Who do you are recognise real Hindu কিভাবে বুঝবেন কোনটা আসল হিন্দু ধর্ম ?
হিন্দু ধর্ম এতো বিবিধ মত পথ আদর্শে অনুপ্রাণিত যে আসল নকল জানার উপায় নাই। খ্রীষ্ট পূর্ব 2000 বছর আগে আচার্য শঙ্কর ভারতের চার ধাম স্থাপন করে হিন্দু ধর্ম ও সমাজকে এক সূত্রে গেথেছেন। তাঁর সেই পরম্পরা আজও সেই ভাবেই তাঁর পরবর্তী শঙ্করাচার্যরা পালন করছেন।
হিন্দু ধর্ম হলো সেই ধর্ম যেখানে কোনো কিছুই বাদ দেওয়া হয় নাই। ভালো মন্দ সব কিছু ধারণ করে, মন্দ থেকে সাবধান হয়ে এই হিন্দু ধর্ম যুগ যুগ ধরে এগিয়ে চলছে। এর কোনো প্রতিষ্ঠাতা নেই। নবী বা দূত নেই। ইহা সদা ছিলো আছে এবং থাকবে। তাই এর আরেক নাম সনাতন ধর্ম।
হিন্দু ধর্ম
হিন্দু ধর্ম বলে প্রচলিত সনাতন বৈদিক ধর্মই হিন্দু ধর্ম। সিন্ধু সভ্যতার ‘সিন্ধ’ শব্দের অপভ্রশ হিন্দ। বর্ণমালার স আর হ একই বর্গের অন্তর্গত। তাই সিন্ধ ও হিন্দ দুটোই ঠিক। ভৌগোলিক অবস্থান ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ে সনাতন বৈদিক ধর্মই হিন্দু ধর্ম।
বৈদিক ধর্মের মূল পাঁচটি দেবতা এবং তদ অনুসারে পাঁচটি সম্প্রদায় আছে, যথা— শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব, গণপত্য, এবং সৈর। এ ছাড়াও বহু উপ সম্প্রদায় এবং শাখা আছে। বেদ সম্মত ব্রাহ্মণদের দুটি শাখা আছে যারা শ্রৌত এবং স্মার্ত। নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে।
হিন্দু ধর্ম দুটি দর্শন শাখা আছে অদ্বৈত এবং দ্বৈত। অদ্বৈত দর্শন অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন দেবী-দেবতা, জীব ও জগত, এ সবই একই ঈশ্বরের ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশ। এক এবং অদ্বিতীয়। এর অর্থ এই। কিন্তু দ্বৈত দর্শন অনুসারে ঈশ্বর এবং জগত পৃথক পৃথক। ঈশ্বর এবং জগৎ এক হতে পারে না। তাঁদের দৃষ্টিতে এক এবং অদ্বিতীয় এর অর্থ হলো, ঈশ্বর যিনি এক তিনি জগতের কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয় বা তাঁর তুল্য কিছুই নেই।
বিবিধের মাঝে মিলন:
একজন শাক্ত দূর্গার, কালী, জগদ্ধাত্রী, ষোড়শী প্রভৃতি দেবী শক্তির উপাসক। তাঁর নিষ্ঠা কেবল মাত্র তাঁর নির্দিষ্ট ইষ্ট দেবীর প্রতি থাকবে। তিনি শিব, বিষ্ণু, ব্রহ্মা, গনেশ, সূর্য প্রভৃতি দেবতাকে দেবী থেকে অভিন্ন জেনেই পূজা করবে। শাক্ত কখনো শৈব, বৈষ্ণব, গণপত্য, এবং সৌর সম্প্রদায়ের দেব দেবীর বিরোধ, তুলনা বা অপমান করবে না।
এইভাবে শৈব, বৈষ্ণব, গণপত্য, এবং সৌর যথাক্রমে নিজ নিজ ইষ্ট দেবতার প্রতি নিষ্ঠা ও সমর্পণ ভাব রেখে সকল দেবতার সন্মান করবে। বিরোধ, তুলনা বা অপমান করবে না।
আজকাল দ্বৈত বাদীদের একটি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামায় সংস্থার উদ্ভব হয়েছে যারা এই পঞ্চ দেবতার তত্ত্ব মানে না। তারা সেই আদ্যাশক্তি মহামায়াকে শ্রী কৃষ্ণের দাসী বলে প্রতিপন্ন করেন। বহু শতক আগে শৈব ও বৈষ্ণবদের মধ্যে এইরকমই একটি মত বিরোধ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিলো। বৌদ্ধ এবং হিন্দু পরষ্পরের মধ্যেও দ্বন্দ্ব ছিলো।
আচার্য শঙ্কর সেই সকল বাদ বিবাদ ও দ্বন্দ্ব দূর করে দশনামি সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি তার চার জন শিষ্যকে ভারতের চার প্রান্তে ধার্মিক সংগঠনের উদ্দেশ্যে চার ধামের প্রধান নিযুক্ত করেন এবং মঠ প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতের উত্তর প্রান্তে উত্তরাখণ্ডের গাড়ওয়াল অঞ্চলে জ্যোতির মঠ, দক্ষিণে কর্ণাটকের চিকমাগলুরে শ্রী শৃঙ্গেরী শারদা পীঠম, পশ্চিম গুজরাটের দ্বারকায় কালিকা মঠ, এবং পূর্বে ওড়িশার পুরীতে গোবর্ধন মঠ। এই মঠের মঠাধীশ চার শঙ্করাচার্য বর্তমানের হিন্দু বৈদিক সনাতন ধর্মের প্রধান।
এদের দ্বারা নিয়োজিত স্মার্ত আচার্যরা ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশের ধর্ম আচরণ শিক্ষা দিয়ে হিন্দু বৈদিক ধর্মের পরম্পরা বজায় রেখেছেন। বঙ্গ দেশের রঘুনন্দন, মৈথিল প্রদেশের বিদ্যাপতি প্রভৃতি আচার্যরা স্মার্ত পরম্পরা বজায় রেখেছেন।
স্মার্ত ও শ্রৌত এই দুই বিভাগ নিয়ে আলাদা একটি আলোচনা দরকার। মোটামুটি জেনে রাখুন। যে ব্যক্তি শ্রৌত, সে অবশ্যই স্মার্ত হবেন। এই বিবিধ যজ্ঞ, হোম ইত্যাদি কর্ম কান্ড শ্রৌত এবং স্মার্ত সিদ্ধান্ত দ্বারা হয়। কোন কর্ম কিভাবে করতে হয়, এই নিয়ম স্মার্তরা দেখায়।
স্মার্ত পন্ডিরা শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব, গণপত্য, এবং সৌর সম্প্রদায়ের পুঁথি সাহিত্য রচনা করতেন এবং শিক্ষা দিতেন। বিবিধের মাঝে এই মিলনের শ্রেয় কেবল আচার্য শঙ্করের।
পরিশিষ্ট:
যে বা যারা এই পাঁচ পরম্পরা ও উক্ত দ্বৈতাদ্বৈত দর্শনের দেবতার, শাস্ত্র বিহিত উপাসনা করে না, বেদ, পুরাণ, উপনিষদ, তন্ত্র, যোগ এবং পরম্পরা, গুরু, পিতা এবং মানে না, তারা প্রকৃত হিন্দু নয় বা ভ্রষ্ট। তারা স্বেচ্ছাচারী মনগড়া। ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস, শ্রী শ্রী ঠাকুর নিগমানন্দ পরমহংস প্রভৃতি যুগাবতার এবং সদগুরুদের গুরুও কোনো না কোনো পরম্পরার অন্তর্গত। আচার্য শঙ্করের আগে যে ঋষি পরম্পরা ছিলো তা খন্ডিত হয়ে গিয়েছিল।আচার্য শঙ্কর
0 Comments: