শাস্ত্র কি? শাস্ত্রের মহত্ব এবং উদ্দেশ্য কি ৷
ভূমিকা:
আমরা আজ যাহাকে বিজ্ঞান বলি, সেটাই প্রাচীন ভারতে শাস্ত্র নামে পরিচিত ছিল। সমাজ বিজ্ঞানকে সমাজশাস্ত্র বলা হতো। এখন সমাজবিজ্ঞান বলা হয়। আবার গণিতকে গণিতশাস্ত্রও বলা হয়। তাই Science-এর অভিধানিক অর্থ বিজ্ঞান না হয়ে শাস্ত্রই হওয়া উচিত ছিল। তাহলে এই বিভ্রাট হতো না।
বিজ্ঞান বলতে এই সনাতন সংস্কৃতি যা ভাবতো সেটা হলো পরম আধ্যাত্মিক জ্ঞান বা ঈশ্বরকে জানার জ্ঞান। ‘জ্ঞান’ কথার অর্থ হলো জানা। যে বিষয়কে জানা হয়, তাঁকে ‘জ্ঞেয়’ বলা হয় এবং যিনি জানেন তাঁকে জ্ঞানী বলা হয়। কিন্তু যখন কোনো কিছুকে আমরা বিশেষ ভাবে জানি তাহা বিজ্ঞান রূপে পরিচিত।
নাট্যশাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র, অর্থশাস্ত্র, ভূগোল শাস্ত্র, শিল্প-শাস্ত্র এবং শাস্ত্রীয় সংগীত প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞান এবং দর্শন চর্চার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। শাস্ত্রকে সনাতন সংস্কৃতির দার্শনিক চিন্তার নির্যাসও বলা যেতে পারে।
লোক সংগীত আপনি নিশ্চই শুনেছেন। আধুনিক বা পাশ্চাত্য ক্লাসিক্যাল সংগীতও নিশ্চই শুনেছেন। ক্লাসিক্যাল মিউজিককে বাংলায় শাস্ত্রীয় সংগীত বলা হয়। তাই যদি হয়, তাহলে যখন আমরা ধর্মশাস্ত্র বলি সেটিকে Classical Religious book কেন বলি না? আবার অর্থশাস্ত্রকে আমরা Economics বলে থাকি। কিন্তু যদি আমরা Economy শব্দের অর্থ বিচার করে দেখি। তবে সেটা ˌɛkəˈnɒmɪks, থেকে এসেছে। যার অর্থ দাঁড়ায় - সমাজ বিজ্ঞান। কেন এই জগা খিচুড়ি? এটাই জানার বিষয়।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও আছে। যে কোনো শাস্ত্র অনেক গবেষণা, বিচার, করেই লেখা হয়। তাই বিধি নিষেধ যেখানে লেখা থাকে তাহা শাস্ত্র। অর্থাৎ, বিধিনিষেধ সমন্বিত বিজ্ঞান সম্মত নির্দেশ যে গ্রন্থে থাকে, তাহাই শাস্ত্র বলে বিবেচিত।
শাস্ত্রের মহত্ব:
এখানে দেখলাম একই সুর, একই পদ্ধতি কিন্তু আলাদা আলাদা দেশের আলাদা আলাদা মানুষ কর্তৃক আবিষ্কৃত নিয়ম একেবারেই আলাদা। এই যে শাশ্বত সত্য, যেটি ব্যবহার করে সমগ্র বিশ্বের মানব জাতির কাছে একটা নান্দনিক বিষয় সৃষ্টি করতে সক্ষম। সেই বিষয়টিই শাস্ত্রের বিষয়। বাস্তুশাস্ত্র অর্থাৎ গৃহ নির্মাণের বিজ্ঞান স্থান, আবহাওয়া, পরিবেশের বিভিন্ন সূক্ষ্ম পার্থক্য নির্নয় করে লেখা হয়েছে।
অর্থাৎ, যার মধ্যে মাপ পরিমাপ, যুক্তি তর্ক আছে, সেগুলো শাস্ত্রীয়। আকাশ থেকে ধপাস করে কিছু আসেনি বা কারো বিশ্বাস বা মতামত থেকে এগুলো তৈরী হয়নি। অন্ধবিশ্বাসের উপর নির্ভর করে এগুলো তৈরী হয়নি।
শাস্ত্রের উদ্দেশ্য
শাস্ত্রের উদ্দেশ্য দুইটি। প্রথমত, জ্ঞান অর্জন করে মুক্তির পথ প্রশস্ত্র করা। দ্বিতীয়ত, শাস্ত্রের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে সুন্দর এবং সুখকর করে তোলা। শাস্ত্র কেবলমাত্র আপনাকে পথ দেখাতে পারে। গ্রহণ বর্জন আপনার কাছে।
0 Comments: