মিথ বা মাইথলজি হলো কাল্পনিক বা মানুষ নির্মিত অবাস্তব গল্প যা কখনো হয়নি। যেমন, অনেক সময় আমাদের প্রশ্ন করা হয়, একজন বানর দেবতা হনুমান, তিনি কিভাবে পাহাড় তুলে নিয়ে যেতে পারেন? অথবা একজন বলশালী দেবতা (হারকিউলিস) যিনি মাথার উপর পৃথিবীকে ধারণ করে আছেন। এটা কিভাবে সম্ভব? কারণ পৃথিবী তো শূন্যে ভেষে আছে?
যদি এগুলো Mythology বা কল্প কাহিনী হয় তাহলে পৃথিবীর সমস্ত ধর্মেই এরকম জগুবি গল্প আছে।
যখন আপনি কোনো বিধর্মী (অন্য ধর্মের ব্যক্তি) -এর সাথে সাক্ষাৎ করবেন। যদি সে হিন্দু ধর্মকে মাইথোলজি বা কল্প কাহিনী বলবে। আপনি তাদের একই প্রশ্ন করবেন: — "এক মহাপুরুষ তাঁর আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদকে দুই টুকরো করে আবার জুড়ে দিয়েছেন। এটা কোন বিজ্ঞান?", বা "কোনো এক দিব্য পুরুষ তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে জলকে দ্রাখ রস বানিয়ে দিতে পারে। এটি কেমন বিজ্ঞান?",
পাশ্চাত্য ঈশ্বর যিনি মাটি থেকে মানব ও ওই মানবের বুকের হাড় থেকে স্ত্রী ইভকে সৃষ্টি করে, মানব জাতির প্রথম পিতা ও মাতা বানিয়েছেন। এইগুলো ধার্মিক দৃষ্টিতে সত্য হলেও বিজ্ঞানের ভাষায় একে মনগড়া গল্পই বলা হবে।
এই একই গল্পের ফ্রেমে হিন্দু পৌরাণিক মনু এবং শতরূপার গল্প জুড়ে দেওয়া হয়। যদিও মনু এবং শতরূপার গল্প কখনোই এরকম দাবি করে না যে, মানব জীবনের উৎপত্তি এই দুইটি জীবের থেকে হয়েছে। আমাদের হিন্দু ধর্ম অনুসারে মানব, দানব, অসুর, দেবতা সকলেই ঋষিদের সন্তান। একজন পিতা মাতা থেকে এতোবড় মানব কুল জন্ম হয়নি।
আপনি এক দিকে আমাদের পৌরাণিক কাহিনী গুলোকে আজগুবি গল্প বলছেন, অথচ আপনার আজগুবী গল্প গুলো ফ্যাক্ট! কিভাবে? অর্থাৎ একজন ধার্মিক অন্যের ধর্মীয় বিশ্বাসকে নাস্তিক দৃষ্টিকোণ থেকেই বিচার করছেন, কিন্তু নিজেরটাকে সত্য মনে করছেন। —একে বলা হয় হিপোক্রেসি।
আজকের আলোচনার বিষয় হলো "ধর্ম বিবর্তন এবং শয়তানের জন্ম। আসুন নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করি:
মিথ বা মাইথোলজি
হিন্দু বা গ্রীক পুরাণ গুলো মিথ বা মাইথলজি নয়। হিন্দু বা গ্রীক পুরাণ হলো প্রাকৃতিক তত্ত্বের প্রাচীন দার্শনিক বিবরণ, যা সেই সময় প্রকৃতিকে ঘটনার মানবীয় রূপ দিয়ে, উপমার দ্বারা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করা হতো। যেমন, চাঁদকে কোনো রাক্ষস বা ড্র্যাগন খেয়ে ফেলে না। এর পেছনে রয়েছে প্রাকৃতিক ঘটনার দার্শনিক ও বিচার।
ওই প্রাচীণ দার্শনিক বিচার থেকেই ওই ধর্ম সংস্কৃতি গুলো চন্দ্র গ্রহণ বা সূর্য গ্রহণের দিন, ক্ষণ, মুহূর্ত বিচার করার জন্য সেই প্রাচীন সংস্কৃতি গুলোতে নিজ নিজ গণনা পদ্ধতি বা ক্যালেন্ডার ছিলো। ভারতের কোনার্ক মান মন্দির, দিল্লীর যন্তর মন্তর, পঞ্চাঙ্গ বা পঞ্জিকা। পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে আফ্রিকার পিরামিড এবং নেটিভ আমেরিকার মায়ান ক্যালেন্ডার। এই সব কিছুরই বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। এই নিদর্শণ গুলো থেকে কেউ বোলতে পারবে না যে প্রাচীণ সংস্কৃতি গুলোতে বিজ্ঞান চর্চা ছিলো না।
আধুনিক যন্ত্র ছাড়া মিশরের পিরামিড কিভাবে এতো বড় বড় পাথর দিয়ে তৈরী হয়েছিলো। কিভাবে হিন্দু মন্দিরের পাথরের স্থাপত্য গুলোর এতো সূক্ষ্ম অলংকার তৈরী করা হতো। এগুলো এখনো বিস্ময়ের।
আমাদের দেবী দেবতারা অন্ধ-বিশ্বাস বা মাইথলজি তো কখনোই ছিলো না। যেহেতু পাশ্চত্য দৃষ্টিতে আমরা এইসব দেব দেবীদের জেনেছি। তাই আমাদের দেবতা আর তাঁদের সর্ব শক্তিমান ঈশ্বরের তুলনা করতে পারছি না। আমরা তাদের নির্মিত কাঠামোর আওতায় আমাদের ঈশ্বরকে বিচার করছি। কেন?
তারা আমাদের বিচ্ছিন্ন কিছু কুসংস্কারের নজির দেখিয়ে আমাদের ধর্মীয় রীতি গুলোকে অবৈজ্ঞানিক, কুপ্রথা, অবৈজ্ঞানিক বলছে। তারা কি বিজ্ঞানের জাগিরদার?
বিজ্ঞানের আগে কি ছিলো?
পাশ্চাত্য দেশগুলিতে আজকের এই বিজ্ঞানের আদি রূপ ছিলো, Natural Philosophy বা প্রাকৃত দর্শন।
-Sophy এটি গ্রীক শব্দ সোফোস থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ "জ্ঞান", এই পৃথিবীতে নতুন আগতদের শেখার জন্য একটি অতৃপ্ত তৃষ্ণা দেয়। জ্ঞান তৃষ্ণার্তদের ফিলোসফার বলা হয়। থেলস, প্লেটো, পিথাগোরাস এদের ন্যাচারাল ফিলোসফার বলা হয়।
প্লেটোর মতে, আমাদের চারপাশের জগতের সমস্ত গোলক, ত্রিভুজ বা বর্গ প্রকৃতপক্ষে এই শুদ্ধ ফর্মের অপূর্ণ প্রতিচ্ছবি মাত্র। মানুষের মননের মাধ্যমে এই শুদ্ধ জ্যামিতিক আকারগুলি উপলব্ধি করা সম্ভব।প্লেটো তাঁর টিমেইয়াস গ্রন্থে লিখেছেন-এ চারটি মৌলিক উপাদান—মাটি, পানি, আগুন, এবং বায়ু—এর উপর ভিত্তি করে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। এর গঠন তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। এই উপাদানগুলির প্রতিটি একটি নির্দিষ্ট জ্যামিতিক আকারের দেখিয়েছেন যা প্লেটোনিক সলিডস নামে পরিচিতি।
আজও, প্লেটোনিক সলিডস জ্যামিতি, পদার্থবিদ্যা, এবং রসায়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্রিস্টাল গঠন, পরমাণুর বৈশিষ্ট্য, এবং প্রাকৃতিক জ্যামিতিক গঠন বোঝার ক্ষেত্রে প্লেটোনিক সলিডসের ধারণা প্রাসঙ্গিক। এর পর অ্যারিস্ট্রটল ইথার মাধ্যম বলে পঞ্চম উপাদানের থিওরী পেশ করছেন।
ভারতে তন্ত্র শাস্ত্রে হরিদ্রা বা পারদ দিয়ে সোনা তৈরীর পদ্ধতি জানা ছিলো। পারদ সোনা গ্রাসকে করে নিজের মধ্যে সঞ্চয় করে। সেই সোনাকে পুনরুদ্ধার করার প্রক্রিয়া রসায়ন। এই বিদ্যা পাশ্চাত্য দেশগুলিতে অ্যালকেমি নামে পরিচিতি পায়।
আমাদের তন্ত্রে যে মৎস্য, মাংস, মদ্য, মুদ্রা ও মৈথুন এই পঞ্চ ম-কার তত্ত্বের সাধনার কথা আছে। একজন অজ্ঞ ব্যক্তি এগুলোকে তার শব্দার্থ অনুযায়ী গ্রহণ করে, এবং একজন নিন্দুক এই ম-কার তত্ত্বকে তামসিক উপাসনা বলে উপেক্ষা করবে। কিন্তু একজন তন্ত্রজ্ঞ তান্ত্রিক এর শব্দার্থ নয় বরং তত্ত্বগত অর্থ জানে। মাংস মানে মাংস নয় মৌন, মৎস্য মানে মাছ নয় প্রাণ, মদ্য মানে মদ নয়। খেচড়ী মুদ্রা দ্বারা ব্রহ্মরন্ধ্রের অমৃত আস্বাদন মদ্য।
গুরুর তত্ত্বাবধানে এই ক্রিয়া সম্পন্ন করে ব্যাক্তি দেবতুল্য হতে পারে। যীশু, মোজেস এগুলো জানতো। পাশ্চাত্য দেশেও এই সাধনা প্রয়োগ ছিলো। পরবর্তি সময়ে বাহুল্য ও বিকৃত হয়ে লোপ পেয়ে যায়।
পশ্চিমে যারা এই সকল সাধনা করতেন তাদের এক দল দার্শনিক এবং অন্য দল উইজার্ড বলে ধর্ম বিরোধী বলা হতো। উইজার্ড, হুডু ডল, উইচ ক্র্যাফট ইত্যাদি সাধনা গুলো পাশ্চাত্য দেশগুলিতে ধর্মীয় হানাহানি, মারামারির কারণ হয়ে যায়।
আমাদের ডামার তন্ত্রে পিশাচ সাধনার উল্লেখ আছে এবং সেই সাধনা নিষেধ করা হয়েছে। সেই দিকে আমরা এখানে যাচ্ছি না।
পাশ্চাত্য দেশগুলিতে দার্শনিকরা ধর্ম ও বিজ্ঞানের যে পরিকাঠামো তৈরী করে গেছেন, সেই পরিকাঠামোর ওপর আজকের বিজ্ঞান নিজের আধিপত্য স্থাপন করেছেন।
স্থান, কাল ও পরিস্থিতি অনুযায়ী এই সব পরিকাঠামোর পরিবর্তন হয়েছে। সেই সকল প্রাচীণ পদ্ধতি সংশোধন করতে করতে আজকের এই বিজ্ঞানের জন্ম হয়েছে।
Natural Philosophy: Natural Philosophy হল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের প্রাথমিক রূপ যা আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিকাশের আগে প্রাকৃতিক বিশ্বকে বোঝার জন্য অনুমান, মনন এবং আত্মদর্শন জড়িত ছিল।
বিজ্ঞান নতুন কিছু সৃষ্টি করে না। বিজ্ঞান দাবি করে না যে, সে সব জানে, বা সব পারে। বিজ্ঞান সেটাই বলে বা করে, যা আমাদের ধরা ছোঁয়ার মধ্যে। কারন প্রকৃতির বাইরে এর আয়ত্ত নেই, এর উৎপত্তি এবং বিস্তার ইন্দ্রীয় স্তরে।
যা কিছু ইন্দ্রীয় বোধগম্য নয় , যা কিছু অপ্রাকৃতিক, সেই সব কিছুই আধ্যাত্মের অংশ। আধ্যাত্ম বিজ্ঞানের থেকে একটা স্বতন্ত্র বিষয় কিন্তু বিজ্ঞান আধ্যাত্মের বিষয়। বিজ্ঞানের যোগ-বিয়োগ, গুন-ভাগ দিয়ে আধ্যাত্মকে পরিমাপ করা যায় না কিন্তু যে ব্যক্তি অধ্যমিক নয় সে বিজ্ঞানের জগতে বুলবুলিবা টিয়াপাখির মতো।
আধ্যাত্ম ও বিজ্ঞানের মাঝামাঝি যে পাতলা পর্দা আছে, সেখানে তৈরি হয়েছে অন্ধ বিশ্বাস এবং ছদ্ম বিজ্ঞান। যেমন, ম্যাজিক একটি ছদ্ম বিজ্ঞান। সেই ছদ্ম বিজ্ঞান অবলম্বন করেই অসুর বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ সকল অপকর্ম করে।
চমৎকার কিভাবে হয়?
একজন জাদুগর দর্শদের দেখাচ্ছে সে মানুষকে কেটে দুই ভাগ করে দিচ্ছে , বা নিজের মানসিক শক্তি দিয়ে অন্যের মনের কথা জেনে যাচ্ছে। সে বলছে : "আমি যা কিছুই করছি এই সব কিছুর পেছনে একটা বিজ্ঞান আছে"। কিন্তু সে কিভাবে এই সব করছে , সেটা সে বলছে না।
সাধারণ মানুষের কাছে সেটা জানার আগ্রহ নেই। কারণ যেহেতু সে নিজের চালাকিকে বিজ্ঞান বলে চালিয়ে দিয়েছে। মানুষের মনে কোনো চমৎকার বা উৎসাহ থাকছে না। সে শুধু মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্য এসব করছে। সব জাদু কোনো বিজ্ঞান নয়।
এই একই কাজ একজন তান্ত্রিক করতে পারে। সে মানুষকে কেটে দুই ভাগ করে জুড়ে দিতে পারে অন্যের মনের জানতে পারে। আপনি এই দুটোকে পাশাপাশি রেখে তুলনা করে কোনটা চমৎকার বা কোনটা ট্রিক বলতে পারবেন না।
তান্ত্রিক আপনাকে তাঁর সাধনার কথা বলতে পারে। কিন্তু সে বলতে পারবে না কিভাবে এইসব হচ্ছে। তান্ত্রিক তাঁর গুরুর কাছে কিছু সিদ্ধি বা বিদ্যা অর্জন করেছে। সে নিজে থেকে এইসব তৈরী করেনি।
অভিজ্ঞ তান্ত্রিক যদি এর রহস্য সাধারণ মানুষের কাছে প্রকাশ করে, সাধারণ মানুষ বুঝবে কিনা সন্দেহ। কারণ যে ব্যক্তি কলকাতা যায়নি বা জীবনে জলে নামেনি। সে মেট্রো রেল কি জিনিস বা সাঁতারে কিভাবে ভেসে থাকতে হয় কিভাবে বুঝবে?
তাই তান্ত্রিককে সহজেই ভন্ড বা বুজরুকি বলে দেওয়া যায়। অপরদিকে ওই জাদুঘর যেহেতু নিজেকের বিজ্ঞানের ছায়ায় নিজেকে প্রচার করেছে সে মানুষকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে ফেলে। তাঁর ছদ্ম বিজ্ঞানকে কেউ প্রশ্ন করে না।
তাই, সাধন মর্গে কোনো সিদ্ধি বা বিভূতি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে বারণ করা হয়েছে। এতে সমাজের কোনো লাভ হয় না, নিজেরও হয় না।
মানুষকে যা কিছুই বিশ্বাস দেওয়া হয়, সেই বিশ্বাস থেকেই সে নিজের জন্য একটা কল্পনার জগত সৃষ্টি করে। সেই কল্পনার আশ্রয় করে সে যেমন যেমন কর্ম করে সেইটাই অন্ধ বিশ্বাস বলে।
ধর্মের বিবর্তন:
বিগত শতাব্দী ধরে ধর্মের বিবর্তন ও দেবী দেবতার ধারনায় বিকৃতি ঘটেছে। ইসলাম, খ্রীষ্ট এবং ইহুদী ধর্মে যে দাজ্জাল, শয়তান এবং লুসিফরের উল্লেখ আছে। সেই লুসিফার, কোনো এক সময়, কোনো এক ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর দেবতা হিসেবে পূজিত হতো।
এই ধরনের উদাহরণ গুলোকে এক কথায় বলা হয় ধর্মীয় অগ্রাসন (Religious Aggression) । এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে বিভিন্ন ধর্ম, বিশ্বাস বা সাংস্কৃতিক ধারণা একে অপরের সাথে মিশে যায় বা একটি আরেকটির অস্তিত্ব নষ্ট করে নতুন ধারণা তৈরি করে। এর ফলে দেবতা বা চরিত্রগুলোর ভূমিকা এবং চিত্র পরিবর্তিত হতে থাকে।
আজকাল যে The Satanic Temple, যা যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু পাবলিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেছে। এটি মূলত পাবলিসিটি স্টান্ট এবং প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হয়, যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সরকারের ধর্ম নিরপেক্ষতার উপর জোর দেওয়া হয়।
এই সংগঠনগুলো আসলে ঐতিহ্যগত অর্থে শয়তান বা লুসিফরের পূজা করে না। বরং এগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি এবং ধর্মীয় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ করা। অনেক ক্ষেত্রে এই কর্মকাণ্ডগুলো খ্রিস্টান প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া প্রভাবের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করে।
কিছু ক্ষেত্রে, এমন প্রচারণা চার্চের দিক থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রোপাগান্ডা "হতে পারে", যা জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং তাদের পক্ষে মতামত গঠনের চেষ্টা করে। এতে করে সমাজে ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও ভবিষ্যৎ বাণী সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডকে বাঞ্ছিত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
তবে এটা পুরোপুরি নিশ্চিত বলা কঠিন যে এসব প্রচারণা সরাসরি চার্চের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে কিনা।
পৃথিবীর বয়স :
ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজের একজন আর্চবিশপ এবং অধ্যাপক, বাইবেলের সূত্র ব্যবহার করে পৃথিবীর জন্মতারিখ গণনা করে বলেন, বাইবেল অনুযায়ী পৃথিবীর বয়স ৬০২৬ বছর।
কিছু মুসলিম পণ্ডিত বিশ্বাস করেন যে কুরআনে অনুসারে পৃথিবীর বয়স প্রায় ৬,০০০ মানব বছর। কারণ কুরআনে বলা হয়েছে যে আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন এবং একটি দিন 1000 মানব বছরের সমান। কিছু ইঙ্গিত করে যে পৃথিবীর বয়স ৬,০০০-৭,০০০ বছর, এবং এর আয়ুষ্কাল শুরু হয়েছিল যখন আদম পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন। কোরান দুটি আয়াতে বলেছে, (২২:৪৭ এবং ৩২:৫), আল্লাহর কাছে একদিনের পরিমাপ আমাদের হিসাবের ১,০০০ বছরের সমান। অর্থাৎ ৬×১০০০ = ৬০০০০ দিনে আল্লাহ পৃথিবী বানিয়েছেন।
হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্ব অনুসারে, সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় একটি চক্রাকার ঘটনা। প্রতি কল্পে জগত সৃষ্টি আ ধ্বংস হয়। বর্তমান কল্প হলো শ্বেত বরাহ কল্প। একটি কল্প বা ব্রহ্মার একদিনের দৈর্ঘ্য। ব্রহ্মার এক দিনের দৈর্ঘ্য 4,320,000 সৌর বছর। ব্রহ্মা এরকম একশত "বছর" বেঁচে থাকেন এবং তারপর নতুন ব্রহ্মা সেই স্থানে বসেন।
ভাগবত পুরাণ (3.11.29): বলা হয়েছে: "কল্পদৌ বিদ্যুতাভবে 'সৃজ্যতে ব্রহ্মণদম বিশ্বম" —অনুবাদ: "কল্পের শুরুতে, ব্রহ্মা বিশ্ব সৃষ্টি করেন।" মনু স্মৃতি (1.64-65):"কল্পঃ সহস্র-যুগঃ প্রোক্তঃ মহা-কল্পঃ সহস্র-কল্পঃ"অনুবাদ: "একটি কল্পকে বলা হয় হাজার যুগ, এবং একটি মহাকল্প হল হাজার কল্প।"
এক মহাযুগ = 4,320,000 মানব বছর এরকম হাজার মহাযুগে এক ঐশ্বরিক দিন। অর্থাৎ 4,320,000,000 (4.32 বিলিয়ন) মানব বছরে এক ঐশ্বরিক দিনরাত্রি হয়। ব্রহ্মার 1 দিনকে কল্প বলা হয়। একজন ব্রহ্মা 100 বছর জীবিত থাকে। ব্রহ্মার 1 দিন 14টি মনুর জীবন নিয়ে গঠিত এবং প্রতি দুটি মন্বন্তরের বর্ষে মধ্যে 1,728,000 বছরের ব্যবধান রয়েছে। ব্রহ্মার জীবনকাল এই জগতের জীবনকাল। সৃষ্টি কর্তার এক দিন 4,320,000 মানব বছর হলে 6 দিনের ২৫,৯২০,০০০ বছর।
এরকম হাজার হাজার সৃষ্টিকর্তা বিষ্ণুর স্বাস প্রশ্বাসে জন্ম হয় আর মৃত্যু হয়। অর্থাৎ সেই কাল গণনা করা আমাদের কল্পনার বাইরে। তাই, আমাদের বিশ্ব ব্রহ্মান্ড অনাদি অনন্ত এবং সনাতন।
নাসার Wilkinson Microwave Anisotropy Probe(WMAP) প্রকল্পের উপর ভিত্তি করে, নক্ষত্রের অস্তিত্বের আগে নির্গত Microwave বিকিরণের একটি মানচিত্র তৈরি করে, নির্ণয় করা হয়েছে যে মহাবিশ্বের আনুমানিক বয়স 13.77 বিলিয়ন বছর।
তাহলে কে আসল কে নকল ?
যে আব্রাহামের পৃথিবী কি ৬ হাজার বছর আগে জন্মেছে, সেই সৃষ্টির ঈশ্বর কতো পুরাতন বা নূতন জানি না। নাকি এর থেকেও প্রাচীণ কোনো ইতিহাস ছিলো? কারণ, যিনি আদির আদি, সকালের আদি, সেই আদিম ঈশ্বর বলছে, "আমায় ছাড়া অন্য দেবতার উপাসনা করবে না।" তাঁর মানে, কোন দেবতা তাঁর আগে ছিলো?
এই জন্য কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়
(১) যীশু, মোজেস, আব্রাহামের সময় যদি ঈশ্বর তাঁর কালাম বা বই পাঠায়, তবে তাঁর পূর্বপুরুষরা কোন ধর্ম পালন করতো?
(২) যিনি প্রথমে আসে, সে কিভাবে অন্য জাতি বা গোষ্ঠীর আচার আচরণের নতুন করে সংশোধন করতে পারে? যা নেই, সেটা নিয়ে কেউ বাধা দেয় না। যেমন, ক্যারাম খেলায় গোলকিপার থাকবে না, ফুটবল খেলায় হকি স্টিক ব্যবহার করা যাবে না। এরকম নিয়ম কখনোই তৈরী হবে না।
তাহলে একমাত্র ঈশ্বর বা আল্লাহ কোন ঈশ্বরের পূজা বা আরাধনার বিরোধ করছে? তিনি তো সব কিছুর উৎস। তবে কি সেই ঈশ্বর বা আল্লাহ নিজের অস্তিত্ব বা সৃষ্টির নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না?
লুসিফার স্পষ্ট ধারণা বা বিস্তারিত বর্ননা নেই।
এই শয়তান বা লুসিফার কিভাবে এসেছে? এর কোনো স্পষ্ট ধারণা বা বিস্তারিত বর্ননা তথা কথিত ঈশ্বর প্রদত্ত ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে নেই। এদের বর্ননা সম সাময়িক অন্যান্য লেখকদের লেখা ও নথির মাধ্যমে পাওয়া যায়। আপনি জানলে অবাক হবেন মূল মূল হিব্রু বাইবেলেও লুসিফারের কোনো উল্লেখ নেই।
কিন্তু যে অপশক্তির কথা উল্লেখ আছে, সেই 'মর্নিং স্টার'ই যে লুসিফার, এই শব্দটিও সন্দেহজনক। এই 'মর্নিং স্টার' হলো নর্ড পূরণের দেবতা —ইওসফরাস।
সেই সময় ম্লেচ্ছ দেশ গুলোতে, বিভিন্ন গোষ্ঠীতে জমি, সম্পদ ও কৃতদাস নিয়ে, রাজ্য নিয়ে লড়াই হতেই থাকতো। গনীমতের মাল ভাগ করে নেওয়ার প্রথা তাঁদের ধর্ম পুস্তকেই আছে।
যারা বিজয়ী হতো, পরাজিতদের দেবতা গুলোকে শয়তান বলে তাদের মনোবলকে দুর্বল করতো। তারপর ওই পরাজিতদের শুদ্ধিকরণ করে ধর্ম পরিবর্তনের দ্বারা অঙ্গিকার বদ্ধ করা হতো। অমুক দেবতা ছাড়া অন্য দেবতার উপাসনা করা যাবে না। করলে মৃত্যুদণ্ড।
তাঁদের গল্প গুলোতে দেখবেন, লুসিফার কে স্বর্গ রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। টাইটানদের পাহাড় থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। অথবা পূর্ব আকাশ থেকে তাঁদের জাতিকে উদ্ধারের জন্য দূত পাঠানো হয়েছে বা হবে। এরকম কথা বলা হয়েছে।
অথচ আমাদের সনাতনী পৌরাণিক কাহিনীতে এর উল্টো কথা বলে। বলা হয়, ভারতের বাইরে অনার্য দেশে পাপ বিচরণ করে, অসুরদের ভারতের বাইরে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, বুদ্ধর অনুগামীদের বাইরের দেশে পাঠানো হয়েছে ইত্যাদি।
যীশু খ্রীষ্ট আসার পর খ্রীষ্টের আগমনের সংবাদ প্রচারের জন্য মিশনারিরা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর আগে ইহুদিরা ছিলো সংকোচিত। এবং গণ্ডীবদ্ধ। ইহুদিদের ধর্মীয় প্রতীক ✡️ বা মোহর হিন্দুদের তন্ত্র শাখার শক্তি যন্ত্রের অনুরূপ।
মর্নিং স্টার'ই যে লুসিফার |
লুসিফার বা মর্নিং স্টারের রহস্য:
এই মর্নিং স্টারের আরেকটি গ্রীক নাম হল "ইওসফরাস" (Ἑωσφόρος)। রোমানা ভাষায় এনাকে: Heōsphoros (হিওসফোরোস) বলা হয়। যার অর্থ "ভোরের-উৎসর্গ"। "ইওসফরাস" শব্দটি একটি ইংরেজী ভাষায় বিশেষণ হিসাবে, "ফসফরাস" বলা হয় যার অর্থ "আলোর বাহক"।
কে এই আলোর বাহক? এই আলোর বাহক হলো ভোরের পূর্ব আকাশে যে উজ্জ্বল নক্ষত্র জ্বলজ্বল করে, যাকে শুকতারা বলে অমরা জানি। এই শুকতারা আসলে শুক্র গ্রহ। সেই মর্নিং স্টার খ্রিস্টানদের লুসিফার বলে পরিচিত।
বাইবেলের সেই শয়তানের ধারনার ছায়াই ইসলামেও প্রতিফলিত হয়। কোরআনে এই চরিত্রকে ইলবিস বলা হয়েছে। নাম আলাদা কিন্তু তাদের চারিত্রিক আকলন একই। কারণ, এই খ্রিষ্টান ও ইসলাম একই মূল ইহুদী থেকে এসেছে। এরা নিজেদের আদম, ইভ এবং আব্রাহামের বংশধর বলেন। তবে কে আসল, কে শ্রেষ্ঠ এই শ্রেষ্ঠতার লড়াইয়ে এদের নিজেদের মধ্যে রক্তাত্ব ইতিহাস আছে। হিন্দু তো অনেক দূরের কথা।
হিন্দু ধর্মে দেবতা ও অসুর
আমাদের হিন্দু ধর্মে দেবতা, অসুর বা রাক্ষসদের উল্লেখ পাই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অসুর বা রাক্ষসদেরও আমরা সন্মান বা আদর্শ হিসেবে দেখি। যেমন, ভক্ত প্রহ্লাদ এবং তাঁর পৌত্র রাজা বলি, গয়াসুর, ইত্যাদি। কারণ মানব, দেব ও দানব একই পিতা কশ্যপের সন্তান এবং সৎভাই।
এই রাক্ষস, পিশাচ, নিশাচর এদের ভারতের বাইরে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এমন ব্যাখ্যা মনুস্মৃতী সহ কালিকা পুরাণ, ডামর তন্ত্র শাস্ত্রে বলা হয়েছে। পাশ্চাত্য দেশগুলিতেই যে আমাদের অসুর সংস্কৃতি ছিলো, তাঁর প্রকৃষ্ট প্রমাণ হলো আবেস্তা এবং আসর নামক যায়গা। যেখানে। দেবতা বা দিবাস হলো খারাপ এবং আহর বা অসুর হলো ভালো। বেদেও কিছু কিছু জায়গায় ইন্দ্রকে অসুরকে শ্রেষ্ঠ, মহান বলা হয়েছে।
অর্থাৎ দেবতার ও অসুরদের মধ্যে কোনো রাজনীতিক বা নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে এই বিভাজন হয়েছে।
অসুর নিন্দা করেও আমরা তাঁদের নিজেদের অক্ষম শত্রু বলছি না। আমরা বলছি সমগ্র জগত আমাদের আত্মীয় এবং একই ব্রহ্মের মায়াকৃত স্বরূপ। যেভাবে রসগোল্লা, সন্দেশ, চমচম, ক্ষীর একই দুধের ভিন্ন ভিন্ন রূপ। আমরাও ওই একই ব্রহ্মের ভিন্ন ভিন্ন রূপ।
মানব, দানব ও দেবতার সম্পর্ক:
মানব দানব দেবতারা ভাই ভাই। এরা একই ঈশ্বরের উপাসনা করে বল, বুদ্ধি ও জ্ঞান অর্জন করে। কিন্তু তাঁরা পরস্পর লড়াই করে শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে। অসুরের বল আছে, মানুষের বুদ্ধি আছে, কিন্তু দিব্য জ্ঞান আছে দেবতাদের।
সিস্টেমটা এরকম— মানুষ, দেবতার কাছে নিজের জন্য যা কিছুই আশা করে, তাঁর জন্য সে হোম বা যজ্ঞ করে দেবতাদের সন্তুষ্ট করে। দেবতা সন্তুষ্ট হলে ফল দিতে বাধ্য। কিন্তু, অসুর স্বার্থপর, তারা দেবতাদের হিংসা করে, অসুররা আগে থেকেই সমৃদ্ধ, মানুষের কাছে তাঁদের কিছু চাওয়া পাওয়া নেই।
যখন মানুষ দেবতার উদ্দেশ্যে হোম হব্য উজ্জাপন করে। অসুর সেই হোম বা সেবায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে। মানুষকে শারীরিক, মানসিক এবং অধ্যত্মিক কষ্ট দিয়ে তারা দেবতাদের দমিয়ে রাখতে চায়। অসুরদের শত্রুতা দেবতার সঙ্গে। মানুষ তো চুনোপুটি।
কিন্তু সৃষ্টি কর্তা ব্রহ্মা মানুষকে একটি বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছে যা দেবতা বা অন্য কোনো অসুরের কাছে নেই। মানুষ তপস্যা করে দেবতাদের থেকেও ঊর্ধ্বে উঠে পরম ধামে ব্রহ্মে লীন হয়ে এই ভোগ বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারে। তাই, মানুষ দুর্বল ও অল্পোজ্ঞ হলেও শ্রেষ্ঠ। দেবতারাও মানুষ হয়ে জন্মানোর জন্যে লালায়িত থাকে।
দেবতারা মঙ্গলময়
রামায়ণ মহাকাব্যে রাক্ষসদের রাজা রাবণ শিব ভক্ত ছিলেন আবার শ্রী রাম ওই একই শিবের পূজা করে যুদ্ধ করছেন ওই রাবণের বিরুদ্ধে। কারণ, রাবণ মানুষকে তুচ্ছ মনে করতেন। তাই, ভগবান বিষ্ণু মানব রূপে আবির্ভূত হয়ে রাবণকে ধরাশায়ী করেছিলেন।
রাক্ষস কূলে জন্ম নেওয়া ভক্ত প্রহ্লাদ হরি নারায়ণের ভক্ত। তাঁর নিজের পিতা হিরন্যকশ্যপ দেব ঈর্ষার কারণে নিজেই নিজের পুত্রকেই হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। তখন, নারায়ণ তাঁর ভক্ত প্রহ্লাদকে বাঁচাতে নরসিংহ রুপে প্রকট হয়ে হিরন্যকশ্যপকে বধ করেছেন। দেবতার যে অসুরের শত্রু এমনটা কিন্তু নয়। অসুরেরা দেবতাদের ঈর্ষা করে।
যেহেতু দেবতারা তাঁদের সাত্ত্বিক স্বভাবের, তাই নারায়ণ তাঁর পরম শত্রু অসুর পুত্রকেও রক্ষা করতে অবতীর্ণ হন।
অসুর বুদ্ধি সম্পন্ন ভস্মাসুর যে দেবতা থেকে শক্তি প্রাপ্ত করেছিলেন, সেই শক্তি দিয়ে ওই দেবতাকেই ভস্ম করতে উদ্যত হয়। এর থেকে স্পষ্ট হয় যে অসুর আসলে আমাদের কোন কোন বিশেষ গুণ গুলোকে ইঙ্গিত করে। এই জগতে কারা আসুরের মতো কাজ করে। তাই, দেবতার পূজাই করতে বলা হয়।
আরেকটু পৌরাণিক ইতিহাস জানলে দেখবো যে এই রাবন, কুম্ভকর্ন বা হিরন্যকশ্যপ। অসুর হলেও পূর্বে সেই শ্রী হরি নারায়নের দ্বরপাল ছিলেন। যারা সনক কুমারদের অভিশাপে পৃথিবীতে রাক্ষস হয়ে জন্ম হয়। সেই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে নারায়ণের হাতেই মৃত্যুর ইচ্ছা করেছেন। অর্থাৎ এই সব কিছুই নাটক। পূরণের এই ইতিহাস, সাহিত্য, উপমার অর্থ একজন সদগুরু তাঁর পরম শিষ্যকে বলে দেয়।
এই এসবই তো মানুষের কল্পনা
যদি আপনি এটিকে কল্পনা বলেন, তবে, এই কল্পনাতেও কোনো শত্রুতা বা জন্মগত বা জাতিগত বিদ্বেষ নেই। অর্থাৎ হিন্দু ধর্মে পরমেশ্বর এমন কোনো শয়তান বা দুজ্জাল তৈরীই করেনি যিনি ঈশ্বরের ভক্তদের মন্দ কাজে প্রলোভিত বা বিরোধিতা করে।
বরং মানুষ নিজের মন, বুদ্ধি ও কর্মের দ্বারা নিজেই নিজের নিয়তি তৈরী করে। কে কোন দেবতার পূজা করছে, কোন প্রেত বা পিশাচের উপাসনা করছে। সে নিয়ে কোনো বাধা নেই। যোগ যুক্ত কর্মই শেষ কথা।
ওদের থেকে দূরে থাকো সাবধানে থাকো:
হিন্দু ওই প্রেত বা পিশাচ উপাসকদের হত্যা বা তাঁদের উপাসনাকে তাচ্ছিল্যও করে না। শুধু বলে, তোমরা ওদের থেকে দূরে থাকো।
ওরা আজ ভুল করেছে ঠিকই। কিন্তু পুনঃ পুনঃ জন্ম নিয়ে সকলেই একদিন ঈশ্বরের কৃপায় মুক্ত হবেন। এই পৃথিবীর সব কিছুই নাটক।
মৌলবাদী সাম্প্রদায়িকতা
বিপরীত দিকে আব্রাহাম ধর্মের মৌলিক মতবাদ তৈরি হয়েছে অন্য ধর্মের, অন্য দেবতার, অন্য সংস্কৃতির অপমান, অপব্যাখ্যা, অপপ্রচার ও বিনাস করে। যেমন:— মূর্তি পূজা মহাপাপ, আমায় ছাড়া অন্য দেবতার উপাসনা করা পাপ, তোমরা পাপি হয়ে জন্মেছ, তোমরা এই পথ ছাড়া অন্য পথে গেলে পাপ থেকে মুক্তি পাবে না। আমার এই অমুক ঈশ্বর ব্যতীত অন্য কোনো ঈশ্বর নেই।
এই সব কথা গুলো এভাবে বিচার করে দেখুন: " ওদের মতো বিশ্বাস করা উচিত নয়। আমার প্রোডাক্ট ছাড়া অন্য প্রোডাক্ট ভালো নয়। তোমার এই রোগের চিকিৎসা আমি ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসক করতে পারবে না। আমার মতো ভালো মিষ্টি তুমি আর কোথাও পাবে না।"
হিন্দু ধর্ম বলে, "তুমি যেখানেই সত্যকে দেখবে, সেখানেই আমায় পাবে।", "তুমি যেভাবেই যে রূপেই আমায় ডাকবে, আমি সেই রূপে সেই ভাবেই তোমায় দেখা দেবো।", "পাপ করলে তুমি ফল ভোগ করবে, প্রায়শ্চিত্য করলে ওই পাপের ফল, কম ভোগ করবে।", "আমিই মুক্তি, আমি তোমার মধ্যেই আছি, এই আবরণ মিথ্যা, এই মিথ্যা আবরণ ত্যাগ করলেই তুমি আমি এক এবং মুক্ত"।
ভিন্ন ভিন্ন ধর্মবাদ ও সাদৃশ্য সূত্র
ইসলাম ও নবী মুহাম্মদ:
ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর আগেও ইসলাম ও আল্লাহর উপাসনা ছিলো, কিন্তু তাঁরা এতো বড়ো আকারে আরবে প্রকট ছিলো না। হযরত মুহাম্মদ সাহেব তার পিতার নাম আবদুল্লাহ। আবদুল্লাহ নামেই আল্লাহর উল্লেখ আছে। যার অর্থাৎ আল্লাহর বান্দা। আল্লাহ নামক ঈশ্বরের আরাধনা যে হযরত মুহাম্মদ (সা:) বহু আগে থেকেই আরবে চল ছিলো, এটাই যথেষ্ট প্রমাণ।
আজকের ইসলামের রূপ দুই ধরণের। একটি রাজনীতিক এবং অন্যটি আধ্যাত্মিক। নবীর ইন্তেকালের পর কোরআন পুণরায় লেখা হয় এবং নকল কোরআন গুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এখন কিভাবে বিচার করবো কোনটা আসল আর কোনটা নকল? যে ফুটবল মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। সেখান একটাই গোলপোস্ট এবং সব গোল গণ্ডগোল।
খলিফা কে হবে, এই নিয়ে তাঁর ধর্মাবলম্বীরা আসনের জন্য লড়াই শুরু করে। "আল্লাহ হুয়াকবর" ধ্বনি করে তারাই পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করে। অর্থাৎ, সেই পরম করুণাময় আল্লাহর রহমত কার ওপর থাকলো আর কার রইলো না সেটাও একটা বড়ো প্রশ্ন।
এক ইলা এক, কিতাব ও এক ইসলাম ধর্মের শিয়া ও সুন্নি এই দুই বিকল্প তৈরী হলো। শিয়াদের মতে সুন্নীরা বিপথগামী, এবং সুন্নীদের মতে সিয়ারা বিপথগামী। আল্লাহ কেবল তার উপাসনা বলবৎ করতেছেন। তাঁর ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই তাই, আপনি যদি ঐ পথ ছাড়া অন্য কিছু করতে পারবে না।
আপনি যদি ইসলাম ধর্মের সমালোচনা করতে সাহস করেন, তবে আপনি নিজের জীবনকে বিপন্ন করবেন। তাই, সাংকেতিক ভাষায় এটুকুই বলতে পারবো যে— আধ্যাত্মিক মুসলিমরা রাজনৈতীক মুসলমানের তুলনায় সংখ্যায় কম, সামরিক শক্তি কম। যারা ভালো মানুষ হিসেবে অমুসলিমদের রক্ষা করার চেষ্টা করবে, বা অমুসলিমদের হয়ে কথা বলবে তারা টিকে থাকতে পারবে না। যদি পৃথিবীতে একটাও অমুসলীম না থাকে। তাহলে এরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে বিবাদ করে মারপিট করবে। তাই, এই ইসলাম ধর্মের প্রতি আমার কোনো বিশেষ বক্তব্য নেই।
যীশু খ্রীষ্ট ও তাঁর জ্ঞান
আজ থেকে মোটামুটি ২০০০ বছর আগে পঽল সেন্ট পল এবং মার্টিন লুথার আসলেই আজকের এই খ্রিস্ট ধর্ম প্রবর্তন করেন।
যীশু খ্রীষ্ট নিজে কোনো ধর্ম প্রবর্তন করতে এসেছেন এমন কোথাও তিনি বলেননি। তিনি যা বলেছেন, সেটা নিরপেক্ষ ভাবে বাইবেলে পড়লেই বুঝতে পারবেন।
এই পঽল (পল) আগে যীশুর বিরোধিতা করতেন। তিনি খুঁজে খুঁজে যীশুর অনুসারীদের ওপর অত্যাচার করতেন। কিন্তু একদিন হঠাৎ তাঁর সামনে ঈশ্বরের পরীক্ষা এলো। তিনি ঈশ্বরের স্বর শুনতে পেলেন এবং তাঁর হৃদয় পরিবর্তন হয়ে গেল গেলো। তিনি রেভেলেশন নামক একটি পুস্তক লিখে ফেললেন, আর সমগ্র রোম সাম্রাজ্য তাঁর সেই মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে ধীরে ধীরে খ্রিস্টের উপাসনা করতে আরম্ভ করল।
খ্রীষ্ট ধর্মের পূর্বে নাসরাতের যীশুর একজন ইহুদী পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন। তিনি ইহুদীরা ধর্ম পুস্তক "তা-না-ক" পাঠ করতেন এবং সেখান থেকেই ধর্মের মৌলিক মতবাদকে প্রচার করে ধর্মের ভ্রান্তি সংস্কার করতেন।
450BC তে সেই "তা-না-ক" সংকলিত হয় যা জুইস হিব্রু বাইবেল। ২৪(চব্বিশ) টি হিব্রু বই পুঁথির সংকলন ছিলো। যথা:— তাওরা (৫টি পুঁথি), নবীইম (৮টি পুঁথি), এবং কেতু্ভিম (১১টি পুঁথি)।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওল্ড টেস্টামন্ট এই তানক থেকে কিছু পুঁথির সংযোজন ও বিয়োজন করে তৈরী হয়েছে। এই যোগ বিয়োগ করেও বর্তমান বাইবেলে মোট ৬৬টি বই আছে কিন্তু যেখানে ৭৩টি বই থাকার কথা। সেই ৭টি বই নেই কারণ,— অনেক কারণ আছে, কিন্তু লুথার মূলত মনে করতেন, এই সাতটি বই আসলে পরস্পর বিরোধী কথা বলে, এরা মূল উৎসথেকে সরে গিয়ে কথা বলে। রোমান ক্যাথলিক চার্চ এবং প্রোটেস্টান চার্চ এই ভাবেই আলাদা হয়ে গেছে।
যখন ক্রুসেড আরম্ভ হলো। তখন যীশুর নামে হাজার হাজার নর্ডিক, পেগন, এবং মুসলিমদের গনহত্যা করা হয়েছে। তাঁদের দেবী দেবতার মূর্তি ভেঙ্গে সেগুলোকে ডেভিল Devil, Evil, Fallen Angle বলে প্রচার করা হলো। খ্রিস্টান ইতিহাসেই এর প্রমাণ আছে। তবে সেটি তারা অপবাদ বলে এড়িয়ে যায়।
আগেই বলেছি কিভাবে প্রাক খ্রিস্টীয় ধর্মের দেবতা, মর্নিং স্টার শয়তান হয়ে গেল। শুক্র যার মাধ্যমে লুসিফারের ধারনা জন্ম হয়েছে কিন্তু অজান্তেই খ্রিস্টানরা সেই প্রাচীণ আলোর দেবতা মর্নিং স্টারকেই ঈশ্বর কল্পনা করে তাঁর জন্মের দিন 25 ডিসেম্বর কেই পূণ্য দিন হিসেবে পালন করছে।
যীশু খ্রিস্টের প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে। তিনি যে দেবত্বে উন্নত সত্ত্বা ছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস গঙ্গার তীরে তাঁর সাক্ষাৎকার করেছেন।
যেহেতু যীশু খ্রীষ্ট আমার ঈশ্বর বা গুরু নন। সেহেতু, তারা অনুসারী আমি নই। আমাদের ভবিষ্যত পূরণে ইশ পুত্র বলে তাঁকে সম্বোধন করা হয়েছে। তিনি ম্লেচ্ছদের আচার্য ছিলেন। তাই, যীশু খ্রীষ্টকে এবং তাঁর জীবন বলির ঘটনাকে অস্বীকার করার কোনো অধিকার নেই। তাঁকে আমি প্রণাম জানাই।
তাঁর জীবন ছিল রহস্যময়। তিনি নিজে থেকে কোনো ধর্ম প্রবর্তন করেননি বা নতুন কিছুই বলেননি। তিনি নিজে একজন ইহুদী ছিলেন এবং ইহুদীরা যেই ঈশ্বরের উপাসনা করতেন। তিনিও সেই একই ঈশ্বরের উপাসনা করতেন।
তাঁর বক্তব্য অনুসারে তিনি একজন মেশ পালকের মতো তাঁর ইহুদী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে, আধ্যাত্বিক পথে চালিত করতে আত্ম বলি দিয়েছেন। তিনি যা কিছুই বলেছেন, সেই সব ইহুদীরা বুঝতে পারেনি, তাই তারা তাঁকে অস্বীকার করেছে।
তিনি নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলেছেন। কারণ ‘ইসরাইল’ মানেই ঈশ্বরের সন্তান। সব থেকে বড় মিথ্যা কথা হলো, তিনি সকলের পাপ থেকে মুক্তির জন্য নিজের আত্ম বলিদান দিয়েছেন।
তিনি নিজেকে ক্রুশে বলি দেননি বরং রাজনৈতিক, কূটনৈতিক চক্রান্ত করে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল। প্রচলিত ইহুদী ধর্মীয় রীতির বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি লোক সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি নিজেকে রাজকুমার বলেছিলেন। ইহুদিরা সেই সব — কথাকেই রাজা পিলাতুসের কাছে গিয়ে নালিশ করেছিল।
শয়তান বা অপদেবতা বা দুষ্ট আত্মা এই সকল ধারণা পাশ্চাত্য দুনিয়া থেকে আমাদের দেশে আমদানি হয়েছে। দীর্ঘ হাজার বছরের দাসত্ব, শিক্ষানীতির পরিবর্তন এবং সাংস্কৃতিক আদান প্রদানে আমরাও ঐভাবে ভাবতে শুরু করেছি, যেভাবে তারা আমাদের ভাবতে বাধ্য করেছে।
তাঁদের তর্কের পরিকাঠামো, তাঁদের বিচার বুদ্ধির ছাঁচে আমাদের দর্শন ও ধর্মকে দেখতে শিখেছি। হয়তো তাই আমরা আমাদের সনাতন ধর্মকে এর নিজের আসল সেরূপে বুঝতে পারছি না।
আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে ধর্ম গুলো নিজের স্বরূপ বদলে নতুন নতুন ধর্ম মতে পরিবর্তীত হয়েছে এবং শয়তান, ইলবিশ কিভাবে প্রকট হয়েছে।
মোশির দ্বিতীয় আইন
1943 সালে এক জার্মান biblical scholar যার নাম Martin Noth, তিনি Deuteronomy (ডিউট্রোনোমি) –র উদ্ধৃতি দিয়ে যিহোশূয়, জুডাস, স্যামুয়েল এবং অন্যান্য রাজাদের উৎপত্তি এবং উত্থানের কারণ ব্যাখ্যা করেন।
এই Deuteronomy এর অর্থটির হিব্রু শব্দ। যার শাব্দিক অর্থ হলো "The second law", এটি হিব্রু বাইবেল বা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওল্ড টেস্টামেন্টের পঞ্চম বই। মোশি দ্বারা ইস্রায়েলীয়দের কাছে প্রদত্ত একাধিক বক্তৃতার সমষ্টি এই বইটি তাদের প্রতিশ্রুত ভূমিতে (Promised Land) প্রবেশের বর্ননা করা হয়েছে।
এই বইটি ইস্রায়েলীয়দের যাত্রার আগে প্রদত্ত আইনগুলিকে উল্লেখ করে এবং ঈশ্বরের আদেশগুলি অনুসরণ করার গুরুত্বের ওপর জোর দেয়।
"Deuteronomy" শব্দটি মূল উৎস গ্রিক "δευτερονόμιον" (deutero-nomion) থেকে। যা সন্ধি বিচ্ছেদ করলে: "δεύτερος" (deuteros) অর্থাৎ "দ্বিতীয়" এবং "νόμος" (nomos) অর্থাৎ "আইন" পাওয়া যায়। অর্থাৎ এই শব্দের সমষ্টি হয় "দ্বিতীয় আইন"।
প্রাক ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা তত্ত্ব অনুসারে: এটি সংস্কৃত "দ্বী" বা "দ্বিতীয়" এবং "নিয়ম" এর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ন। এভাবে দেখুন— "δεύτερος" (deuteros) দ্বিতীয় এবং সংস্কৃত "নিয়ম" - অর্থাৎ "আইন", যা "νόμος" (nomos) বলা হয়
এর থেকে আমরা জানতে পারি যে, স্থান কাল ও সাংস্কৃতিক দুরত্বে যেমন উওর দেন ভারতের রাম, দক্ষিণ ভারতে রামা হয়েছে। কার্তিক, মুর্গণ এবং হরিহর আয়প্পা হয়েছে। ঠিক সেই ভাবেই, ভারতের বাইরে এই একই দেবতা বা অপদেবতা গুলো ডেভিল বা ইভিল হয়েছে।
ঈশ্বর বাদ:
হিন্দু ধর্ম ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয় কিন্তু দেবতা অসংখ্য। তেত্রিশ কোটি (৩৩প্রকার) বৈদিক দেবতা তো আছেই। তার ওপর অন্যান্য উপ দেবতা এমনকি অপ দেবতাও আছে। তন্ত্রে সত্তিক, রাজসিক এবং তামসিক উপাসকের জন্য আলাদা আলাদা বিভাগ আছে। এতো বিবিধ উপাচারের একটিই উদ্দেশ্য —মুক্তি। যার যেমন ভাবে মূক্তি সম্ভব, তাঁকে তেমন ভাবেই মুক্তির পথ খুলে দেওয়া হয়। অমুক দেবতার উপাসনা করলেই মুক্তি হবে, নয়তো নরকে যাবে, সেই একমাত্র সত্যি ঈশ্বর এরকম কথা হিন্দু ধর্ম বলে না। ইংরেজীতে God লেখা হয় পরম ঈশ্বর বোঝাতে এবং god লেখা হয় দেবতা বোঝাতে। God is one, and many gods are worshipped accross the world —এর অর্থ হলো ঈশ্বর একজন কিন্তু সমগ্র অনেক দেবতার পূজা হয়। ঈশ্বর এখানে একান্তিক। আমার God ছাড়া অন্য কোনো God নেই। এই ধরনের বিশ্বাসকে বলা হয় একেশ্বরবাদ। তাই আসুন, জেনে নিন ঈশ্বরবাদ কত প্রকার:
- বহু ঈশ্বরবাদ (Polytheism): বহু ঈশ্বরবাদ অনুসারে, ঈশ্বর এক নন, অনেক গুলো ঈশ্বর মিলে এই জগত পরিচালনা করেছেন। সকল প্রাচীন ধর্ম যেমন, রোম, পারস্য, গ্রীক এবং ভারত বর্ষের হিন্দুরা।
- একান্তিক ঈশ্বরবাদ (Henotheism): একান্তিক ঈশ্বরবাদ হলো এমন একটি ধারণা যেখানে একজন নির্দিষ্ট ঈশ্বরকে সর্বোচ্চ হিসেবে পূজা করা হয়, তবে অন্যান্য ঈশ্বরদের অস্তিত্বও স্বীকৃত থাকে। হিন্দু ধর্ম ধর্মের ইসকন সম্প্রদায় এর অন্তর্গত।
- এক ঈশ্বরবাদ (Monotheism): একেশ্বরবাদ হল সেই বিশ্বাস যেখানে শুধুমাত্র এক ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকৃত হয়। ইহুদী, খ্রিষ্টান, ইসলাম, জুরষ্ট্রিয়ান ইত্যাদি।
- সর্বেশ্বরবাদ (Pantheism): এই ধর্মীয় মতবাদ বলে যে ঈশ্বর এবং মহাবিশ্ব এক এবং অভিন্ন। প্যান্থেইজম অনুসারে, সৃষ্টির প্রতিটি বস্তু এবং ঘটনা আসলে ঈশ্বরেরই এক একটি অংশ। এর মানে, সৃষ্টিকর্তা আলাদা কোনো সত্তা নয়, বরং মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু ও সত্তার মধ্যে বর্তমান।
- নাস্তিক (Atheism): নাস্তিক কথার অর্থ ইংরেজীতে 'অ্যাথিস্ট' নয়। আমাদের দেশের নাস্তিকবাদ এটা মনে করে না যে, ঈশ্বর নেই। বরং তাদের মত হলো: "কেবল বেদই একমাত্র ঈশ্বরের অস্তিত্ প্রমাণ করে না। বেদের বাইরেও কিছু জ্ঞান থাকতে পারে।" ভারতীয় নাস্তিক দর্শন ঈশ্বরকে অস্বিকার করে না। বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্ম নাস্তিক ধর্ম। তাঁরা বেদের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে। ঋষি কনাদ নাস্তিক হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে ঋষি বলা হয়।
- কিন্তু পাশ্চাত্য Atheism সম্পূর্ণ দেব বিরোধী। এই Atheism মূলত একটি চরম ধর্ম বিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে চলা কিছু মানুষ। তুলনা দিয়ে বুঝতে গেলে এরা "গরুর দুধ থেকে দই হয় এই কথা মানবে ঠিকই। এরপর তারা যুক্তি দেখবে যে, "দুধ নারকেলের দুধ থেকে দই হয় না। তাই দুধ থেকে দই হতেই হবে, এর কোনো যুক্তি নেই।" —এরকম কুতর্ক দেয়।
ভাষায় লুকিয়ে আছে সব রহস্য
বাইবেলের লুকের প্রথম অধ্যায়ের প্রথম আয়াতIn the Begining there was Word, Word was God and Word was with God
"In principio erat Verbum, et Verbum eratapud Deum, et Deus erat Verbum."
Déum এবং Deus শব্দটি ল্যাটিন ভাষায় অর্থ হলো দেবতা, যা গ্রীক ভাষার θεός (theós) থেকে এসেছে ।
'থিওসফিকাল সোসাইটি' যারা বিশ্বাস করতো সব ধর্ম একটি মূল ধর্মের থেকে এসেছে। তাঁরা মনে করতো ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব এবং হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন প্রতীক যেহেতু বিশ্বজুড়ে দেখা যাচ্ছে। যা প্রমাণ করে যে অতীতে ভারতীয় সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।
প্রাচীন বাণিজ্যপথ, ধর্মীয় প্রচার, এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় এই বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
ভাষাবীদদের মতে ভাষার ল্যাটিন Deus প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় মূল déywos থেকে এসেছে, যেটি আবার এসেছে ইরাকের দাইভা শব্দ থেকে।
খুব সহজেই আপনি বুঝতে পারছেন যে আবেস্তার আহুর আর দাইভা স্পষ্ট ভাবে দেব-অসুর শব্দের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। তবে তাদের দৃষ্টিতে এই দাইভা রা হলো অপশক্তি নেগেটিভ স্পিরিট। এই আহুর সংস্কৃতি আমাদের বিরোধী সংস্কৃতি ছিলো।
দেবরাজ ইন্দ্রের বিবর্তন:
হিন্দু পুরাণ অনুসারে ইন্দ্র হলেন দেবতাদের রাজা। বেদে দেবরাজ ইন্দ্রের পূজা করা হয়েছে আকাশের দেবতা রূপে। যিনি মেঘ বা বৃত্রাসুরকে বজ্র দ্বারা বধ করে, পৃথিবীকে বৃষ্টি দ্বারা প্রাণ দান করেছিলেন। এই বৃত্রের অপর নাম অহি বা সর্প। তাই ইন্দ্রকে বৃত্রাহন্তা বলা হয়। ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নী এই দেতারা মেরু পর্বতের অমরাবতী নগরীতে ইন্দ্র বাস করেন।
গ্রীক পুরাণে জিউস (Zeus) হলেন আকাশের প্রধান দেবতা এবং তিনি বজ্রের দেবতা। তিনি মেঘ ও বজ্র দ্বারা আকাশ নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি প্রাচীন গ্রিকদের প্রধান দেবতা। জিউস তাঁর শক্তিশালী প্রতিপক্ষ টাইটান সম্প্রদায়ের টাইফন নামক এক বহু মাথা বিশিষ্ট এই সাপের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। অলিম্পাস পর্বতে জিউস তথা বিভিন্ন দেবতাদের বসবাস ছিলো। টাইটানরা মাটির নিচে বসবাস করে।
অলিম্পাস পর্বত প্রকৃতপক্ষে একটি বাস্তব পর্বত হলেও, প্রাচীন গ্রীক পুরাণে বর্ণিত অলিম্পাসের রাজপ্রাসাদ নেই। এই দেবতদের রাজ্য তাঁদের অলীক কল্পনা। প্রাচীন গ্রীক মিথোলজিতে এই রাজপ্রাসাদ দেবতাদের মহিমা, শক্তি, এবং স্বর্গীয় জীবনের প্রতীক হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।
মেরু পর্বত বলে কোনো পর্বত বাস্তবে নেই। তবে, বর্তমান শঙ্করাচার্য বলেন যে, এই মেরু পর্বত আমাদের মেরুদণ্ডের সুষুম্না নাড়ীকেই বলা হয়। যার মাধ্যমে আমাদের চেতনা প্রবাহিত হয়। যোগের ভাষায়, ব্রহ্মান্ডের সব কিছু এই দেহ ভান্ডেই আছে।
জিউসের নাম ইতিহাসের পাতায় থাকলেও তাঁর পূজা আজ কেউ করে না। কারণ , নতুন নতুন ধর্ম গুলো (আব্রাহামিক) পুরাতন ধর্ম গুলোকে গ্রাস করেছে। এই জিউসকে ল্যাটিন ও হিব্রু ভাষায় ‘ডিউস (Deus)’ বলা হয়েছে। এই জিউস বা ডিউস শব্দের উৎপত্তি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
আবার দেখুন, আমাদের বৈদিক দেবী অহনা (বা সরস্বতী) গ্রীক দেশে দেবী এথেনা হয়ে গিয়েছে। অহনা থেকে এথেনা কিভাবে হলো সেটাও একটা আলাদা রহস্য।
আবার দেখুন, অসুর মাতা দনু, পাশ্চাত্যর বিভিন্ন দেশে দেনু, ডেনিস, দিয়ানা, এবং আনা নামে পরিচিতি পেয়েছেন। যার পুত্ররা সেখানকার ঈশ্বর এবং ডিউস (Deus) বা ডেইবাদের জন্য অপদেবতা।
ইরাকের সুমের নামক স্থানে ইয়াজিদি ধর্ম ছিলো। আই.এস.আই.এস. আক্রমনে ওই ইয়াজিদি ধর্ম আজ পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়ে গেছে।
ইয়াজিদিরা বৈদিক দেবতা কার্তিক বা মুরগণের উপাসক ছিলেন। গবেষকদের মতে ৫০০০ খ্রীঃপূর্ব এই সম্প্রদায় ভারত থেকে নির্গমণ করে। সাংস্কৃতিক এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ইয়াজিদি হিন্দু ধর্ম থেকে আলাদা এক অন্য ধর্মীয় জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত হয়।
তারা ময়ূর ও সাপের চিত্র অঙ্কিত দেবতার পূজা করে। যার নাম ছিল তাওসি মেলেক। এই তাওসি মূল দেবতা নয়, বরং পরম ঈশ্বর ইয়াজদার সন্তান। ঈশ্বরের সন্তানরা ফরিশতা। ইয়াজদা হলেন ইয়াজিদির পরম ঈশ্বর। ইয়াজিদি ধর্ম অনুসারে এই তাওসি মেলেক ছিলেন এই ইয়াজিদিদের আদি পুরুষ। তারা এর বংশধর।
এদের ধর্মীয় রীতিনীতি কিছুটা জরথুস্ত্র ধর্মমতের সাথেও সাদৃশ্য দেখা যায়। অথচ ইসলামে শয়তানকে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইয়াজিদি ধর্মের তাওসি মেলেকের কাহিনী হুবহু মিলে যায়।
মেলেকের গল্পে পার্থক্য শুধু একটাই, ঈশ্বর ইয়াজদা যখন আদমের সামনে মেলেক তাউস সহ তাঁর সাত দেবতাকে পরীক্ষার জন্য, তাঁর সৃষ্ট আদমকে সেজদা করতে বলেছিল। সবাই সেজদা করলেও তাওস মেলেক করলো না।
ইয়াজদা জিজ্ঞেস করলো, তুমি কেন আমার অবাধ্য হলে, তাওস জবাব দিল "আমি কেবল আপনার উপাসনা করি, কিভাবে তোমার সৃষ্টি জীবের সামনে নত হবো? যেখানে তুমি আমাকে তোমার আলো দিতে তৈরী করেছো এবং আদমকে তৈরী করেছেন মাটি দিয়ে? আমরা উভয়ই তোমার সৃষ্টি।"
ঈশ্বর ইয়াজদা তাউসের এই জবাবে খুশি হয়ে তাঁকে প্রধান দেবতা ও পৃথিবীর আধিপত্য ঘোষণা করেন। তাঁর প্রতীক ময়ূর ইয়াজিদি ধর্ম প্রতিক। ময়ূরে হিন্দুদের একটি দেবতাই বসে থাকেন— শিব পুত্র কার্তিক। হতেও পারে, মেলেক তাউস এবং শিব পুত্র কার্তিক একই বৈশিষ্ট্য বহন করে।
গণনা, মাস, বার ও দিনের দেবতারা:
আমাদের দেশে যে পঞ্জিকা ব্যাবহার করা হয়, তাঁর গণনা করার একটা পদ্ধতি আছে। অন্যদিকে, পাশ্চাত্য বা পশ্চিমা দেশগুলিতে ব্যবহৃত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে দিন ও মাসের নাম প্রাচীন রোমান দেবতা এবং পৌরাণিক চরিত্রগুলির নামানুসারে রাখা হয়েছে। পাশ্চাত্য দেশগুলিতে এরকম কোনো পদ্ধতি ছিলো না। উদাহরণস্বরূপ:
পশ্চিমা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের মাসগুলির নাম এবং তাদের সাথে সম্পর্কিত রোমান দেবতাদের নামগুলির বর্ণনা নিচে দেওয়া হলো:
- January: Janus (জানুস) - দুই-মুখো দেবতা, যিনি দ্বার ও সময়ের দেবতা হিসেবে পরিচিত। জানুসের নাম অনুসারে বছরের প্রথম মাসের নামকরণ করা হয়েছে, কারণ জানুস ভবিষ্যত এবং অতীত উভয়ের দিকেই তাকাতে পারেন।
- February: Februa - শুদ্ধিকরণ ও ফেস্টিভ্যালের জন্য ব্যবহৃত রোমান শব্দ, যা শুদ্ধি ও পুনর্জন্মের প্রতীক। যদিও এটি কোনও দেবতার নাম নয়, এটি রোমান ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে নির্দেশ করে।
- March: Mars (মার্স) - যুদ্ধের রোমান দেবতা, যিনি রোমান সাম্রাজ্যের পৃষ্ঠপোষক দেবতা হিসেবেও পরিচিত। এই মাসটি মূলত যুদ্ধ ও সামরিক প্রস্তুতির সময় হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
- April: সম্ভবত Aphrodite (এপ্রোডাইট) - গ্রীক প্রেম ও সৌন্দর্যের দেবী, যাকে রোমানে Venus (ভেনাস) বলা হতো। যদিও এপ্রিল মাসের নামকরণের সুনির্দিষ্ট উৎস অজানা, এটি প্রেম ও প্রজননের সাথে সম্পর্কিত বলে ধারণা করা হয়।
- May: Maia (মাইয়া) - বসন্ত ও উর্বরতার দেবী, যিনি Hermes (হারমিস) দেবতার মা। এই মাসটি প্রকৃতির নবজাগরণের সময় হিসেবে ধরা হয়।
- June: Juno (জুনো) - বিবাহ ও মহিলাদের রোমান দেবী, এবং Jupiter (জুপিটার) এর স্ত্রী। জুন মাসটি বিবাহের জন্য সৌভাগ্যের মাস হিসেবে বিবেচিত হয়।
- July: Julius Caesar (জুলিয়াস সিজার) - প্রাচীন রোমান জেনারেল এবং রাজনীতিবিদ, যার সম্মানে এই মাসের নামকরণ করা হয়েছে।
- August: Augustus Caesar (অগাস্টাস সিজার) - রোমান সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট, যার সম্মানে এই মাসের নামকরণ করা হয়েছে।
- September: Septem - লাতিন ভাষায় "সাত" (7)। রোমান ক্যালেন্ডারে এটি সপ্তম মাস ছিল, তাই এই নাম।
- October: Octo - লাতিন ভাষায় "আট" (8)। এটি রোমান ক্যালেন্ডারে অষ্টম মাস ছিল।
- November: Novem - লাতিন ভাষায় "নয়" (9)। এটি রোমান ক্যালেন্ডারে নবম মাস ছিল।
- December: Decem - লাতিন ভাষায় "দশ" (10)। এটি রোমান ক্যালেন্ডারে দশম মাস ছিল।
Romulus (প্রায় ৮৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) রোম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর পিতার নাম Mars, প্রাচীন রোমান ক্যালেন্ডারটি মূলত একটি চান্দ্র ক্যালেন্ডার ছিল, যা রোমের প্রতিষ্ঠাতা রাজা রোমুলাস প্রবর্তন করেছিলেন বলে মনে করা হয়।রোমুলাসের ক্যালেন্ডারে কেবল দশটি মাস ছিল, এবং বছরটি মার্চ মাস দিয়ে শুরু হতো। সেই সময়ে মাসগুলি ছিল:Martius (March), Aprilis (April), Maius (May), Junius (June), Quintilis (Later renamed July), Sextilis (Later renamed August), September (7th month, from "septem"), October (8th month, from "octo"), November (9th month, from "novem"), December (10th month, from "decem")
রোমের দ্বিতীয় রাজা, নুমা পম্পিলিয়াস (প্রায় ৭১৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ), দুইটি অতিরিক্ত মাস যোগ করেন: জানুয়ারি (January) এবং ফেব্রুয়ারি (February), যা বছরের শুরুতে এবং শেষে যুক্ত হয়। ফলে বছরটি ১২ মাসের হয়।
অন্যদিকে, হিন্দু পঞ্চাঙ্গ প্রকৃতির ছন্দ ও গ্রহ-নক্ষত্রের গতি অনুসরণ করে, যা অনেকটাই বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং প্রাকৃতিক প্রেক্ষাপটের সাথে বেশি সম্পৃক্ত। হিন্দু পঞ্জিকার বৈজ্ঞানিক দিকগুলি বিশেষত ঋতু পরিবর্তন, চন্দ্র-সূর্য চক্র এবং প্রাকৃতিক ঘটনাগুলির সাথে সম্পর্কিত, যা সময় পরিমাপের একটি জটিল এবং সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি প্রদান করে।
বারের নাম:
যেই দিন শনিবার, পশ্চিমে সেই দিনটি Saturday । আমাদের রবিবার তাদের কাছে এই দিন SunDay , এই ভাবেই সোম মঙ্গল মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি এবং শুক্রবার যথাক্রমে Monday, Tuesday, Wednesday, Thursday এবং Friday। শুধু এটাই নয়। এদের নামের সঙ্গে যে যে গ্রহ গুলোর নাম জড়িত আছে, সেইগুলোও হুবহু এক।
সূর্যের আরেক নাম Sun বা রবি, সেই থেকে রবিবার বা Sunday নাম এসেছে। চাঁদের আরেক নাম সোম বা Moon, সেই থেকে সোমবার বা Monday এসেছে। কিন্তু মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্রবার এবং শনি এদের নাম গুলো Mars - Mercury, Jupiter, Venus, Saturn গ্রহ গুলোর সম্পর্ক আছে।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী মঙ্গল বরাহ এবং ভূমির পুত্র। গ্রহকে ইংরেজী ভাষায় মঙ্গলকে মার্স (Mars) বলা হয়। আগেই বলেছি Romulus রোম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর পিতার নাম Mars, কিন্তু Tuesday এর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। নর্ডিক সংস্কৃতি অনুযায়ী বীরত্ব ও যুদ্ধের দেবতার নাম Tiw / Týr.। তাঁর নাম থেকে Tiwesdæg (তিওয়েসদেগ) যার বাংলা তরজমা হল "Tiw-এর দিন" সেই থেকেই Tuesday নাম এসেছে।
বুধ ইংরেজীতে যার নাম Wednesday এটি নর্ডিক দেবতা ওডিনের (Odin) নাম থেকে এসেছে। Odin এর একটি চোখ অন্ধ এবং তিনি অ্যাসগার্ডে বাস করেন।
Oodin পুত্র Thor -এর নাম থেকে এসেছে Thor's day বা Thursday. Thor হলেন বজ্র দেবতা। হিন্দু পুরাণ অনুসারে দেব গুরু বৃহস্পতির নাম থেকে বৃহস্পতি বার নাম এসেছে। Thor এবং দেবগুরু বৃহস্পতির কোনো মিল বা সম্পর্ক নেই।
Odin এর স্ত্রী Frigg অ্যাসগার্ডের রানী। শুক্র গ্রহের সঙ্গে জুড়ে দেখানো হয়। দেবী Frigg থেকে ইংরেজী গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে শুক্র বার অর্থাৎ Friday এসেছে।
স্যাটার্ন বা শনির গল্প আব্রাহামিক ধর্মে অনেকটা শয়তানের মতো হলেও শনি কিন্তু অপদেবতা নয়। শনি দেবতা হয়ে জন্মেও পিতা সূর্য দেবের বৈষম্য মুলক আচরণের জন্য তিনি সৌর পরিবার থেকে দূরে নির্বাসিত হয়েছিলেন। এতে বরং তাঁরই লাভ হয়েছিলে। দূর থেকে তিনি সৌর পরিবারের সকলের ওপর নজর রাখতে পারেন। ভগবান শিব তাঁকে ন্যায় ফল দাতা দেবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
শনি দেবতা রোমানদের স্যাটার্নাস নামে পরিচিত। রোমানদের গ্রীস বিজয়ের পর, স্যাটার্নাস গ্রীক (টাইটান) ক্রোনাসের সাথে তুলনা করা হতে থাকে। রোমান দেবতা সেটার্নাসের স্ত্রী ছিলেন তার বোন অপস। যার গর্ভে জিউস জন্ম হয়েছে। এই জিউস টাইটানদের শত্রু।
পরিশিষ্ট:
0 Comments: