Headlines
Loading...

যারা আস্তিক তারা মানব, দানব, দেবতা এবং ইশ্বর আত্মায় বিশ্বাস করে। যারা নাস্তিক তারা এসবকে কাল্পনিক বলে উপেক্ষা করে। কারণ, আস্তিকরা দেবী বা দেবতার প্রত্যক্ষ প্রমাণ প্রস্তুত করতে পারে না। অনেক সময় সাধারণ প্রকৃতিক ঘটনা গুলোকে দেবতার প্রকোপ, বা চমৎকার মনে করে পূজা করে বসে। আর সেইখানেই নাস্তিকদের বৈজ্ঞানিক যুক্তি দিয়ে আনন্দ পায়। 

যেভাবে আমরা আত্মা, দানব, দেবতা এবং ইশ্বর কল্পণা করি। ক্যালেন্ডার বা TV সিরিয়াল গুলোতে যেভাবে দেবী দেবতাদের কাহিনী নাটক আকারে পরিবেশন করা হয়, আসলে সেভাবে দেবতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। দেবতা শব্দটি সংস্কৃত ভাষায় দিব ধাতু থেকে এসেছে, দাতা বা  

এই সব কিছুই যা আমরা জীব বা জড় বলে মনে করি, সে সব কিছুই একই বস্তুর ভিন্ন ভিন্ন রূপ। মাত্র। একটা আরেকটার উপর চড়ে আছে কিন্তু ভৌতিক স্তর ভিন্ন হওয়ায় একে অপরের সঙ্গে মিশে যায় না। যেভাবে বাঁশি ও বীণা এক সাথে বাজলে দুটোর স্বর আলাদা ভাবে বোঝা যায়, সেভাবে এই জীবের স্তর, দেবতাদের স্তর থেকে আলাদা হয়ে আছে। একই ভাবে অসুর, ভূত, প্রেত গুলো ভিন্ন ভিন্ন সুক্ষ স্তরে আছে। 



দেবতা কোথায় থাকে?

দেবতা কল্পনিক নয়। তাদের একটা সূক্ষ জগত আছে যাকে জানতে গেলে আধ্যাত্মিক স্তরকে জানতে হবে। এই পার্থিব জগতের জীবদের জন্য যজ্ঞ ও মন্ত্রের দ্বারা ওই জগতের ওপর সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। তাই, মন্ত্রই দেবতা। স্বর্গ বা পরলোক আছে কিন্তু সেই সব ভোগের জন্য তাদের মন্ত্র দেহ আছে। মন্ত্রই দেহ ধারন করে মন্ত্রই ভোগ করে। হব্য কব্য এই সব কিছুই মন্ত্রের দ্বারা অগ্নিতে দাহ হয়ে সূক্ষ রূপে জল, বায়ু, মাটিতে মিশে যায়। এই ভাবেই যজ্ঞের দ্বারা দেবতারা তৃপ্ত হয় এবং মঙ্গল সাধিত হয়।  

পার্থিব জগতের জীবদের ভোগ করার দেহ রূপী যন্ত্র আছে। এই সব কিছু যে বিধিতে নিয়ন্ত্রিত বা চালিত হয় তাকে তন্ত্র বলে। তন্ত্রেও ব্রহ্ম স্বীকার করা হয়েছে। তন্ত্রের আচার বিচার বেদ বিরুদ্ধ মনে হলেও বেদে থেকে তন্ত্র আলাদা নয়। বেদে জ্ঞান সুক্ষ্ম রূপে আছে, তন্ত্রে সেটাকেই স্থূল রূপে প্রকট করা হয়েছে। তন্ত্রের জন্ম বেদ থেকেই হয়েছে। তাই, মন্ত্রই দেবতা। 

সত্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কারো মন্ত্র চেতনা হলে মুখ নিঃসৃত বাক্যই সব করে। বক্তার মুখ দিয়ে ব্রহ্মই কথা বলে, ব্রহ্মই শ্রবণ করে, ব্রহ্মই ফল দান করে। এর জন্য এতো কিছু কিভাবে হয়, তার জ্ঞান ও জগত জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার।

ইব্রাহিম ধর্মের আদমের সন্তান যেভাবে আদমি বলে পরিচয় লাভ করেছে। মনুর সন্তানরা সেভাবে মানব বলে পরিচিত নয়। সংস্কৃত মনুঃ শব্দের অর্থ হলো মন। মনুষ্য শব্দের অর্থ হলো সংস্কার প্রাপ্ত মন। শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের কথায় "যার মান ও হুশ আছে তিনিই মানুষ।" মায়ার পাশ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে জীব পশুত্ব প্রাপ্ত হয়। পাশ বন্ধন ছিন্ন করে সংস্কার যুক্ত হয়ে জীব যখন বিবেক বান হয়, ধর্ম-অধর্ম, পবিত্র-অপবিত্র বিষয়ে জ্ঞান জন্মে। তখন তাদের মনুষত্ব প্রাপ্ত হয়েছে বলা হয়। সংস্কার যুক্ত হয়ে জীব যখন দিব্য অনুভূতির দ্বারা মঙ্গল জনক কর্ম করেন, তিনিই দেবতা রূপে পূজিত হন। অন্যথা কুকুর, বিড়াল আর মানুষের মধ্যে কি পার্থক্য থাকতে পারে? আহার, নিদ্রা ও মৈথুন শুধু এই জীবন নয়। মনুষ্য জীবনের মহান উদ্দশ্য আছে। 

জগত জ্ঞান

একটির ওপর আরেকটি আবরণ। কিন্তু কোনো বিচ্ছিন্নতা নেই। এইভাবে জগতের সব কিছুই প্রকট থেকে প্রকটিত হয়েছে। নিশ্চয়ই এর দ্রষ্টা আছে। কে সেই দ্রষ্টা? তিনি কিভাবে আছেন? কোথায় আছেন? কোথায় ছিলেন এবং কোন অবস্থায় ছিলেন? এতকিছু কিভাবে এলো? এই সব প্রশ্ন একজন উন্নত মস্তিষ্কে আসবে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো,“আমি কে?” তবে আসুন জেনে নেই এই জগতের কিছু গুপ্ত তত্ত্ব।

হিন্দু শাস্ত্র মতে জগৎ তিনটি আয়ামে বিভক্ত। যথা হিরন্ময়, চিন্ময় ও মৃন্ময়। হিরন্ময় জগতে আত্মা ও পরব্রহ্ম এক। সেখানে প্রভূ ও ভৃত্য, নিত্য-অনিত্য কোনো কিছুরই পার্থক্য নেই। চিন্ময় জগতে দেবতা, ঋষি ও সিদ্ধ পূরুষ গন সুক্ষ্ম ভাবে থাকেন। স্থানকে অনেকে সম্ভালা বলে জানে। 

হিরন্ময় জগত 

স্থান,কাল,পাত্র ভেদ নেই। অর্থাৎ, অনাদ্রি অনন্ত পরমেশ্বরের মূল স্বরূপ এটিই। একেই 'পরম ধাম' বলা হয়। সেই ধামে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ, দুর্গা, গণেশ সকল দেবতার স্বরূপ এক ও অভিন্ন। ঈশ্বর এখানে সর্ব কারণের কারণ স্বরুপে অবস্থান করছেন। সেই স্বরুপকেই পরমেশ্বর হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায় নিজে নিজে মতে আরাধনা করে আসছে।  ঈশ্বরকে হিরন্মগর্ভ বলা হয়েছে, অর্থাৎ তাঁর গর্ভে এই জগৎ আছে, তিনিই জগৎ প্রসব করেছেন এবং জাগতিক সব কিছুই তিনিই। ব্রহ্ম, পরমেশ্বর 

চিন্ময় জগত

এর পরের স্তর হলো চিন্ময় জগত। হিরণ্ময় জগতের গর্ভে চিন্ময় জগতের স্থান। এই জগতের প্রতিটি পদার্থ চেতনা যুক্ত। অগ্নি, পবন, বরুণ, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, এমনকি মন, বুদ্ধি, চিৎ, অহংকার সব কিচুই চেতন। এগুলোই দেবতা এবং দানব, সুর-অসুর হিসাবে পুরানাদি শাস্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এই জগতের অন্তর্গত সব কিছুই সুক্ষ্ম।

মৃন্ময় জগৎ

পরের স্তরটি মৃন্ময় জগৎ। চিন্ময় জগতের ভেতর এই মৃন্ময় জগতে জড় বস্তু গুলো ওই চেতনার দ্বারা চালিত হচ্ছে। দাহ্য, শিক্ত, শুষ্ক, গ্রাহ্য সব কিছুই এই জগতের অন্তর্গত। চৌদ্দটি ভুবন (ভূ, ভুব, স্ব, জন, তপ, মহর, অতল, বিতল, সুতল, তলাতল, পাতলা ইত্যাদি) এই মৃন্ময় জগতের অন্তর্গত।  

আমরা আমাদের এই সীমিত জ্ঞান ও বুদ্ধি দ্বারা যা কিছু জানতে বা বুঝতে পারি সব কিছুই এই মৃন্ময় অর্থাৎ ভৌত জগতের সীমানার মধ্যে। কেউ যদি বলে আমি দেবতা দর্শন করতে চাই সেটা সম্ভব নয়। কারণ চেতনাকে দেখা যায় না। পুরাণের গল্পের দেবরাজ ইন্দ্র চন্দ্র দেবের সঙ্গে মিলিত হয়ে ব্রহ্মার মানস কন্যা অহল্যার সঙ্গে ছল করে সঙ্গম করেছিল। দেবতা বলে ছাড় পাননি তিনি। চাঁদের গায়ে যে কলঙ্কের দাগ আছে সেটা সেই কুকর্মের ফল। এই তিনটি জগত মায়ার প্রভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কাজ করে। মায়া, একটি সর্বব্যাপী শক্তি। এই শক্তি হিরণ্যময়, চিন্ময় এবং মৃন্ময়ের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন মিথস্ক্রিয়াকে সংঘটিত কোরে এই মহাবিশ্বের জটিল কাঠামো তৈরি করে।

এই ঘটনা আপনার চেতন স্তরে সদা ঘটেই চলেছে। ভালো করে লক্ষ্য করুন: এখানে চন্দ্র হোলো মন, ইন্দ্র হলো জীভ বা ইন্দ্রীয় এবং রাবড়ি, কচুরি, মিষ্ঠান্ন হলো অহল্যা। এই হলো চিন্ময় জগতের মৃন্ময় জগতের ওপর প্রভাব। এইগুলিকেই দেবতা হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাই সনাতন ধর্ম অধ্যাত্মবাদ বা আত্ম চিন্তনের কথা বলে। এগুলো বাস্তবে নেই কিন্তু কপোল কল্পিত গল্পও নয়। 

জগত আমাদের অন্তরের বহিঃপ্রকাশ

অর্থাৎ এই জগৎ ব্রহ্মাণ্ড সব কিছুই আমাদের অন্তরের বহিঃপ্রকাশ। প্রকৃতির পাশ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে রিমোট কন্ট্রোলার গাড়ির মতো আমরা চলছি (এমনকি দেবতারাও বদ্ধ)। পাঁচটি ইন্দ্রীয়, পাঁচটি কোষ, পাঁচটি তত্ত্ব, ছয়টি রিপু সম্পর্কে যাদের সামান্য জ্ঞান হয়েছে তারা ধার্মিক পথে অগ্রসর হয়েছে, যারা ভ্রান্তির মধ্যে আছে তারা অধর্মকে স্বধর্ম মনে করে মায়ার সংসারে ঘুরপাক খাচ্ছে।

সৃষ্টির সৃজন 

আপনি সমুদ্রের তীরে গিয়ে এক ঘটি জল তুলে নিন, তারপর এক বালতি জল তুলে নিন, তারপর এক গ্লাস জল তুলে লোকেদের ডেকে জিজ্ঞেস করুন, ওই পাত্রে রাখা জলকে তারা কি নামে ডাকবে? তাহলে তারা ভিন্ন ভিন্ন পাত্রে রাখা ওই সমুদ্রের জলকে ঘটির জল, বালতির জল, গ্লাসের জল, বোতলের জল বলে ডাকবে। তাদের অজ্ঞতার কারণে ঘট ও পট ভেদে একই জল এর ভিন্ন নাম ধারণ করেছে। 

এবার ওই ঘটির জল, গ্লাসের জল, বালতির জল, পুণরায় সমুদ্রে ফেলে দিন। ওদের ভিন্ন ভিন্ন নামের কোন অস্তিত্বই থাকবে না। সেভাবেই ব্রহ্মে লীন হলে জীবের কোনো অস্তিত্বই থাকে না।

একইভাবে এক অভিন্ন এবং অদ্বিতীয় সত্তা ঈশ্বর থেকে ঘট-পট ভেদে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ও নাম হয়েছে। অদ্বৈতবাদীরা এর প্রচার করে, আর দ্বৈতবাদীরা এই সত্যকে অস্বীকার করে।

যদি দ্বৈত বাদীদের প্রশ্ন করা হয়, এই সকল রূপ আকার, বিকার কোথা থেকে এসেছে? তাদের জবাব হবে ঈশ্বর থেকে। কিন্তু যদি জড়বাদীদের এই প্রশ্ন করা হয়, তারা বলবে পদার্থ আগে থেকেই ছিলো। কেউ বলবে, বিগ ব্যাং থেকে। তবে তাদেরকে প্রশ্ন করা হয়? এই বিগ ব্যাং এর আগে সবকিছু কোথায় ছিল? উত্তরে তারা বলবে, একটি বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত ছিল। ওই বিন্দু থেকে কিভাবে এতো বড় বিশ্ব আসলো? এই প্রশ্নের জবাব তারা আর দিতে পারবে না। কারণ “বাইরে থেকে কোন বল প্রযুক্ত না হলে স্থির বস্তু সর্বদা স্থির থাকে এবং গতিশীল বস্তু সর্বদা গতিশীল থাকে”। তাহলে ওই বিন্দু থেকে বিস্ফোরণ ঘটানোর কারক নিশ্চয়ই থাকতে হবে। সেই কারক কে জড়বাদীরা অস্বীকার করে। 

জড়বাদীরা কোথায় জিতে যায়?

জড়বাদীদের সব কিছুই এই জড় জগতে বর্তমান। জড় পদার্থের অস্তিত্বই তাদের প্রমাণ। তাই যদি তারা ঈশ্বর দর্শন করতে চায়, আর আস্তিক ঈশ্বর 

দ্বৈতবাদীরা কারক এবং কারণ উভয়কেই স্বীকার করে। কিন্তু কারক ও কারণ যে মূলে অভিন্ন সেটা স্বীকার করে না। তাই কাq1 মামআব্রাহামিক ধর্ম অনুসারীরাও দ্বৈতবাদী। ঈশ্বর ও সৃষ্টিকে তারা আলাদা আলাদা ভাবে দেখে। তারা বলে সৃষ্টি কখনো স্রষ্টা হতে পারে না। স্রষ্টা কখনো সৃষ্টি হতে পারে না।

জড়বাদীরা এই মৃন্ময় জগতের বাইরে যেতে পারে না। আর দ্বৈত বাদীরা চিন্ময় জগতের বাইরে যেতে পারে না। চেতন ও জড় মিলিত হয়ে যে জগৎ আছে কেবল সেখানেই ইশ্বর ও ভক্তের মধ্যে পার্থক্য। 

জড়বাদী-দের জ্ঞানের আয়তন ছোটো, অহংকারের আয়তন বড়। তাই তাদের সত্যই সত্য আর বাকি সব কপোলকল্পিত, কাল্পনিক গল্প। যখন ডালটন বলেছিল পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার নাম অনু তখন তারা সেটাকেই সত্য মনে করেছিল, ল্যাভোয়েসিএ যখন পরমাণু তত্ত্ব প্রকাশ করলেন তখন তারা সেটাকেই সত্য মনে করেছে। এখন কোয়ান্টাম তত্ত্ব, স্ট্রিং তত্ত্ব প্রকাশ হওয়ার পর পরমাণু তত্ত্ব ছোটো হয়ে গেছে। 

পুরাণ মতে সৃষ্টির ক্রম  

নার নামক সমুদ্রে নারায়ণ যোগ নিদ্রায় শায়িত ছিলেন। তাঁর নাভী কমল থেকে একটি পদ্ম বৃন্ত নির্গত হয়ে সেখানে তাঁরই স্বরূপে ব্রহ্ম দেব প্রকট হলেন। ব্রহ্ম দেবের মনে সৃষ্টির ইচ্ছা হোলো। তিনি তাঁর দেহের বাম অঙ্গ থেকে এক নারীকে প্রকট করলেন। ওই নারীর রূপে মোহিত হয়ে মনু রূপী ব্রহ্মা তার পিছু পিছু ছুটলেন। এইভাবে যুগের পর যুগ শত শত রূপ ধারন করে শতরূপা ও মনু চিন্ময় জগতে বিচরণ করতে করতে সৃষ্টির বীজ রোপণ করলেন। মৃন্ময় জগতে তার ফলাফল এই সৃষ্টি।

বিভিন্ন ঋষিদের জন্ম সয়ম্ভুব মনুর সংকল্প দ্বারা হয়েছে। তাই সকল ঋষিরা মনুর পুত্রই ছিলেন। 

মানব, দানব, দেবতা অসুর জাতির জন্ম হয়েছে ঋষি কশ্যপের স্ত্রীদের গর্ভ থেকে। ঋষি কশ্যপের মোট তেরো জন স্ত্রী ছিলেন। এরা ব্রহ্মার মানস পুত্র প্রজাপতি দক্ষের কন্যা ছিলেন। 

সেই তেরো জন কন্যার নাম: অদিতি, দিতি, কদ্রু, দানু, অরিষ্ট, সুরসা, সুরভী, বিনতা, তমরা, ক্রোধভাষ, ইরা, বিশ্বা ও মুনি। পুরাণ মতে দেবতার মাতা দিতি, অদিতি দৈত্যদের , দানুর সন্তানরা দানব, কদ্রুর সন্তানরা নাগ ও সাপ ছিলেন, পক্ষীদের মাতা বিনতা, সমগ্র জলজ প্রাণীর মাতা হলেন তমরা। এভাবেই বিভিন্ন হিংস্র জন্তু, উদ্ভিদ, কীট পতঙ্গের জন্ম হয়েছে। 

এই সবই ওই হিরন্ময় ও চিন্ময় জগতের তত্ত্ব। একে জানতে হলে এই সব নিয়ে নিজের অন্তরে মনন করতে হবে। নচেৎ এগুলো আজগুবি গল্পের মতোই মনে হবে। কারণ যারা এই শাস্ত্র রচনা করেছেন তাঁরা সব কিছুই সবার জন্য উন্মুক্ত করেননি। বলতে পারেন Code Language বা এনক্রিপ্টেড ভাবে লেখা আছে। 

হিন্দু সময় গননা 

বেদ অনুসারে সময়ের ক্ষুদ্রতম একক হল পরমাণু। এর পরিমাপ প্রায় ≈26.3 µs. দুই পরমাণু তে এক অনু হয়। এরকম তিন ত্রুটি, বেধ, লব, নিমেষ, ক্ষণ, কাষ্ঠ, লঘু, দণ্ড, মুহূর্ত, অহোরাত্র, মাস, ঋতু, অন্বয়, সম্বৎসর। এভাবে সময়ের ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ গণনার একক নির্ধারনের একক ছিলো। ব্রহ্মার এক বছর মানুষের 3,110,400,000,000 বছরের সমান। অর্থাৎ ব্রহ্মলোকের 10 মাইক্রো সেকেন্ডে পৃথিবীর এক বছর পূর্তি হয়। অর্থাৎ হাজার হাজার বছর কেটে গেলে ব্রহ্মার এক মিনিট সময় অতিবাহিত হয়। ব্রহ্মার এক বছরে মানব এক কল্প বলা হয়। প্রতি কল্পে।  

প্রথম মনুর বংশ 

প্রতি মন্বন্তরে সাতজন ঋষি, নির্দিষ্ট দেব-দেবতা, একজন ইন্দ্র, একজন মনু ও রাজা (মনুর পুত্র) সৃষ্ট হয়।  আদি থেকে বর্তমান যুগে মোট সাতজন মনু  এসেছেন। বর্তমানের মনু হলেন বৈবাস্বত মনু। হিন্দু পুরাণ মতে, প্রতি মন্বন্তর ৩০৬,৭২০,০০০ বছর ধরে স্থায়ী হয় এবং একাত্তর যুগের চক্র পুনরাবৃত্তি করে। 

  • স্বয়ম্ভুব 
  • স্বরোচিশ
  • উত্তম
  • তপস/তমস 
  • রায়ত/রাইবত
  • চাক্ষুষ
  • বৈবস্বত (বর্তমান)
  • সাবর্ণি মনু

প্রথম মনু সয়ং প্রজাপিতা ব্রহ্মার অংশ হওয়ায় তিনি সয়ম্ভুব মনু নামে পরিচিত। এই সয়ম্ভুব মনুই বিভিন্ন ঋষিদের সৃষ্টি করেছেন। তাঁর বামা শতরূপা। তাঁর গর্ভে দুই পুত্র প্রিয়ব্রত, উত্তানপদ এবং তিন কন্যা আকুতি, দেবহুতি, প্রসূতি জন্ম গ্রহন করে। মনুর কন্যা দেবহুতি ঋষি কর্দমাকে বিবাহ করেছিলেন এবং তিনি নয়জন কন্যাকে জন্ম দেন। যারা চাইলেন অনসূয়া, মানিনী কালা, শ্রদ্ধা, গীতা, ক্রিয়া, খ্যাতি, অরুন্ধতী, শান্তি এবং কপিল নামে এক পুত্রের জন্ম দেন। উত্তানপদের সন্তান ধ্রুব। 

প্রসূতির বিবাহ দক্ষ প্রজাপতির সঙ্গে হয়েছিল। তাদের অসংখ্য পুত্র এবং কন্যার জন্ম দিয়েছিলেন। পুত্রদের নাম জানা যায় না তবে কন্যাদের নাম আছে। তাদের নাম যথারূপ:  

  • অশ্বিনী, 
  • ভরণী, 
  • কৃত্তিকা, 
  • রোহিণী, 
  • মৃগশিরা, 
  • আর্দ্রা, 
  • পুনর্ব্বসু, 
  • পুষ্যা, 
  • অশ্লেষা, 
  • মঘা, 
  • পূর্ব্বফল্গুনী, 
  • উত্তরফল্গুনী, 
  • হস্তা, 
  • চিত্রা, 
  • স্বাতি, 
  • বিশাখা, 
  • অনুরাধা, 
  • জ্যেষ্ঠা, 
  • মূলা, 
  • পূর্ব্বাষাঢ়া, 
  • উত্তরাষাঢ়া,
  • শ্রবণা, 
  • ধনিষ্ঠা, 
  • শতভিষা, 
  • পূর্ব্ব-ভাদ্রপদা, 
  • উত্তরভাদ্রপদা, 
  • রেবতী, 
  • সাহা, 
  • স্বাধা, 
  • খ্যাতি, 
  • সতী,
  • অদিতি, 
  • দিতি,
  • রতি,
  • কদ্রু, 
  • দানু, 
  • অরিষ্ট, 
  • সুরসা, 
  • সুরভী, 
  • বিনতা, 
  • তমরা, 
  • ক্রোধভাষ, 
  • ইরা, 
  • বিশ্বা ও 
  • মুনি

অগ্নিদেবের সঙ্গে সাহা, পিতৃদেবের সঙ্গে স্বধা, এবং মহাদেবের সঙ্গে সতীর বিবাহ হয়। খ্যাতি ভৃগু ঋষির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। খ্যাতি ও তার ভৃগুর ধাতা-বিধাতা নামে দুই পুত্র ও কন্যা লক্ষ্মী জন্মগ্রহণ করেন। কামদেবের সাথে রতির বিবাহ হয়। কাশ্যপ ঋষির সঙ্গে বিবাহ হয় অদিতি, দিতি, দনু, কদ্রু, দানু, অরিষ্ট, সুরসা, সুরভী, বিনতা, তমরা, ক্রোধভাষ, ইরা, বিশ্বা ও মুন নামক দক্ষ কন্যার। বাকি নক্ষত্র সেই সময় যিনি চন্দ্র দেবের পদে আসীন ছিলেন তাঁর সঙ্গে বিবাহ হয়। কারণ ইন্দ্র, চন্দ্র, বরুণ প্রভৃতি দেবতারা কাশ্যপ ঋষির সন্তান ছিলেন। 

ভৃগু, কষ্যপ, দক্ষ, অঙিরা ইত্যাদি ঋষিরা ব্রহ্মার পুত্র ছিলেন কিন্তু কেউ ঔরস পুত্র নন। অর্থাৎ এনারা মৈথুন দ্বারা জন্ম গ্রহন করেননি। এই ঋষিরা মানস পুত্র ছিলেন। রূপক অর্থে সৃষ্টি কর্তা ব্রহ্মা ও বেদ মাতা সরস্বতীর সন্তান জ্ঞান। জ্ঞানের গর্ভে সৃষ্টির উপাদান। তাই ভাইয়ের কন্যাকে বিয়ে করেও ঋষিদের ধর্ম চ্যুত হয় নাই। তাঁদের সন্তানরা যখন বংশ বৃদ্ধির জন্য বিবাহ করেন। তখন তারা দক্ষ দ্বারা নিযl হয় আমরা পড়ি। সেটি বৈবস্বত মনুর রচনা নয়। অন্য এক ঋষি এর রচনা করেছেন।

প্রথম মনু, সয়ম্ভু মনুর কন্যা আকুতির গর্ভে যজ্ঞ নামে এক পুত্র এবং দক্ষিণা নামে কন্যার জন্ম হয়েছিল। তাঁরা দুইজন ছিলেন জমজ ভাই বোন। কপিল ও যজ্ঞ, যথাক্রমে ছিলেন বিষ্ণুর অবতার। স্বয়ম্ভুব মনুর (স্বয়ম্ভুব মন্বন্তর) সময়কালে, স্বর্গের রাজা বা দেবতাদের রাজার পদের জন্য কোনো যোগ্য ইন্দ্র ছিল না। সুতরাং, ভগবান বিষ্ণু সয়ম্ভু মনুর কন্যা আকুতির গর্ভে যজ্ঞ অবতার রূপে অবতীর্ণ হন এবং যজ্ঞ ছিলেন প্রথম ইন্দ্র। তিনিই সৃষ্টির আদিতে ইন্দ্রাসনে অধিষ্ঠিত হন। শিবের জামাতা নহুষ কিছু সময়ের জন্য ইন্দ্রপদ লাভ করে ছিলেন। এভাবে বহু ইন্দ্র বহু মনু বহু চন্দ্র বহু সূর্য দেবতার পদ লাভ করে থাকেন। 

স্বয়ম্ভুব মনু ও শতরূপা সুনন্দা নদীর তীরে তপস্যা করতে বনে গিয়েছিলেন। কোন এক সময়ে, রাক্ষস তাদের আক্রমণ করেছিল, কিন্তু যজ্ঞ, তার পুত্রদের সাথে, দেবতারা দ্রুত তাদের হত্যা করেছিল। তারপর যজ্ঞ ব্যক্তিগতভাবে স্বর্গের রাজা ইন্দ্রের পদ গ্রহণ করেন। এর পর কশ্যপ ঋষির পুত্র ইন্দ্রের আসনে বসেন।

তবে বিচার করুন, হিন্দু ধর্মের ইতিহাস কতো বিশাল। অজ্ঞ মানুষ এইসব তথ্য না জেনে হিন্দু ধর্মের দেবী দেবতাদের অপমান করে থাকে। জন্ম থেকেই কেউ পাপী হয় না। মানব, দানব, দেবতা এবং ইশ্বর এরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। আমরা ইশ্বরের পুত্র। ইশ্বরের পরিবারের সদস্য।

Himadri Roy Sarkar always had a passion for writing. When he was younger, he would often write stories and share them with his friends. He loved the way that writing could bring people together and share ideas. In 2022, he founded The Hindu Network,The site quickly became popular, and Himadri was able to share his writing with people all over the world. The Hindu Network is now one of the most popular websites in the world, and Himadri is a well-known author and speaker. blogger external-link facebook instagram

0 Comments: