হিন্দুর আসমানী কিতাব। (শাস্ত্রের নির্যাস)
সকল হিন্দু শাস্ত্র হিন্দু সনাতন ধর্মের ঈশ্বরে কথা বলে। তাই, অন্যান্য ধর্মের মতো আমাদের ঈশ্বর যদি এই যুগে একটি আসমানী কিতাব নাযিল করতেন। তাহলে তাহা এরকম হতো:—
১. আমিই জীবন আমিই মৃত্যু। আমিই আদি, মধ্য এবং অন্ত। আমি সকলের প্রভু। কালের কাল মহাকাল। কোনো কিছুই আমাকে আবৃত করতে পারে না। আমিই জগৎ এবং আমিই জগতের ধারক ও সঞ্চালক।
২. আমার ইচ্ছায় জগৎ প্রকট হয়েছে, আমার মধ্যেই রমন করছে এবং আমার মধ্যেই লয় পাবে। মানব যেমন স্বপ্নে জগৎ অনুভব করে। এই জগত আমি সেই ভাবেই প্রকট করেছি। এটাই আমার মা-য়া।
৩. আমি সে, যে সকলের অন্তরের দ্রষ্টা এবং আমিই কারণ। আমি সব কর্মের সঙ্গে যুক্ত থেকেও নির্লিপ্ত। কারণ, সব কিছু আমার থেকে সৃষ্ট হয়ে আমাতেই লয় পায়। আমিই আমার স্রষ্টা। আমি ছাড়া কিছুই সত্য নয়। তাই আমার ইচ্ছাই জগৎ রূপে প্রকট হয়েছে এবং আমার ইচ্ছায় জগৎ লয় পায়।
৪. আমার হাজার হাজার মুখ, চোখ, নাক, এবং হাত পা। এরা সর্বত্র ছড়িয়ে আছে বিবিধ রূপে। যারা আমার প্রবর্তিত পথেই ভিন্ন ভাবে আমারই কাজ করছে।
৫. তারা আমাকে জানে না কারণ আমিই সকলের আসল স্বরুপ। যা অতি গুহ্য। কস্তুরী হরিণ যেমন গন্ধের খোজে জঙ্গলে ছুটো ছুটি করে। কিন্তু সে তাঁর নাভীর খবর জানে না। মোহ গ্রস্থ জীব সেই রকম সকলের অন্তরে নিবাসকারী আমার রূপকে জানে না।
৬. আমার এই রূপ সমুদ্রের গভীরে মনি মুক্তার মতো লুকিয়ে আছে সকলের অন্তরে। যা ডুবরি ছাড়া কেউ তুলে আনতে পারে না। মন্থন না করে কখনো প্রকট হয় না। মন্থন করলে সকলেই তা প্রাপ্ত হতে পারে। আমি দুস্কর কিন্তু অসাধ্য নয়।
৭. সেই জীবন মনি এতো উজ্জ্বল, যা শত সূর্যের আলোকেও ম্লান করে দিতে পারে। যা প্রাপ্ত হলে আর কিছুই পাওয়ার বাকি থাকে না।
৮. আমি সেই মনি লুকিয়ে রেখেছি তোমার অন্তরে এবং ওপর থেকে আবৃত করেছি ঘোলা মাটি আর জলের ঢেউ। সেই জলের ঢেউকে যুক্ত করেছি চন্দ্রমার সাথে। যা চঞ্চল মায়ার সমুদ্রের জলকে করে রাখে। এই জল হলো তোমার মন।
মানুষ সুখ খুঁজতে দেশে-বিদেশে যায়। টাকা, নারী, বাড়ি, গাড়ি, কোন কিছুই তাকে সুখী করতে পারে না। কারণ মায়ার ঘোলা মাটি সেই সত্য থেকে তাকে বঞ্চিত করে রাখে। মনের স্তরের উত্থান পতন। তাকে অস্থির করে রাখে। সেই অস্থিরতায় সে নিজেকে একভাবে ধরে রাখতে পারেনা। দুঃখের পর যে বৈরাগ্য প্রকাশ পায়। সেই বৈরাগ্য বেশি কার স্থায়ী হয় না।
৯. তুমি এই চোখ দিয়ে বাইরে যা কিছু দেখতে পাও, সে সবই তোমার নিজের প্রতিফলন। তাই, তুমি যেভাবেই আমায় দেখো বা মনে করো। জানবে সেটাই আমার সৃষ্ট মায়া।
১০. মানুষের সদয় ও নির্দয় মন উভয় সেই মায়া সমুদ্রের জলের স্তর। যে ওই জীবন মনি থেকে যতো দূরে সে ততই অন্ধকারে। যে যতো নিকটে সে ততই আমার সমীপে।
১১. যারা আমার থেকে দূরে। তারা মন্দ বুদ্ধি সম্পন্ন। মন্দ বুদ্ধি সম্পন্ন সেই ব্যক্তি সকল আমার স্বরূপকে কুলষিত করে। নিজের দোষ ঢাকার জন্য তারা আমার প্রতীকের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। যাতে তারা নিজেকে অপরাধী হওয়া থেকে দূর করতে পারে। জেনে রাখো, তারাই ওই মন্দির ভেঙেছে। যা তিন দিনে পুনঃ নির্মাণ হয়েছিলো।
১২. ওই মন্দির যখন ভাঙলো। কিন্তু মন্দিরের গরিমা নষ্ট করতে পারলো না। তখন তারা মন গড়া ঈশ্বর সৃষ্টি করে নিজেরাই পুরোহিত হয়ে বসলো। সেই সেখানে স্থাপন করলো এক অদৃশ্য এবং কাল্পনিক চরিত্রকে। যাকে দেখা যায় না। যাকে কেউ জানতেও পারে না।
১৩. সেই মন্দিরের পবিত্র বেদীতে বসে আমিই বলেছিলাম। স্বর্গ রাজ্য তোমার অন্তরে। অথচ তারা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
১৪. ওদের নতুন পথ জাতিতে জাতিতে প্রেম করার শিক্ষা দেয় না। বরং ওরা জাতির বিরূদ্ধে জাতিকে বিভ্রান্ত করে, নিজের দলে টানার জন্য। অথচ ওরা লিখে রেখেছে যেদিন অন্তিম দিন আসবে সেদিন জাতিতে জাতিতে লড়াই হবে।
১৫. আমিই সকল জাতির পিতা। সকলে আমারই সন্তান। আমিই সকলের জন্য উন্মুক্ত করেছি আমার দ্বার। আমি ঈর্ষা বিহীন, সর্ব ক্ষমতাশীল।
১৬. নতুন শিশু উপহার দিয়ে সুখ দেই। আমিই ভয়ংকর মৃত্যু হয়ে সেই সুখের পসরা গুটিয়ে নেই। আমি যাকে পারি, তাঁকে জীবন ও মৃত্যু দেই।
১৭. আসলে মৃত্যু হয় শরীরের। মানুষ যেভাবে জীর্ণ কাপড় ফেলে নতুন কাপড় পরে। আমার অখন্ড অংশ সেভাবেই নতুন কাপড় বদলায়। আসলে আমিই তো সে। আমায় প্রাপ্ত হলে এসব প্রাপ্ত হয়।
১৮. আমার মায়ার ঘোলা জলে যারা পথ ভ্রষ্ট। সেই মিথ্যাচারীরা আমার রূপকে উপহাস করে। তারা আমার দেওয়া সৃজনশীলতার উপহার মূর্তিকে দেখিয়ে বলে, এই সোনা-রূপা দিয়ে তৈরী ঈশ্বর গুলো মুখ থাকতেও কথা বলতে পারে না, নাক থাকতেও নিঃশ্বাস নিতে পারে না, হাত থাকতেও নিজের রক্ষা করতে পারে না। আমি তাদের মূর্খতা দেখে উপহাস করি।
১৯. আমি তাঁদের জন্য মাথার ছাদ দিয়েছি। যা দিনে থেকে সূর্য রাতে চন্দ্রের আলোয় আলোকিত করে, ক্লান্ত শরীরকে বিশ্রামের জন্য মাটি দিয়েছি। তবে তারা আমার দান উপেক্ষা করে কেন ঘর নির্মাণ করেছে যা আমার মতো প্রাণবন্ত নয়?
১৮. সোনা-রূপা দিয়ে তৈরী ঈশ্বর গুলো নিজেরা কথা বলে না। তাদের নিজের কাল্পনিক ঈশ্বর কি সেই সব করতে পারে যা তারা ওই মূর্তির কাছে আবদার করে?
১৯. আমি পরম করুণাময় ও সকল জীব আমার দ্বারা আকৃষ্ট। আমি সমগ্র বিশ্বকে নিজের শরীর দ্বারা ব্যাপ্ত করে রেখেছি। আমি যেমন বাইরে আছি, ভেতরেও আমিই আছি। আকাশের জ্যোতিষ্ক থেকে নর্দমার কীট পর্যন্ত আমরাই ইচ্ছার প্রতিফলন। তাই প্রত্যেকের সম্মান করতে হবে।
২০. এই জগতে কিছু জিনিস ভোগ করতে হবে এবং কিছু ত্যাগ করতে জানতে হবে। ততটুকুই ভোগের বস্তু আছে, যতটুকু একজন তৃষ্ণার্তের নিবৃত্তির জন্য জল প্রয়োজন। যে লোভী ব্যক্তি অতিরিক্ত সঞ্চয় করে, অথবা ব্যয় করে, সে ততই দরিদ্র বলে জানবে। সে ফুটো কলসীর মতো।
২১. যে জ্ঞান আমার মুখ থেকে নির্গত হয়। সেটাই সনাতন । এই বানী সকলের পালন করে। এই মুখ ব্রাহ্মণ বলে জানবে। যারা এর বিকৃতি করে, তারা সমাজের শত্রু। আর যারা পালন করে, তারা আমার প্রিয়।
২২. আমি সকলকে একরকম বানাইনি। তাহলে আমার সৃষ্টিতে একটি মানুষই যথেষ্ট ছিল। তাই যাদের বল ও পরাক্রম দিয়েছি। তারাই আমার বাহু বল বা ক্ষত্রিয়। তারা নিজের জীবন দিয়ে সমাজের সকল জাতির রক্ষা করে।
২৩. যারা উৎপাদক তারা, সকলকে আমার স্বরুপ জেনে ধন, অর্থ ও অন্য দ্বারা সেবা করে। যে নিজের জন্য ধন সঞ্চয় করে। কৃপণতা করে। সেই কৃপণ ব্যক্তিকে আমি রোগ-ব্যাধি ও শত্রু বৃদ্ধি করে তাকে নির্ধন করি।
২৪. যারা নির্ধন ও সমাজের দ্বারা অনাদৃত। তারা আমার চরণ। এদের আমি সৃষ্টি করেছি সমাজকে গতি প্রদান করার জন্য। যতদিন এই জগত থাকবে। প্রত্যেক উচ্চ স্তরের মানুষকে এদের ওপর নির্ভর থাকতে হবে।
২৫. নাপিত না থাকলে ব্রাহ্মণ নিজে নিজের অশুচি দূর করতে পারবে না। ডোম না থাকলে, মৃত দেহ সৎকার হবে না। কুমার না থাকলে ব্যবসায়ী ব্যবসা করতে পারবে না। লোহার না থাকলে ক্ষত্রিয় অস্ত্রহীন হয়ে যাবে। তাতি না থাকলে সকলেই বস্ত্র হীন হয়ে যাবে। এভাবেই আমি আমার প্রকৃতির তিন গুণ ও কর্মের দ্বারা সকলকে নিজ নিজ ধর্ম প্রদান করেছি।
২৬. স্ব স্ব ধর্মে নিযুক্ত থেকে মানুষ নিজের ও সমাজের রক্ষা করবে। কারণ উত্তম রূপে নিজের ধর্ম পালন করলে ধর্ম ধর্মীর রক্ষা করবে। যে আগুনে ঘৃত ঢেলে আগুন নেভানো যায় না, সেই ভাবেই জলে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করলে জলে আগুন জ্বলে না। ধর্ম নিজেই নিজের কাজ করে।
২৭. কর্ম এবং অকর্মকে আমি বিবেক দ্বারা ধর্ম ও অধর্মের সঙ্গে যুক্ত করেছি। বিবেচনা দ্বারা ধর্ম ও অধর্ম পালন করলেই আমাকে পাওয়া সম্ভব।
২৮. বর্ণ মানুষকে বিভাজিত করেনা। হেয় মানসিকতা বিভাজন সৃষ্টি করে। যারা নিজের বর্ণের অভিমান করে অপরকে কষ্ট দেয়, আমি শাস্ত্রেই তাঁদের "চন্ডাল" উপাধী দিয়েছি।
২৯. হাতি, কুকুর, গরু, ব্রাহ্মণ এবং শপচকে যারা একই ভাবে দেখেন, সেই পণ্ডিত ব্যক্তি 'ব্রহ্ম জ্ঞানী'। কারণ, সকলেই আমার অংশ। সকলেই যে কোনো না কোনো ঋষির বংশধর। তাই সকলের কূল, গোত্র ও পরিচয় আছে।
ব্যাখ্যা: ঈশ্বরকে দ্রষ্টা বলা হয়। তিনি স্রষ্টা রূপে ব্রহ্মা, পালনকর্তা রূপে বিষ্ণু, এবং লয় কর্তা রূপে তিনিই মহেশ্বর। তাই তিনি আদি, মধ্য এবং অন্ত। তিনি সকলের ওপর এক নিজের নিয়ম লাগু করেছেন, যা সনাতন। সেই নিয়মকে আমরা প্রকৃতির নিয়ম বলে জানি। তাহা দিয়ে তিনি সকলের ওপর প্রভুত্ব করেন। প্রকৃতির নিয়মের বাইরে কিছুই নাই। সকল সেই নিয়মের বাঁধনে আবদ্ধ। তিনি সময় বা কালকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই তিনি কালের কাল মহাকাল। তাঁর এই সনাতন নিয়মের মধ্যে যা কিছু আছে, সেই সবের সময় নির্দিষ্ট আছে। তিনি আছেন বলে প্রকৃতি তাঁর বক্ষে সৃষ্টি ও সংহারের লীলা করে স্থায়ী হয়ে আছেন।
মায়ার প্রকট রূপই জগত। মায়ার সৃষ্টি হয়েছে ঈশ্বরের ইচ্ছায়। তাই তার ইচ্ছা শক্তি তার মধ্যেই রমন করে, তার মধ্যেই লড়াই পাবে। জাগ্রত, নিদ্রা এবং গাঢ় নিদ্রায় তিনি সাক্ষী স্বরূপ আপনার আমিত্ত্ব। যেখানে বহিররিন্দ্রিয় দ্বারা বাহ্য জগত, মন দ্বারা স্বপ্ন জগত এবং সাক্ষী দ্বারা সত্য জগতের অনুভব হয়। উপনিষদ যাকে তুরিয় বলে।
যারা মন্দবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি তারা নিজের আসল স্বরূপকে বুঝতে পারে না। অহংকারে তারা নিজেকে কুলুষিত করে। নিজের কুলুষিত মুখ সমাজের কাছে তারা এত সুন্দরভাবে প্রকট করে যেন তারা নিরপরাধ। যখন যীশু কে হত্যা করা হয়েছিল।
যীশু যে অমৃতের কথা বলেছিলেন। সেই অমৃত, এই জগতের সকল সুস্বাদু জিনিসের থেকেও সুস্বাদু। সকল সুখ থেকেও শ্রেষ্ঠ। জীবত কালে যিনি তা প্রাপ্ত হয়। তার এ জগতের কোন কিছুই ভালো লাগেনা। সেই অবস্থাকে বৈরাগ্য বলা হয় এবং সেই ব্যক্তিকে বৈরাগী বলা হয়। সেই অমৃত পান করলে এই সুখ দুঃখ কোনো কিছুই উত্তম বা অধম মনে হবে না।
যারা যীশুকে হত্যা করেছিলো তারাই যিশুর নাম করে নতুন ধর্ম প্রবর্তন করে। কিন্তু যীশু নিজেই বলেছিল। তিনি নতুন কিছুই করতে আসেননি। যীশু ছিল সেই গভির জলের ডুবড়ি যিনি আমাদের ঈশ্বরের সনাতন সত্যকে জানতে পেরেছিলেন।
যখন যীশুকে মৃত্যু দন্ড দেওয়া হলো। বলা হয়, তিন দিনের পর যীশু পুনরায় জীবিত হলেন। সেই ঘটনার রোটে যাওয়ার পর তারা যীশুর লোকমান্যতা কমাতে পারল না। রাজার সাম্রাজ্যবাদী ভয় ও সাধারণ মানুষের ওপর শাসন ক্ষমতা কমতে লাগলো। তাই তারা, নিজের শব্দকে ইস পুত্রের শব্দের সঙ্গে জুড়ে নতুন ধর্ম প্রচার করতে লাগলো। যাতে মানুষের মধ্যে তাদের প্রবর্তিত ধর্মের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। একই ভাবে, হজরত মুহাম্মদ (সা:) গত হওয়ার ৩০০ বছর পর কোরআন লেখা হয়। তাই, মনোযোগ দিয়ে পড়লেই এর সত্য ধরা পড়ে।
এই জগত প্রপঞ্চ (ছলনা) দিয়ে তৈরি। চোখ দ্বারা আমরা যা কিছু দেখি তা সত্য নয়, তাহলে দাঁড়া আমরা যা কিছু শুনি তাহা সত্য নয়, নাক দ্বারা আমরা যে গন্ধ গ্রহণ করি তা সত্য নয়, জিব্বা দ্বারা আমরা যে স্বাদ গ্রহণ করি, সেটাও সত্য নয়, ত্বক দ্বারা আমরা যে শীত উষ্ণ অনুভব করি সেটাও সত্য নয়। মন দ্বারা আমরা যা কিছু ধারণ করি সেটাও সত্য নয়। বুদ্ধি দ্বারা আমরা যা কিছু বিচার করি সেটাও সত্য নয়। কারণ মন ও বুদ্ধি দুটি বস্তু বা ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে, নিজের মতো ব্যাখ্যা করে। এই সব কিছুর অতীতে একটাই জিনিস সত্য। সেটা হলো আপনি। আপনিই সাক্ষী। তাই ঈশ্বর বলছেন, "আমি ছাড়া কিছুই সত্য নয়"।
যেমন উদাহরণ: শিল্পী যখন কোন শিল্প তৈরি করে। ব্যবসায়ী সেই শিল্পতে মূল্য খোঁজে, কবি সৌন্দর্য খোঁজে, জ্ঞানী রহস্য খোঁজে, কিন্তু যিনি শিল্পী, শুধু তিনি সেই শিল্পের আসল অর্থ জানেন। হতে পারে তার কাছে এর কোন অর্থই নেই। হতে পারে অতি সামান্য। আমরা জগতকে যেভাবে দেখি। সেটা আসলে আমাদের নিজেরই প্রতিফলন।
যেভাবে জল, কলসিতে কলসির আকৃতি ধারণ করে, গ্লাসে গ্লাসের আকৃতি ধারণ করে, নদীতে নদী আকৃতি,, সমুদ্রে সমুদ্রের জলের আকৃতি ধারণ করে, সেভাবেই, এক পরমাত্মা, প্রতিটি জীবের আত্মা রূপে প্রতিটি জীবের মুখ চোখ কান ও হাত-পা দ্বারা জগতকে ভোগ করছেন। তিনিই সকল জীবের প্রেরণা, সকলই তাঁর ইচ্ছাতেই ঘটছে।
যীশু খ্রীষ্ট বলেছিলেন "পিতার স্বর্গরাজ্য তোমার ভেতরে"। অথচ যারা ঈশ্বর পুত্রকে ঈশ্বরের দূত বা ঈশ্বর মনে করে। তারা, আকাশ থেকে স্বর্গরাজ্য নেমে আসবে। এই কল্পনা করে। আমরা ক্রুসেডের সাক্ষী থেকেছি। ইতিহাস সাক্ষী দেয়। কত মানুষ এখানে মৃত্যুবরণ করেছে। এক জাতি আরেক জাতির বুকে তলোয়ার বসিয়ে। ঈশ্বরের পুত্র কি সেটাই চেয়েছিলেন?
যেহেতু জীব নিজের ঈশ্বর সত্তাকে, জানতে পারে না।। সেহেতু, সকল জীবকে মায়াবদ্ধ জীব বলা হয়। মায়ার বন্ধনে জীব অজ্ঞানতা লাভ করে বিপথগামী হয়। যদি জীব, নিজের ঈশ্বর সত্তাকে জানতে পেরে যায়। তবে, সে সুখ-দুঃখ, স্বর্গ-নরক, জন্ম-মৃত্যু সকল বন্ধনের উর্ধ্বে পরম ধামে স্থান পায়। কস্তুরী হরিণ একটি উপমা।
জীবতকালে প্রতিটি জীবের সুখ-দুঃখ, উত্থান পতন, জীবকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য। কোন কিছু স্থায়ী হয় না। আজ যিনি রাজসিংহাসনে বসে সুখ ভোগ করছেন, হয়তো কাল সে পথের ভিখারী হয়ে দুমুঠো অন্নের জন্য ভিক্ষা করছে। আজ যাকে প্রেম কি বলে বুকে জড়িয়ে ধরছে। কাল সেই প্রেয়সী অন্যের প্রিয়াকাঙ্খী জেনে নিজেকে ধিক্কার করছে। অসার সংসারে কোন কিছুই স্থায়ী নয়। কেউ আপন কেউ পর নয়। এই সত্য জেনেও, ইহাকে ধারণ করা অতি কঠিন। তাই ঈশ্বরের প্রকৃতি মানুষকে সুখ-দুঃখ, উত্থান-পতনের মাধ্যমে মন্থন করে। তারপর প্রাপ্ত হয়। অমৃত। পৃথিবীতে এরকম অনেক মানুষ এসেছে যারা সেই অমৃতত্ব জেনেছে। যারা সেই মানুষগুলোকে জেনেছে। তারা সে অমৃতত্ব পেয়েছে। কিন্তু যারা সে মানুষগুলোকে ভুল ভাবে জেনেছে। তারা জেনেও কিছু পায়নি।
সনাতন বৈদিক ধর্মে ঈশ্বর কোন ব্যক্তি নয়। ঈশ্বর একটি সত্ত্বা বা তত্ত্ব। মানুষ পশুর মতোই বাস বন্ধনে আবদ্ধ। তাই মানুষকে পশুর সমান তুলনা করা হয়েছে। মানুষের পশুত্ব থেকে উন্নত হলে মানুষ দেবতা হয়। দেবত্ব থেকে উন্নত হলে মানুষ ঈশ্বরত্ব প্রাপ্ত হয়। ঈশ্বর অর্থ থেকে উন্নত হলে মানুষ ব্রহ্মত্ব প্রাপ্ত হয় এবং ব্রহ্মেলীন হলে মানুষের আর পুনরায় ফিরে আসতে হয় না।
প্রকৃতির নিয়মে যেভাবে নতুন শিশু জন্মালে পরিবারের সবাই সুখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। ঠিক সেই একই প্রকৃতির নিয়মে মৃত্যু হলে পরিবার-পরিজন পাত্র মিত্র সবাই দুঃখ পায়। প্রকৃতির এই নিয়মকে জেনেও আমরা তা অগ্রাহ্য করতে পারিনা। এটাই স্বাভাবিক।
0 Comments: