Headlines
Loading...
ঈশ্বর কি ইচ্ছা করেই অমঙ্গল থেকে রক্ষা করতে পারে না? না কি সে করতে সক্ষম নয়?

ঈশ্বর কি ইচ্ছা করেই অমঙ্গল থেকে রক্ষা করতে পারে না? না কি সে করতে সক্ষম নয়?

Last updated :২৯ আগষ্ট—  আমি যে ধর্মে দীক্ষিত এবং বিশ্বাসী সেখনে এক ঈশ্বরের অনেক নাম ও রূপ। কারণ, তিনি ব্রহ্ম। এই ব্রহ্ম এবং জগত এক এবং অদ্বিতীয়। আমরা তাঁরই সেরূপ। আমার ধর্মে ইশ্বর কৃপালু তো বটেই সঙ্গে তিনি নিষ্ঠুর মানুষের কর্ম অনুযায়ী তাঁকে নিষ্ঠুরের মতো নিষ্ঠুর কর্মফল প্রদান করেন। তিনি শুধু হিন্দুদের ঈশ্বর নন। তিনি তাঁদেরও ঈশ্বর, যারা তাঁকে জানে না। তিনি তাঁদেরও ঈশ্বর, যারা তাঁকে জেনেও ইশ্বর বলে মানে না। যে যেই রূপে তাঁর আরাধনা করেন, তিনি সেই রূপেই প্রকট হন। কারণ তিনি অসীম ক্ষমতাশালী। তাই তিনি বিশ্বেশ্বর, জগদীশ্বর, জগৎপতি, জগতের নাথ জগন্নাথ। তিনি দেবতাদের আদি দেবতা, তিনি মহাদেব। তিনি কালের কাল, মহাকাল। তিনি আমার আত্মা। 

আমি সনাতনী হিন্দু। সনাতন বৈদিক হিন্দু ধর্ম পুনর্জন্ম বিশ্বাস করে। সনাতন অবৈদিক বুদ্ধ, জৈন যাদের নাস্তিক বলা হয়। তারাও কর্ম, কর্মফল ও পুনর্জন্মে বিশ্বাসী। তাই তারাও সনাতনী। ভগবান বুদ্ধ বলেছেন, "এসো ধম্ম সনাতন"

হাজার বার হাজার প্রাণীর জন্ম নিয়ে প্রতিটি জীব একবার নিশ্চই মানুষ হয়ে জন্ম নেয়। যেভাবে বুদ্ধ পূর্ব পূর্ব জন্মে রাজা, ব্যবসায়ী, বনিক, কৃষক, রাম, কৃষ্ণ, বাঁদর, ইত্যাদি ছিলেন। সেভাবেই আমি আপনি সকলেই হাজার হাজার বার জন্ম নিয়েছি এবং আমাদের হাজার হাজার বার মৃত্যু হয়েছে।

কেবল মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েই জীব ঈশ্বরের আরাধনা করে। তাই মানব হিসেবে জন্ম নেওয়ায় জন্য দেবতারাও লালায়িত থাকেন। শুধু তাই নয় মানুষই, জীবন মুক্ত হয়ে ঈশ্বরত্ব প্রাপ্ত হয়। তাই ঈশ্বরই জগৎ সৃষ্টি করে জগৎ হয়েছেন, এই জন্ম-মৃত্যু, সুখ-দুঃখ সব কিছুই ইশ্বরের সৃষ্ট।

অনেক সময় প্রশ্ন জাগে, সব কিছুই ঈশ্বরের সৃষ্ট এবং তাঁর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েও কেন দুঃখ এবং মন্দ আছে? ঈশ্বর আমাদের ভালো বা মন্দ করে জন্ম দেয়নি। আজ যিনি দেবতার আসনে বসছে, কাল সে নর্দমার কীট হয়েও জন্মাতে পারে। পরের জন্ম বাদ দিন, এই জন্মেই রাজা পথের ভিখীর হতে পারে।

এই পরিবর্তন ঈশ্বর নির্মিত প্রকৃতির ক্রিয়ায় চালিত। পরিবর্তনই প্রকৃতির নিয়ম। তাই শাস্ত্র জ্ঞান ছাড়া কোনটা মঙ্গল বা অমঙ্গল, কোনটা ধর্ম বা অধর্ম, ইহা নির্ণয় করা মুশকিল। স্বাস্থ্য আমাদের জ্ঞান দেয় না, জ্ঞান আমাদের আগে থেকেই থাকে। শাস্ত্র পড়ে সেই জ্ঞানের পুনঃ প্রকাশ ঘটে। কারণ আমার ঈশ্বর আমার মধ্যে।

ঈশ্বর যে আমাদের তাঁর নিজের স্বরূপে প্রকট করেছেন, এর প্রমাণ উপনিষদে যেমন আছে, সুদূর পশ্চিমের দেশে, ইহুদীদের বাইবেলের আদি পুস্তকেও বলা হয়েছে। তাই আপনার এই প্রশ্ন, ইশ্বর কেন বিপদের সময় তাঁর ভক্তকে রক্ষা করে না। এর যুক্তিপূর্ণ জবাব আমাদের কাছে আছে।

আপনার প্রশ্ন হোলো:

  1. ঈশ্বর ইচ্ছা করলেই যে কোনো দুর্ঘটনা, বা অমঙ্গল থেকে রক্ষা করতে পারেন, কিন্তু তিনি করেন না কেন?
  2. না কি তিনি করতে ইচ্ছা করেই করেন না ? 
    • যদি তিনি ইচ্ছা করেই না করেন, তবে তাঁকে কিভাবে দয়ালু বলা যায়। তিনি তো নির্দয়। 
    • যদি তিনি দয়ালু হন অথচ, ইচ্ছা করেও তিনি তাঁর ভক্তদের রক্ষা করতে পারছেন না, তবে তিনি সর্ব শক্তিমান নন। 
  3. যদি তিনি সর্বশক্তিমান এবং পরম করুনাময় হন তবে এখানে শয়তান কে? কারণ শয়তান বা দুর্ভাগ্য তো তাঁরই লেখা। তিনিই তো পাপ পূণ্য সৃষ্টি করেছেন।
  4. আর যদি তিনি কোনোটাই নন তবে আমরা কাকে ইশ্বর বলছি আর কাকেই বা শয়তান বলছি?

এটা একটা খুবই চালাকি দ্বারা নির্মিত প্রশ্ন। কারণ প্রশ্নের মধ্যেই সম্ভব্য উত্তরটাও আগে থেকেই নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। জবাব দাতার জবাব দেওয়ার উপায় নেই। আবার সেই উত্তরকে আরো একটি প্রশ্ন করা হয়েছে। অর্থাৎ, সিদ্ধান্ত মাথায় রেখেই প্রশ্ন ও জবাব করা হয়েছে।

তবে এই প্রশ্নের জবাব, আমাদের হিন্দু ধর্ম শাস্ত্র দিতে পারে। জবাব শুনুন।


ঈশ্বর কি ইচ্ছা করেই অমঙ্গল থেকে রক্ষা করতে পারে না? না কি সে রক্ষা করতে সক্ষম নয়? 

উত্তর: হ্যা তিনি ইচ্ছা করলেই অমঙ্গল বা দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে সক্ষম এবং তিনি ইচ্ছা করই অমঙ্গল বা দুর্ঘটনা ঘটাতেও সক্ষম। জগতের সব কিছুই তাঁর ইচ্ছাধীন।

ভুললে চলবে না যে, সেই ঈশ্বরৃই সৃষ্টি, স্থিতি এবং প্রলয় কর্তা। জন্ম মৃত্যু তাঁরই নির্মিত বিধান। তিনি বিধাতা। যার মৃত্যু যেভাবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে, সেই ভাবেই তার মৃত্যু হবে। এই তিনটি ক্রিয়াই তাহার দ্বারা জগত পরিচালিত হচ্ছে। কিছুই চিরকাল এক থাকে না, থাকবে না। সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য তিনিই নির্ধারণ করে দিয়েছেন। 

যেহেতু তিনি সব কিছু করতে সক্ষম, সেহেতু তিনি একজন নাস্তিক এবং আস্তিক উভয়েরই জন্ম, জীবন এবং মৃত্যুর মধ্যে কোনো পার্থক্য করেন না। যদি তিনি এমন না করতেন। তবে এই নাস্তিকদের দ্বারাই তাঁকে অন্যায় পরায়ণ বলা হতো। দুর্ঘটনায় কেবল নাস্তিকদের মৃত্যু হতো, আস্তিকদের মৃত্যুই হতো না।

মৃত্যু ঈশ্বরের একটি বড় ন্যায়। যার দ্বারা তিনি জগতের স্থাবর জঙ্গম সকলের নির্মাণ, সঞ্চালন ও বিঘটন ঘটাচ্ছেন। ঈশ্বর শুধু কৃপালু বা সর্বশক্তিমান এই মানদন্ডে ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিচার করা যায় না। তিনি যে ন্যায় কর্তা। 

যেহেতু তিনি ন্যায়শীল সেহেতু তিনি ধনীকে ধন দিয়েছেন, তাঁকে এই জীবনে এসব সুখ দিয়েও রোগ, শোক, ধন ক্ষয় হওয়ার ভয়, মৃত্যু ভয়, ব্যাবস্থাও করেছেন। আজ যে ধনী, কাল সে পথের ভিখারী। আজ সুন্দরী বউ নিয়ে যার এতো গর্ব। কাল সেই সুন্দরী অন্যের প্রীয়া জেনে নিজেই নিজের মূর্খতাকে ধিক্কার করছে। এই সবই তাঁর কারনে হচ্ছে। 

এবার পড়ের প্রশ্ন :

এই সবই তাঁর কারণে হচ্ছে , তবে তাঁকে কিভাবে দয়ালু বলা যায়।

না, তিনি দয়ালু নন। তিনি দয়া করে কাউকে ছেড়ে দেন না। বিধাতার নির্মিত জন্ম যেমন সুন্দর, তাঁর নির্মিত মৃত্যু তেমনি নিষ্ঠূর। সব তাঁর দ্বারা হচ্ছে এমনটা নয়, বরং তিনি সব কিছুর কারণ। 

ঈশ্বর হলেন জগতের দ্রষ্টা এবং স্রষ্টা। তিনি সৃষ্টির কারণ, সেই অর্থে কারণ। কিন্তু জগতের সকল কর্ম এবং কর্মফল থেকে তিনি বিরত। যেমন, লোহা দিয়ে তলোয়ার তৈরি হয়। লোহা এখানে তলোয়ারের কারণ। সেই তলোয়ার দিয়ে কি কাজ হবে, কার হাতে পারবে তাঁর জন্য লোহাকে দোষারোপ করা যাবে না। 

তিনি মানুষকে চয়ন করার ছাড় দিয়েছেন, কিন্তু ছাড় দিয়েও তিনি কাউকে ছেড়ে দেননি। বিপর্যয়, দুর্যোগ, দুর্ঘটনা নামক ন্যায় দ্বারা তিনি সকলকে শাসন করছেন। মৃত্যু তো সকলের মাথার উপর ঘুরছে। সময় শেষ হলেই প্রহর করবে। দোষীর জেল হবে। দোষীর শাস্তি হবে। মৃত্যু হলো অন্তিম পরীক্ষা। সেটাই আমাদের আখেরাত বা ন্যায় দিবস। দিন সে কাল কিছুই দেখবে না। সেই ভয় স্মরণ করেই মানুষ পাপ থেকে দূরে থাকে, সেই ভয়ে ধর্মের পথে চালিত হয়।  

যেমন, একটা নবজাতক, যে সবে মাত্র দুনিয়ায় এসেছে। যার কর্ম-অকর্ম, দেবতা, আল্লাহ, ধর্ম -অধর্ম সম্পর্কে কোনো জ্ঞান হয়নি। সে ভয়ঙ্কর রোগ নিয়ে জন্মেছে  বা একটি ভয়ংকর দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে। এটি কেমন বিচার? 

আবার ধরুন, কিছু দুষ্কৃতী মিলে একজন নিরীহ বালিকার ধর্ষণ করেছে। ঈশ্বর চাইলেই ওই বালিকার রক্ষা করতে পারেন। যেহেতু, তিনি কিছুই করছেন না, তাই আপনি ভেবে নিলেন, তিনি অক্ষম। সত্য আসলে এমনটি নয়। 

এই ক্ষেত্রে ঈশ্বরকে নির্দয় মনে হওয়ার কারণ আছে। সেই কারণ হলো, আপনি অপর দিকটি দেখতে পাচ্ছেন না। সাধারণ জ্ঞান বুদ্ধিতে এই ঘটনা গুলো বিচার করলে ঈশ্বরকে নির্দয় মনে হয়। কিন্তু একটু বিচার করে দেখুন, ঈশ্বর তো সব কিছুর থেকে নির্লিপ্ত।

এটি বোঝার আগে আপনাকে জানতে হবে। কর্ম, কর্মফল, সংস্কার, এবং প্রারন্ধ বলতে আমরা কি বুঝি।

  • কর্ম: মন বাক্য ইন্দ্রিয়ের ক্রিয়াকে কর্ম বলে। কেউ এক মুহূর্ত কর্ম না করে থাকতে পারে না। মন দিয়ে কোনো বিষয় চিন্তা করাও কর্ম। কর্ম দ্বারা কর্ম নষ্ট হয়। কর্ম তিন প্রকার: ক্রিয়ামান কর্ম, সঞ্চিত কর্ম এবং প্রারব্ধ কর্ম।
    • ক্রিয়ামান কর্ম: যা বর্তমানে করা হচ্ছে। যেমন — আপনি এই প্রতিবেদ পড়ছেন,বা কৃষক ধান রোপন করেছে।
    • সঞ্চিত কর্ম: কৃষক ধান কেটে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে কারণ সে ধান রোপণ করেছেন।এটি সঞ্চিত কর্মের উদাহরণ।
    • প্রারব্দ কর্ম: কৃষক সেই চাল ভাঙ্গিয়ে ভাত খাচ্ছে বা ইদুর সেই চাল খেয়ে নষ্ট করে দিচ্ছে। এটি প্রারব্ধ কর্মের উদাহরণ।
  • কর্মফল : কর্ম করলে তাঁর ফল ভোগ করতেই হবে। যেমন, খুব ভালো পড়াশুনা করে কেউ যদি চাকরি না পায়। তবে তাঁর কর্মফল অন্য কোনো কর্ম দ্বারা নষ্ট করছে। 
  • সংস্কার : কর্মের দ্বারা যে অভ্যাস গড়ে ওঠে বা যে আত্মবিশ্বাস  তৈরী হয়, সেটাই সংস্কার। আমরা জীবিত কালে যা কিছু শিক্ষা পাই, সেই সব গুলোই সংস্কারের রূপান্তরিত হয়। সংস্কারের আরেক নাম কর্ম বীজ। কারণ, সংস্কার দ্বারাই কর্মের ইচ্ছা জন্মে। এর কারণেই পুনর্জন্ম হয়।
  • প্রারব্দ্ধ : পূর্ব জন্মের সঞ্চিত কর্ম এবং কালের প্রভাবে জীবাত্মাকে যে ফল ভোগ করতে হয় তার কারণ প্রারব্দ্ধ। সত্য যুগে যে সকল জীব জন্মেছিল, তারা কলি যুগের জীবের চেয়ে অনেক সুখী জীবন যাপন করছেন। যারা সত্য যুগ থেকে পাপ করেও নিজেকে ঈশ্বর উন্মুখী হতে পাড়েনি। তারা ঘোর যুগে যুগে জন্ম নিয়ে অন্তিমে ঘোর কলিতে জন্মাবে। তারা আরোও কষ্ট ভোগ করবে। কারণ সময়ের সাথে সাথে মানুষের মনের সরলতা কমে যাবে। মানুষ নিজেরাই এর জন্য দায়ী। পূর্ব জন্মের সঞ্চিত কর্ম ফল ভোগ প্রারব্দ্ধ নয়। পূর্ব জন্মের সঞ্চিত কর্ম ফল ভোগের কারণ প্রারব্দ্ধ।

অতএব, ঈশ্বর দয়ালু বা কৃপালু কোনোটাই নন। তিনি ন্যায় কর্তা। যার যার প্ররব্দ্ধ যেমন উত্তম, মধ্যম ও অধম হবে সে কালের প্রভাবে তত উত্তম বা দুর্গম কালে জন্ম হয়ে প্ররব্দ্ধ ফল ভোগ করবে।

ঈশ্বরের ন্যায় কেমন?

মৃত্যুর পর মুসলীম ও খ্রীষ্টান জীবাত্মা আখেরাতে (বা Judgement Day) এবং হিন্দু জীবাত্মা মৃত্যুর পরেই যমালয়ে গিয়ে কর্মের বিচার হবে। সেদিন নরকের প্রহরীদের ওই পাপী জীবাত্মাকে যে কষ্ট দেবে, সেটাও তো ঈশ্বরেরই নির্ধারিত। তিনি কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি দেন। তাহলে তিনি কৃপালু কি করে হয়?

আব্রাহামিক ঈশ্বরের ন্যায়:

আপনি যদি মুসলীম ও খ্রীষ্টান ধর্মের তর্ক অনুযায়ী স্বর্গ বা নরক বিচার করেন তবে তাঁদের ঈশ্বর আপনাকে এই জন্য নরকে পাঠাবে কারণ আপনি তাদের ঈশ্বরের আরাধান না করে অন্য বিষয় বা ঈশ্বরের আরাধনা করেছেন।

সনাতন ঈশ্বরের ন্যায়:

হিন্দু ধর্ম গ্রন্থের বিধান মতে, ইশ্বর সকল ভক্ত, অভক্ত সকলকে তাদের কর্ম অনুযায়ী স্বর্গ, নরক এবং মর্ত্য ভোগ করেন। যে স্বর্গে গেছে চিরকাল স্বর্গে থাকবে না। যে নরকে  কষ্ট ভোগ করছে সে চিরকাল স্বর্গে থাকবে না। নরক পতিত জীবাত্মাদের কৃপা করেন। ওই নরক পতিত পাপী হিন্দুদের ঈশ্বর পুনর্জন্ম নিয়ে নিজেকে পুনঃ মুক্ত করার সুযোগ দেন এবং বার বার তাঁকে এই সুযোগ দেওয়া হবে। এই সুযোগ ততদিন পর্যন্ত থাকবে, যতদিন পর্যন্ত ওই জীবাত্মা আত্মজ্ঞান অর্জন না করে জীবত্ব থেকে শিবত্ব প্রাপ্ত হয়। হ্যা, এভাবে তিনি কৃপালুও বটে।

আসলে আমরা তাঁকে "কৃপালু", "দয়ালু" হিসেবেই পেতে চাই। তাই, আমাদের প্রার্থনায় তাঁকে "কৃপালু", "দয়ালু", "পরম করুণাময়", "দীননাথ" বলে আবাহন করি। তিনিই তো জগত হয়েছেন। তিনিই তো সব হয়েছেন। তাই, তিনি সব কিছু হয়েও এই জগতের কোনো কিছুর সঙ্গে লিপ্ত নয়। 

গীতায় ভগবান শ্রী কৃষ্ণ যখন নিজের বিশ্ব রূপ অর্জুনকে দর্শন করাচ্ছেন। সেখানে তাঁর ভয়ংকর রূপ দেখে অর্জুনের মতো বীরের বীরত্ব ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। তাহলে ঈশ্বর কি শুধুই সুন্দর? তিনি নির্লিপ্ত। গীতা বার বার পড়ুন, এবং নিজেই বিচার করুন ।

যার ধর্ষণ হয়েছে সেই বালিকা কি পূর্ব জন্মের ফল ভোগ করছে?

অনেক ধর্ম বক্তাকে বলতে শুনেছি— "এই সব দুর্ভোগ আমাদের পূর্ব জন্মের ফল"। কিন্তু ইহা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। হিন্দু শাস্ত্র মতে পূর্ব জন্মের অশুভ কর্মের ফল তো ওই জন্মে এবং মৃত্যুর পর নরকের আগুনে জ্বলে ছাই হয়ে যায়। তাহলে, কিভাবে পূর্ব জন্মের ফল ভোগ করবে? কোন ফল সে ভোগ করছে? 

আসলে প্রারব্ধ হলো পূর্ব জন্মের সংস্কার লব্দ আকাঙ্ক্ষার কারণ। আকাঙ্খার কারণে জীবাত্মার পুনর্জন্ম হয়। এই আকাঙ্খা একটি হতে পারে আবার অনেক হতে পারে,  গভীর হতে পারে বা খুবই সূক্ষ্ম হতে পারে। সেই সূক্ষ্ম আকাঙ্ক্ষার কারণে জীবকে পুনঃ পুনঃ জন্ম নিতে হয়। নতুন জীবনে সেই শুভ ও অশুভ আকাঙ্ক্ষার ফল ভোগ হয়। অতএব, এই ধর্ষণ পূর্ব জন্মের ফল নয় কালের নির্ণয়।

যে ঘটনা যেখানে ঘটার, সেখানে প্রারব্ধ ঘটক এবং পাত্রকে টেনে নিয়ে আসবে। যার ওপর ঈশ্বরের যেমন কৃপা। তিনি সেই কৃপায় ভক্তের রক্ষা করেন। 

এটাও সত্য যে, সব কর্ম আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যুক্ত। পূর্ব জন্মের সেই আকাঙ্ক্ষা জনিত কর্ম সংস্কার বা কর্ম বীজ নিয়ে আমাদের পুনর্জন্ম হয়। এই কর্ম সংস্কার বা কর্ম বীজ গুলোই আমাদের এই জন্মে পুনঃ পুনঃ কর্মে লিপ্ত করে নতুন কর্ম সংস্কার (বা কর্ম বীজ) উৎপাদনে প্রবুদ্ধ করে। যার ফলে মানুষ জন্ম জন্মান্তরের চক্রে আবর্ত হতে থাকে। কিন্তু যে জীবাত্মার কর্ম এবং বীজ পূর্ব জন্মেই ভস্মিভূত হয়েছে, অথচ প্রারব্দ্ধ ফল ভোগ বাকী আছে, সে এই জন্মে অল্পায়ু হয়ে জন্মে। অর্থাৎ মৃত্যুর পরই সে ঈশ্বরের পরম ধাম লাভ করে। এটা ঈশ্বরের কৃপা। 

ওই পুত্র বিয়োগ তাঁর পিতা মাতার কর্ম ফল ভোগ। যে পিতা মাতা ভ্রূণ হত্যা করেছে, বা অন্যের সন্তানকে কষ্ট দিয়েছে, বা এমন কোনো কর্ম করেছে। তাঁদের পুত্র বিয়োগ হয়। এই ব্যাপারে ঈশ্বর নিষ্ঠুর। তাঁর এই নিষ্ঠুরতায় তিনি যে মানষিক আঘাত করেন। বুদ্ধিমান ও ভক্তিমতি ভক্ত প্রারব্ধ ক্ষয় হয়েছে মনে করে, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান। 

সদগুরুর যিনি চক্র ভেদ করে গুরু দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি ইচ্ছা করলে তাঁর নিজ ক্ষমতা দ্বারা এই কর্ম বীজ নষ্ট করতে পারেন। ভক্তের সকল পাপ তিনি নিজে গ্রহন করেন। তিনি সকল প্রারব্দ্ধ ফলকে নষ্ট করতে পারেন। তিনি সব পারেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ, যিশু খ্রিস্ট এমন উদাহরণ। আবার আগের আলোচনায় ফিরে আসি।

 ওই ধর্ষিতা যিনি নির্দোষ, সে তার এই জন্মের অধর্ম বা কুকর্মের কর্ম ফলকে এই জন্মেই ভোগ করেছে। যারা ধর্ষক তারাও একই কারণে এই নিকৃষ্ট কুকর্মে লিপ্ত হয়। 

এখন প্রশ্ন হলো, কোন অধর্মের ফল ওই বালিকা ভোগ করছে? আর যারা ধর্ষক বা দুষ্কৃতি তারাই বা কার প্রেরণায় এই দুষ্কর্মে লিপ্ত হচ্ছে? 

বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতি নিজ নিজ অভিজ্ঞতায় নারীকে পুরুষের অধীন বলে শৃঙ্খল বদ্ধ করায় চেষ্টা করেছে। আরব দেশের ধর্ম নারীকে কালো বোরখা হিজাব পড়ার বিধান দিয়েছে। খ্রীষ্ঠরা নারীকে পুরুষের পাঁজরের হাড়ে থেকে সৃষ্ট বলে পুরুষের বুকেই সুরক্ষিত, এমনটি বলা হয়েছে। বিচার করে দেখুন, এগুলো কিন্তু পুরুষ তান্ত্রিক সমাজের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। 

কারণ, আমাদের দেশে নারীকে সেই পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেনি। আমাদের ইশ্বরের স্বরূপ কেবল পুরুষ নন। তিনি মাতা জগদম্বা। পূরুষের সঙ্গে অভিন্ন করে শিব শক্তির মিলিত অর্ধ নারীশ্বর রূপ। 

তাই আমরা দূর্গা, কালী, চন্ডি, চামুন্ডি ইত্যাদী ভয়ংকর দেবীর রূপ দিয়ে, পুরুষকে তাঁর চরণে মাথা নত করার শিক্ষার দিয়েছি। নারী মাত্রেই দেবী দুর্গার অংশ। নারীরাই নিজের জন্য স্বামী বরণ করতেন। আবার, ওই দেবীরাই লক্ষী রূপে স্বামীর চরণ সেবা করছেন, বিদ্যার দেবী রূপে জ্ঞান প্রদান করছেন। ওই চন্ডিই পার্বতী রূপে স্বামীর জন্য ব্রত পালন করছেন।

যে পুরুষ ধর্মের এই শিক্ষা পায়নি, বা পেয়েও বিস্মৃত হয়েছে। তারাই মাকে ভুলে নিজেদের পতন করেছে। আর যে নারী তার সেই দিব্যরূপ মর্যাদা ভুলে গিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর বর্জিত সাঁজ-সজ্জা, জীবন শৈলী আপন করে নিজেকে প্রদর্শনের মডেল বানিয়েছে। তাদেরও পতন হয়েছে।

মাদার ম্যারী স্বতন্ত্র এবং পবিত্র ছিলেন বলেই ইশ্বরের পুত্রকে তাঁর গর্ভে ধারণ করার শক্তি তাঁর মধ্যে ছিলো। দেবকি কারাগারে সব সময় প্রহরীদের নজরদারি থাকা সত্ত্বেও আট বার গর্ভবতী হয়েছিলেন। কংশ কি এতই বোকা ছিলো? অষ্টম পুত্র তো দূরে থাক কংশ নিজের মৃত্যুকে প্রতিহত করতে যথা সম্ভব প্রয়াস করেছিলেন। দেবকী ও বসুদেব কখনই মিলিত হতে পারেন নাই। এই সবই ছিল দিব্য জন্ম। আজকের বিকৃত মানসিকতার কিছু কিছু লোক এই মায়েদের নিয়ে কুমন্তব্য করতে পিছুপা হয় না।

হিন্দু শাস্ত্র মনু স্মৃতি অনুসারে, "বালিকা অবস্থায় নারী তার পিতার দ্বারা সুরক্ষিত, বিবাহের পর ওই নারী স্বামীর দ্বারা এবং বার্ধক্যে পুত্রের দ্বারা সুরক্ষিত"। কিন্তু আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মুক্তমনাদের দৃষ্টিতে এই বক্তব্য নারীদের অধিকার হন করছে। 

যেখানে পুরুষকে তার কন্যা, তার সহ ধর্মিনী এবং বৃদ্ধ মায়ের সেবা ও সুরক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেখানে পুরুষই নারীকে পদদলিত করছে। কারণ যুবক যুবতীরা আধুনিক গান, সিনেমা থেকে এইসব শিক্ষা নিচ্ছে।

শাস্ত্রে নারীকে পূরুষের দাসত্ব করতে বলা হচ্ছে না। এখানে বলা হয়েছে — নারীর সুরক্ষা পুরুষের দায়িত্ব সেটাই বলা হচ্ছে। বামপন্থীদের কাছে ধর্ম আফিমের নেশা, এই বুদ্ধি ও যুক্তিতে, তারা আমাদের দেশের নারীকে পুরুষ বিদ্রোহী করে তুলেছে। এই মুক্তমনাদের প্রচার ও তৎপরতা আমাদের দেশের সমাজ ও পরিবারকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে পতনের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

হিন্দি সিনেমার হিরো নায়িকার পেছনে গান করতে করতে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করছে। নায়িকার অনিচ্ছা সত্বেও সে তার হাত ধরে টানছে, তাঁকে আলিঙ্গন করছে। জোর করে চুম্বন করছে। এইসব নাটক হলেও তো আমাদের অবচেতন মনে এক প্রকার কর্মবীজ রোপন করছে। যার মধ্যে শুদ্ধ বুদ্ধি নেই, যার মধ্যে শুভ কর্মবীজ নেই। সেই বিবেকহীন যুবক তো নিজেকে ওই হিরো কল্পণা করে এমন কাজ করবেই। 

শীলা কি জওয়ানি, পর্দে কে পিছে ক্যা হ্যা, কাটা লাগা ইত্যাদি গানের নায়িকা যেমন কাপর পড়ে, তারা যেমন যৌণ অঙ্গ ভঙ্গিমা করে সে গুলোই ছোটো ছোটো বাচ্চারা অনুকরণ করে। ওরা এইসবের মানে বোঝে না। ওই ডিজাইনের পোশাক বাজারে বিক্রি হয়। ফ্যাশন আর ট্রেন্ডের নামে ওই অপোসংস্কার গুলোই নারীদের চাল চলনে ধরা পড়ে। অজান্তেই এগুলো তাদের কর্ম হয়ে দাড়ায়। আর কর্মের ফল ভোগ করতে হয়।

আপনি মানুন আর নাই মানুন। ঈশ্বরের কিছুই এসে যায় না। আমিও যদি এমন কোনো কর্ম জেনে বা না জেনে করে থাকি। আমাকেও কর্মফল ভোগ করতে হবে বা ভোগ করেছি বা করছি। তাই, অর্থ না জেনেও ইশ্বরের নিমিত্তে কর্ম করা শ্রেয়।

আধুনিকতা ও নাকি অসভ্যতা?

আধুনিক শিক্ষা ও চিন্তাভাবনা সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে, এটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে মানব ইতিহাসের প্রতিটি সভ্যতাই কিছু না কিছুভাবে চিন্তা, প্রশ্ন এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমেই অগ্রসর হয়েছে। আপনার প্রশ্নের উত্তরে, এখানে কিছু পয়েন্ট বিবেচনা করা যেতে পারে:

1. প্রাচীন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা ও চিন্তা-চেতনা:প্রাচীন ভারতে শিক্ষা ও দর্শনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। উপনিষদ, বেদ, বৌদ্ধ ও জৈন দর্শন, নালন্দা ও তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়, আর্যভট্ট, চরক, এবং সুশ্রুতের মতো বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, ভারতবর্ষে প্রাচীনকাল থেকেই জ্ঞানচর্চা ও অনুসন্ধান ছিল। প্রাচীন ভারতীয় দর্শন ও বিজ্ঞান যেমন গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র ইত্যাদি প্রথাগত বিশ্বাসের বাইরে চিন্তা করতে উৎসাহিত করত।

  2. পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব: পাশ্চাত্য দেশগুলি থেকে আধুনিক শিক্ষার অনেক দিক আমাদের কাছে এসেছে, বিশেষ করে ঔপনিবেশিক যুগে। পাশ্চাত্য দর্শন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করেছে। রেনেসাঁ ও এনলাইটেনমেন্ট যুগের সময় ইউরোপে যে বিজ্ঞানমনস্কতা ও স্বাধীন চিন্তার বিকাশ হয়েছিল, তার কিছু প্রভাব আমাদের সমাজেও পড়েছে।

  3. চিন্তার স্বাধীনতা ও যুক্তিবাদ: আধুনিক শিক্ষার মূল ভিত্তি হলো সমালোচনামূলক চিন্তা, যুক্তিবাদ এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহার। যদিও এই ধারণাগুলি পাশ্চাত্য থেকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে, এগুলি মানব অভিজ্ঞতার সার্বজনীন দিক। প্রতিটি সমাজেই কিছু চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ছিলেন যাঁরা প্রথাগত বিশ্বাসকে প্রশ্ন করেছেন এবং নতুন পথের সন্ধান করেছেন।

নারী স্বাধীনতা কি?

নারীরা পুরুষদের মতো শিক্ষা, কর্ম এবং স্বাধীনতার অধিকার পেতে চায়। এতে কোনো পুরুষের আপত্তি নেই। নারীরা যত শিক্ষিত হবে, ততই সমাজ শিক্ষিত হবে। কিন্তু লেখাপড়া বা ডিগ্রী তো শিক্ষার পরিচয় নয়। 

নারী বলুন কিংবা পুরুষ চরিত্রই তার শিক্ষার প্রমাণ। নারীদের চরিত্র আর মর্যাদা যে আজকের যুগেও আছে, তাঁর প্রমাণ দেখুন।

মনে করুন, একটি পুরুষকে একটি নারী রাস্তায় চর মারলো। আপনি লক্ষ্য করবেন আরো দশটা হাত ওই পুরুষকে মারার জন্য প্রস্তুত হবে। বেশীর ভাগই পুরুষই ওই পুরুষকে মারার জন্য প্রস্তুত হবে।

এর বিপরীতে,  একটি নারীকে রাস্তায় কোনো পুরুষ চর মারলে। এই ঘটনা ওই নারীর অপমান, শ্লীলতাহানী, নিগ্রহ, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পরিচয় বলে মনে করা হবে।

অর্থাৎ, নারীর মান মর্যাদা এবং সুরক্ষা নিয়ে সমাজ এখনো ভাবে, সব সময় ভেবে এসেছে। নারীর সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই আমাদের পূর্ব পুরুষরা "নারী ও পূরুষের" মধ্যে কিছু সীমানা বা অঙ্গীকার নির্মাণ করে গেছেন। যেগুলো পালন করাকেই ধর্ম বলা হয়। যখন যখন ওই অঙ্গীকার খন্ডিত হয়েছে, বা অধর্ম হয়েছে তখনই অমঙ্গল হয়েছে।

My Life, My choice — কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটলে It's not my fault.

আজকাল নারী-পুরুষ উভয়ই কু-শিক্ষায়, কু-সঙ্গে নিজের চরিত্র নষ্ট করছে। পরিধান পরিচ্ছেদ আচার আচরণের কোনো বলাই নাই। আপনি কেমন পোশাক পড়বেন, সেটা আপনার ব্যাক্তিগত বিষয় হতে পারে। কিন্তু , আপনি যদি পাবলিকে নিজেকে প্রদর্শন করেন, পাবলিকের নিজের নিজের ব্যাক্তিগত মতামত থাকতেই পারে। 

আপনি ছোট পোষাক পড়ুন, জিন্স প্যান্ট পড়ুন, স্কার্ট পড়ুন, স্লিভ লেস পড়ুন, স্যান্ডো গেঞ্জি পড়ুন, বা। কিছু নাই পড়ুন। সেটা আপনার ব্যাক্তিগত বিষয়। আপনি যদি পাবলিকের তোয়াক্কা না করে নিজের আনন্দের জন্য পড়েন। তবে পাবলিক যদি সেই নিয়ে কোনো সমালোচনা করে আপনার কোনো সমস্যা হাওয়া উচিত নয়। সেটাও পাবলিকের নিজের নিজের ব্যাক্তিগত মতামত।  একটা প্রবাদ আছে "যত্র দেশ তত্র বেশ" — অর্থাৎ যেমন দেশ, তেমন পোশাক। 

বিজ্ঞাপনে যৌনতার প্রচার

সুগন্ধী সেন্টের বিজ্ঞাপনে পুরুষ ওই ব্র্যান্ডের সুগন্ধী মেখে নারীদের আকর্ষণ করছে, একটা স্যানডো গেঞ্জির বিজ্ঞাপনে, একটা বাইকের বিজ্ঞাপনে সব জায়গায় যৌনতার প্রচার। এগুলো কি কু-শিক্ষার প্রচার নয়? এই পপ কালচার পুরুষদের Cool আর নারীদের Hot হতে শিক্ষা দিয়েছে। যারা এই কালচার মেনে নেয়নি তারাই প্রিমিটিভ, গাইয়া, গাওয়ার, কু-সংস্কারাচ্ছন্ন ইত্যাদী।

কিন্তু যখন এই কারণ গুলো নিজের সঞ্চিত কর্মফল প্রদান করে ধর্ষণ বা শ্লীলতা হানি করছে। তখন নিজেদের Cool আর Hot কালচার রক্ষার জন্য জ্ঞান দেওয়া হয়। নারীদের পোশাক কারণ নয়। কারণ ধর্ষণ তো পাঁচ মাসের শিশু থেকে ৭২ বয়স্ক বৃদ্ধারও হচ্ছে। পুরুষরাই খারাপ। তখন সব পূরুষ খারাপ হয়ে যায়। পুরুষরাই খারাপ হয় কেন? একটা সার্ভে করে দেখা গেছে যে, সব ধর্ষকের পর্ণগ্রাফির আসক্তি ছিলো। সেই পর্ণগ্রাফির নায়িকার চরিত্রকে। সে সামনের ওই Hot মেয়েটির মধ্যে দেখতে পেতো। তাই, তারা সময় ও সুযোগ বুঝে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। কথায় আছে, বেড়াল মুরগীকে খাচার বাইরে মুক্ত অবস্থায় পেতে চায়। আর মুরগী নিজের মুক্তিকে স্বাধীনতা মনে করে।

তাই, ওই বালিকা ইশ্বরের কারণে ধর্ষিত নয়, বরং আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত দম্ভী মুক্তমনাদের তথাকথিত মুক্তপথ অবলম্বন এবং পুরুষের দ্বারা পর্ণগ্রাফ দেখা, কু-সঙ্গে কু-শিক্ষা সব মিলিয়ে ওই নারীকে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। অন্য দিকে ধর্ষকের ওই একই কারণে ফাঁসি হয়।

যেই অঙ্গিকার গুলোকে লিব্রাল নাস্তিকরা মানেন না। এসব তাদের কাছে কু-সংস্কার। যে নিয়ম আচার গুলো সমাজের অনেক দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতার উপর নির্মিত হয়েছে। সেই সব নিয়ম কানুন এক ঝটকায় কু-সংস্কার বলে দেওয়া হয়।

আবার এটাও ঠিক যে, সব কিছুর সময়ে সঙ্গে সংশোধন প্রয়োজন, মন্থন বা মনন প্রয়োজন।, কিন্তু সংশোধন বা সংস্কারের বদলে সেগুলো উৎপাটন করার প্রয়াস হচ্ছে।

কি প্রয়োজন?

এগুলো কিছু ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে সংস্কার এবং ঐতিহ্যের মধ্যে একটি মধ্যম অবস্থান নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরিবর্তনের সাথে ঐতিহ্যকে সঠিকভাবে মিশিয়ে একটি সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

সংস্কার ও ঐতিহ্য:

যে কোনও সমাজের প্রথা ও নিয়মগুলি সময়ের সাথে সাথে তৈরি হয়েছে এবং এর পেছনে বিশেষ কারণ ও অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে সমাজের বিকাশের জন্য কিছু প্রথা ও নিয়ম পরিবর্তন বা সংস্কার করা প্রয়োজন হতে পারে। সব প্রথা বা রীতি সব সময় সঠিক ছিল না, এবং কিছু নিয়ম হয়তো এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়।

ব্যক্তিগত স্বাধীনতা:

ব্যক্তিগত স্বাধীনতার গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। প্রত্যেকেরই নিজের জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থাকা উচিত। তবে এই স্বাধীনতা সমাজের অন্য সদস্যদের নিরাপত্তা বা অধিকার ক্ষুন্ন করে না তা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।

শিক্ষা ও মনন:

আধুনিক শিক্ষা মানুষকে চিন্তা করতে, প্রশ্ন করতে এবং প্রথাগত বিশ্বাসের বাইরে ভাবতে সাহায্য করে। এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা উন্নতি এবং নতুন ধারণা আনার জন্য অপরিহার্য। কিন্তু এর মানে এই নয় যে সব কিছু উপেক্ষা করা উচিত। প্রথা এবং সংস্কৃতির মধ্যে থেকে যা মূল্যবান, তা রক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ।

সামাজিক পরিবর্তন

কোনও পরিবর্তন হঠাৎ করে করা উচিত নয়, কারণ হঠাৎ পরিবর্তন প্রায়শই নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনে। পরিবর্তন আসতে হবে ধীরে ধীরে এবং তা সবার মতামত এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে।

মুক্তমনাদের নিজের অহংকার এবং অজ্ঞতার কারণে সেই সকল অঙ্গীকারকে অন্ধ বিশ্বাস, নারী স্বাধীনতার বাধার নাম দিয়ে নষ্ট করার চেষ্টা করেন। তাহলে বলুন, এখানে ইশ্বরের কি দোষ?  স্মরণ করে দেখুন আমি শুরুতেই বলেছি, " আমি যে ধর্মে দীক্ষিত এবং বিশ্বাসী সেখনে ব্রহ্ম এবং জগত একই।" অর্থাৎ আপনিই ঈশ্বর।

এই দেহ আপনি নন, মন, বুদ্ধি, যুক্তি যেই আমিত্ব দ্বারা আপনাকে অমুক নামে জানে সেই আমিই আপনি। আপনার সেই আমিই ঈশ্বর। আপনি ঈশ্বর বলে কাউকে গালি দিচ্ছেন না। আসলে নিজেকেই গালি দিচ্ছেন। ঈশ্বর বলে আপনি কাউকে পূজা করছেন না, আপনি নিজের ঈশ্বরত্ব পুনঃ পুনঃ জাগরিত করার চেষ্টা করছেন। যদি ঈশ্বরকে নির্দয় বলে মনে হয়, তবে হ্যা তিনি নির্দয়। যদি সদয় বলে মনে হয়, তবে তিনি সদয়। সেটাই আপনার পরিচয়।

আমি নিজেকে "অহম ব্রহ্মস্মি", "চিদানন্দ রূপায়া শিবোহম শিবোহম" বলতে খুশি হবো। আমার ঈশ্বর আমার কাছে পূজনীয় কারণ আমি সেই রকম। তুমি ঈশ্বরকে গালি গালাজ করছো, কারণ তুমি সেই রকম। ঈশ্বরের কোনো সম্মান-অপমান, মান-অভিমান নেই। তিনি সেই ভাবেই প্রকট হন, যেভাবে তাঁকে ভাবা হয়। তাঁকে কিভাবে ভাববেন বা ডাকবেন, সেটা তো আপনিই ভালো জানেন।

Himadri Roy Sarkar always had a passion for writing. When he was younger, he would often write stories and share them with his friends. He loved the way that writing could bring people together and share ideas. In 2022, he founded The Hindu Network,The site quickly became popular, and Himadri was able to share his writing with people all over the world. The Hindu Network is now one of the most popular websites in the world, and Himadri is a well-known author and speaker. blogger external-link facebook instagram

0 Comments: