মুসলিম এবং হিন্দু ব্যক্তি তর্ক করছে। |
সকল ধর্মই এই কথা বলা হয় "ঈশ্বর এক"। তবে ওই এক ঈশ্বরের সৃষ্টিতে, যিনি নিজেই জগত পরিচালনা করছেন, তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব নয়, তবে এতো ধর্ম, মত, পথ কিভাবে এলো? ওই এক ইশ্বরই কি সমগ্র জগত পরিচালনা করেছেন? নাস্তিকরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। কিন্তু আস্তিকদের মধ্যে এতো ভেদাভেদ কেন?
বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ গুলো পড়ার পর আমার উপলব্ধি আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। কোনো ধর্মের প্রতি আমার মনে কোনো বিদ্বেষ বা ঘৃণা নেই।
প্রথমে জানতে হবে:
ঈশ্বর আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন?
হিন্দু ধর্ম অনুসারে যাহাকে আমরা ঈশ্বর বলি, তিনি নিজের একাকীত্ব দূর করতে মায়া সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিজেকে "আমি বহু হব" এই কামনা প্রকাশ করে বহু হয়েছেন। এর অর্থ তিনি এক থেকে বহু হয়েছেন। (দেখুন তৈত্তিরীয় উপনিষদ ২-৬ সোহকয়াময়ত-বহু স্যাং প্রজায়েয়তি।-অর্থাৎ সেই পরমাত্মা “আমি বহু হব” এরূপ সংকল্প দ্বারা নিজেই নিজেকে ব্যাক্ত করলেন এবং নিজেই সমগ্র সৃষ্টিতে প্রবেশ করলেন।
তিনি বহু হয়েও একই থেকেছেন (ওঁ পূর্নমাদ পূর্নমিদম) সেই বহুর মধ্য আমিও আছি, আপনিও আছেন। [তৈত্তিরীয় উপনিষদ ৩-১০-৬] "এই চরাচর জগতের সমস্ত কিছুর নাম উল্লেখ করে বললেন সকলই আমি (ব্রহ্ম)। আমিই পরমেশ্বর রূপে সমস্ত জগৎ শাসন করি। আমার জ্যোতিঃসমূহ নিত্য প্রকাশমান।'
তিনিই আমি, তিনিই তুমি। তিনিই একমাত্র আছেন আর তিনি ছাড়া জগতে কিঞ্চিৎ মাত্র নেই। দাঁড়ান আমি কি নিজেকে তাঁর সঙ্গে এক করছি? আমি কি নিজেকে এবং আপনাকে ঈশ্বর বলে ভাবতে বলছি? $ads={1}
এই একই কথা ২০০০ বছর আগে যীশু বলেছিলো। তার জন্য তাকে ইহুদিরা ক্রস বিদ্ধ করে হত্যা করেছিল। তিনি বলেছিলেন "যে আমাকে দেখেছে সে পিতা কে দেখেছে।" যা আমি আপনাদের বলছি,আমাদের উপনিষদ বলছে। যীশুও একই কথা বলেছিলো।
মানুষ এই দেহকে আমি ভাবে। আমি তো দেহ নই। দেহ আমার। যেমন এই কাপড় আমার , মন আমার , চেতনা আমার, আমি কে ? তোমার মধ্যে সেই "আমিই ব্রহ্ম"। যিনি তোমার চোখ দিয়ে জগৎকে দেখছে, আর জগতের সকলের চোখ দিয়ে তোমাকে দেখছে। তুমি নিজেকে দেখছোনা বলেই তোমার কাছে জগৎ সত্য মনে হচ্ছে।
অর্থাৎ ঈশ্বর আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন? এর উত্তর হলো নিজের স্বরূপকে দ্রষ্টা , ভোক্তা রূপে আনন্দ ভোগ করতে। তাই তিনি সচ্ছিদানন্দ। অৰ্থাৎ সত্য চেতনাময় ও আনন্দ স্বরূপ।
এই প্রশ্ন যদি ইহুদি, খৃষ্টাণ, ও মুসলিমদের করা হয়
আল্লাহ, গড, আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন?
এর জবাব মুসলিম দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এরকম, আল্লাহ আমাদের তাঁর ইবাদত করার জন্য, তাঁর সেবা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের জন্ম ও মৃত্যুর মধ্যে শ্রেষ্টত্ব পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন ( কোরআন 67/2)। এই জীবন পরকালের জীবনের পরীক্ষা। আখেতারের পর আপনি জান্নাত যাবেন না জাহান্নামে যাবেন, সেটাই পরিক্ষা করতেই তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন।
বাইবেল বলছে ঈশ্বর নিজের আনন্দের জন্য আমাদের তাঁর নিজ স্বরূপে সৃষ্টি করেছেন (আদি পুস্তক 1:26-27)। সৃষ্টির পর তিনি বলেছেন "এটি ভালো হয়েছে" এই জন্ম ঈশ্বরের দাসত্ত্ব করার জন্য নয়। তিনি তো নিজের স্বরূপে আমাদের বানিয়েছে (আদিপুস্তক 1:26-27) । যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন (যোহন 15:14) "আমি তোমাদের যা যা আদেশ করছি তোমরা যদি তা পালন কর তাহলে তোমরা আমার বন্ধু৷ আমি তোমাদের আর দাস বলছি না, কারণ মনিব কি করে, দাস তা জানে না৷ কিন্তু আমি তোমাদের বন্ধু বলছি, কারণ আমি পিতার কাছ থেকে যা যা শুনেছি সে সবই তোমাদের জানিয়েছি৷"
বাইবেল বলছে মানুষ ঈশ্বরের দাস নয়। কিন্তু বেশির ভাগ খৃস্টানরা সেটা গ্রহণ করে না। সেই সত্যকে যদি তারা গ্রহণ করে তারা বেদান্তকে গ্রহণ করে।
তাই, বেদান্তের ঈশ্বর যীশু ঈস্বর। যীশু সেই ঈশ্বরের কাছে যা শুনেছেন সেটাই তিনি বলতেন, (যোহন 5:30 )। ঈশ্বর যীশুকে দিয়ে বলাতেন, তিনি নিজে কিছুই বলতেন না। একজন সাধারণ মানুষ যিনি যীশুর কথায় বিশ্বাস করে সে ঈশ্বরকে জানতে পারে এবং তারা যীশুর থেকেও বড় কাজ করবে। (যোহন ১৪:১১,১২)
যীশু বলেছেন স্বর্গ রাজ্য তোমার ভেতরে,মথি ১৯ অধ্যায়ের ১৪ নম্বর আয়াতে বলছেন, "শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও, বারণ করিও না; কেননা স্বর্গ-রাজ্য এই মত লোকদেরই।" যোহন ৩ অধ্যায়ের ৫ নম্বর আয়াতে বলছেন "সত্য সত্য, আমি তোমাকে বলিতেছি, যদি কেহ জল এবং আত্মা হইতে না জন্মে, তবে সে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে পারে না।"
কিন্তু তারা বিচারের দিনের জন্য বসে আছে যখন আকাশ থেকে স্বর্গ নেমে আসবে এই কল্পনা করে। আমি জেনেছি মৃত্যুই আখেরাত, মৃত্যুই বিচারের শেষ দিন। পুনর্জন্ম না হলে কেউ মুক্ত হয় না। যোহন ৩ অধ্যায়ের ৫ নম্বর আয়াতে যীশু বলছেন। "সত্য সত্য, আমি তোমাকে বলিতেছি, "নূতন জন্ম না হইলে কেহ ঈশ্বরের রাজ্য দেখিতে পায় না।" কিন্তু তারা আখেরাতের দিনকে বিশ্বাস করে।
আখেরাতেই সব শেষ
আমাদের হিন্দুদের মধ্যে, আখেরাত বলে কিছু নেই। মৃত্যুর পর জীবাত্মা নিজের ভালো মন্দ কর্মের ফল ভোগ করে। পুনঃ পুনঃ জন্ম নেয় ও সুখ দুঃখ ভোগ করে এবং এই পুনঃজন্ম দ্বারা সে ঈশ্বরকে জানতে পারে। আজকে যে নাস্তিক ঈশ্বর বিশ্বাস করে না। পুনঃজন্মের মধ্য দিয়ে সে কোন এক জন্মে আস্তিক হয়ে জন্মাবে। এবং সেও জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। ঈশ্বরের অনন্ত জীবন সে নিজেই লাভ করবে।
আবার যিনি আস্তিক, ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে, ধর্ম আচরণ করে, আবার খারাপ কাজ করে। সেই আস্তিক ব্যক্তিও নরক ও স্বর্গ ভোগ করে। ঈশ্বর নিজের সৃষ্ট মানুষের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব করে না। তবে, যে মানুষ ঈশ্বরকে যথাযথ জেনে যায়, ইশ্বর ব্যতীত অন্য কিছুই আশা করে না। সেই ব্যক্তি এই জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হয়ে যায়।
পুনর্জন্ম
মানুষকে বারবার জন্ম নিতে হয়। কারণ, মানুষ এক জীবনে সব কিছু জানতে বা বুঝতে পারে না। এমন মানুষও আছে যারা হাবা-গোবা বোকা হয়ে জন্মায়। এমন দেশ আছে যেখানে মানুষের মধ্যে কোরআন, বাইবেল, গীতা সম্পর্কে কোনো ধারনাই নেই। আবার যারা কোরআন, বাইবেল, গীতা জেনেও ভুল ভাবে তার অনুসরণ করে, ওরা সকলেই কি জাহান্নামে যাবে? ওদের কি মুক্তি হবে না? বিচার করে দেখুন। এমন ঈশ্বর যিনি দয়ালু , কৃপালি পরম করুণাময়। তাঁর বিধান কি এমন হতে পারে ? পুনর্জন্ম না হলে কেউ মুক্ত হয় না।
সকলেই নিজের ধর্ম , নিজের বিশ্বাসকে শ্রেষ্ট মনে করে। এই সকলের সত্য একটাই হওয়া উচিত। নিরীহ মানুষ যদি নরক, জাহান্নামে যায়। তবে কি সেটা ন্যায় হবে? $ads={2}
আমি কিছু প্রমাণ দেখাবো যা আপনি বিশ্বাস করুন বা না করুন, সনাতন ধর্মই যে সত্য তা সত্যই থাকবে। Tetra-Gemmoid এর নাম শুনেছেন কখনো ? এটি হলো ঈশ্বরের হিব্রু নাম। יהוה (YHWH or YHVH) প্রধান কোণস্থ প্রস্তর। সেন্ট পল লিখেছেন :
অতএব তোমরা আর অসমপর্কীয় ও প্রবাসী নহ, কিন্তু পবিত্রগণের সহপ্রজা এবং ঈশ্বরের বাড়ির লোক। তোমাদিগকে প্রেরিত ও ভাববাদিগণের ভিত্তিমূলের উপরে গাঁথিয়া তোলা হইয়াছে; তাহার প্রধান কোণস্থ প্রস্তর স্বয়ং খ্রীষ্ট যীশু।
ইফিষীয় ২:১৯-২০
তাঁহাতেই প্রত্যেক গাঁথনি সুসংলগ্ন হইয়া প্রভুতে পবিত্র মন্দির হইবার জন্য বৃদ্ধি পাইতেছে; তাঁহাতে আত্মাতে ঈশ্বরের আবাস হইবার নিমিত্ত তোমাদিগকেও এক সঙ্গে গাঁথিয়া তোলা হইতেছে।
সেন্ট পল প্রথম জীবনে একজন খ্রীষ্ট বিদ্বেষী ছিলেন। তিনি খ্রীষ্টের অনুসারীদের ওপর অত্যাচার করেছিলেন। একদিন তাঁর জিবনে একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে, যায় ফলে তিনি যীশুর ভক্ত হয়ে যান। মূলত, রোমান ক্যাথলিক চার্চ তাঁরই হাত ধরে শুরু হয়।
সেন্ট পলের এই প্রধান কোনস্থ প্রস্থরের ধারণাটি হিব্রু অক্ষর ‘গ্যামা’ দিয়ে প্রকাশ করা হয়। ইহুদি ঈশ্বর যার হিব্রু নাম יהוה (YHWH or YHVH) এটি সেই থেকে এসেছে যা প্রতীক স্বরূপ স্বস্থিকের মতো দেখতে এই ক্রস হুক ক্রস চিত্রে দেখানো হয়েছে। এই হুক ক্রস আপনি ইহুদি হন্তা হিটলারের পতাকায় দেখতে পাবেন। যিনি নিজেকে আর্য জাতি বলতেন। ল্যাম্বাক আব্বি মনিষ্ট্রির সেন্ট পলের মূর্তির ওপরে দেখতে পাবেন।
আর্যদের স্বস্থিকের মতো দেখতে, যীশুর ক্রস। সেই ক্রসের নিচে ইহুদিদের হত্যা করার পর যে নিন্দা ও অপমান হলো। সেটাও জুটলো হিন্দুদের কপালে।
সেই সূত্র ধরে ও সুযোগ বুঝে তৈরী হোলো, আর্য ও দ্রাবিড় তত্ত্ব এবং Aryan Invention Theory । আর্যরা বহিরাগত এই মিথ্যা অপবাদ চাপানো হলো আমাদের ওপর।
আজও সবাই সেই হুক ক্রসকে স্বস্থিক বলে জানে। আজ তার ইতিহাস আমি আপনাদের বললাম। হিটলার স্বস্তিক নয়, বরং খ্রীষ্টান ধর্মের প্রতীক ক্রসের তলায় ইহুদি হত্যা করেছে।
Very informative and detailed.
উত্তরমুছুন