লজিক্যাল ফ্যালাসির জ্ঞান দিতে গিয়ে নিজেই ফ্যালাসি করে বসেছেন
এর আগে, আমরা তর্ক, বিতর্ক এবং কুতর্ক নিয়ে একটি আলোচনা করেছিলাম। (লিংক)। সেখানে উল্লেখ করেছিলাম কিছু কুতর্ক এবং বিতর্ক বিষয়ে। আজকের এই আর্টিকেলটি সেইরকমই একটি মজাদার বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। নিচের চিত্রটি ভালো মতন দেখুন। চক্রাকার কুযুক্তির প্রমাণ দেখাতে গিয়ে (প্রফেসর) ডক্টর মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম এই দুটি প্রশ্ন করেছেন এবং সঙ্গে সুন্দরভাবে দুটি কুযুক্তিও দেখিয়েছেন।
হিন্দু ধর্মের বই বেদ সত্য তার প্রমাণ কি? ভগবান যে সত্য তার প্রমাণ কি?
এর উত্তরে প্রফেসর ডক্টর মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম লিখেছেন "বেদ সত্য কারণ ভগবান বলেছেন বেদে সত্য।" "ভগবান সত্য কারণ বেদে লেখা আছে ভগবান সত্য।"
আদৌ কি এই ধরনের কথা বেদে লেখা আছে? এই ধরনের মন্তব্য বেদে কোথাও নেই। বেদ বলছে অন্য কথা।
প্রথমতঃ, এ ধরনের কথা আমরা নাস্তিক ও ইসলামিক debate এ শুনতে পাই। কারণ মুসলিমদের নিয়ে দিয়ে একটি মাত্র ধর্মগ্রন্থ। তার নাম আল কুরআন। এই কোরআন -কেই কেন্দ্র করে তাদের ধার্মিক বিশ্বাস। এর বাইরে কোন কথাই তারা বিশ্বাস করে না। হিন্দুদের ক্ষেত্রে সেরকম নয়। বেদ ছাড়াও উপনিষদ, পুরাণ, যোগশাস্ত্র, সেই শাস্ত্রগুলোর উপরে বিভিন্ন পন্ডিতদের টিকা টিপ্পনী আছে। $ads={1}
আগ্রার তাজমহল আগ্রাতে গিয়েই দেখতে পাবেন
পতঞ্জলির যোগ শাস্ত্র প্রত্যক্ষভাবে আমাদের ঈশ্বর প্রাপ্তির রাস্তা বলে দেয়। সেখানে কোন কিন্তু-পরুন্ত নেই। কোন দিকে যেতে হবে, কোন দিকে যেতে নেই, সবকিছুই বলে দেওয়া হয়েছে। আগ্রায় যে তাজমহল আছে, সেই তাজমহল কলকাতায় খুঁজলে পাওয়া যাবে না। আগ্রাতে যদি সত্যিই তাজমহল থাকে সেটা আগ্রাতে গিয়েই দেখা মিলবে। ঘরে বসে নেই নেই বললেই হবে না। রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে সেটা ধরে চলতে থাকুন। না পেলে না হয় বলবেন বেদ মিথ্যা।
স্বভাব নিয়ে কেউ প্রশ্ন করে না
দ্বিতীয়তঃ এ প্রশ্নটাই হাস্যকর। বেদ সত্য এর প্রমাণ কি? সস্তা গঞ্জিকা সেবন করিলে এই ধরণের প্রশ্ন মাথায় আসে। সত্য বা মিথ্যা — উভয়ের প্রমাণ হলো প্রত্যক্ষ এবং স্বভাব নিয়ে কেউ প্রশ্ন করে না। চন্দনে সুগন্ধ আছে এটিই তার স্বভাব। সুস্থতাই মানুষের কাম্য। তাই চন্দনে কেন দুর্গন্ধ?, আপনি কেন সুস্থ ? এরকম প্রশ্ন হয় না। এটা অতি হাস্যকর। $ads={2}
বেদ ও বেদান্তের কোথায় ঈশ্বর ভেদ হীন। সগত, সজাত এবং বিজাতীয় ভেদ হীন ঈশ্বরকে কেউ ব্যাখ্যাই করতে পারে না। সমুদ্র থেকে এক ঘটি জল তুলে সেটা আবার সমুদ্রে ফেলে দিলে ঘটির জল যেমন সমুদ্রের জলে মিলে যায়। ঘটির জল বলে কিছু থাকেনা। ঈশ্বর এবং জীব সেই ভাবেই সগত, সজাত এবং বিজাতীয় ভেদ হীন (বিস্তারিত আলোচনা)
পরিশিষ্ট:
অতএব দেখলাম, মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম কুযুক্তির উদাহরণ বোঝাতে গিয়ে নিজেই কতগুলো কুযুক্তি দিয়ে ফেলেছেন। এই ধরনের কুযুক্তিকে বলা হয় - প্রশ্নের কুযুক্তি । যেটি তার বইয়ের শেষতম উদাহরণটির একটি।যে প্রশ্নটা করা হচ্ছে, সেই প্রশ্নটাই ভিত্তিহীন এবং স্বনির্ধারিত। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে উত্তর দাতা এ ধরনেরই উত্তর দেবে।
0 Comments: