মূর্তি পূজা এবং সম্ভুতি অসম্ভুতি বিভ্রান্তি। Idol worship and confusion on Sambhuti and Asambhuti .
একদল আছে যারা মূর্তি পূজার বিরোধ করে। আরেক দল আছে, যারা মূর্তি পূজার সমর্থন করে। অথচ উভয়েই কোনো না কোনো ভাবে মুর্তিপূজাই করে। কারণ, জগতে সব কিছু মূর্ত, অমূর্ত কেবলমাত্র আমাদের কল্পনা। আমার কল্পনা আপনার কাছে অমূর্ত, আপনার কল্পনা আমার জন্য অমূর্ত। তাই এরকম ভিত্তিহীন কল্পনা অলীক। এই অলীক কল্পনার বাস্তব জীবনে কোনো মূল্য নেই। বিচার করে দেখুন।বাস্তব সেটাই যা সকলের কাছে প্রত্ক্ষ এবং যা নিয়ে নিয়ে সকলের একই মত।
হিন্দুদের নিরাকার ব্রহ্ম আসলে অদৃশ্য কোনো সত্ত্বা নয়। নিরাকার কথার অর্থ এখানে অসীম।তাই তাঁর কোনো আকার দেওয়া সম্ভব নয়। এই জগত সেই অসীমের এক অংশ মাত্র। এই সীমিত জগতে অসীম ব্রহ্মকে জানা যায় না। গণিতের ভাষায় অসীমের সঙ্গে কোনো কিছু যোগ বা বিয়োগ করলে অসীমই থাকে। তাই যিনি ব্রহ্মকে জেনেছেন। তিনি ব্রহ্মই হয়ে গেছেন। কাজেই ব্রহ্মজ্ঞানী সব কিছুতে ব্রহ্মকেই দেখেন এবং সর্বদা ব্রহ্মে স্থীর থাকেন।
আমি আমার অল্প বুদ্ধি ও ভক্তিতে যে ঈশ্বরকে জানি, সেটা তোমার মহৎ বুদ্ধি ও ভক্তিতে ঈশ্বরের থেকে ভিন্ন হতে পারে। উভয়েই একই ধর্মগ্রন্থ, একই ঈশ্বরের আরাধনা করছি কিন্তু হতে পারে আমাদের বোধ আলাদা। তাই, তোমার সঙ্গে আমার মতের অমিল।
সেই কারণে, একই ধর্ম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। তারা একই ঈশ্বরে বিশ্বাস করেও পরস্পরের মধ্যে বিবাদ করছে। এটা উচিত নয়। এরা এতোটাই মুর্খ, যাকে এরা নিজের চোখে দেখেনি তাকে নিয়ে মূর্খের মতো তর্ক করে। এমনকি বিরোধীকে খুন পর্যন্ত করতে এদের হাত কাপে না।
যারা নিরাকার ইষ্ট উপাসনা করে। তাদের, সর্ব শক্তিমান সৃষ্টি কর্তার পবিত্র চিহ্ন গুলোর অবমাননা করলে তাদের কষ্ট হয়।
নাস্তিকরা যখন কোরআন বা বাইবেল জ্বালায় তখন তারা রাস্তায় নেমে শহর ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। নিরীহ মানুষের ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
কয়েক বছর আগে চার্লি হেবডো সংবাদপত্র নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাঙ্গ চিত্র বানিয়েছিলো। আমরা দেখলাম তার কি পরিণতি হলো। একটি ব্যাঙ্গ চিত্রের কারণে ফ্রান্সের এক শিক্ষকের গলা কেটে ফেলা হলো। এবং সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন সেই খুনের প্রতিবাদ করতে ওই ব্যাঙ্গ চিত্রকে বিশ্বের সামনে খোলামেলা ভাবে তুলে ধরলেন। সমগ্র মুসলিম দেশ গুলো এক হয়ে ওই দেশের দ্রব্য বয়কট করা শুরু করলো, ফ্রান্সে আত্নকবাদী হামলা হলো। ―এই হলো মূর্তি পূজার বিরোধীদের সত্যতা।
অর্থাৎ তারা বিশ্বাস করে যে, মানুষ চাইলে সেই অমুর্তকে মূর্ত আকারে প্রকট করতে পারেনা কিন্তু কোনো প্রকট রূপকে তাঁর নামে অপমান করলে সেটাকে তাঁদের ঈশ্বরের বা নবীর অপমান হয়।
অথচ দেখুন, যাদের মূর্তি পূজক হিন্দু বলা হয়। তারা নিজেরাই মূর্তি বানিয়ে মূর্তিকে বিগ্রহ বানিয়ে পূজা করে। এমনকি পুজো শেষ হলে নিজেরাই সেই বিগ্রহ জলে বিসর্জন দেয়।
আপনি বিচার করুন, মূর্তিপূজক কাদের বলা হয়েছে উচিত?
হিন্দু রাস্তার মাইলস্টোন বা যে কোনো পাথরের পূজা করে না। শাস্ত্র সম্মত বিগ্রহ এবং পট চিত্রের পূজা করে। অর্থাৎ সব প্রতিমা বা মূর্তি ভগবানের বিগ্রহ হয় না। তাই, যে কোনো হিন্দু মূর্তি বা প্রতীকের অবমাননা করলেও আসলে হিন্দুদের দেবী-দেবতার অপমান হয় না।
যেমন আপনার গুরুজন বা প্রিয়জনের মৃত দেহ, তাঁর অপর যদি কেউ লাথি মারে। তবে কি আপনি বলবেন, "ওর তো প্রাণ চেতনা নেই, তাই আমার কিছুই এসে যায় না।" আপনার প্রিয়জনের মৃত দেহের ওপর আঘাত করলে আপনি কষ্ট পাবেন।
যে দেবতা বা পরমেশ্বর সর্ব শক্তিমান, সে কি সামান্য মানুষের আঘাতে আহত হবে? তাই, মূর্তি যারা ভাঙে। তারা নিজেরাই নিজেদের হীনতা, দীনতা, অশিক্ষা এবং মূর্খতাকেই সকলের কাছে প্রকাশ করে।
কিছু দিন আগে সেই ফ্রান্সে এক নাস্তিক মা কালীর ব্যাঙ্গ চিত্র একে মা কালীর অপমান করার চেষ্টা করলো। কি লাভ হলো? উল্টে যে অপমান করলো, তারই চরিত্রে নারীর অসম্মানের দাগ লাগলো। নারীত্বর প্রতি তার কামুক দৃষ্টিভঙ্গিই বিশ্বের সামনে প্রকট হলো।
এক মুসলিম চিত্রকার মাতা সরস্বতীর নগ্ন চিত্র একে ভারত প্রাক্তন সরকার কর্তৃক ভারতরত্ন পুরস্কার পেয়েছিল। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হলো ঠিকই, কিন্তু হিন্দুরা কোনো বাস, ঘর, দোকান ভাঙলো না। কারো বাড়িতে আগুন দিলো না। এটাই পার্থক্য ধর্ম এবং অধর্মের।
আরোপ:১
অন্ধতম প্রবিষয়ন্তী যে অসম্ভুতিমুপাসতে।
ততভূয় ইব তে তমো য় উ সয়ম্ভুত্যা রতাঃ॥”
(ইশ উপনিষদ: ১/১২)
– সে অন্ধকারে প্রবেশ করে যে অসম্ভুতির উপাসনা করে। তারা আরো গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় যারা শুধু সম্ভুতিতেই রত থাকেন।
এখানে সম্ভুতি এবং অসম্ভুতি উভয়ই অন্ধকারে নিমজ্জিত করছে। তাহলে মানুষ করবেটা কি? এর জন্য এই শ্লোকের সামগ্রিক জ্ঞান দরকার। সম্ভুতি অসম্ভুতি কি সেটা জানা দরকার, তাহলেই বক্তব্য স্পষ্ট হবে। সম্ভুতি হলো অপত্য, অর্থাৎ যার জন্ম বা সৃজন হয়েছে। অসম্ভুতি হলো যাহা অব্যাক্ত। উপরক্ত শ্লোকটি ইশপনিষদের ১২ নং শ্লোক। এর ঠিক তিন শ্লোক পূর্বে একই রকম কথা বলা হয়েছে।
“অন্ধংতম প্রবিষয়ন্তী যে অবিদ্যামুপাসতে।
ততভূয় ইব তে তমো য় উ বিদ্যাং রতাঃ॥”
(ইশ উপনিষদ: ১/৯)
অর্থাৎ, যারা অবিদ্যার উপাসনা করেন, তারা অন্ধকারে প্রবেশ করে। তারা আরো অন্ধকারে নিমজ্জিত হন যারা শুধু মাত্র বিদ্যার উপাসনা করে।
বিদ্যা চ অবিদ্যা চ য়স্তদ বেদোভয়ম সহ। অবিদ্যায়া মৃত্যু তীর্ত্বা বিদ্যায়ামৃতমশ্রুতে॥ (ইশ উপনিষদ ১/১১)
― যে বিদ্যা এবং অবিদ্যা উভয়ের জ্ঞান রাখেন। সে অবিদ্যা কে জেনে মৃত্যুর থেকে তরোহিত হয় এবং বিদ্যা কে জেনে অমৃত্ত্ব লাভ করে।
―এর অর্থ এই যে, শুধুমাত্র বিদ্যার উপাসনা করলে মানুষ গভীরতম অন্ধকারে ডুবে যায়। অবিদ্যাকেও যানতে হবে। CID Officer অপরাধীকে ধরার জন্য অপরাধীর মতো করে ভাবে। তার জন্য তাকে বিশেষ প্ররশিক্ষণ নিতে হয়। অর্থাৎ সমগ্র জ্ঞান থাকা দরকার। শুধুমাত্র ভালো গুলো জানলে হবে না। মন্দ গুলো কেও জানতে হবে।
Refrence (দেবনাগরী):-
अन्धं तमः प्रविशन्ति ये्अविद्य्या मुुुपासते।ततो भूय इव ते तमो य उ विद्यांं रताः ॥९॥अन्यदेवाहुर्विद्यया न्यदेवाहुर्विद्यया।इति शुश्रुम धीराणां ये नस्तद्विचचक्षिरे ॥१०॥विद्यां चाविद्यां च यस्तद वेदोभयम सह।अविद्यया मृत्युं तीर्त्वा विद्ययामृतमश्नुते ॥११॥अन्धं तमः प्रविशन्ति ये सम्भूतिमुपासते।ततो भूय इव ते तमो य उ संभूत्या रताः ॥१२॥अन्यदेवाहुः संभवादन्यदाहुरसंभवात।इति शुश्रुम धीराणां ये नस्तद विचचिक्षिरे ॥१३
এখানে মূর্তি পূজা সম্পর্কে কোনো মন্তব্যই করেনি। এখানে বিদ্যা অবিদ্যার কথা বলা হচ্ছে। অর্থাৎ, এতদিন ধরে যে মূর্তি পূজা বিষয়ক সম্ভুতি অসম্ভুতি বিষয়ক ভ্রান্তি জাকির নায়েক, আর্য সমাজ এবং হিন্দু ধর্ম বিদ্বেষী কর্তৃক প্রচারিত হচ্ছিল। তার সমাধান এক্ষণে করা হলো।
0 Comments: