Headlines
Loading...

সতীদাহ প্রথা —এই শব্দের মধ্যে একটি ঔনিবেশিকতার শব্দের কারচুপি লুকানো আছে। শব্দটিকে বহু ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। কোথাও বলা হয়েছে স্বামীর সম্পত্তি থেকে স্ত্রীর অধিকার চ্যুত করতে সমাজের প্রথা, কথাও বলা হয়েছে বিধবা নারীরা নিজেকে স্বামী অনুরাগী প্রমাণ করতে এই সিদ্ধান্ত নিত, কোথাও বলা হয়েছে সমাজের অন্ধ বিশ্বাস কুসংস্কারের বলি হিসেব বিধবা নারীরা সতী হতো.... ইত্যাদি সব কারণ দেখিয়ে সবাই নিজের নিজের এজেন্ডা চালাচ্ছে।  কিন্তু সতীপ্রথা যে আদৌ ছিলো, সেই সাপেক্ষে কোনো শক্ত প্রমাণ প্রস্তুত করতে পারেনি। অমুক ঐতিহাসিক, অমুক পর্যটক, অমুক বিদেশী লিখেছে সেটাকে নিজের মাল মশলা মাখিয়ে পরিবেশন করা হয়েছে। তার খন্ডন করতে আমরা আজ নিম্ন লিখিত বিন্দুতে আলোচনা করবো।



পঞ্চ সতী

হিন্দু ধর্মে পাঁচ জন সতীর উল্লেখ রয়েছে। বলা হয় গোটা পৃথিবীতে এঁদের থেকে পবিত্র নারী আর কেউ নেই। এই পাঁচ নারী হলেন- অহল্যা, দ্রৌপদী, সীতা, তারা ও মন্দোদরী। 

যারা নিজের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব না দিয়ে অন্যের লেখা ইতিহাসের গুরুত্ব দেয়, তারা মানসিক দাসত্বের শিকার। যদি সতিপ্রথা বলে কিছু থেকেই থাকে, যদি এটি অন্ধবিশ্বাস কুসংস্কার-ই হয়, তবে সেই বিশ্বাস বা সংস্কারের উৎস কি ছিল? এমনি এমনি তো বিশ্বাস সংস্কার জন্ম হয় না। কোনো ব্যাক্তি বা নারী তাঁর স্বামীর প্রতি নিষ্ঠাবতী এমন নারীকে সতী বলা হয়। এটা তো তাঁর গুণ। স্বামীর প্রতি নিষ্ঠাহীন অথচ স্বামীর সঙ্গে চিতায় তুলে দেওয়া হলো বলেই সতী হয়ে গেল। এমন ঘটনা ভিত্তিহীন। কোনো প্রথা বা কু প্রথার পেছনে একটি যুক্তিযুক্ত কারণ থাকা দরকার।

যেমন খ্রিষ্টানদের ধারণা অনুযায়ী "পশুদের আত্মা থাকে না, ঈশ্বর কেবল মানুষকেই আত্মা দিয়েছেন"। তাই পৃথিবীর সকল উদ্ভিদ ও পশু মানুষের উপভোগের জন্য। তার ওপর ‘পবিত্র আত্মা’ কেবল খ্রিষ্টানদের কাছেই আছে। যারা পবিত্র আত্মা নেই, তার আত্মা বিচারের দিনে রক্ষা পাবে না। এই ধারণা থেকেই তারা ধর্মহীন বা অ-খ্রিষ্টানদের শয়তানের দাস বা পাপী, বলে মনে করতো। আবার যেহেতু ইশ্বর পূরুষের বুকের হার থেকে নারীকে সৃষ্টি করেছেন তাই নারী পূরুষের অধীন থাকবে। এই ধারনাও তাদের মধ্যে আছে। তাই নারীর পূজা বা সেবা করা পূরুষের কর্তব্য নয় —এটা তাদের প্রথার পেছনে একটি যুক্তিযুক্ত কারণ বা সংস্কার। 

আবার, মুসলিমরা মনে করে কাফের, মুনাফিক বা অমুসলিম সে যতই ভালো মানুষ হোক না কেন, জাহান্নামে সে যাবেই। তাই কাফের, মুনাফিক, বা অন্য দেবতার উপাসকদের সাথে বন্ধুত্ব করা উচিত নয়। ইহুদি বিশ্বাস ঘাতক, তারা শক্রু হোলো ইসলামের শত্রু। তাই বিশ্বাস ঘাতক বা মুনাফিকদের হত্যা করা পাপ নয়। এটা তাদের কাফেরদের জন্যে ঘৃণার একটি যুক্তিযুক্ত কারণ। 

"স্বামী মৃত্যু হলে স্ত্রীকে চিতায় উঠতে হবে বা স্বামীর মৃতুতে বিধবার দহন করা আবশ্যক।" —এমন কথা কোথাও লেখা আছে কি? অমুক ঐতিহাসিক অমুক বইয়ে লিখেছেন। অমুক অমুক ঘটনার উল্লেখ আছে। এগুলো ভিত্তিহীন দাবী।  কে কি লিখলো, কি পড়ে কি বুঝলো সেটাই হিন্দুদের ঘাড়ে চিপকে দেওয়া হলো। 

সতী শব্দটি বিভিন্ন শাস্ত্রে "সতী নারী" হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। বহু হিন্দি ও সংস্কৃত গ্রন্থে যে সতী নারীর চিত্র-চরিত্র ফুটে উঠেছে, যেখানে এটি "নিষ্ঠাবতী সহধর্মিণী" বা “স্বামী অনুরাগী” এর সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। 

ষড়যন্ত্রকরীরা সতীদাহ এই শব্দটির ব্যবহার ‘সতীমাতা’ শব্দের পরিবর্তে করেছে।  ‘সতীমাতা’ শব্দের অর্থ হলো— 'যে নারী স্বামীর আগে মৃত্যু বরণ করেছেন' বা 'স্বামীর মৃত্যুর পর শোকে বা সেচ্ছায় দেহ ত্যাগ করেছেন'। 

আজও আমাদের গ্রামে এবং বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে এরকম নারী যার মৃত্যু স্বামীর আগে হয়েছে তাঁর সিঁদুর ওই অঞ্চলের সধবা স্ত্রীরা নিজের সিথিতে গ্রহন করে। এর পেছনে সাংস্কৃতিক যুক্তি হলো, স্বামীকে বাঁচিয়ে নিজেকে তিনি মৃত্যুর হার গ্রহন করেছেন। সেচ্ছায় দেহ ত্যাগ বা সহগমন (সাথে যাওয়া) বা সহমরণ (সাথে মারা যাওয়া)। এরকম ঘটনা আজকাল দেখা যায় না। সেচ্ছায় প্রাণ ত্যাগ করার সেই যোগ ক্ষমতা আজ নেই। তাই নিজেদের গুরুত্ব না দিয়ে অন্যের লেখা কপোল গল্পে গুরুত্ব দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। তা সে সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় হোক আর রমিলা থাপরের মতো বাম্পন্থী লেখক। 

রাজা রামমোহন রায় যে ইংরেজ চাটুকার ছিলেন সেটা তার পত্র পড়লেই বুঝতে পারা যায়। সেই দিক থেকে স্যার সৈয়দ আহমেদ খা এর চিন্তাকে আমি শ্রদ্ধা করি। রামমোহন হিন্দুধর্মকে সমূলে নষ্ট করে নতুন আচার বিচার গ্রহনের কথা বলেছেন। সেখানে স্যার সৈয়দ আহমেদ খা পুরাতন ও নতুনের ভারসাম্য রক্ষা করে উন্নতির দিকে চলার কথা বলেছেন। 

তাই, আমাদের কোনো মহাপুরুষ বলেছেন বলে সেটাই সত্য মেনে চলতে হবে এমন দিব্যি নেই। কারণ তারাও তো পুরোনো হয়ে গেছে। তারা যে কথা বলেছেন, বা যে ধারণা করেছেন সেটারও সংস্কার দরকার। সেই জন্য আমাদের নিজেদের মাঠে নেমে সত্য জানতে হবে। বাদ বিবাদ হোকনা। ক্ষতি নেই তাতে।


দেহ সৎকার 

পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ইহুদী, খৃষ্টান এবং ইসলম ধর্মের ভিন্ন ভিন্ন দেহ সৎকারের প্রথা আছে। তাদের মৃতদেহ মাটিতে কবর দিয়ে সৎকার করে। হিন্দুদের আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার দেহ সৎকারের নিয়ম আছে। হিন্দুদের মধ্যে নবজাতক শিশু, সন্ন্যাসী এবং পশুদের কবর দেওয়া হয়। জরাস্ট্রিয়ান ধর্মের লোকেরা নিজেদের পরিজনের মৃত দেহ কাক পক্ষি দ্বারা ভক্ষণের জন্য উচু স্থানে রেখে দেয়। কারণ তাদের মতে তাদের ঈশ্বর 'আহরা মাজদা' পক্ষী রূপে এসে তাঁকে গ্রহণ করবে। মৃতদেহ আগুণ, মাটি বা জলকে দূষিত করে। বর্তমানে অনেক মানুষ আছে যারা মৃত্যুর পর দেহ দান করে। ওই দেহ বিজ্ঞানের বা মেডিক্যাল কলেজে রাখা হয়। পূরাণে দঋষি ধীচি তাঁর হাড় দিয়ে ইন্দ্রের বজ্র তৈরী করার জন্য নিজের দেহ দান করেছিলেন।

বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধর্মের দেহ সৎকারের বিভিন্ন প্রথা। আপনি কোনটিকে কু-প্রথা বলবেন? ইহুদী, খৃষ্টান এবং ইসলম তাদের মৃতদেহ মাটিতে কবর দেয়। আপনি কি তাদেরকে বলতে পারেন মাটির নিচে মৃতদেহ দম বন্দ হয়ে যাবে বা পচে গিয়ে পোকা মাকড় খাবে। জরাস্ট্রিয়ান অথবা দেহ দান করা লোকেদের নৃশংস কু-সংস্কারি বলবেন কি ? আমরা সংস্কার বা কু-সংস্কার বিচার করতে পারিনা 

মহাভারতে সতীদাহ 

এক সময় ছিলো যখন, নিজের পবিত্রতা, মান, মর্যাদা রক্ষা বা ভ্রষ্ট হলে অনেকেই আত্মদাহ, বা জল সমাধি করতো, যেমন মহাভারতের মাদ্রী তাঁর স্বামী পান্ডুর মৃত্যুর পরই শোক ও গ্লানিতে মৃত্যু হয়। স্বামীর সঙ্গে তিনিও চিতায় ছিলেন, কিন্তু কুন্তী তো বিধবার হয়েও ধর্মের নিয়ম মেনে পাণ্ডবদের সঙ্গেই বাস করেছিলো। যদি সতীদাহ প্রথা হিন্দুধর্মে সত্যি থাকতো, তবে কুন্তিকেও আগুনে পুড়ে মরতে হতো। 

রামায়ণে সতীদাহ

রাজা দশরথের মৃত্যুর পর তাঁর তিন রানীর কেউ কি সতী দাহ হয়েছিল? এর বিপরীতে ভগবান শ্রী রাম, ভরত এবং তাঁর রাজ্যের বহু ভক্ত এবং দিব্য আত্মা জল সমাধি নিয়ে দেহ ত্যাগ করেছিলেন। তারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করে ছিল। শ্রীরামকে জোর করে জলে ফেলে দেওয়া হয়নি। এতটাই দৃঢ় সংকল্প ও ত্যাগ ছিলো মানুষের মধ্যে। এগুলো কোনো প্রথা নয়। কারণ সবাইকে করতে হবে সেই দিব্যি দেওয়া হয়নি। 

আধুনিক যুগে

রানী পদ্মাবতী খিলজীর হারামে গনিমতের মাল হিসাবে দাসী হয়ে জীবিত থাকার চেয়ে হাজার হাজার নারীদের সাথে সেচ্ছায় মৃতু বরণ করা উচিত মনে করেছিল। এই ঘটনা জোহর নামে পরিচিত। তার দেখাদেখি সবাইকে করতে হবে, সেই দিব্যি দেওয়া হয়নি। তাই জোহর কোনো কুপ্রথা ছিলো না।

স্বামী বিবেকনন্দের জবাব

একবার স্বামী বিবেকানন্দকে আমেরিকায় এক সভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় একজন কেথলিক মহিলা অপমান করার উদ্দেশ্যে স্বামীজিকে প্রশ্ন করেছিলেন। "স্বামীজি আমি শুনতে পেলাম আপনার দেশে জন্মের পরেই মেয়েদের মেরে দেওয়া হয়।" স্বামীজি হেসে জবাব দিয়েছিলেন, "একদম ঠিক শুনেছেন। নারীদের বদলে আমাদের দেশের পুরুষরা গর্ভ ধারন করছে।" স্বামীজির এই  উত্তর শুনে ওই সভার সবই হেসে উঠলো। ওই মহিলা অপদস্ত হয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন। এই হলো পাশ্চাত্যের কটু-নীতি। আর এই কটু নীতি গুলোই আজ ভারতের বামপন্থী বিচার ধারার মধ্যে লক্ষ করা যায়।

তাই, যখন বলা হয় হিন্দু ধর্মের সতীদাহ প্রথার কথা। তখন বলতে ইচ্ছা করে, "হ্যা, হিন্দুরা নিজের বিধবা কন্যাকে সতী হিসেবে দাহ করত। আর চিতা থেকে পুনরায় বিধবার ভূত এসে বিধবা ব্রত পালন করতো।" 

সতী প্রসঙ্গ ও দক্ষ যজ্ঞ 

পুরাণ মতে ব্রহ্মার পুত্র দক্ষ। তাঁর কন্যা ছিলেন সতী। দক্ষ ছিলেন শ্রী বিষ্ণুর উপাসক এবং শৈব বিদ্বেষী। অপর দিকে তাঁর কন্যা ছিলেন মহামায়া আদ্যা শক্তির স্বরূপ এবং শিব ভক্ত।  প্রজাপতি দক্ষ মহামায়ার উপাসনা করে তাঁকে নিজের কন্যারূপে জন্ম নেওয়ার বর প্রার্থনা করেন। মহামায়া প্রজাপতি দক্ষকে বলেন যে,"আমি তোমার কন্যা রূপে জন্ম গ্রহন করবো ঠিকই কিন্তু আমার স্বামী হবে শিব"— এবং তা'ই হয়।  কিন্তু পরবর্তীতে পরিস্থিতি বদলে যায়। একবার প্রজাপতি দক্ষ এক বিশাল যজ্ঞের আয়োজন করে। সেখানে সকল দেবতা, ঋষি মুনিদের আমন্ত্রণ করলেও ভগবান শিবকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। দক্ষ কন্যা সতী সভায় গিয়ে এর কারণ জানতে চাইলে দক্ষ নিজ জামাতা ভগবান শিবের উপস্থিত সকলের সামনে নিন্দা করে। মহামায়া আদ্যা শক্তির অংশ উদ্ভূতা সতী স্বামীর এই নিন্দা ও অপমান সহ্য করতে না পেরে ক্রোধ ও গ্লানিতে আবিষ্ট হয়ে নিজেকে ওই যজ্ঞের আগুনে অর্পণ করে দেয়। দক্ষের ওই মহা যজ্ঞ নষ্ট হয়ে যায় এবং সকল দেবতা ঋষি দক্ষকে ধিক্কার জানিয়ে যজ্ঞস্থল থেকে চলে যায়।

শিব পত্নীর এই পরিণাম ভগবান শিবও সহ্য করতে না পেরে তাণ্ডব নৃত্য আরম্ভ করেন। এতে সমগ্র বিশ্ব ধ্বংস হতে শুরু করে। ভগবান শিবির ক্রোধে বীরভদ্র নামক এক  ভৈরব দেবতার জন্ম হয়। বীরভদ্রের মুখ ছিল অতি উগ্র, শরীর অগ্নিশিখায় ব্যাপ্ত, প্রকাণ্ড দেহ ও দীর্ঘ দন্ত। বায়ুপুরাণের বর্ণনায় বীরভদ্রের ছিল সহস্র মাথা, সহস্র চক্ষু ও সহস্র পা। তাঁর মাথা ছিল অর্ধ চন্দ্রশোভিত, পোশাক ছিল ব্যাঘ্রচর্ম। এর হাতে ছিল বহু আয়ুধ, শূল, টঙ্ক ও গদা।

বীরভদ্র অনুচরসহ দক্ষযজ্ঞে উপস্থিত হলে, মহাকালীও বীরভদ্রের সাথে যোগ দেন। বীরভদ্র তাঁর রোমকূপ থেকে রৌম্য নামক রুদ্রতুল্য অসংখ্য গণ সৃষ্টি করেন। পরে তাদের সাথে নিয়ে ইনি যজ্ঞের সমস্ত উপকরণ চূর্ণ, উৎপাটন ও দগ্ধ করে সকলকে প্রহার করতে থাকেন। এই সময় দক্ষের মস্তক ছিন্ন হয়। ইনি দক্ষপত্মীদেরও প্রহার করেন। এই সময় দেবতাদের প্রার্থনায় বিষ্ণু এসে বীরভদ্রকে নিবৃত্ত করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু অকৃতকার্য হয়ে তাঁরা পালিয়ে যান। অবশেষে ভগবান ব্রহ্মা এসে বীরভদ্রের স্তুতি করে তাঁকে শান্ত করেন। ওই দিকে ভগবান শিব সতীর দেহ ঘাড়ে তুলে বিশ্ব ধ্বংস করতে বেরিয়ে যান। শ্রী হরি বিষ্ণু সতীর দেহ খন্ডে খন্ডে কর্তন করেন এবং সেই খণ্ডগুলো শক্তি পিঠে পরিণত হয়। সেই শক্তি পিঠ কে রক্ষা করতে আবার শিবির বিভিন্ন ভৈরব উৎপন্ন হয়। ভগবান শিবের ক্রোধ নিয়ন্ত্রন হয় এবং তিনি দীর্ঘ হাজার যুগের জন্য অন্তর্ধান হয়। 

পাশ্চাত্য শ্বন সংস্কৃতি:

এই ছিলো সতী প্রসঙ্গ এবং স্বামীর প্রতি সতীর আত্ম বলিদান। স্বামীর প্রতি পত্নীর ও পত্নীর প্রতি স্বামীর অনুরাগের কাহিনী।  এই ত্যাগ ও ভালোবাসার শিক্ষা পাশ্চাত্য দেশের মানুষের কাছে নতুন। তাদের কাছে এইসব একপ্রকার কুসংস্কার। আজও পাশ্চাত্য দেশে বহু ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী বিবাহ অতিরিক্ত আলাদা আলাদা সম্পর্ক থাকে। এমনকি দুইজন এই বিষয়ে অবগতও থাকে। এটাকে তারা Free Choice বলে। বিয়ের আগেই দুইজন নারী পুরষ এক সাথে স্বামি স্ত্রীর মতো থাকে । একে তারা 'লিভিং রিলেশন' বলে। একে আমরা  শ্বন সংস্কৃতি বলি। শ্বন অর্থাৎ কুকুর, কুকুর বিড়াল যেভাবে মেলামেশা করে সেইভাবেই 'লিভিং রিলেশনে বাস করা। ভারতেও ওই কালচার শুরু হয়েছে। 

যেহেতু শ্বন সংস্কৃতি ভারতীয় সমাজের মাপকাঠিতে গ্রহনযোগ্য নয়। সেহেতু তারা ভারতীয় সমাজের মাপকঠি-কেই বদলাতে নানা রকম কুযুক্তি পেশ করে। পাশ্চাত্য শিক্ষা ও পাশ্চাত্য অনুপ্রাণিত ভারতীয়রা নিজেদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে এই রকম ষড়যন্ত্রের অংশ গ্রহণ করে। 

ভারতের ভূমিতে পাশ্চাত্য দেশের উপনিবেশ স্থাপন করা হয়েছিল ভারতের সাথে চুক্তি করে ব্যাবসা করার উদ্দেশ্যে। সেখানে তারা সংস্কৃতির সংস্কার, শিক্ষার সংস্কারে কিভাবে হস্তক্ষপ করলো? এই সব কিছুই তাদের রাজনৈতিক অনুকূল ষড়যন্ত্র। এই সব কিছুই ছিলো ম্যেকোলের মিনিট অন এযুকেশনেরর Infiltration Theory (অনুপ্রবেশ তত্ত্ব) -র প্রভাব। যা আমাদের দেশের কিছু বামপন্থী লেখকের কারসাজির দ্বারা সফল হচ্ছে। উপরন্তু আমাদের প্রতিবেশী শত্রু দেশের ইসলামিক এজেন্ডা ধারী শক্তিও এই সতী প্রথা দিয়ে জন মানসে ফিক্স করায় জন্য কোমড় বেধে লেগে পড়ে আছে। কারণ, কোকিল কাকের ডিম নষ্ট করেই কাকের বাসায় ডিম পাড়ে।  কিন্তু কাক ও কোকিলের পার্থক্য বোঝা যায় তাদের শব্দে।

কাকেঃ কৃষ্ণঃ পিকঃ কৃষ্ণঃ
কো ভেদঃ কাকপিকয়ো।
বসন্তকাল প্রাপ্তে 
কাকঃ কাকঃ পিকঃ পিকঃ॥

উপসংহার

এক কথায় ফাকা মাঠে গোল দিয়ে ব্রিটিশ রাজতন্ত্র ও তাঁদের পদ লেহনকারী চাটুকাররা নিজেদের ফাঁপা কৃতিত্বের বিজয় পতকা উত্তোলণ করে আমাদের মগজ ধোলাই করছে। যা কখনো ছিলোই না, সেটাই নির্মূল করার কৃতিত্ব নিচ্ছে। যারা নিজেদের চক্ষুস প্রমাণ, অভিজ্ঞতা এবং শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব না দিয়ে অন্যের লেখা ইতিহাসের গুরুত্ব দেয়। তারা নিশ্চিত মূর্খ এবং মানসিক দাস। ভারতীয় নারীর তিনটি পরিণীতি পিতার গৃহে কন্যা, স্বামীর গৃহে সধবা এবং স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা। পাশ্চাত্য দেশে এমন কোনো পরিণীতি নেই। স্বামীর মৃত্যুর পর নিজের সন্তানদের ছেড়ে বিধবারা আবার নতুন করে বিবাহ করে। সন্তানদেরও মা বাবার প্রতি কোনো দায় দায়িত্ব নেই। তারা যৌবন প্রাপ্ত হলেই আলাদা হয়ে যায়। একবার ভারতীয় অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাইকে এক বিদেশি সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:—

 "Do you live with your Parents. Is it true? Is that common in India for older children to live with their parents?" আপনি আপনার পিতামাতার সঙ্গে বসবাস করেন! এটা কি সত্যি? ভারতে কি বড় (প্রাপ্ত বয়স্ক) বাচ্চাদের জন্য তাদের বাবা-মায়ের সাথে বসবাস করা সাধারণ ব্যাপার?

ঐশ্বরিয়া রাই খুব সরল অথচ দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিয়েছিলেন। তিনি সহাস্য মুখে জবাব দিয়েছিলেন,

 "It is fine to live with your Parents, and it's also common in India that we don't have to take appointmets with our parents to meet for Dinner." (পিতামাতার সাথে বসবাস করা ভাল, এবং এটি ভারতেও খুবই সাধারণ ব্যাপার, আমাদের পিতামাতার সাথে দেখা করার জন্য বা ডিনারের জন্য অ্যাপয়েন্টমেট নিতে হয় না।)

এই হলো ভারতীয় নারী এবং ভারতীয় সংস্কারের প্রতিফলন। শুধু সনাতনী হিন্দু বলে নয়, ভারতীয় খ্রিষ্টান, ভারতীয় মুসলীমদের থেকেও পাশ্চাত্য দেশ গুলো অনেক কিছু শেখাতে পারে। কিন্তু আমরা সেভাবে নিজেদেরকে তুলে ধরি না। কারণ আমাদের স্বদেশ চেতনা মরে গেছে। আমরা মনে করছি:

“নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস। নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে; কহে, যাহা কিছু সুখ সকলি ওপারে। ”
—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

আমরা সব কিছুই তাদের আদলে, তাদের মত নির্মান করতে চাই। আমরা, আমরা হলে লজ্জা পাই। ওরা যদি  আমাদের মতো হয়। তখনই সেটা মুল্যবান হয়ে যায়। এর মূল কারণ অবশ্য আমরা নিজেরাই তৈরী করেছি, কেবল তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমরা নিজেরা নিজেদের উন্নত করতে চেষ্টাও করিনি। সেই শিক্ষা আমাদের দেওয়া হয় না। আর যখনই কেউ চেষ্টা করেছে, আমাদের থেকেই কেউ উঠে দেশের ও দশের বিরুদ্ধে একশ জনকে দার করিয়ে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। সঙ্গে সঙ্গে সেই দেশদ্রোহী, ধর্মদ্রোহী র সাপোর্ট বিদেশ থেকে এসেছে। এবং সেই ধর্মদ্রোহী রোল মডেল হয়ে বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেছে। সতী প্রথা কোনো প্রথাই নয়। এটা ওইরকম একটি রোল মডেলের অবদান।

Himadri Roy Sarkar always had a passion for writing. When he was younger, he would often write stories and share them with his friends. He loved the way that writing could bring people together and share ideas. In 2022, he founded The Hindu Network,The site quickly became popular, and Himadri was able to share his writing with people all over the world. The Hindu Network is now one of the most popular websites in the world, and Himadri is a well-known author and speaker. blogger external-link facebook instagram

1 টি মন্তব্য