হিন্দুদের দেবতার পরস্পরের মধ্যে কোনো শ্রেষ্টত্বের দাবীদার নেই।
হিন্দু ধর্ম একেশ্বরবাদ বিশ্বাস করে ঠিকই কিন্তু হিন্দুরা বহু দেবতার পূজা করে। এই দেবতা পূজার বিধান বেদের মন্ত্রেই করা হয়। হিন্দুদের ধর্ম গ্রন্থ বেদ। ইঞ্জিল, কোরআন নয়। তাই, যার যার যেমন বিধান, তাঁর তাঁর সেই পথেই চলা উচিত।
হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান তিন দেবতা হলেন ব্রহ্মা-বিষ্ণু এবং মহেশ্বর। ব্রহ্মা হলেন সৃষ্টিকর্তা, বিষ্ণু হলেন পালনকর্তা, এবং মহেশ্বর হলেন লয়কর্তা। এই তিন দেবতাকে দেবতা বলা হলেও এনারা ইশ্বর পদ প্রাপ্ত। কিন্তু এই দেবতাদের পদ মর্যাদা নিয়ে পরস্পরের মধ্যে কি কোনো শ্রেষ্টত্বের দাবীদার নেই ?
শক্তি রূপেণ সংস্থিতা :
ব্রহ্মা দেবের শক্তি হলেন বেদ মাতা সরস্বতী, সৃষ্টির জন্য জ্ঞানের প্রয়োজন। তাই বেদ বা জ্ঞানের দেবী সরস্বতী ব্রহ্মার স্ত্রী। শ্রী হরি বিষ্ণুর শক্তি হলেন সমৃদ্ধির দেবী মা লক্ষ্মী। যেহেতু জগত পালন করতে সম্পদ প্রয়োজন তাই সমৃদ্ধির দেবী মা লক্ষ্মী জগত পাকলের স্ত্রী এবং মহেশ্বরের শক্তি হলেন, মহামায়া আদ্য শক্তি। শাস্ত্রের বিচারে এই তিন দেবতা ভিন্ন ভিন্ন হলেও অভিন্ন।
শক্তির ভিন্নতার কারণেই এক এবং অদ্বিতীয় সত্তার ভিন্ন রূপ প্রকট হয়েছে। এই ভিন্ন ভিন্ন রূপকে দেবতা বলা হয়েছে। তাই, ত্রি-দেব এই নামকরণ।
ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর কার ধ্যান করেন ?
ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর প্রধান দেবতা। তাই, জানা দরকার ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর কার ধ্যান করেন। সৃজন কর্তা ব্রহ্মা শ্রী বিষ্ণুর দ্বাপরের শ্রীকৃষ্ণ অবতারের ধ্যান করেন। পালনকর্তা বিষ্ণু মহেশ্বরের সদাশিব রূপের ধ্যান করেন। এবং লয়কর্তা মহেশ্বর শ্রী বিষ্ণুর দশরথ নন্দন শ্রী রাম অবতারের ধ্যান করেন। অর্থাৎ হিন্দুদের প্রধান তিন দেবতার পরস্পরের মধ্যে শ্রেষ্টত্বের দ্বন্ধ নেই বরং সমর্পণের ভাব আছে।
এই তিন দেবতা ছাড়াও ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নী, মরুত, আর্যমা ইত্যাদি দেবতাদের উল্লেখ্য বেদ মন্ত্রে পাওয়া যায়। ইন্দ্রপদ হল স্বর্গের দেবতাদের রাজার পদ। প্রতি কল্পে ইন্দ্র পরিবর্তন হয়। প্রথম কল্পে ইন্দ্র পদে নিয়োগ ছিলেন 'যজ্ঞ'। শ্রী হরি বিষ্ণুর অবতার ছিলেন এই যজ্ঞ। এই যজ্ঞই বাসুদেব পদ লাভ করে।
পদ মর্যাদা :
পরব্রহ্ম পদ
- বসুদেব পদ
- ব্রহ্মা পদ
- ইন্দ্র পদ
- প্রজাপতি (বা মনু) পদ
- ছত্রপতি পদ
- চক্রবর্তী পদ
- সম্রাট পদ
- মহারাজা পদ
- রাজা পদ
- জমিদার পদ
- জোতদার বা নৃপতি পদ
- তহশিলদার পদ
- প্রধান পদ
- গ্রামীণ পদ
- গৃহস্বামী পদ
সময়ের সাথে সাথে প্রজাপতি ও ইন্দ্র পদ বিলুপ্ত হয়ে যায়। ছত্রপতি থেকে তহশিলদার সব পদও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গনতন্ত্র আসার পর রাষ্ট্রপতি, প্রধান মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, বিচারপতি, এভাবে শাসন তন্ত্রের অধিকারী হয়েছে। এই পদ গুলো জন প্রতিনিধির দ্বারা পরিবর্তন হয়।
পরিশিষ্ট
অতএব, দেখলাম আমরা সকলেই কোনো না কোনো পদেই আছি। যে পদের যেই মর্যাদা সেই পদকে সন্মান করলেই সন্মান ও সুখ বজায় থাকে। তাই দেবতাদের পদ নির্দিষ্ট পরস্পরের মধ্যে কোনো শ্রেষ্টত্বের দাবীদার নেই। আজ যিনি ইন্দ্র পদে আছেন অতীতে অন্য কীয় ছিলো। ভবিষ্যতে আবার অন্য কোনো পুণ্যাত্মা তার জায়গা নেবে। এভাবেই একটি কাজ করে।
0 Comments: