Headlines
Loading...

স্যোশাল মিডিয়ায় আজকাল একটা ছবি খুব ঘোরা ফেরা করছে। যেখানে দেখানো হয়েছে একদিকে ভারতের নদী, যেখানে নোংড়া আবর্জনা পড়ে আছে, আরেক দিকে ভেনিস শহরের একটা নদী যেখানে জল কাঁচের মতো স্বচ্ছ। তাদের ওপরে লেখা আছে। "নদীকে যারা মা মনে করে" আর "নদীকে যারা নদী মনে করে"। আসুন আজকের  ব্লগ পোস্ট সেই জল দূষণের ওপর করা হচ্ছে। 

চিত্র (১.০) :নদীকে যারা মা মনে করে 

এখানে দেখুন এই চিত্র (১.০) ভারতের একটি শহরের পাশের একটি নদী। যেখানে জলের মধ্যে আবর্জনা পড়ে আছে।  সম্ভবত এটি বেনারস শহরের ছবি। তাই জলের মধ্যে ফুল, প্লাস্টিক, সহ বিভিন্ন বজ্র পদার্থ ভেসে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে, নদীর পবিত্রতা রক্ষা কেবল ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, এটি পরিবেশ রক্ষারও একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।

দূষণ 

দূষণ বলতে বোঝায় পরিবেশে ক্ষতিকারক পদার্থ, শক্তি বা উপাদানের এমন অবাঞ্ছিত মিশ্রণ যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জীবনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি বায়ু, পানি, মাটি, শব্দ বা অন্য যে কোনো প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে ঘটতে পারে।

The countries polluting the oceans the most (Source: The Wall Street Journal)

সমুদ্র প্লাস্টিক দূষণ এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলো সমুদ্র দূষণ বর্তমানে বৈশ্বিক পরিবেশের একটি মারাত্মক সংকট। গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিশ্বব্যাপী সমুদ্র প্লাস্টিক দূষণের প্রায় ৬০% থেকে ৭০% কয়েকটি দেশ থেকে আসে। বিশেষ করে চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, এবং থাইল্যান্ড এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এই দেশগুলোতে শিল্পায়ন, দ্রুত নগরায়ণ, এবং অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ।

নদীর পবিত্রতা রক্ষা কেবল ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, এটি পরিবেশ রক্ষারও একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।

এই দেশগুলোর নদীগুলো, যেমন ইয়াংজি নদী, মেকং নদী ইত্যাদি, সমুদ্রের প্লাস্টিক দূষণের প্রধান উৎস। প্লাস্টিক ব্যাগ, বোতল, প্যাকেজিং এবং বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ নদীর মাধ্যমে সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এছাড়া সামুদ্রিক মৎস্য শিল্প ও পর্যটন খাত থেকেও বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এসব কারণে এই দেশগুলো সমুদ্র দূষণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

তবে, ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলোর নাম এই তালিকায় সাধারণত উল্লেখ করা হয় না। যদিও এই দেশগুলোতেও প্লাস্টিক দূষণের একটি বড় সমস্যা রয়েছে, তাদের প্রভাব মূলত স্থানীয় উপকূলীয় অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। নদী দূষণের মাধ্যমে বর্জ্য বঙ্গোপসাগরে পৌঁছালেও তা বৈশ্বিক সমুদ্র দূষণে বড় অবদান রাখে না। তবে এই দেশগুলোর জন্যও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য।

সমুদ্র দূষণ নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ ব্যবহার, এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। সমুদ্রকে দূষণমুক্ত রাখতে বিশ্বব্যাপী সম্মিলিত প্রচেষ্টা আজ সময়ের দাবি।

ভারতে নদীকে মা মনে করা হয়।

ভারতে নদীগুলিকে মা হিসাবে পূজা করার একটি গভীর সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য রয়েছে। গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী, নর্মদা, গোদাবরী, কৃষ্ণা প্রভৃতি নদী শুধুমাত্র জলধারা নয়, দেবী রূপে পূজিত। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয়, এই নদীগুলোর জল পবিত্র এবং আত্মার মুক্তির জন্য অপরিহার্য। তবে, এই ধর্মীয় বিশ্বাস ও আদর্শ থাকা সত্ত্বেও, বাস্তবে নদীগুলো দূষণের শিকার। এর কয়েকটি প্রধান কারণ হলো:

১. ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দূষণ

ভারতের নদীগুলোর প্রতি ধর্মীয় শ্রদ্ধা থাকা সত্ত্বেও, পূজা, বিসর্জন, এবং অন্যান্য ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নদীর জলে দূষণ ঘটে। পূজার সামগ্রী, ফুল, মাটি, এবং প্লাস্টিকের ব্যাগ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। মৃত্যুর পর দেহ ভাসানো বা দাহ করার ছাই নদীতে ফেলা ধর্মীয় রীতি হলেও এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

২. শিল্প ও নগরায়ণ

ভারতে দ্রুত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে নদীগুলোতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে শিল্প বর্জ্য ও রাসায়নিক পদার্থ ফেলা হয়। গঙ্গা, যমুনার মতো প্রধান নদীগুলোর আশপাশে অসংখ্য কলকারখানা রয়েছে, যেগুলো অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলে।

৩. নাগরিক সচেতনতার অভাব

নদীগুলোর প্রতি ধর্মীয় শ্রদ্ধা থাকলেও, অনেক মানুষ এই পবিত্র নদীতে বর্জ্য ফেলার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবগত নয়। সচেতনতার অভাব এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে প্রতিদিন নদীর জলে দূষণ বাড়ছে।

৪. অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো

ভারতের অনেক শহর ও গ্রামে সঠিক নর্দমা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। গৃহস্থালি বর্জ্য ও নর্দমার অপরিশোধিত পানি সরাসরি নদীতে মিশে দূষণ বাড়ায়।

৫. কৃষিজ বর্জ্য

কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার থেকে সৃষ্ট বর্জ্য নদীর জলে মিশে যায়, যা নদীর জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

সমাধানের উপায়

ভারতে নদীর পবিত্রতা রক্ষার জন্য কেবলমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাস যথেষ্ট নয়, কার্যকর পদক্ষেপও প্রয়োজন। সচেতনতা বৃদ্ধি, শিল্প বর্জ্যের পরিশোধন, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, এবং সরকারি প্রকল্প যেমন "নমামি গঙ্গে" কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করলে নদীগুলো দূষণমুক্ত করা সম্ভব। নদীর পবিত্রতা রক্ষা কেবল ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, এটি পরিবেশ রক্ষারও একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।


জনগণের মতামত

নদীর প্রতি আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা থাকা সত্ত্বেও, এর পবিত্রতা ও পরিবেশগত গুরুত্ব রক্ষায় আমরা কতটা সচেতন?

  • নদীর দূষণ রোধে আপনাদের মতামত কী?
  • ধর্মীয় রীতিনীতিতে পরিবর্তন আনা কি সম্ভব?
  • শিল্প ও গৃহস্থালি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতিতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
  • সরকার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উপায় কী হতে পারে?

আপনার মতামত আমাদের জানাতে পারেন, যা এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সমাধানে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে। আপনি কি মনে করেন যে সচেতনতা এবং আধুনিক প্রযুক্তি মিলিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব?



H. R. Sarkar is a dedicated blogger and entrepreneur with expertise in creating digital products and Blogger templates. Managing websites like TechaDigi.com and Hinduhum.net, they bring creativity and technical proficiency to their projects. Through their YouTube channel, Lost Eternal Science, H. R. Sarkar explores the fusion of Hindu spirituality and science, offering unique insights to their audience. With a passion for innovation, they strive to inspire and educate through their work.

0 Comments: