Headlines
Loading...
আর্য ইনভেশন থিওরি:  R1A1 হ্যাপ্লয়েড ভুও জিনতত্ত্ব প্রচার কাহিনী

আর্য ইনভেশন থিওরি: R1A1 হ্যাপ্লয়েড ভুও জিনতত্ত্ব প্রচার কাহিনী

Aryan Invention

আর্য জাতি ভারতের বাইরে থেকে এসেছে এবং ভারতের মূলনিবাসী আদিবাসীদের ওপর নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছে। এই তত্ত্ব Arya Invention Theory নামে পরিচিতি। ম্যাক্স মুলার নামক এক বিদেশী কূটনীতিবিদ এই তত্ত্ব প্রকট করেন। কিন্তু বর্তমানের হিন্দুত্ব বাদীরা এই তত্ত্ব অস্বীকার করে। কেন এই খিচুড়ি? কারা সত্যবাদী, করা ভুল আসুন  বোঝার চেষ্টা করি। 

সিন্ধু থেকে হিন্দু হয়েছে কিন্তু সালাম হলাম হলো না কেন?

৬ট ৮ম শতকে পাশ্চাত্য দুনিয়া ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, হল্যান্ড প্রভৃতি দেশ গুলো সমুদ্র পথে নতুন দেশ আবিষ্কারের পথে আগ্রহী হয়? কেন? কারণ, ওই সময় প্লেগ মহামারীতে সমগ্র ইউরোপ বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছিল। Black Death  পর সমগ্র জাতি পাশ্চাত্য দেশগুলিতে আর্থিক মন্দার কারণে হানাহানি মারামারির শুরু হয়। সেই সময় বাণিজ্যিক পথ গুলো বন্ধ হয়ে যায়।  জাহাজ গুলোতে জলদস্যু আক্রমণ করতো এবং লুঠের মাল ভরে ভরে রাজস্ব জমা করতো। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এরকমই একটি ট্রেডিং কোম্পানি ছিলো। 

পাইরেটস অফ ক্যারাবিয়ান, ট্রেসার আইল্যান্ড, আইল্যান্ড, পিটার প্যানের মতো কাহিনী গুলোতে এই আমরা একটা জিনিষ স্পষ্ট লক্ষ করা করতে পারি যে এই সব লুটেরা বা নাবিকরা সমুদ্র পথে কোনো না কোনো যাদুর দ্বীপ বা যাদুর জগতের খোঁজ পায় যেখানে সোনা, হিরে, পান্না ভরপুর। সেই রকম একটি নাম "সোনার পাখি" বা 'The Golden Bird' খুঁজতে গিয়ে আমেরিগো ভেসপুচি আমেরিকায় পৌঁছে যায়। এর পর ক্রিস্টোফার কলম্বাস সেই পথে আমেরিকা পৌঁছায় এবং সেখানে নেটিভ আমেরিকানদের নাম দেয় ইন্ডিয়ান। 

সেই সোনার পাখি, যার খোঁজে তারা সমুদ্র পথে বেরিয়েছিল, সেই সোনার পাখি আসলে ছিলো আমাদের ভারত।  সিন্ধু বা ইন্দাস সভ্যতার অধিবাসীদের 'ইন্ডোস' বলে ডাকা হতো। এর পেছনেও একটি বড় কারণ আছে। ইংরেজী শব্দ Indigenous এসেছে Latin শব্দ "indigena"এর অর্থ হলো "ভূমিপুত্র বা যেখানে জন্ম হয়েছে," একেই Old Latin  শব্দ indu বলা হতো। 

সিন্ধু থেকে হিন্দু হয়েছে এই তত্ত্ব যদি ঠিক হয়, তবে ইন্ডিয়া শব্দটি কি আমাদের কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে? এখনই মাথায় চাপ দিতে হবে না। শুধু শব্দ গুলো মাথায় রাখুন।

ককেশীয় জাতির ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা বিভাগ

পৃথিবীর সবচেয়ে উচু পর্বত শৃঙ্গ হলো মাউন্ট এভারেস্ট যা হিমালয়ের পর্বত মালার অংশ। এই হিমালয় ভারত, নেপাল, চিন, পাকিস্তান ও আফগানস্তান জুড়ে ছড়িয়ে আছে। সমুদ্রের জলে যদি সমগ্র পৃথিবী জল মগ্ন হয়ে যায়, তবে একমাত্র এই হিমালয় পর্বতের কোনো না কোনো চুরা জলের উপর থাকবে। 

এবার আমরা বাইবেলের সেই নোহার গল্পর চলে যাই। একদিন ঈশ্বর দেখলেন তাঁর সৃষ্টিতে মানুষ পাপাচারে মগ্ন হয়েছিল। তাই তিনি সমুদ্রের জলে সমগ্র পৃথিবী জল মগ্ন করে দিলেন । তাঁর নির্দেশে নোহা বা নুহ একটি বিশাল জাহাজ নির্মাণ করে তাতে জোড়ায় জোড়ায় পশু পাখি, মানুষ, উদ্ভিদ সংরক্ষণ করে একটি উঁচু ভূমিতে নামলেন। সেই উচু ভূমি ছিলো সেই ককেশীয় পর্বত।

ম্যাক্স মুলারের তত্ত্ব অনুসারে ওই ককেশীয় পর্বত থেকেই সমগ্র ইউরোপ জাতি ও ভাষা আলাদা আলাদা হয়ে নতুন নতুন জাতির উৎপত্তি হয়েছে। আর্য জাতি ভারতে প্রবেশ করেছে। যেখানে আগে থেকেই মূল নিবাসী দ্রাবিড় জাতি, বা আদিম নিবাসী ভারতীয়রা আগে থেকেই বাস করেতো।

কেন এই তত্ত্ব?

সাদা চামড়া আধিপত্য। সাদা মানে ভালো, আর কালা মানে শয়তান। এই চিন্তা ধারার লোক গুলো নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। আর্য রা যে বিদেশী এই তত্ত্বটা আমাদের সামনে বার বার তুলে ধরা হয়। ভাষা তত্ত্ব, DNA তত্ত্ব এবং বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অনুযায়ী সব কিছু দিয়ে এটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয় যে আর্যরা বিদেশী।

DNA তত্ত্ব 

আপনি কি কখনো Mitochondrial Eve and Y Chromosome Adam সম্পর্কে পড়েছেন? এই তত্ত্ব অনুসারে আমার আপনার এমনকি বিদেশী সাদা চামড়া সাহেবের মাতামহী একই মাইটোকন্ড্রিয়া DAN বহন করছে। কিভাবে বুঝলাম? না, আমি বলছি না। এই কথা প্রত্ন তাত্ত্বিক জীবাশ্ম বা মৃত দেহ থেকে পাওয়া DNA analysis করে প্রমাণিত হয়েছে। Adam ও Eve গুলো নামকরণ মাত্র। এর সঙ্গে বাইবেলের কোনো সম্পর্ক নেই। 

আমাদের হ্যাপ্লয়েড আর ডিপ্লয়েড এই দুই ধরণের ক্রোমোজোম থাকে। ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম গুলো শরীরের কোষে থাকে, হ্যাপ্লয়েড থাকে যৌণ বীজ বা রেণুতে। দুটি হ্যাপ্লয়েড X এবং Y মিলিত হয়ে নারী বা পুরুষ জীব উৎপন্ন করে।

মানুষের 46 টি ক্রোমোজোম থাকে। ক্রোমোজোম কি? সহজ ভাষায় অনেক গুলো DNA -র সুতো যদি গুচ্ছ হয়ে একটি দলা তৈরি করে, তাঁকে ক্রোমোজোম বলা হয়। 

নারীদের Xx+৪৪  এবং পুরুষদের XY+৪৪ এই সেট ক্রোমোজোম থাকে। নিম্নের ছবিতে ক্রমের চিত্র দেওয়া হয়েছে। কীভাবে সেক্স  Xx এবং XY ক্রোমোজোম থেকে পুরুষ ও মহিলা অপত্য জন্মায়।

x =Xx এবং X+Y

X + x =Xx এবং X+Y =XY 

বিজ্ঞানের ভাষায় মানুষকে হোমো সেপিয়েন্সের বলা হয়। আমরা জানি যে শারীরবৃত্তীয়ভাবে আধুনিক মানুষ আফ্রিকাতে প্রায় 200,000 বছর আগে উপস্থিত ছিল। সেখান থেকেই সমগ্র পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতি সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে গেছে। গবেষণা দ্বারা এই তত্ত্ব উঠে এসেছে। যাদের আর্য বলা হয়েছে, তাদের DNA গ্রুপকে R1A1 হ্যাপ্লয়েড নামকরণ করা হয়েছে। (a) ছবিতে দেখুন এই R1A1এর ঘনত্ব ভারতের উত্তর এবং দক্ষিণে কিভাবে বিস্তার করেছে। 

R1A1 Haploid Distribution: www.nature.com

অসাম, মিজোরাম অঞ্চলে এবং ইউরোপের বিভিন্ন এলাকায় এর ঘনত্ব দেখানো হয়েছে (b)। সহজেই আপনি বুঝতে পারছেন, যে উত্তর বা দক্ষিণ ভারতের হ্যাপ্লয়েড DNA গ্রুপ একই। যদি আর্য জাতি বিদেশী হতো তবে পাঞ্জাব, পাকিস্তান অঞ্চলে এর ঘনত্ব অপেক্ষাকৃত বেশি হতো।

বেদ এবং সিন্ধু সভ্যতা 

বলা হয়, বিদেশী আর্যরা বেদ এনেছে। আচ্ছা! ঠিক আছে। আর্যরা প্রায় কত বছর আগে ভারতে এসেছে এবং বেদ এনেছে? অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, গৌডরবর্ণ এবং সুদর্শন এই আর্যরা ছিল ভারতের বহিরাগত এক জাতি — যাদের আদি বাসস্থান ছিল মধ্য-এশিয়া অথবা রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চল অর্থ কিংবা ইউরোপের অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী অথবা চেকোশ্লোভাকিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। ঋকবেদের রচনাকালের উপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিকরা খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দকেই ভারতে আর্যদের সম্ভাব্য আগমনকাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু এই বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বলা হয়েছে ৪,০০০ বছর আগে সরস্বতী নদী শুকিয়ে গেছে। 

যারা AIT নিয়ে সব সময়  লাফালাফি করে, এখন তাদের কাছে প্রশ্ন হলো, ১৫০০ আব্দে আসা আর্যরা ৪,০০০ আব্দ আগে সরস্বতী নদীর কথা কিভাবে লিখলো?

আর্য ইনভেশন থিওরী যে একটি ভুও তত্ত্ব সেটা আর বলার বাকি নেই। 

H. R. Sarkar is a dedicated blogger and entrepreneur with expertise in creating digital products and Blogger templates. Managing websites like TechaDigi.com and Hinduhum.net, they bring creativity and technical proficiency to their projects. Through their YouTube channel, Lost Eternal Science, H. R. Sarkar explores the fusion of Hindu spirituality and science, offering unique insights to their audience. With a passion for innovation, they strive to inspire and educate through their work.

0 Comments: