বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন ২০২৪ | Bangladesh Student Movement Against Quota system 2024
বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন ২০২৪ এবং নিরীহ হিন্দু নিগ্রহ ভুলতে দেওয়া চলবে না। বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ কারী মুক্তি যোদ্ধাদের পরিবার ও উত্তরসূরিদের জন্য কোটা বাতিলের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। সেই কোটা পদ্ধতি বাতিল ও সরকার পতনের জন্য উস্কানি ও অনুপ্রেরণা যোগায় 'কিছু' বিরোধী পক্ষের ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। কি ভাবে শুরু হলো এই আন্দোলন এবং আন্দোলনের উদ্দেশ্য এবং পরিনতি কি হলো, আসুন বিস্তারিত আলোচনা করি।
রাজনীতিক প্রেক্ষাপট
1971 আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পাকিস্তানী বাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং নির্মম হত্যা কান্ড চালায়। সেই সময় যে বাংলাদেশীরা পাকিস্তানী বাহিনীর সহায়তা করেছিল, তাঁদের বলা হতো রাজাকার। এই রাজাকারদের বিরূদ্ধে বাংলাদেশী সাধারণ মানুষ হাতে অস্ত্র তুলে নেয়।
সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গা়ন্ধী। মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ গঠন করেন। তৈরী হয় মুক্তিবাহিনী। ভারতীয় সেনার সহায়তায় বাংলাদেশীদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ভারতই সেই বাংলাদেশী সাধারণ মানুষদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয় রাজাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে পাকিস্থানের সেনা অস্ত্র ফেলে আত্ম সমর্পন করে। মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বংলাদেশ স্বাধীন হয়।
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির:
সেই মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার বংশানুক্রমে কোটা পদ্ধতিতে এতদিন সরকারি চাকরি সহ অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়ে আসছে। শেখ হাসিনা ও তাঁর রাজ নেতারা তাদের রাজনৈতি ক্ষমতার অপব্যবহারের করছে বলে বিরোধী দলের নেতারা দাবী করে আসছিলো। বংশানুক্রমে কোটা তাদের মধ্যে অন্যতম। এই বিষয় নিয়ে এই আন্দোলনের জন্য দায়ী অনেক গুলো ফ্যাক্টর।
শেখ হাসিনার শত্রুতা:
প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা হলেন প্রয়াত মুজিবুর রহমানের কন্যা। তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পার্টি আওয়ামী লীগের নেত্রী। তাঁর বিপক্ষ BNP বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তারা জামায়তে ইসলামীর সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। ফলশ্রুতিতে বিএনপি সংরক্ষিত ৩০টি মহিলা আসনের ২৮টি নিজেরা রেখে বাকি ২টি জামায়াতকে দিয়ে দেয়।
বাংলাদেশে ইসলামি শরিয়াহ আইন বাস্তবায়নই হলো বিএনপির উদ্দেশ্য। দলটি ইকামতে দ্বীন (ধর্ম প্রতিষ্ঠা) নামক মতাদর্শকে গ্রহণ করে এবং ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার" উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনৈতিকভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ মুজিবুরের সরকার জামায়াতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং জামায়াত দলের নেতারা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান। পূর্ব পাকিস্থান গঠনের স্বপ্নে শেখ মুজিবুর হয়ে যায় পথের কাঁটা। পথের কাঁটা সরাতে ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবারকে হত্যা করা হয়।
সেই সময় শেখ হাসিনা বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর পরিবারের হত্যার সময় হাসিনা, তাঁর স্বামী ওয়াজেদ ও বোন রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে ছিলেন। সেখানে তারা বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং পরবর্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
মুজিব হত্যাকান্ডের পর এবং কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। তিনি জামায়াতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। আবার শুরু হয় ইসলামী আইনের নতুন অধ্যায়।
দীর্ঘ সংগ্রামের পর– ৬ জানুয়ারি ২০০৯ হাসিনা সরকার আওয়ামী লীগ পুনঃ স্থাপিত হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর শেখ হাসিনা একচ্ছত্র আধিপত্য করে আসছেন। এর থেকে তাঁর বিরোধী দল গুলো তাঁকে আসন চ্যুত করার জন্য একটা রাজনৈতিক রাগ ও ষড়যন্ত্র পোষন করে আসছে। বিদেশী শক্তি আমেরিকা এবং চীনের অর্থ সহায়তায় বাংলা দেশের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়তে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ জিয়াউল রহমানের পুত্র তারেক রহমানের সারায় INDA OUT আন্দোলন শুরু হয়।
বিএনপি সাপোর্টার পিনাকী ভট্টাচার্য , ইলিয়াস আলী, ড: হামিদুর রহমান প্রভৃতি রাজনৈতীক সমর্থক সোস্যাল মিডিয়ায় নিজের প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আসছে।
জামাতের পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে ওঠা ইমাম, ও ধর্মীয় বক্তারা ভারত বিরোধী, ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে ভারত বিরোধী কথা প্রচার করে আসছে। হাসিনা সরকার যে ইসলাম বিরোধী দল এবং ভারতের পৃষ্ট পোশক। এই অপবাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ধার্মিক মঞ্চ থেকে বক্তৃতা দেওয়া হতো।
End Game ছাত্র আন্দোলন:
ছাত্র আন্দোলন তো ছিলো কোটা আন্দোলন। কিন্তু এর আড়ালে, লুকিয়ে ছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। ছাত্রদের ওপর গুলি, বোমা এমনকি পুলিশের ওপর গুলি স্পষ্ট করে যে, এই ছাত্র আন্দোলন শুধুই কোটা বাতিলের উদ্দেশ্যে ৫ আগস্ট ২০২৪ হাসিনা সরকার পতন হয়।
কি ছিল কোটা নিয়োগ:
হাসিনা সরকারের অধীনে সরকারি চাকরি নিয়েগে ৫৬ শতাংশ কর্মী কোটা থেকে নিয়োগ করা হতো। উপজাতী কোটা ৫%, নারী কোটা ১০%, প্রতিবন্ধী কোটা ১%, জেলা কোটা ১০%, এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০%।
সরকারি চাকরির সব পদে কোটা সংস্কারের দাবি করেছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। তাঁদের এই দাবী ন্যায্য দাবী ছিলো বটে কিন্তু এর আড়ালে লুকিয়ে ছিলো বিরোধী দলের গুপ্ত উদ্দেশ্য।
তাঁদের দাবি সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রাখা। সেটিকে সামনে রেখে সরকার একটি পরিপত্র জারি করতে পারে। শুধু প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ন্যূনতম কোটাকে তাঁরা সমর্থন করেন। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সুবিধা দিলেও এসব কোটা ৫ শতাংশের বেশি রাখার প্রয়োজন হয় না।
গত ৭ই জুলাই শুরু হয় ছাত্র আন্দোলন। প্রাথমিক অবস্থায় এই আন্দোলন শুধু কলেজ পরিসরে শুরু হলেও ১০ই জুলাই আন্দোলনকারী রাস্তায় চলে আসে। ছাত্ররা পথ অবরোধ করে কোটার বিরূদ্ধে আন্দোলনের আকার বড় হতে থাকে। অবশেষে আন্দোলনের উদ্দেশ্য সফল হয়।
গল্প এখানেই শেষ নয়...
আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিলো কোটা বাতিলের দাবিতে ধর্মঘট ও অবরোধ। কিন্তু এর আড়ালে লুকিয়ে ছিলো জামাত ও রাজনীতিক ষড়যন্ত্র।
রাজভবনে আক্রমণ:
হিন্দুদের মন্দির ও ঘর লুণ্ঠন:
পুলিশের ওপর আক্রমণ:
BNP ও জামাতে ইসলামীর উগ্রবাদী মৌলবাদীরা আওয়ামী লীগের নেতাদের ঘর ভাংচুর করে এবং আগুণ দেয়। পুলিশ কর্তাদের নৃশংস ভাবে খুন করে তাদের মৃত দেহ রাস্তায় ওভার ব্রিজ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এতো কিছুর পরে, প্রশ্ন থেকে যায়—
বুদ্ধিজীবীরা চুপ কেন :
আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা চুপ কেন? সিরিয়ায় যখন আক্রমণ হয়। তখন সেখানকার মুসলিমদের জন্য এরা প্ল্যাকার্ড ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে। মুখে কালো ফিতে বেঁধে মোমবাতি মার্চ বেরহয়। আজ এরা কোথায়?
0 Comments: