মনুস্মৃতি সব থেকে ঘৃন্য হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ |ভিউ
সম্ভবত আপনারা অনেকেই মনুসংহিতার নাম শুনে থাকবেন। মনুসংহিতায় স্ত্রীদের প্রতি ঘৃণা, শূদ্রদের প্রতি অত্যাচার ও জাতিভেদের আকর গ্রন্থ হিসেবে মনে করা হয়। কিন্তু এই ধারণা একেবারই ঠিক নয়। প্রসঙ্গ, ছাড়া বাছা বাছা কিছু কথা তুলে এনে মনুসংহিতাকে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম গ্রন্থ তকমা দেওয়া হয়েছে।
তাই যারা হিন্দু তাঁদের সকলের মনুসংহিতা আদ্যপান্ত পাঠকরেই সেই বিষয়ে মনন করা উচিত। তাহলেই বোঝা সম্ভব হবে মনুসংহিতা আসলে কি বলতে চায়।
আমরা একেবারই অস্বীকার করছি না যে, দলিত বা সমাজের নিম্নস্তরের জাতিদের প্রতি ব্রাহ্মণদের দ্বারা কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ বা অত্যাচার হয়নি। আমরা বলছি, দলিতদের উপর অত্যাচারের দায় কেবল মাত্র ব্রাহ্মণদের নয়, অনেক ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণরাই ব্রাহ্মণদের বিভিন্ন সুবিধা সুযোগ নিয়ে বৈষম্য মূলক আচরণ করেছেন। তাই, এটি ধার্মিক কারণ নয়।
আজও আমি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। সেখানে আমার নিজের সমপ্রদায়ের, নিজের জাতের লোক আমার সঙ্গে বৈষম্য মুলক আচরণ করেন। কারণ আমি ওই প্রতিষ্ঠানে তাঁর তুলনায় নিচের স্তরে কাজ করি। আমার যোগ্যতা তার থেকে অনেক কম। আমার কোনো ভুল হলে সে আমায় কথা শোনাতে কোনো সুযোগ ছাড়ে না। কিন্তু তার ভুল আমি দেখাতে গেলে আমার বিপদ বেড়ে যাবে আর এটাই তো স্বাভাবিক।
যার ভাবার্থ বোঝে না, শব্দের অর্থ কে অনর্থ করে তা সে হিন্দু হোক বা নাস্তিক, আস্তিক হোক বা কেনো অহিন্দু মুসলিম, খ্রীষ্টান। তাঁদের কাছে এই ধর্ম শাস্ত্র মনুসংহিতা অমানবিক মনে হবে এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের জয়জয়কার দেখা দেবে।
মনু ব্রাহ্মণকে দেবতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
হ্যা, ব্রাহ্মণকে শাস্ত্র দেবতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এই মনুসংহিতা, এটা সত্য কথা।
তবে ব্রাহ্মণ হলেই দেবতার মনে করতে হবে এমন কথা কিন্তু বলা হয়নি। ব্রাহ্মণের মধ্যে সেই সকল গুণ থাকা উচিত যা তাকে দেবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। দেবতা কথার অর্থ হলো "জিনি মঙ্গল দান করেন।"
মনুসংহিতা ২য় অধ্যায়ের ৮৭ নাম্বার শ্লোক বলছে—
"অহিংসা সত্যমস্তেয়ম্ শৌচম্ ইন্দ্রিয়নিগ্রহঃ।"
অর্থ: ব্রাহ্মণের গুণাবলী হলো অহিংসা, সত্যবাদিতা, চুরি থেকে বিরত থাকা, পবিত্রতা, এবং ইন্দ্রিয় সংযম। এরপর মনুসংহিতা চতুর্থ অধ্যায়ের ১৬০ নম্বর শ্লোক বলছে:
"যঃ শাস্ত্রং হি অপণীয় কুরুতে রাগবশং বুদ্ধিম। স নিঃশ্চয়ং বিদুষাম্ নিন্দ্যঃ সঙ্ঘাতব্রংশমেতি চ।"
অর্থ: যে ব্যক্তি শাস্ত্রের আদেশকে ত্যাগ করে নিজের ইচ্ছামত চলে, সে নিশ্চিতভাবে শাস্তি ভোগ করে এবং তাকে জ্ঞানীরা নিন্দা করে।
শুধু কি তাই? মনুস্মৃতিতে ব্রাহ্মণকে সকল বর্ণের পিতা বলে উল্লেখ করেছে। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।
মনুস্মিতি একজায়গায় বলছে ব্রহ্মচারী বিদ্যার্থীর কাছে বেদ হলেন মাতা ও গুরু হলেন পিতা তুল্য। কারণ গুরু শিক্ষাদান করেন এবং সংস্কার করেন।
বেদ মায়ের মতো স্নেহময়, কারণ এটি লালন ও পালন করে। বিদ্যার্থী যখন এই জ্ঞানকে গ্রহণ করেন, তখন তিনি জীবনের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করেন।
এটি সমাজের প্রতিটি স্তরের জন্য প্রযোজ্য এবং এটি দেখায় যে, জ্ঞান ও শিক্ষা হলো সকল মানুষের জন্য শাশ্বত মঙ্গলকারী।
ব্রাহ্মণ বংশে জন্ম নিয়ে কুকর্ম করলে তাকে দেবতা বলা হয় না, ব্রাহ্মণের কিছু কর্তব্য থাকে। মনুসংহিতা 2.121:
"উপাদায় শমং জ্ঞানং ধর্মম্ ইহ চ সত্কৃতাম্। ব্রাহ্মণঃ সঞ্জায়তে।"
অর্থ: শম (মানসিক শান্তি), জ্ঞান, এবং ধর্ম মেনে চলাই ব্রাহ্মণের প্রকৃত লক্ষণ। নচেৎ ব্রাহ্মণকে চন্ডাল বা পাষন্ড বলা হয়।
মনুস্মৃতির ১২ নাম্বার অধ্যায়ের ১১৫ নাম্বার শ্লোক:
"যস্য ব্রাহ্মণস্য কৃত্যং না চ সত্যং স চণ্ডাল তদ্রূপেণ।"
অর্থ: যে ব্রাহ্মণ সত্য এবং ধর্ম ছেড়ে দেয়, তাকে চণ্ডাল বা পাষণ্ড বলা হয়।
ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, এবং শূদ্র এরা সকলেই যে একই ঈশ্বরের দেহের অংশ বলা হয়েছে সেট কেউ দেখছে না। ব্রাহ্মণ যদি নিজের আচরণ ঠিক না রাখে, তবুও তবে তাঁকে শ্রদ্ধা করতে হবে এমন কথা কি কথাও বলা হয়েছে? এমনটাও একেবারেই নয়।
ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য এবং শূদ্রের সাক্ষাৎ হলে পরস্পর পরস্পরকে ক্ষেম, আরোগ্য, ইত্যাদি শব্দ দ্বারা অভিবাদন করতে হবে। যে অভিবাদনের প্রত্যাভিবদন করে না সে শূদ্র।
চন্ডাল - চামার - নাপিত এরা কি ঘৃণ্য?
এর উত্তর দেওয়ার আগে আমি আপনার বিচার ক্ষমতা জানাতে চাই। শুনতে একটু অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে, কিন্তু এই প্রশ্নের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। "আপনি কি কখনো ঘর মোছার বালতিতে খাওয়ার জল রাখেন? বা বাড়িতে অতিথি এলে তাঁকে নিজের এটো গ্লাসে জল খেতে দেন?"
চন্ডাল কথার দুইটি অর্থ আছে , একটি যে ব্যক্তি প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে কথা বলে, বা যার স্বভাব উগ্র। দ্বিতীয় অর্থ হলো যে ব্যক্তি মৃত দেহ সৎকার করে।
চামার কথারও দুটি অর্থ আছে, প্রথম অর্থ হলো ব্যক্তি নির্লজ্জ, হৃদয়হীন, নৃশংস; নীচ আশয়; অতি কৃপণ। দ্বিতীয় অর্থ হলো যে ব্যক্তি চামড়ার কাজ করে।
নাপিত কথারও দুটি অর্থ আছে। একটি হলো ধূর্ত এবং আরেকটি হলো চুল, দাড়ি কামানো যার পেশা।
এবার ওই প্রশ্নটি যেটি আপনার বিচার ক্ষমতা যাচাই করার জন্য শুরুতে করেছিলাম। সেটা ভেবে দেখুন আপনি যখন, ঘর মোছার বালতিতে খাওয়ার জল রাখেন না, অতিথি এলে তাঁকে ইটো গ্লাসে জল খেতে দেননা, তাহলে যে ব্যক্তি আপনার আপন জনের মৃত দেহ সৎকার করে, আপনার চুল দাড়ি কামিয়ে দিয়ে আপনাকে সুন্দর করে, তাঁকে আপনি কিভাবে ঘৃন্য মনে করবেন?
আবার যে ব্যক্তি চুরি করে, ভালো কথার ভুল ব্যাখ্যা করে, প্রকাশ্যে অপরের নিন্দা, অপমান, ব্যভিচার করে। তাঁকে আপনি কিভাবে জ্ঞানী, শ্রেষ্ঠ, মহান বা সাধু বলবেন? তাই ‘অর্থবাদ’ না বুঝে মানুষকে ভুল ব্যাখ্যা করা উচিত নয়। চন্ডাল - চামার - নাপিত এরা কি ঘৃণ্য বা নীচ নয়।
মনুস্মৃতি কি? মনু কে?
মনুস্মৃতির প্রণেতা ঋষি মনু্ নিজে নয়। মনু্ অন্যান্য ঋষিদের অনুরোধে জগত উৎপত্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন জীব ও তাঁদের বৈশিষ্ট্য ও তাদের মিশ্রণে কি কি প্রজাতী হয়েছে। তাঁদের ওপর মানুষের কি কি কর্তব্য কর্তব্য আছে, সেটাই বর্ণনা করেছেন। সেই সকল তথ্য সংকলিত করে যে স্মৃতি শাস্ত্র তৈরী হয়েছে। সেটাই মনিস্মৃতি নামে পরিচিত।
মনু যা কিছু বলেছেন, সেই সব কিছু ঋষিরা শ্রবণ করেছেন, এবং শ্রুতি আকারে সেটা আমাদের সামনে প্রকাশ করেছেন। তাই এই শ্রুতি শাস্ত্রে যা কিছু বলা হয়েছে, সেটা ব্যক্তিগত স্তরে আধ্যাত্মিক, উন্নতির উদ্দেশ্যে পালন করার কথা বলে। মনুসংহিতা দেশ বা শাসন পরিচালনার সংবিধান নয় মাবন বিধান।
মনু শাস্ত্র নিজেই বলছে, স্মৃতি, পুরাণ বেদাঙ্গ যদি স্মৃতি বা বেদ সম্মত না হয়, তবে আপনি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। বেদ যা বলছে সেটাই গ্রহণ করতে হবে। শাস্ত্রের ব্যাখ্যায় সন্দেহ থাকলে সেই নিয়ে শাস্ত্রার্থ হবে। তারপর, সেই ব্যাখ্যার মত খন্ডন করে সঠিক মত ধারণ করা হবে বা শোধন হবে।
এই বৈদিক সাহিত্য যেমন রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ থেকে শুরু করে সর্বত্রই মনুর উল্লেখ পাওয়া যাবে। তবে এই মনু তো একজন কোনো ব্যাক্তি ছিলো না। যেমন প্রধান মন্ত্রী একটা সাংবিধানিক পদ। মনু সেই রকম একটি পদের নাম। এমনকি ব্রহ্মা, ইন্দ্র, এই এসব কিছুই পদ।
যে ব্যাপারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হল, কয়েক শত কোটি বছর আগে ঋষিরা মনুর বিধান অনুসারেই লালন পালন করতেন। তখন মানুষ জানতো যে তাঁরা কেন এবং কি উদ্দেশ্যে এই শাস্ত্র মত পালন করছে। আমাদের হিন্দুরা বেদ নিন্দুক নাস্তিকদের কেও ঋষি উপাধি দিয়েছে। বুদ্ধ, জৈন এরাও সনাতন হিন্দুর অংশ। এরাও তো মতবিরোধ নিয়েও আমাদের সঙ্গে বাস করেন।
দলিতদের উপর নির্যাতন
এখন প্রায়ই দলিতদের উপর নির্যাতনের খবর সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়। সেটা কি মনুর সেই মনুস্মৃতির নির্দেশে হচ্ছে, বললে ঠিক বিচার করা হবে কি?
কারণ, বিপরীত দিক থেকে থেকে ভেবে দেখুন, আজকের ব্রাহ্মণদের ওপর যে তাঁর পূর্ব পুরুষদের কৃত কর্মের গ্লানির ভার চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেই গ্লানি বা ঘৃণার দায় কে নেবে? টিভি সিনেমায় এক অভিনেতাকে ব্রাহ্মণ পুরোহিত সাজিয়ে তাঁকে দিয়ে অব্রাহ্মণচিত আচরণ দেখানো হচ্ছে। সেই অনুপ্রেরণা নিয়ে বাস্তব ভূমিতে ব্রাহ্মণদের অপমান করছে, এমনকি প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে পিটিয়ে খুন করা হচ্ছে।
তাই, দোষ কোনো জাতি বা বর্গের ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। সব জাতিতে ভালো মন্দ উভয়ই লোক থাকে। এই সত্য জেনে বুঝেও কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী নিজের রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে সমাজে Negativity ছড়াচ্ছে।
মনু স্মৃতি ব্রাহ্মণদের জীবিকা নির্বাহের জন্য শুধুমাত্র পৌরহিত্য, যাজন ও শিক্ষা — এই কর্মের সীমা নির্ধারণ করেছে। ক্ষত্রিয় রাজ কার্য, যুদ্ধ, সুরক্ষা, ন্যায় দন্ড ধারণ করবেন। বৈশ্যরা পশু পালন, কৃষি, ব্যাবসা - বাণিজ্য করবে এবং শূদ্র উক্ত ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এই তিন বর্ণের সেবা করবে।
ব্রাহ্মণ কি জন্মগত অধিকারে ব্রাহ্মণ?
জন্মগত অধিকারে ব্রাহ্মণ পুত্রই ব্রাহ্মণ হয় ঠিকই। কিন্তু সেই ব্রাহ্মনত্ব তাঁকে অর্জন করতে হয়। বেদপাঠ অধিকার ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, এবং বৈশ্য সকলেই পায়। শূদ্রের অধিকার পুরাণ এবং অন্যান্য ব্রাহ্মণ রচিত শাস্ত্রে ছিলো। তাই না হলে তারা তো হিন্দু ধর্ম তথ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে।
যেমন বাস্তু তন্ত্র, ভাস্কর্য, অর্থশাস্ত্র এই সকল ব্রাহ্মণ রচিত শাস্ত্রে শূদ্রদের অধিকার ছিলো। কারণ ওই গুলো পরেই ওদের জীবিকা উপার্জনের সাধন হবে। যেমন ডাক্তার হতে গেলে বোটানি পড়তে হয় না। তেমনি শূদ্র কখনোই বেদ পড়ে না।
ব্রাহ্মণ যদি নিজের কর্ম ছেড়ে অন্য কর্ম করে। তাহলে তাঁকে ব্রাহ্মণ বলা কর্তব্য নয়। সেই ব্রাহ্মণ, যার পূর্বপুরুষ শুধুমাত্র পৌরহিত্য, যাজন ও শিক্ষা দান করে এসেছে। সে যদি ঐ ব্রাহ্মণ্য কর্ম ত্যাগ করে মধু বিক্রয়, পশুপালন, অর্থ উপার্জনের জন্য কৃষিকার্য বা অন্য বিষয়ে শ্রম করে। তবে তাঁর নিজের ব্রাহ্মণ সমাজ তাঁকে সমাজ থেকে আলাদ করে দেবে। অর্থাৎ, সে আর ব্রাহণ থাকবে না। যদি খুবই প্রয়োজন না হয়।
শূদ্র কারা?
বৈদিক ধর্ম অনুসারে ঈশ্বর নিজের দেহকে বিভিন্ন মাত্রায় ব্যাক্ত করে নিজেই জগত হয়েছেন। যেমন চোখ হলো সূর্য, মন হলো চন্দ্র, মুখ মন্ডল থেকে ইন্দ্র এবং অগ্নী এইভাবে জীব বৃদ্ধির জন্য তিনি বিভিন্ন লোক বা তল সৃষ্টি করতে চাইলেন। সৃষ্টির সময় ঈশ্বর নিজের দেহকে বিভিন্ন লোকে বিভক্ত করলেন। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, এবং শূদ্র এই চার বর্ণকে যথাক্রমে তাঁর মুখ, বাহু, উরু ও পদ থেকে উৎপন্ন করলেন —এটা মনু স্মৃতির উদ্ধৃতি।
এখানে লোক অর্থাৎ পরলোক বা মৃত্যুর পর থাকার জায়গার কথা বলা হয়েছে।
লোক পরলোক
ভূ, ভুব, স্বর, তপ, জন, মহত, এবং পিতৃ লোক এই সপ্ত লোকে বিভিন্ন পরলোক গত জীবের বসবাস। ভূ অর্থাৎ এই পৃথিবী যেখানে আমরা বাস করি সেখানে জীবন মরণ চলতে থাকে।
ভূব অর্থাৎ ভুবন, স্বর অর্থাৎ স্বর্গ। এই তিনটি লোক ছাড়াও বিভিন্ন পরলোক আছে। ব্রাহ্মণদের জন্য সোমপা, ক্ষত্রিয়দের জন্য হবির্ভুজ, বৈশ্যদের জন্য আজ্যপা এবং শূদ্রদের জন্য সুকলিন নামক লোক।
ভৃগু ঋষির আরেক নাম কব। তাঁর লোক সোমপা লোকে পিতৃ হলেন সোম বা চন্দ্র। আঙ্গিরা ঋষির পুত্র এবং ক্ষত্রিয়দের পিতৃ হলেন হবিস্মন্তন, ঋষি পুলস্তর পুত্র আজ্যপা বৈশ্যদের পিতৃ। বশিষ্ঠ ঋষির লোকের নাম সুকালিন সেখানে পিতৃ সুকালীন। অতএব, শূদ্র হলেন বশিষ্ঠ ঋষির পুত্র সুকালিনের বংশ পরম্পরায় যারা এসেছেন তারা। তাই মনুস্মৃতির ৩য় অধ্যায়ের ১১২ নং শ্লোক বলছে:
"অশূদ্রসেবাং কুর্যু শূদ্রাঃ।"
অর্থ: শূদ্ররা সেবায় নিযুক্ত থাকলেও তাদের প্রতি শোষণ বা অপমান করা উচিত নয়।
এর দ্বারা এটি স্পষ্ট করে যে, সেবা একটি সম্মানের কাজ এবং শূদ্রদের অবদানকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা যাবে না। অর্থ: শূদ্রদের সঙ্গে সমান আচরণ এবং সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। বৈদিক সনাতন ধর্মে শূদ্র কখনোই ঘৃণ্য না। সন্মান ও স্ট্যাটাসের দিক থেকে, ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য থেকে নিম্ন।
0 Comments: