আমরা হিন্দু, হিন্দু এবং হিন্দুত্ববাদ এই শব্দ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কেউ বলে হিন্দু শব্দটি বিদেশীদের দেওয়া অপমানজনক নাম। কেউ বলে এটি ‘সিন্ধু’-র অপভ্রংশ। এই নিয়ে আমরা আগেও একটি পোস্ট আর্টিকেল প্রকাশ করেছি। হিন্দু ধর্মের উল্লেখ বেদে কোথায় আছে? — শীর্ষক পোস্ট দেখুন। সেখানে আমরা প্রমাণ সহ এই বিষয়ে আলোচনা করেছি।
‘হিন্দু’— এই শব্দ নিয়ে কারো সমস্যা থাকলে আপনি এভাবে ভাবতে পারেন, "জাতি হিসাবে ‘হিন্দু’ একটি ধর্মীয় ও সংস্কৃতিক পরিচয়। যারা এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বরের বহু সত্তা বিশ্বাস করে, যারা বর্ণ ও আশ্রম ভেদে কর্ত্তব্য পরায়ণ হন, অবতার বাদ, এবং পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে।
धार्मिका सांस्कृतिकपरिचयः राष्ट्रत्वेन 'हिन्दु' अस्ति।ये एकस्य एव ईश्वरस्य बहुलतां मन्यन्ते,ये वर्ण-आश्रमताम् परम्परा आचरन्ति,ये अवतारं कुर्वन्ति, पुनर्जन्मं च मन्यन्ते।स देव पूजक आर्य हिंदू अभिजायते
যে কোনো সংস্কৃতি হাজার হাজার বছর ধরে তৈরী হয়। এর সঙ্গে যুক্ত থাকে আবেগ ও কিছু সামাজিক শর্ত এবং ভৌগোলিক প্রাচুর্য্য। মুসলীম সমাজের সামাজিক শর্তগুলো হিন্দু সমাজে খাতে না। হিন্দু সমাজের শর্ত মুসলীম সমাজে খাতে না। তাই, যার যার যেমন সাংস্কৃতিক আচার বিচার, সেটা তাঁদের জন্যই উপযুক্ত।
হিন্দুদের উপাসনার বিভিন্ন
হিন্দুরা বহু দেব দেবীর উপাসনা করে। তাঁদের উপাসনা পদ্ধতিতে আচমন, দেহ শুদ্ধি, আসন শুদ্ধি, সংকল্প, দেবতার আবাহন, প্রাণ প্রতিষ্ঠা, চক্ষুদান, নৈবেদ্য, পুষ্পাঞ্জলি, ধ্যান, আরতি ও বিভিন্ন উপাচার থাকে। সমগ্র জগতে বিদ্যমান ইশ্বরকে আবাহন করে মূর্তি বা ঘটে দেবতা রূপে প্রতিষ্টিত করে তাঁর পূজা করা হয়। তাই, বাজারে বিক্রি হওয়া সকল ছবি বা মুর্তি গুলো ইশ্বর নয়।
দুই হাত ও পা ধুয়ে, ডান হাতে সামান্য জল ধারন করে জিথা ও মন্ত্র অনুযায়ী ব্রহ্মতীর্থ (বুড়ো আঙ্গুল ও কব্জির মধ্য ভাগ) বা দেবতীর্থ (সমস্ত আঙ্গুলের অগ্রভাগ) দ্বারা ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু বলে যথাক্রমে শোষন বা ছিটে দিয়ে তিনবার জল পান করে। একে আচমন বলে। এরপর হাত ধুয়ে ডান হাতের বাঁকানো বুড়ো আঙ্গুলের গোড়ার সাহায্যে জল দিয়ে দুই বার নিজের ঠোঁট ধোয়া হয়। একে মুখ মার্জন বলে।
এরপর, অঙ্গন্যাস ও করন্যাস করে দেহের বিভিন্ন যায়গায় স্পর্শ করা হয়। এর দ্বারা দেহ নামক যন্ত্রকে উক্ত ঘট-পট বা মুর্তিতে ইষ্ট আবাহন করার, বা মন্ত্র উচ্চারণ করার অধিকার দেওয়া হয়। তারপর, প্রণব মন্ত্র (ওঁ কার) সহযোগে ‘শান্তি’ বলে তিনবার মাথায় ও পায়ে জলের ছিটে দেওয়া হয় একে দেহ শুদ্ধি বলে।
শূদ্র এবং স্ত্রীদের যথাক্রমে প্রণব মন্ত্র (ওঁ কার) এবং 'স্বাহা স্বাধা’ উচ্চারণ করতে বারণ করা হয়েছে। কারণ, শূদ্রের পৈতে বা যজ্ঞ সূত্র থাকে না। উভয়ই প্রণব মন্ত্র উচ্চারণ না করে, কেবল মন্ত্র উচ্চারণ করে পুরোহিতের অনুকরণ করবে। অথবা প্রনবের জায়গায় ‘নমঃ’ বলবে।
এর কারণ হলো: শূদ্রদের পূর্ব পুরুষরা বেদ অধ্যয়ন ত্যাগ করে জীবিকার জন্য অন্যান্য শ্রম কে গ্রহন করেছে। তাই, বেদ মন্ত্রের উচ্চারণ যাতে ভুল না হয়। তাই এই অধিকার ভেদাভেদ। স্ত্রী-দের উপনয়ন হয় না। কারণ উপনয়ন অনুষ্ঠানে ল্যাঙট পড়তে হয়। উপনয়ন না হাওয়ার কারনে প্রণব মন্ত্রে স্ত্রী গণের অধিকার নেই।
মন্ত্র ছাড়াও যে কেউ নিজে নিজেই পূজা করতে পারে। একে পাক যজ্ঞ বলা হয়েছে। স্ত্রী তাঁর পরিবারে জন্য রোজ যে খাবার পাক করে, সেটিও একটি যজ্ঞ। স্বামী, পুত্র, শ্বশুর, ভাসুর, সকলেই ইশ্বরের অংশ। তাই তাঁদের সেবা দ্বারা পুষ্ট করাও এক প্রকার যজ্ঞ।
বিচার করে দেখুন। গাছের ফুল, ফল, জল, মাটি সব কিছুই তো ঈশ্বরের দান। তাঁর দান করা জিনিস দিয়ে তাঁকেই পূজা করছি একেই বলে— "গঙ্গা জলে গঙ্গা পূজা"। এসবের কোনো মহত্ব আছে কি?
পূজার মহত্ব কি?
ভিন্ন ভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধর্মের ভিন্ন ভিন্ন নিয়মে ইশ্বর আরাধনার প্রথা আছে। হিন্দুরা পূজার আগে আচমন, দেহ শুদ্ধি করে, মুসলিম, ইহুদীরা নামাজের আগে ‘ওয়া়জু়’ করে। খ্রিষ্টানদের মধ্যেও প্রার্থনা করার আগে হাত পা ধুয়ে পবিত্র হাওয়ার প্রচলণ আছে।
পার্থক্য শুধু এটাই, হিন্দুরা আচমন, দেহ শুদ্ধি, আসন শুদ্ধি, সংকল্প, দেবতার আবাহন, প্রাণ প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বিষয়ে অজ্ঞ। কারণ গুরুকুল বা আচার্য শিক্ষা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি বিশেষ জাতির কাছেই সীমাবদ্ধ হয়ে থেকে গেছে। এর ফলেই জাতিগত, প্রথাগত ভেদাভেদ তৈরী হয়েছে। এর ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের নিজের ধর্মীয় নিষ্ঠা কমে গেছে।
পূজা কথার অর্থ হলো, ইষ্ট দেবকে নিজের মধ্যে পুনঃ পুনঃ জাগরণ করা। পূজার দ্বারা খুব সুক্ষ্ম স্তরে, পঞ্চ ভূতের শুদ্ধি দ্বারা যোগ সাধনা হয়।
পূজার সময় ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের অনুভব হয়। তিনি আমার সামনে হাজির হয়েছেন, এই প্রসাদ গ্রহন করছেন, তিনি আমাদের আশির্বাদ করছেন। এই ধারনা গুলো মনের মধ্যে ইশ্বরের প্রতি বিশ্বাস কে দৃঢ়তা প্রদান করে।
স্বামী, পুত্র, শ্বশুর, ভাসুর, সকলের মধ্যে ইশ্বর আছে। সকলের মধ্যে তিনি আছে। তিনিই স্বামী, পুত্র, শ্বশুর, ভাসুর রূপে লীলা করছেন। এই ভাব মনে ধারন করলে পারিবারিক ঝামেলা বা কলহ দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
স্ত্রী কিংবা শূদ্র বেদ মন্ত্র উচ্চারণ করলে কি পাপ হবে?
তারপর ব্রাহ্মণ সম্পর্কে ব্রহ্মা বলেছেন :
ব্রাহ্মনের সমতুল্য বন্ধু নেই, ব্রাহ্মণ ছাড়া গতি বা উপায় নেই। ব্রাহ্মণের মতো ত্রিলোক চরাচরে কিছুই নেই। এই যজ্ঞসূত্র জনার্দন (বিষ্ণুকে) নিবেদন করলে সমগ্র জগত ব্রহ্মময় হয়ে যায় এতে সংশয় নেই।
পত্রিসংহিতায় বলা হয়েছে—
জন্মনা ব্রাহ্মনো জ্ঞেয়ঃ সংস্কারৈদ্বিজ উচ্চতে।
এই সকল বিশ্লেষণ মুলক তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে The Hindu Hun Network ওয়েবসাইট তৈরী করেছি। আপনিও এই প্রচেষ্টাকে দ্রুত ও প্রচারের জন্য সাহায্য করতে পারেন।
0 Comments: