Headlines
Loading...
India শব্দের উৎপত্তি কি সিন্ধু নদী থেকে হয়েছে?

India শব্দের উৎপত্তি কি সিন্ধু নদী থেকে হয়েছে?

ছোটো বেলা থেকে আমরা এটাই পড়ে এসেছি পারস্য ও গ্রীকরা ‘স’ উচ্চারণ করতে পারে না। তারা ‘স’ এর জায়গায় ‘হ’ উচ্চারণ করতো। সেই থেকে সিন্ধুস্থান শব্দটি পরিবর্তীত হয়ে হিন্দুস্থান হয়েছে। তাই India শব্দের উৎপত্তি সিন্ধু নদী থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়। —এই ফালতু বানোয়াট লজিক আদৌ সত্য নয়। ভারতের প্রথম প্রধান মন্ত্রী নেহেরু তাঁর "The Discovery of India" বইতে এই থিওরি লিখেন। যেখানে, পারস্য বর্ণ মালায় ث, ও س অর্থাৎ ও ‘সে’ ও ‘সিন’ , শব্দের প্রয়োগ আছে। তারা 'স' উচ্চারণ করতে পারতো না এটা হাস্যকর ও অযৌক্তিক কথা। তাদের বর্ণমালায় ‘সে’ ও ‘সিন’ ছিলো বলেই পারস্য ‘পারহ্য’ হয়ে যায়নি। পার্সিদের ধর্মীয় বিশ্বাস ‘জরোস্ট্রিয়ান’ ও তাদের ধর্ম গ্রন্থ ‘অ্যাবেস্তা', 'জরোহ্ট্রিয়ান' বা ‘অ্যাবেহা’ বলে উচ্চারিত হতো না। অনেকে বলে থাকেন মুসলীমরা ভারতের নাম সিন্ধ থেকে হিন্দ করেছে। সেই যুক্তিতে মুঘল সাম্রাজ্যের রাজার নাম, শাহাজাহান না হয়ে হাহাজাহান হওয়া উচিত ছিলো।



ইংরেজী indigenous শব্দটিও লাতিন indu থেকে এসেছে। Indu শব্দের অর্থ হলো 'মধ্যে'। এর সঙ্গে -gene প্রত্যয় যুক্ত হয়ে indigena (অর্থাৎ, যেখানে জন্ম হয়েছে) শব্দের উৎপত্তি।  গ্রীক শব্দ Indo, ল্যাটিন Indu তে রূপান্তরিত হয়, এবং সেই শব্দ পরবর্তিতে India শব্দে পরিণত হয়। ads={1}

এই India শব্দটি ঔপনিবেশিকদের দেওয়া। ভালো করে লক্ষ্য করেন, তারা যেখানেই উপনিবেশ স্থাপন করতো সেখানকার মানুষকে ইন্ডিয়ান নাম দিতো। যেমন আমেরিকার মূল নিবাসীদের রেড ইন্ডিয়ান বলা হয়। কেন? কারণ ক্রিস্টোফার কলম্বাস ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে আমেরিকায় পৌছে ছিলো। তাই আমেরিকার মূল জনগোষ্ঠীদেরকে তিনি রেড ইন্ডিয়ান নামকরণ করেন। West Indies এর নামটিও এই একই ভৌগলিক বিভ্রমের কারণে হয়েছিল। 

1816 সালে জার্মানির ফ্রাঞ্জ বোপ (Franz Bopp) প্রথমবার ইন্দো-ইউরোপীয় শব্দের প্রয়োগ করেন। ইউরোপ এবং এশিয়ার (উত্তর ভারত, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সহ) ভাষার একটি পরিবারকে দেখানো হয়েছিল যেগুলির মধ্যে একটি অসাধারণ কাঠামোগত সম্পর্ক রয়েছে। 

উদাহণস্বরূপ বাইবেলের গল্পে 'নুহ' এবং পুরাণের ‘মনু:’ -র গল্প একই রকম। নামের মধ্যেও অনেক মিল আছে। আবার দেখুন, ইশ্বর যখন সমগ্র পৃথিবীকে জল মগ্ন করলো। মনু বা নুহ পৃথিবীর সব থেকে উচু জায়গায় তাঁর জাহাজ দার করিয়ে ছিলো। হিমালয় ছাড়া অন্য কোনো উচ্চু জায়গা আছে কি? সম্ভতঃ এই কারণেই মূল নিবাসিদের তারা 'জন্ম ভূমি' বা sprung from the land বলতো।

India শব্দের উৎপত্তির আরেকটা দিক আছে। সেটাতেও ওই ঔপনিবেশিক শাসনের ছাপ রয়েছে। 

গ্রীকরা ভারত থেকে নীল রং আমদানি করতো। এই রঙকে তারা ‘ইন্ডিকোস’ (অর্থাৎ blue dye from India) বলতো। ‘ইন্ডিকাম’ অর্থাৎ নীল রং। ইন্ডিকাম থেকে ইংরেজি indic শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর থেকে বর্তমান ইংরেজী Indigo শব্দটি এসেছে। 



ইংরেজরা ভারতে নীল চাষ করতো, ভারতের সেই পুরাতন বাণিজ্যিক নাম থেকেই  ভারতবর্ষকে INDIA নামকরণ করেছিলো বলে মনে করা হয়। অ্যাডভোকেট জে. সাই দীপক তাঁর India that is Bharat বইতে এই INDIA নামকরণের পেছনে ঔপনিবেশিকতার মানসিকতা ও প্রচার প্রমাণ সহ ব্যাখ্যা করেছেন। ওই সাদা চামড়ার ইংরেজরা মনে করতো পশু ও কালো লোকেদের ভেতরে কোনো আত্মা নেই। কালোরা পাপী, তাই তাদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হতো।

0 Comments:

Smart Ads for Smart Businesses Ads by TDads