শিখ পন্থ ভারতের একটি মহান ঐতিহ্যবাহী একটি পন্থ, ইহা একুশ শতকের প্রারম্ভে গুরু নানক দ্বারা প্রতিষ্টিত হয়। বৈদিক ধর্মের কিছু কিছু দিশাহীন কর্মকান্ড ও কু সংস্কার থেকে আলাদা হয়ে শিখ পন্থ ভারতের সনাতন হিন্দু ধর্মকে সমৃদ্ধ করেছে।
শিখ পন্থের প্রথম দশ জনগুরু হিন্দু ছিলেন। তাই নিঃসন্দেহে এটা হিন্দু ধর্ম সম্প্রদায়েরই একটি অংশ। কে বড় কে ছোটো, সেই বিবেচনায় যাচ্ছি না। তবে, গুরু নানক যে একজন দেব তুল্য গুরু ছিলেন সেই বিষয় কোনো সন্দেহ নেই।
গুরু গ্রন্থ সাহেব শিখ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ। একটি পবিত্র গ্রন্থ হিসাবে, শিখ পন্থকে দিশা দিয়েছে। গুরু গ্রন্থ সাহিব এর প্রধান অংশে দশ শিখ গুরু যা বলেছেন এবং লিখেছেন সেটাই শিখ সম্প্রদায়ের গুরুবানী হিসেবে মেনে চলা হয়।
সেই সময়ে অত্যাচারী মুঘল এবং আফগান সেনাদের বিরুদ্ধে শিখ ধর্মগুরুরা লড়াই করে আত্ম বলিদান দিয়েছেন। গুরু নানক ছাড়াও সেই সময় অনেক হিন্দু সাধু ও গুরুর আবির্ভাব হয়ে ছিলো। তাদের মধ্যে মীরা, কবীর অন্যতম। এই সময় ভারতের এই স্বর্নময় সময়কে বামপন্থী বুদ্ধিজীবী ও ঐতিহাসিক ‘ভক্তি আন্দোলন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ধর্মের স্বরূপকে জানা মুশকিল নয়। যদি আপনি পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মের ভালো ভালো দিক গুলো খুজে দেখেন। আপনি ধর্মের আসল স্বরূপ জেনে যাবেন। সেই পবিত্র দৃষ্টি আপনার থাকতে হবে।
সে রকমই শিখ পন্থ আসলে সনাতন গুরু পরম্পরার স্বরূপকেই পুষ্ট করে। হিন্দু হিসেবে শিখ পন্থ কে আমরা আলাদা করে দেখি না। কিন্তু। ইদানিং শিখ ও হিন্দুদের মধ্যে, বুদ্ধ ও হিন্দুদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজনের প্রয়াস চালানো হচ্ছে।
খালিষ্ঠান
খলিস্থান নামক একটি ছদ্ম শিখ অর্গানাইজেশন শিখ সমপ্রদায়ের মনে হিন্দু বিদ্বেষ তৈরী করছে। তারা ভারতের পাঞ্জাবকে আলাদা খালসা দেশ হিসেবে দেখতে চায়। অথচ পাকিস্থানের পাঞ্জাবের যে অংশ আছে। সেটি নিয়ে তাঁদের কোনো আন্দোলন নেই।
ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে যিনি হত্যা করেছিল সেই শিখ বইগার্ড এই খলিস্থান অর্গানাইজেশনের সংগে জড়িত।
স্পষ্টতই ধর্ম তাদের মূল এজেন্ডা নয়। এই খালিস্তান একটি পাকিস্তানী সংগঠন। যারা হিন্দু শিখ বিবাদের মাধ্যমে ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চল অধিগ্রহন করতে চায়। এই খালিস্থানি নেতা হর্দীপ সিং নীজ্জারের ISIS সম্পর্ক খুঁজে পাওয়ার পর ভারত সরকার তাদেরকে বিচ্ছিন্নতাবাদী টেরোরিস্ট হিসেবে ব্যান করেছে। ভারত আমেরিকা সহ বিভিন্ন মিত্র দেশে এদের ব্যান করা হয়েছে। আমাদের দেশের কিছু কিছু বামপন্থী বুদ্ধিজীবী এই খালিস্থানকে। সমর্থন করলেও সাধারণ মানুষ নিজের ভালো মন্দ বোঝে।
হিন্দু ও শিখ সমপ্রদায়ের সম্পর্ক
তাই হিন্দু ও শিখ সমপ্রদায়ের পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্পর্ক ঠিক রাখার একান্ত জরুরী। এরকম বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। ভালো মন্দ বিচার করার ক্ষেত্রে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ধর্ম ও ইশ্বর নিয়ে অপমানজনক উস্কানি ও আচরণ এগুলোই বিচ্ছেদের কারণ।
যেহেতু শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই কখনো শেষ হবে না, সেহেতু এ ক্ষেত্রে নিজের গৌরব কে কখনো জাহির করতে নেই। কার ধর্ম বড় সেটা বড় কথা নয়। কে সঠিক, কে বেঠিক সেটাও বড় কথা নয়। কারণ, সব কর্মই দোষ যুক্ত। এই কলিযুগে সংঘ শক্তিই যথেষ্ট। শিখ পন্থ আমাদেরই, তাই আমরা যেন তাদের গুরু ও গ্রন্থের অবমাননা না করি। তারা আমাদের ওপর অনেক আক্ষেপ দিতে পারে, কিন্তু সেটাও তাদের অজ্ঞতা মনে করে তাদের ক্ষমা করা উচিত। তাদের সাথে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে আমাদের চলতে হবে।
আমাদের গোড়া এক, ধর্মের ভিত্তি এক শুধু পথ আলাদা। হিন্দু পন্থ এবং শিখ পন্থ আলাদা আলাদা পথে একই গন্তব্যে পৌঁছায় গুরু কৃপা ছাড়া কেউ এক পাও এগোতে পারে না।
এক আউমকার
গুরুমুখী ভাষায় গুরুবানি বলে:
এক আউম্ কার, সত নাম, কর্তপুরখ ।
নির্মোহ নির্বইর আকাল মুরত
অযোনি সবাম গুরু প্রসাদ জপ আদ সচ জুগাদ সচ হ্যায় ভি সাচ নানক হোসে ভি সাচ সোচে সোচ না হো ওয়াই
জো সুচি লাখ ওয়ার ছুপে ছুপ না হাওয়াই
জে লাই হার লাখতার উখিয়া পুখ না উতরি
জে বান্না পুরিয়া পার সহ স্যাঁপা লাখ ওহ হ্যায়
তা এক না চলে নাল কে ভে সাচ ইয়ারা হোই
অ্যাই কে ভে কুদে টুট্টে পাল
এক ওঙ্কার সত্য নাম, যিনি জগতের কর্তা, অথচ তিনি মোহ এবং ভেদাভেদ হীন, কলাতীত। তিনি অজন্মা, মায়াতীত, গুরু জপ, কৃপার ও প্রসাদ দ্বারা তিনি প্রাপ্ত হন।....
এই একই কথা অদ্বৈত দর্শন বলে। ইশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়, তিনি ভেদ ও মোহ হীন, তিনি কালের অতীত। আজন্ম এবং মায়াতীত।
কারামাত
কথিত আছে, একবার গুরু নানক কিছু ব্রহ্মন কে সূর্য জল অর্ঘ্য দিতে দেখেছিলেন। তিনি ব্রহ্মনদের এই নির্বুদ্ধতাকে মশকরা করে নিজের ক্ষেতের ফসলে জল সেচন করে ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তোমরা যদি এখান থেকে সূর্যে জল পাঠাতে পার, তবে আমিও আমার জমিতে জল সেচন করতে পারি। হিন্দু ধর্মের এরকম অনেক কুসংস্কার কে তিনি বিরোধ করতেন।
এরকমই একটি কারামাত ছিলো মক্কার কাবার দিক বদলে দেওয়া। একবার গুরু নানক বিশ্রাম করছিলেন। তিনি যেদিকে পা রেখছিলেন সেই দিকে পবিত্র কাবা ঘর ছিলো। সেখানকার এক মুসলমান মল্লা এতে আপত্তি করায় তিনি উল্টো দিকে ই পা রাখলেন। কাবা সেই দিকেই চলে গেল। এরপর তিনি যে দিকে পা রাখতেন, সেদিকেই কাবা থাকতো। অর্থাৎ মুসলিমরা যেই কাবার দিকে তাকিয়ে ইবাদত করেন, সেই কাবা গুরু নানকের পায়ের ইবাদত করে।
এই গল্প নিছকই একটি বানোয়াট ও মিথ্যা গল্প। কারণ, সূর্যকে জল অর্ঘ্য দেওয়া যদি মূর্খতা বা অন্ধ বিশ্বাস হয় তবে শিখদের অনেক নিয়ম আচরন এবং বিশ্বাসের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এগুলো মূলত কিছু কিছু লোকের মনগড়া গল্প। আগেই বলেছি, "শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই কখনো শেষ হবে না" আমাদের সত্য ও মিথ্যার বিচার না করে নিজের বিচার করতে হবে।
উপসংহার
হিন্দু সম্প্রদায়ের মত শিখ সম্প্রদায় পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে। স্বর্গ নরক ও দেবী দেবতার উপাসনা শিখ ধর্মেও প্রচলিত আছে। শিশুদের ধর্ম হিন্দুদের থেকে আলাদা নয়। গুরু পরম্পরা গত দিক থেকে তাদের মতবাদ এবং পথ আলাদা। তাই আমরা এটিকে ধর্ম না বলে বন্ধ বলে উল্লেখ করেছি। ইংরেজিতে এদেরকে Hinduism, Sikhism, Jainism, Buddhism, বলা হয়েছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ গ্রন্থাদিতে তাদের নিজেদের ধর্ম মতকে কখনো ধর্ম বলে উল্লেখ করা হয়নি। কর্তব্য কর্মকেই ধর্ম বলা হয়েছে।
সেজন্য শিখ সম্প্রদায়কে এবং তাদের ধর্মমতকে আমরা ‘পন্থ’ বা পথ—এই পদ দ্বারা চিহ্নিত করেছি। আশা করি আপনারা তাতে সম্মত হবেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করব। নিজেদের মতামত কমেন্ট সেকশনে লিখে জানান। ধন্যবাদ!
Presentation is not good. Be specific.
উত্তরমুছুনThanks for your kind regards
মুছুন