Headlines
Loading...
পদার্থ কাকে বলে? পদার্থের উপাদান এবং অবস্থা।

পদার্থ কাকে বলে? পদার্থের উপাদান এবং অবস্থা।

What is matter


পদার্থ কাকে বলে?

পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা যা অনুভব করা যায়, যাহা বিভিন্ন ধরনের কণা দ্বারা গঠিত অর্থাৎ যার নির্দিষ্ট ভর আছে, যার আকার আছে এবং কিছুটা জায়গা দখল করে থাকে, বল প্রয়োগে যা বাধা দেয় অর্থাৎ যার মধ্যে জড়তা রয়েছে, বিজ্ঞানে ভাষায় তাকে পদার্থ বলে।

চোখ, কান, নাক, জীভ এবং ত্বক এগুলো পঞ্চ ইন্দ্রিয়। দর্শন, শ্রবণ, ঘ্রাণ, স্বাদ ও স্পর্শ এগুলো হলো পঞ্চ তন্মাত্র। চোখ দিয়ে আমরা দেখি, কান দিয়ে আমরা শ্রবন করি, নাক দিয়ে ঘ্রাণ নেই, জীভ দিয়ে স্বাদ গ্রহন করি, ত্বক দিয়ে স্পর্শ অনুভব করি। এই ইন্দ্রিয় গুলোও আবার নিজেরাও পদার্থ। জড় ও চেতন পদার্থের সংস্পর্শ হলে চেতন পদার্থ সংবেদনা গ্রহন করতে পারে। খুব সুক্ষ্ম ভাবে দেখলে পরমাণু পরমাণুকে স্পর্শ করে আন্ত আণবিক সংবেদনায়  উত্তেজিত হয়।

আবার যেহেতু জর পদার্থেও সেই একই উপাদান আছে, জড় পদার্থও একই সংবেদনা গ্রহণ করে উত্তেজিত হয়, কিন্তু জড় পদার্থ সারা দেয় না। টাচ স্ক্রীন মোবাইলে ওই আণবিক সংবেদনা গ্রহণ করে সারা দেয়ার ক্ষমতা আছে। এতসব কিভাবে হয়? আসুন বিস্তারিভাবে জানার চেষ্টা করি।

যে কোনো পদার্থের ক্ষুদ্রতম কনাকে অনু বলা হয়। এই ধারনার ওপর নির্ভর করে পাশ্চাত্য দুনিয়ার দার্শনিকরা নানা তত্ত্ব প্রকাশ করেছেন। পরবর্তী সময়ে পরমাণুর ধারনা উপস্থাপিত হলে পরমাণু তত্ত্ব নিয়ে গবেষনা শুরু হয়। পরমাণু বলতে অনুর চেয়েও ক্ষুদ্র যে কনিকা যাকে আর ভাঙ্গা যায় না, সেই অবস্থা হলো পরমাণু। বিজ্ঞানের ভাষায় একে এই ভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা যার কোনো স্বাধীন অস্তিত্ব নেই, কিন্তু সরাসরি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে তাকে পরমাণু বলে। এখানে 'ক্ষুদ্রতম কণা' বললেও আমরা দেখতে পাই যে, পরমাণু ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন দ্বারা গঠিত। যেহেতু পরমাণু পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা নয়, সেহেতু আধুনিক বিজ্ঞানের পরমাণুর সংজ্ঞা সঠিক নয়। তা সত্বেও আমাদের এই সংজ্ঞাকেই সঠিক বলে চালাতে হয়। 

আমাদের বৈদিক শাস্ত্র কোয়ান্টম স্তরের গিয়ে পরম অনুর কথা বলেছে। যেখানে অনু অবিভাজ্য একক। যেখানে দুটি ঘটনার অবকাশ থেকে আকাশ, অর্থাৎ Time Space Relationship ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ঋষি কনাদ জলীয়, গ্যাসীয়, কঠিন এই তিন প্রকার পরমাণুকে আলাদা আলাদা ভাবে ব্যখ্যা করেছেন।

পদার্থের উপাদান এবং অবস্থা?

প্রতিটি পদার্থ অনুর সমন্বয়ে তৈরি। অনু গুলো আবার পরমাণুর সমন্বয়। তাই আধুনিক বিজ্ঞানে পরমাণুকেই পদার্থের মূল উপাদান বলে মনে করা হয়।  প্রকৃতিতে পদার্থ তিন অবস্থায় পাওয়া যায়: 

  • ১) কঠিন, 
  • ২) তরল ও 
  • ৩) গ্যাসীয়।

প্রাচীন কালে দার্শনিকরা পদার্থের পাঁচটি উপাদান এবং তিনটি অবস্থা (state of matter) আছে বলে মনে করতো। প্রাচীণ দার্শনিক ইথার অর্থাৎ আকাশকে পদার্থের উপাদান বলে মনে করতো। নিউটনের সময় থেকে এই ইথারের অস্তিত্বকে পদার্থ বিজ্ঞানীরা খারিজ করতে থাকে। ইথারের ধারণাটি সাধারণত এত রহস্যময় এবং অস্পষ্ট ছিলো যে তারা একে ভৌত বিজ্ঞানের বিষয় থেকে বাদ  দিয়ে দেয়

ইথারকে এক ধরণের অসংকোচনীয় জলীয় মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করা হত, যা সহজেই অণুর গতির দ্বারা একটি কম্পন তৈরি করে এবং এই গতিকে, বিশাল ঝাঁকে ঝাঁকে, মহাকাশের শেষ প্রান্তে প্রেরণ করতে সক্ষম হয়। আণবিক কণার গতির জন্য, ইথার একটি নিখুঁত তরল হিসাবে কাজ করে বলে মনে করা হতো। চুম্বকীয় ক্ষেত্র, তড়িৎ ক্ষেত্র, মধ্যাকর্ষণ বল এই ইথারের মাধম্যে কাজ করে বলে মনে করা হতো।

এই ইথারের ধারণা হিন্দু ধর্ম শাস্ত্র বেদের নাসাদিয় সূক্তেও পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে যে, এই বিশ্ব সৃষ্টির আদিতে জলে নিমজ্জিত ছিল। সেই আদি জলকে নার বলা হয়েছে। সেই নার নামক জলে শয়ন করে আছে বলেই ভগবানকে নারায়ণ বলা হয়েছে।alert-info

পাশ্চাত্য দুনিয়ার বিভিন্ন সংস্কৃতি বিশেষ করে যাদের পেগণ বলা হয়, এবং যারা উইচার্ড ছিলেন। তারা এই মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে নানা রকমের কর্ম কান্ড করে দেখতো। সম্ভবত সেই কারণে এই ইথার বা আকাশ তত্ত্বটি আধুনিক বিজ্ঞানে স্থান পায়নি। ইথার নিয়ে বর্তমানের বৈজ্ঞানিকরা মাথা ঘামায় না।

ব্ল্যাক ম্যাটার 

বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞানে ব্ল্যাক ম্যাটার বলে একটি নতুন তত্ত্ব প্রচলিত আছে যার বৈশিষ্ট্য অনেকটা ওই ইথারের মতোই। ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব প্রথম অনুমান করেছিলেন একজন সুইস আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রিটজ জুইকি, যিনি 1933 সালে আবিষ্কার করেছিলেন যে ছায়াপথের (গ্যালাক্সি) কোমা ক্লাস্টারের সমস্ত নক্ষত্রের ভর গ্যালাক্সি গুলিকে ক্লাস্টারের মহাকর্ষীয় টান থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় ভরের মাত্র 1 শতাংশ সরবরাহ করে।

মহাকাশ বৈজ্ঞানিকরা বলেছেন, গ্রহ নক্ষত্রের মধ্যে যে অভিকর্ষজ বল কাজ করে তা এই ব্ল্যাক ম্যাটারের জন্যই সম্ভব। একটি রজ্জুতে পাথর বেঁধে বনবন করে ঘুরালে সেটা ছিটকে বেরিয়ে যায় না। সেভাবেই ব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন ছায়াপথ গুলো এই ব্ল্যাক ম্যাটার দ্বারা আকর্ষিত হয়ে আছে এবং ছিটকে বেরিয়ে যাচ্ছে না।

এই ব্ল্যাক ম্যাটারকে চোখে দেখা যায় না। এবং ছায়াপথ গুলো যে ছিটকে বেরিয়ে যাচ্ছে সেটাও পরিমাপ করা এক জন্মে সম্ভব নয়। তাহলে বৈজ্ঞানিকরা কিভাবে এটি নির্ণয় করল? এর উত্তরটা হল ডপ্লার এফেক্ট দ্বারা। ছায়াপথে অবস্থিত বিভিন্ন নক্ষত্রের আলো গুলোর ডপ্লার এফেক্ট নির্ণয় করে এটা জানা গেছে যে, সময়ের সাথে সাথে তারা সংকোচিত হচ্ছে। সেই সংকোচনের কারণ হিসেবে এই ব্ল্যাক ম্যাটার দায়ী বলে মনে করা হয়েছে। 

0 Comments:

Smart Ads for Smart Businesses Ads by TDads