
হিন্দু ধর্ম কেন সব থেকে শ্রেষ্ট ?
ভূমিকা: ধর্ম কি? হিন্দু ধর্ম থেকে অন্য ধর্ম মত গুলো কিভাবে আলাদা? এই বিষয়ে আমরা আগেও আলোচনা করেছি। তাই পাঠকদের সেই Blog টি পড়ার অনুরোধ করছি। আজ আমরা জানবো হিন্দু ধর্ম কেন সব থেকে শ্রেষ্ট।
লোকসমাজে যত প্রকার ধর্মপ্রণালী বর্তমানে প্রচলিত আছে তাঁদের মধ্যে হিন্দুধর্মের মতো অন্য কোন ধর্মের এমন পরিণতি বা পরিপুষ্টি ঘটে নাই। কারণ হিন্দু ধর্ম অতি প্রাচীন, বয়োজ্যেষ্ঠ। যা আবার সনাতন বৈদিক আর্য ধর্ম নামেও পরিচিত।
ধর্মের নামে গোঁড়ামিতে মহাপাতক, নরকের কারণ:
যে কোন ধর্মীদের জিজ্ঞাসা করো, “কোন্ ধর্ম ভাল?” সে তখনই বলবে “আমার ধর্ম ভাল।” আমার গুরুদেব তাঁর পুস্তকে লিখে গেছেন, "ধর্ম নিয়ে গোঁড়ামি করিতে নাই, ধর্মের নামে গোঁড়ামিতে মহাপাতক। অন্যের ধর্মের নিন্দা নরকের কারণ"। তাই, আমি সেই আদেশ মাথায় নিয়েই এই ব্লগটি লিখছি। তাঁর কথাকে আমি নিজের ভাষায় লিখছি । তিনি বলেছেন:-
সকলের বিচার-শক্তি, জ্ঞান-শক্তি ও অনুভব- শক্তি আছে। শুদ্ধ মনে অনুভব করুন, বিচার করুন, সাধন করুন, পথ পরিষ্কৃত হবে। যে ধর্ম আচরণ করলে মানুষ নিজ অভিজ্ঞতায় সমস্ত প্রত্যক্ষানুভব বা প্রত্যক্ষ দর্শন করিতে পারে, তাকেই শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলা যায়। এইজন্য আমি হিন্দুধর্মকে শ্রেষ্ঠ বলছি। শাস্ত্র মতে ভক্তি ও নিষ্ঠা মেনে চললে যে কোনো ব্যাক্তিই ইশ্বরের প্রত্যক্ষানুভব বা প্রত্যক্ষ ইশ্বর দর্শন করতে পারে
হিন্দু মহাত্মারা ভগবানের প্রত্যক্ষ দর্শন করাতে পারেন।
কোনো ধর্মীয় অনুসারীদের যদি বলা হয় তোমরা কি ভগবান দেখেছ? আমাকে কি তাঁর দর্শন করাতে পারবে? তারা নানা অজুহাত দেখাবে। বলবে "না, তাঁকে এই চোখ দিয়ে দেখা যায় না, তিনি নিরঞ্জন, তিনি অব্যয় ইত্যাদি ইত্যাদি।"
এই একই প্রশ্ন যখন নরেন্দ্রনাথ দত্ত (স্বামী বিবেকানন্দ) দক্ষিণেশ্বরের ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে করেছিলেন। জবাবে তিনি বলেছিলেন, "হ্যা তোকে যতটা স্পষ্ট দেখি তার থেকেও স্পষ্ট দেখতে পাই।" এই বলে তিনি নরেন্দ্রনাথের বুকে নিজের পা স্পর্শ করলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে নরেন্দ্রনাথ অচেতন হয়ে গেলেন। এর পর নরেনদ্রনাথ এমন ভবস্থ হলেন যে বেশ কিছুতে তিনি ঈশ্বরকেই দেখতে পেতেন। তিনি বাহ্য জ্ঞান হারিয়ে থাকতেন।
এমন অনেক উদাহরণ আছে যেখানে ভক্ত শুধু ইশ্বর দর্শন করেছেন এমন নয়, অন্যকেও করিয়েছেন। আমার গুরুদেব স্বামী নিগমানন্দ পরমহংসদেব পূর্বে একজন নাস্তিক ছিলেন। ভূত, প্রেত, দেবতা কিছুই মানতেন না। কিন্তু তিনিই পরবর্তিতে জগত ঈশ্বরের কৃপায় সদগুরু নিগমানন্দ হয়েছেন। নিজেও ঈশ্বর দর্শন করেছেন এবং তাঁর ভক্তদেরও ঈশ্বর দর্শন করিয়েছেন।
Schizophrenia বা hallucination নয়:
Schizophrenia বলে একটা মানসিক রোগ আছে। যেখানে রোগী কোনো একজনকে দেখতে পায়, তার সঙ্গে কথা বলে, তাকে বিশ্বাস করে। এইসব মানুষেরা কিন্তু অন্যদের ওই দৃশ্য দেখাতে পারে না। সঞ্জয় দত্ত অভিনীত হিন্দী ফিল্ম মুন্নাভাই MBBS এ দেখানো হয়েছিলো তিনি গান্ধীজির সঙ্গে কথা বলতেন, তাকে দেখতে পেতেন। কিন্তু অন্যকেউ গান্ধীজিকে দেখতে পেতেন না। Schizophrenia বা hallucination রোগী তাদের ওই দর্শনকে অন্য কোন ব্যাক্তিকে দেখাতে অক্ষম। কিন্তু শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংস, শ্রী শ্রী ঠাকুর নিগমানন্দ পরমহংস দেবের মতো মহাত্মা যোগী পুরুষদের সেই ক্ষমতা ছিলো। তারা যাকে দেখেন, তাঁকে দেখতেও পারেন। এমনকি একই সময় ভিন্ন ভিন্ন স্থানে উপস্থিত থাকতে পারেন।
হিন্দু ধর্মের স্বরুপ ও প্রতীক জানুন।
হিন্দু ধর্মের ইশ্বর সম্পর্কে জানতে হলে ধর্মের স্বরুপ জানতে হবে।হিন্দুগণ ধর্মকে চতুষ্পাদ বৃষ বলে সংজ্ঞা দান করেছেন। হিন্দুরা গো পূজা করেন এর পেছনেও কারণ এই একই। ধর্মের প্রতীক।
যথা— বৃষো হি ভগবান্ ধর্মশ্চতুষ্পাদঃ প্রকীর্তিতঃ বৃণোমি ত্বামহং ভক্ত্যা স মাং রক্ষতু সর্বদা৷৷
—বৃষোৎসর্গপদ্ধতি
এই একই সূত্র ধরে আমরা মনুস্মৃতি থেকেও জানতে পারি। ভগবান মনু বলিয়াছেন—
“বৃষো হি ভগবান্ধর্মস্তস্য যঃ কুরুতে হালং।বৃষলং তং বিদুর্দেবাস্তস্মাদ্ধর্মং ন লোপয়েৎ৷৷”—মনুসংহিতা
এখানে ধর্মকে চতুষ্পাদ বৃষ বলার উদ্দেশ্য কি? উদ্দেশ্য হলো ধর্মের চতুষ্পাদ সাধককে নির্দেশ করা। এখানে চতুষ্পাদ অর্থে চারিভাগে পূর্ণ। এক এক পাদ ধর্মাচরণে এক এক জগতের বোধ প্রাপ্তি হয় ও সেই বিষয়ে ইন্দ্রিয়শক্তির স্ফূর্তি, পরিণতি ও সামঞ্জস্য লাভ হয়ে থাকে। সেই ইন্দ্রিয়ের জ্ঞাত জগৎ চারিটি।
$ads={2}
কিভাবে ইশ্বর দর্শন সম্ভব?
চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা প্রভৃতি — বহিরিন্দ্রিয়দ্বারা যে জগৎকে জানতে (বা অনুভব করতে) পারা যায়, তাহাকেই বহির্জগৎ বলে। ধর্মের প্রথম পাদের (শাস্ত্র সম্মত) আচরণ ও সাধনাদ্বারা এই বহির্জগৎ বশীভূত হয় ও তাহার উপর ক্ষমতা বিস্তার করা যায়।
মন অন্তরিন্দ্রিয়—মনের বিষয় যে জগৎ তাহাই অন্তর্জগৎ। অন্তর্জগৎ বৃত্তিময়, বৃত্তি মানস-বিকার। ধর্মের দ্বিতীয় পাদের (শাস্ত্র সম্মত) আচরণ ও সাধনাদ্বারা এই জগৎ আয়ত্তীভূত হয়। সংকল্প মাত্র বৃত্তি ও বিকার নিরোধিত হয়। মনের ক্ষমতাকে অন্যের ওপর আরোপ করা সম্ভব হয়।
সত্যেন্দ্রিয় গ্রাহ্য জগৎকে বৌদ্ধ জগৎ বলে। বুদ্ধিই সত্যেন্দ্রিয়ের গ্রাহ্য। ধর্মের তৃতীয় পাদ সাধনদ্বারা এক অদ্বিতীয় এবং সত্যস্বরূপ ভগবান্ আমাদের বুদ্ধির গম্য হন। এর দ্বারা তাঁকে জানা যায়, তাঁহাতে নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধি আরোপিত হওয়ায় তাঁহার স্বরূপ দর্শন হয়।
আমার গুরুদেব এর পরে বলেছেন, "বিবেকগ্রাহ্য জগৎকে অধ্যাত্ম-জগৎ বলে। বিবেকই ধর্মজ্ঞানের সাধন। বিবেক যখন এক ব্রহ্ম ব্যতীত সকলকে তুচ্ছ (মনে) করিবে, তখনই ভগবানে গাঢ় প্রেমের সঞ্চার হবে।" ধর্মের চতুর্থপাদ সাধনায় এই ভগবৎপ্রেম লাভ হয়।
ধর্মের শ্রেষ্ঠতার মানদন্ড:
নিয়ম আচার বিচার আচরণ ভালো হলেই কোনো ধর্মের শ্রেষ্টত্ব প্রমাণিত হয় না। কোনো কিছুর মান দণ্ড এমন হওয়া উচিত যাহা সব ক্ষেত্রে, সকলের জন্য একক ও প্রামাণিক হতে হবে। এক কিলোর বাটখারা দিয়ে আপনি যেখানেই পরিমাপ করুন না কেন, ওর মান পরিবর্তন হবে না। ওটা কোনো বস্তুর ওজনের মান দণ্ড।
যে সম্প্রদায়ের ধর্মপদ্ধতে ঈশ্বর সাধন পদ্ধতির কথা বলা হয়, তা'কেই শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলা হয়। হিন্দু ধর্ম স্পষ্ট বলে, যোগ সাধনা দ্বারা মানুষ দেবতুল্য হয়। দেবতুল্য মানুষ দেবতার মতোই পূজিত হয়। রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু এরা সকলেই পূজনীয়। কারণ এরা প্রত্যেকেই ইশ্বরকে সাধিত করে দেবত্ব লাভ করেছেন।
হিন্দু সাধনার গুণ দেখুন, শুধু ইশ্বর সাধন নয়, সমগ্র বিশ্বকে এই যোগের আসন, প্রাণায়াম নিরোগী করতে সাহায্য করছে। সারা বিশ্বে যোগ দিবস পালিত হচ্ছে।
অতঃপর:
হিন্দুধর্মের বিধান পদ্ধতিতে ঐ চারিপ্রকার ইন্দ্রিয়-শক্তির স্ফূর্তি, সামঞ্জস্য ও পরিণতি হইলেই ঐ চারিজগতের তত্ত্বনির্ণয়ে সামর্থ্য ও সর্ববিষয়ে সিদ্ধিলাভ করতে পারা যায়, তাই হিন্দুধর্ম শ্রেষ্ঠ। এই পোষ্ট সম্পর্কে আপনার মতামত লিখুন।
0 Comments: