টান সহ সকল জাতির বিরূদ্ধে জে-হা-দ করে মুসলিম বানাতে ব্যস্ত।
একই ভাবে সত্য ঈশ্বর বা একমাত্র ঈশ্বরের নামে খ্রিষ্টান সম্প্রদায় সকল মানবজাতিকে খ্রিষ্টান বানাতে ব্যস্ত। ইসলাম ও খ্রীষ্টরা ইহুদীদের নিজের পরম শত্রু মনে করে। কারণ, উভয়ের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত মুহাম্মদ এবং ঈশ্বরের পুত্র যীশুর হত্যা এই ইহুদীদের দ্বারা হয়েছে। রাজা সলোমন বা সুলেমান, আইজাক বা ইসহাক একই ব্যক্তি। একই জাতি ও একই মূলের হওয়া সত্ত্বেও এদের মধ্যে আত্মীয়ত্ব বোধ নেই। তাই জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ অবিরাম। শেষ দিন আর আসলো না।
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় মানুষ ভেবেছিল এই বুঝি শেষ সময়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মানুষ বলছিলো, এই শেষ সময়ের সংকেত। এখন যখন প্যালেস্টাইনে, হামাস, ইরাক ইরানের যুদ্ধ হচ্ছে। মানুষ বলাবলি করছে সময় ঘনিয়ে এসেছে। যারা যীশুকে মানে না, তাদের উদ্ধার নেই। তারা নরকের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে।
শেষ দিনে শেষ দিন করে যুগ যুগ কেটে গেছে। প্রতিবার যুদ্ধে বহু মানুষ মারা গেছে। আর পেছনে ফেলে গেছে এই অজ্ঞানতার পাহাড়।
হিন্দুর দৃষ্টিতে পাশ্চাত্য ধর্মের যুক্তি:
একজন সচেতন হিন্দু হিসেবে এই সকল পাশ্চাত্য ধর্মের যুক্তি ও তর্ক আমাকে খুবই হাস্যকর মনে হয়। আমি যখন বাইবেল পড়ি। তখন আমি যীশুর কথায় বেদান্তের ছাপ দেখতে পাই। আবার, যখন কোনো খ্রিষ্টান যীশুর অর্থ করে, সেগুলো আমার কাছে কুযুক্তি মনে হয়। কারণ, আমার ধর্মে বলা হয়েছে মানুষ ঈশ্বরের দাস নয়। মানুষ ও ঈশ্বরের সম্পর্ক পিতা পুত্রের, সেই সম্পর্ক বন্ধুত্বের, গুরু শিষ্যের এবং শরবতকৃষ্ট সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর।
আমরা এই ভাব গুলোর মধ্যে যেকোনো একটি ভাব গ্রহণ করে ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি। এছাড়াও কেউ যদি ঈশ্বরের সঙ্গে শত্রুতা বা বৈরী ভাব রাখে। ঈশ্বর তাঁর মুক্তির জন্য তাকে এভাবেই মুক্তি প্রদান করেন। উদাহরণ: শ্রীবিষ্ণুর দ্বরপাল জয় ও বিজয় রাবণ এবং কুম্ভকর্ণ রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শ্রীরাম তাদের উদ্ধারের জন্য বৈরীভাবকে স্বীকার করে তাদের শাপ মুক্ত করেছিলেন।
যিশু খ্রীষ্ট নিজে মুখে কখনো বলেননি অবিশ্বাসীদের তিনি নরকে পাঠাবেন। কিন্তু এফিসিয়ানদের কাছে পলের লেখা চিঠিতে পল নিজেই উল্লেখ করেছেন: “বিশ্বাসের মাধ্যমে অনুগ্রহেই আমরা পরিত্রাণ পেয়েছি, এটা আমাদের কাজের ফল নয়।"(২:৮-৯) অর্থাৎ, পরিত্রাণের জন্য যিশু খ্রিস্টের প্রতি বিশ্বাসই হলো মূল বিষয়। সৎকর্ম ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারেই জীবনের পথকে শুদ্ধ রাখতে সহায়ক।
হিন্দু ধর্ম উদার গণতান্ত্রিক উপায়ে কথা বলে। হিন্দু ঈশ্বর বলেন : —"যেহেতু আমিই এ সকলের সর্বেসর্বা, তাই যে পথেই তুমি অবলম্বন করো, আমার কাছেই আসবে।
ষোড়শ থেকে আঠারো শতক পর্যন্ত যিশু খ্রীষ্ট কেবল ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। সময়ের সাথে সাথে তিনি ঈশ্বরের সমতুল্য হয়ে একেবারে পরম ঈশ্বর হয়ে উঠেছেন। কারণ আগে মনে করা হতো, ঈশ্বর কি ভাবে মানুষের গর্ভে ঈশ্বর জন্মাবে? মানুষের গর্ভে ঈশ্বরের জন্ম হতে পারে, এটা প্রথমে নিন্দনীয় মনে করা হতো।
যীশু কি সত্যিই পাপের ক্ষমার জন্য জীবন দিয়েছিলেন ?
না। তিনি পাপের জন্য নিজের জীবন দেননি। যিশু স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন "তোমরা নিজের ক্রস বহন কর।" তিনি নিজ বক্তব্য গুলো শিশুদের দিয়ে গিয়েছিলেন। সে বক্তব্য গুলো আগামী মানুষের মধ্যে জ্ঞানের সঞ্চার করবে। সেই জ্ঞান দ্বারা মানুষ নিজেই নিজেকে মুক্তর পথ উন্মোচন করতে পারবে। যেভাবে হিন্দু ধর্মে, ঈশ্বরী ও বাণী গুলোকে বিভিন্ন সময়ে নিজেদের সুবিধার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। খ্রিস্টের বাণীগুলোকেও সেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
ষঠচক্র ভেদ করে যখন কেউ জগত গুরুর কৃপায় সদগুরু হয়। সেই সদগুরু জীবকে মুক্ত করতে সক্ষম। যেভাবে, একজন সদগুরু তার শিষ্যের মুক্তির ভার নেয়। যীশু খ্রীষ্ট সেভাবেই তার শিষ্যদের মুক্তির ভাগ নিয়েছিলেন।
সর্বোপরি, এটুকুই বলতে পারি। রাজনীতি এবং জনরোষের কারণে তাকে রুশোবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছিল। সেই ষড়যন্ত্র তিনি আগেই জানতে পেরেছিলেন। কারণ সেই সময় ইস নিন্দার একমাত্র দন্ড ছিল মৃত্যুদণ্ড।
তার ব্যক্তিত্ব ও বানী সেই সময়ে ভক্তিবাদী মানুষদের আলোড়িত করেছিল। যেই আলোড়ন, রোমান রাজাদের রাজ সিংহাসন টলিয়ে দিয়েছিল। তার জন্মের সময় থেকে ৩৮০ বছর পর রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্ট ধর্ম রাজ ধর্মে রূপান্তরিত হয়। এবং তার পরেই ...কি হয়েছিল সেটা আমি আগেই আলোচনা করেছি।
0 Comments: